০
১৮৬৩ বার পঠিত
অনেকেই ওয়াজ নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন। আমি এর তীব্র বিরোধী। আমি যেকোনো মানুষের গাণ্ডু হয়ে থাকার অধিকারে বিশ্বাস করি এবং ‘মিথ্যা’ বলতে পারাটাকে আপনার অধিকার হিসাবে ট্রিট করি।
একটু কনটেক্সটে আসি। মুফতী ইব্রাহীম। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এন্টারটেইনার। আপনি যদি ক্রিটিকাল মাইন্ড ডেভেলাপ করার ক্ষমতাকে বড় হওয়া মনে করেন – এই ভদ্রলোকের মানসিক বয়স হয়তো ১২/১৩ হবে। তিনি প্রচুর মিথ্যা বলেন – কিন্তু এন্টারটেইনার হলে আপনাকে প্রচুর মিথ্যা বলতেই হবে।
তিনি একটা ভিন্ন য়ুনিভার্সে বসবাস করেন। যে অর্থে তিনি ডিলিউশনাল ঠিক একই অর্থে কিন্তু ভিন্ন স্কোপে আমি শত-শত ডিলিউশনাল মানুষ দেখেছি জীবনে। শাহরিয়ার কবির এবং জাফর ইকবাল ঠিক একই টাইপ ক্যারেক্টার – স্পেকট্রামের ভিন্ন এন্ডে থাকেন – তাদের গল্পে ফাইজারের ডাকনাম হোলো মুজিব।
এখন তাকে কি আটকানো উচিত?
আমাদের কিছু সীমা টানা উচিত। ক্লাসিক্যালি ইসলামে যাদের ‘আলেম’ শনাক্ত করা হয়েছে – সেই অর্থে মুফতী ইব্রাহিম মোটেও আলেম নন – বহুভাবে তিনি ‘অনালেম’। তিনি বোকাসোকা গোছের ধর্মপ্রাণ মানুষ। তিনি প্রচুর হাস্যকর কথা বলেন কিন্তু তাকে আমার জেনারেলি ওয়েল-মিনিং মনে হয়। তিনি যদি দেওয়ানবাগীর মতো ধান্দাবাজ হতেন – তাহলেও আমি তাকে কথা বলতে দেয়ার পক্ষে থাকতাম।
কেন?
কারণ এটা আসলে কোনো ‘জিবের সমস্যা’ না – ‘কানের সমস্যা’।
বেশীরভাগ মানুষ পুরা ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণ ভুলভাবে রিড করেন। মুফতী ইব্রাহীম স্কিজোফ্রেনিক অথবা ডিল্যুশনাল হতে পারেন – তিনি আবোলতাবোল বকতেই পারেন। আমি বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাটে এইরকম নির্বোধ/ডিল্যুশনাল মানুষ প্রতিদিন দেখতাম। তিনিও আবোল তাবোল বলেন। এটা আমার কাছে কোনো সমস্যাই না।
কিন্তু এতো মানুষ এইরকম নির্বোধ টাইপ মানুষের ওয়াজ শুনে – তাকে গুরুত্ব দেয় – তাকে পাগল মনে করে না – তাকে সিরিয়াসলি নেয় – এটাই আসল সমস্যা (এবং খুব বড় সমস্যা)।
আপনি যদি মুফতী ইব্রাহীমকে বলতে না দেন – আসল সমস্যাটা কোনোভাবেই ট্যাকেল করা যাবে না।
আপনারা জানেন যে ব্রা-ji-ল হুজুর প্রবলভাবে নারীবিদ্বেষী। কিন্তু তার ‘জেনারেল’ নারীবিদ্বেষ চলতে দেয়া উচিত কারণ তার নারীবিদ্বেষ চলতে দিলেই তাকে আপনি ইরেলেভেন্ট করতে পারবেন।
একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করেন।
আপনারা অনেকেই কল্পনাই করতে পারবেন না নাইন্টিজে আগাচৌকে কিংবা নটিজে জাফর ইকবালকে কতো সিরিয়াসলি নেয়া হোতো বাংলাদেশে। বাংলাদেশে এই দুই লেখকেরই মৃত্যু হয়েছে এবং শুধু তাই না, তাদের জনরারও মৃত্যু হয়েছে। এর একমাত্র কারণ হোলো এই দুইজনের কথা বলার অধিকার পুরাপুরি বজায় ছিলো। যে কারণে তাদের ট্রল করার অধিকারটাও বাজেয়াপ্ত করা যায় নাই।
মানুষ অনন্ত জলিলের ব্রাপোযোগী বুক নিয়ে যেরকম তামাশা করে, জসীমের বোতাম নিয়ে যেরকম ফাজলামি করে, শাবানার সেলাই মেশিন নিয়ে যেরকম রংতামাশা করে, টেলিসামাদকে যেরকম এবিউজ করতো, নাকের ময়লাকে যেরকম এবিউজ করে – তার চেয়েও বাজেভাবে এবিউজ করেছে জাফর ইকবালকে।
এই সমস্ত কার্টুন ক্যারেক্টারকে মোকাবেলা করার একমাত্র হাতিয়ার হোলো হিউমার। লেখক জাফর ইকবালের মৃত্যু হয়েছে – গালি দিয়ে না – তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে। বাংলাদেশের ওয়াজ ইন্ডাস্ট্রিতে ঠিক একই ঘটনা ঘটছে। আপনি লিখে রাখতে পারেন যে মুফতি ইব্রাহীমরা ধীরে ধীরে ছিটকে যাবেন – তার নিজের সার্কেলেই মানুষ তাকে জোকার হিসাবে দেখা শুরু করবে (এইটা তার জন্যে এগজিসটেনশিয়াল ক্রাইসিস। মনে রাখবেন যখন তার অডিয়েন্স তাকে আলেম হিসাবে ট্রিট না করে এন্টারটেইনার কিংবা জোকার হিসাবে দেখবে – তখন মুফতি ইব্রাহীমকে ফাইট করতে হবে হাসান মাহমুদের সাথে, ওবায়দুল কাদেরের সাথে, হিরো আলমের সাথে। এদের সাথে ফাইট দেয়া অসম্ভব)।
কিন্তু ওয়াজ কন্ট্রোল করেন – দেখবেন যে এই একই জোকার সাবভার্সিভ হবে – সে ওয়েল-মিনিং থাকবে না।
দয়া করে আপনারা কোনোদিন কারো বোকাচোদা হয়ে থাকার ‘পবিত্র’ অধিকারে বাগড়া দিবেন না। এতে কারো লাভ হয় না।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন