০
৮৮২ বার পঠিত
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দিনকে-দিন আরও বেশিসংখ্যক মানুষ সন্ত্রাসবাদী পথে পা বাড়াচ্ছে। শতকরা হিসেব ধরলে, এক্ষেত্রে; অন্য যেকোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের চাইতে মুসলমানদের অনুপাতই সবচেয়ে বেশি। এর কারণ কী? এবং কীভাবেইবা সমগ্র মানবজাতির মঙ্গলসাধনের স্বার্থে এই অস্বাস্থ্যকর প্রবণতার অন্ধকূপ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব, তা অনুসন্ধান করাসহ প্রতিরোধ করা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে।
সর্বাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে যারা নিয়ামক, তাদের মধ্যে নিজেদের স্থান করে নিতে মুসলমানরা ব্যর্থ। স্বভাবতই, যুদ্ধবিগ্রহের ক্ষেত্রেও তারা এখনও পড়ে আছেন মান্ধাতার আমলেই। ফলে, তারা এমন এক জীবনযাপন করে চলেছেন যা অন্যের কাছ থেকে যথাযোগ্য সমীহ আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই সত্যটি তাদের অজানা নয়। কিন্তু কেন তাদের এই অধঃপতন? তার মূল কারণগুলি তাদের জানা নেই। তাদের ধারণা ইসলাম-প্রদর্শিত পথ থেকে বিচ্যুত হবার কারণেই আজ তারা হীনবল। এই ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা মুখ ফেরাচ্ছেন অতীতের দিকে, নষ্ট করছেন সবকিছু। বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার কোনো উদ্যোগই নিতে পারছেন না।
এর ফলে আরও বেশি করে তাদের সইতে হচ্ছে বৈর প্রতিপক্ষের অবমাননা। আঘাত পাচ্ছে তাদের হৃদয়বৃত্তি। সেই আহত মন নিয়ে তারা নিমজ্জিত হচ্ছেন হতাশায়। মরীয়া হয়ে এমনকী, জীবনকে পর্যন্ত বাজি রেখে তারা এমন কিছু করে ফেলতে চান, যাতে তাদের প্রতি যে ‘অন্যায়’, ‘অবিচার’ করা হয়েছে তার প্রতিশোধ নেওয়া যায়! মুসলমানরাই যে বেশিসংখ্যায় সন্ত্রাসবাদী পথে পা বাড়াচ্ছেন- এটাই হল তার সবচেয়ে বড় কারণ।
জোর যার মুলুক তার। সংগ্রামে যে জয়ী হয়, কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তা নির্ধারণ করার মৌরসিপাট্টা তারই উপর বর্তায়। বিজয়ীর ফরমান মেনে নেওয়া ছাড়া, বিজিতের সামনে কোনো বিকল্প থাকে না। ‘শক্তিমত্তা’ বলতে সবসময়েই যে ‘দেহিক শক্তি’ বোঝায় তা কিন্তু নয়, এর সঙ্গে বুদ্ধিমত্তাও জড়িয়ে আছে। আধুনিক যুগে এই ‘বুদ্ধিমত্তা’র সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জয়ধ্বজা। একটা মহিষের ওজন ৫০০ কেজি হতে পারে। সে হয়তো তার পিঠে এক ডজন সিংহ বহন করতে পারে। কিন্তু কার্যকালে সিংহই মহিষকে হত্য করে ভক্ষণ করে। কারণ সিংহের চোয়ালে এবং থাবায় যে শক্তিমত্তা লুকিয়ে আছে তা মহিষের নেই।
সম্প্রতি এক ‘মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ’ মন্তব্য করেছেন, ‘রিপোসটেস’ এবং ‘প্রিভেন্টিভ অ্যাটাক্স’ সহযোগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যে প্রতি-আক্রমণ হেনেছে, তাতে ব্যবহৃত গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র জটিল ইলেকট্রনিক্স-এ এমন সুসজ্জিত যে কোনো আরব সেনাবাহিনীই তার সমকক্ষ নয়।[1]
প্রয়ুক্তিগত অগ্রগতি আমেরিকা এবং ইসরায়েলের মতো তার মিত্রদের দান করেছে সিংহের ‘চোয়াল ও থাবার’ শক্তিমত্তা। যদি মুসলমানরা তাদের মোকাবেলা করতে চায়, তাহলে বায়ুশক্তিতে এবং আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে ওই দুই দেশকে তাদের ছাড়িয়ে যেতে হবে। অথবা অন্তত তাদের সমকক্ষ হতে হবে। বাস্তবে তারা পড়ে আছে এর অনেক পিছনে। ‘মহাশয়তান’ ও তার চেলাচামুণ্ডাদের সামরিক প্রতাপের মুখোমুখি হওয়া তাদের সাধ্যাতীত। মরীয়া হতাশায় এই মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ গেরিলা কৌশল অবলম্বন করে।
এ-যুগের মুসলমানরা, বিশ্বজুড়েই, এক হীনবল জনগোষ্ঠী। ‘ইসলামিক দেশণ্ডলির সংগঠন’ Organisation of Islamic Countries (সংক্ষেপে OIC) ভূক্ত ৫৭টি দেশের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা বাজেটের মোট পরিমাণ, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয়বরাদ্দের এক চতুর্থাংশেরও কম।[2] তাই, এক ন্যুনতম নিরাপত্তাবোধ অর্জনের জন্য তারা মহাশক্তিধর রাষ্ট্রণ্ডলির দ্বারা যদৃচ্ছ শোষিত হচ্ছে। যাদের তারা ঘৃণা করে, তাদের হাতেই নিজেদের তুলে দিচ্ছে খেলার পুতল হিসেবে। ফলে, বৈরি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মনে সঞ্চিত হচ্ছে তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ; যার অনিবার্য পরিণতি সন্ত্রাসবাদের নিরুপায় আশ্রয়।
উত্তর প্রজন্মের জন্য এই পৃথিবীকে আরও নিরাপদ বাসযোগ্য করে যাওয়াই আমাদের অভীষ্ট হওয়া উচিত। এই গ্রহে মুসলিমরাই দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী।[3] মুসলমান জনসংখ্যা প্রায় ১.৩ শতকোটি।[4] তারা বিশ্বের মোট জনসংখার ১৯.৩ শতাংশ।[5] অর্থাৎ বিশ্বের প্রতি পাঁচজনের একজন মুসলমান। তাঁদের অবস্থার সার্বিক উন্নতি বাদ দিয়ে এই গ্রহ কোনভাবেই উন্নততর বাসভূমি হয়ে উঠতে পারে না। অন্যদের জীবনকে সুন্দরতর করে তোলার জনাই তাদের জীবন সুন্দর হয়ে ওঠা জরুরী।
তাদের দোষত্রুটি-ভুলভ্রান্তিগুলো সকলের গোচরে আনতে হবে। এতে তারা সংশোধন হতে পারে, তাদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার নিরসন ঘটাতে হবে। যাতে তাঁরা এই সমদর্শী পৃথিবীতে আর পাঁচজনের একজন হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবনযাপন করতে পারেন। মুসলিমদের নিজেদেরও এই সার সত্যটি উপলব্ধি করতে হবে। আর এ কারণেই ধর্ম সমালোচনার প্রযোজন রয়েছে। সমালোচনা সহ্য করবার শক্তি অর্জন করতে না পারলে মুসলমানরা, বিলুপ্ত অতিকায় প্রাণী ডাইনোসরের পরিণতি ভোগ করবে তাতে কোনই সংশয় নেই।
সহায়ক তথ্য:
1. Gilles Kepel, Jihad, I B Tauris, London (2002) p. 15
2. Statistical, Economic and Social research and Training Centre for Islamic Countries, Statistical yearbook of the 0/C countries 2003/op. cit 2002 Paul Lunde, Islam, Dorlington Kindersley, London (2002), pp. 110-171
3. Ninian Smart, Atlas of the World’s Religions, OUP, New York (1999) P. 13
4. Ahmed, Islam under siege, Vistaar Publication, New Delhi (2003) P. 7
5. Rolland E Miller, Muslim Friends, Orient Longman, Chennai, (2000) P. 23
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন