মুরতাদ হওয়ার ঘটনায় মোহাম্মদের জমানায় শুধু মুরতাদ হওয়ার কারণে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহ প্রমাণিত হওয়ার দরকার নেই। কারণ মুরতাদ হওয়াটাই একটি বিদ্রোহ। এমনিভাবে মোহাম্মদকে মন্দ বলাটাও দ্বীনের বিষয়ে বিদ্রোহ। শুধু এ কারণেই মৃত্যুদণ্ড আবশ্যক হয়ে যায়। আর কোন বিদ্রোহীতা পাওয়ার দরকার নেই।
একজন মুসলমানের জন্য কোরআনের নির্দেশ হল যে নবী মোহাম্মদকে নিজের প্রাণের চেয়ে, নিজের সন্তানের চেয়ে, নিজের মা-বাবার চেয়ে এবং তার যাবতীয় সম্পদের চেয়ে প্রিয় হতে হবে। যদি কোন ব্যক্তির এমন মোহাব্বত না থাকে, তাহলে লোকটি প্রকৃত মুসলমানই নয় বলে গণ্য হবে।
নবী মোহাম্মদ বলেন –
“হযরত আনাস রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার পিতা-মাতা, এবং তার সন্তান ও সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বত করবে।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭৭]
মুক্ত চিন্তার সমালোচকরা ইসলাম ও মোহাম্মদকে কটাক্ষ করা, সমালোচনা করা, অপমানিত করে, অসম্মানজনক কথা বলে বা লিখে, তাই তারা ইসলামের আইনে মুরতাদ। সে তওবা না করলে ইসলামের বিধান মতে মুরতাদকে হত্যা করা ফরজ যা মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক। আল্লাহর আইনে এ রকম কুলাঙ্গারের এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টির মাঝে যিনি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তার যে কুৎসা রটায় এমন কুলাঙ্গারের আল্লাহর এ ধরিত্রীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
আল্লাহর লেখা কুরআনে নির্দেশ দেয়া আছে –
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।
[সূরা আহযাব-৫৭]
তারপর তাদের হত্যার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ কোরানে বলেন –
“অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে। যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।
[সূরা আহযাব-৬১-৬২]
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী এ আয়াতের দ্বারা দলিল দিয়ে বলেন—
“যে ব্যক্তি ইসলাম বা কুরআনের বিরুদ্ধে খারাপ মন্তব্য করে, অথবা রাসূল সাঃ এর ব্যাপারে মন্দ কথা বলে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে।
[ মাহাসিনুত তাওয়ীল-৫:১৪২ ]
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মুসলমান হয়, আর সে সাক্ষ্য দেয় একথার যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, এবং একথার যে, আমি আল্লাহর রাসূল, তার রক্ত তিনটি অপরাধ ছাড়া বৈধ হবে না। এক হল সে কারো প্রাণ বধ করল, (ফলে কেসাস আবশ্যক হল) দ্বিতীয় হল বিবাহিত হওয়ার পরেও জিনা করে, তৃতীয় হল স্বীয় ধর্ম ছেড়ে দেয় এবং জামাআত ছেড়ে আলাদা হয়ে যায়।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৪৮৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৭৬]
ইকরিমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী এর কাছে ধর্মত্যাগীদের উপস্থিত করা হল, তখন তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেললেন, এ সংবাদ হযরত ইবনে আব্বাস এর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি বললেন, যদি আমি হতাম, তাহলে আমি তাদের পুড়িয়ে ফেলতাম না রাসূল সাঃ এর এ নিষেধাজ্ঞা কারণে যে, “তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে শাস্তি দিওনা”. বরং আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ আল্লাহর নবী সাঃ বলেছেন- “যে ব্যক্তি ধর্ম পাল্টায় তাকে হত্যা কর”।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫২১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬০৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৫৩]
আবু মুসা আশআরী থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ তাকে ইয়ামেনের গভর্নর বানিয়ে পাঠালেন। তারপর হযরত মুআজ বিন জাবালকে পাঠালেন। তিনি যখন সেখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি ঘোষণা করলেন-
“আমি আল্লাহর রাসূল সাঃ এর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে দূত স্বরূপ। সেসময় হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ এর জন্য একটি চেয়ার দিলেন, যেন তিনি তাতে বসেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এল। যে ব্যক্তি প্রথমে ইহুদী ছিল। তারপর মুসলমান হয়েছে। তারপর আবার ইহুদি হয়ে গেছে। তখন মুআজ বিন জাবাল রাঃ বললেন, “আমি ততক্ষণ পর্যন্ত বসবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত এ লোককে হত্যা করা হয়। আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ এর এটাই ফায়সালা”। একথা তিনি তিনবার বললেন। তারপর যখন তাকে হত্যা করা হল, তখন তিনি বসলেন।
[সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৩৫২৯]
আয়শা থেকে বর্ণিত,
ওহুদ যুদ্ধে এক মহিলা মুরতাদ হয়ে যায়, তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, তাকে তওবা করানো হোক, আর যদি তওবা না করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হোক।
[সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৬৬৪৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৮৭২৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৯৬০৭]
জাবের বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত,
উম্মে মারওয়ান নামের এক মহিলা মুরতাদ হয়ে গেলে রাসূল সাঃ আদেশ দেন যে, তার কাছে ইসলাম পেশ করতে, যদি সে ফিরে আসে তাহলে ভাল, নতুবা তাকে হত্যা করা হবে।
[সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৬৬৪৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২২]
আলী থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাঃ বলেছেন- যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর। আর যে সাহাবীকে গালি দেয়, তাকে প্রহার কর।
[জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জমউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২]
আলী থেকে বর্ণিত-
এক ইহুদী মহিলা রাসূল সাঃ কে গালাগাল করত, মন্দ কথা বলত। তখন এক ব্যক্তি তার গলা চেপে ধরে, ফলে সে মারা যায়। তখন রাসূল সাঃ তার হত্যার বদলে হত্যাকে অগ্রহণীয় সাব্যস্ত করেছেন।
[সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৬৪, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৫৪]
জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাঃ কাব বিন আশরাফের ব্যাপারে কে আছো? কেননা আল্লাহ ও তার রাসূলকে কষ্ট দেয়। তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি চান আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮১১]
আনাস থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাঃ যখন মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় প্রবেশ করেন,তখন রাসূল সাঃ এর মাথায় ছিল শিরস্ত্রাণ। তিনি মাথা থেকে তা খুললেন। সেসময় একজন এসে বললেন যে, ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে বসে আছে। রাসূল সাঃ বললেন-তাকে হত্যা কর।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৭৪৯]
ইবনে খাতালকে কেন কাবার গিলাফ ধরা অবস্থায়ও রাসূল সাঃ হত্যার নির্দেশ দিলেন? আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে, লোকটি রাসূল সাঃ কে গালাগাল করত।
[ফাতহুল বারী-২/২৪৮,আস সারেমুল মাসলূল-১৩৫]
বারা ইবনে আজেব থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাঃ একদা আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাঃ কে আমীর বানিয়ে আবু রাফে ইহুদীকে হত্যা করতে পাঠালেন। আবু রাফে রাসূল সাঃ কে কষ্ট দিত এবং অন্যদের কষ্ট দিতে সাহায্য করত। আব্দুল্লাহ বিন আতিক বলেন, আমি তাকে প্রচন্ড আঘাত করলাম। কিন্তু হত্যা করতে পারিনি, তারপর তরবারীর ধারালো ডগা তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম এমনকি তা তার পিঠ ফুরে বেরিয়ে যায়। তখন আমি বুঝলাম যে, আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি।
[সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮১৩]
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, যারা নবী মুহাম্মদের সমালোচনা করবে, মন্তব্য করবে তাদের কে হত্যা করার আবশ্যক।
সাহাবাগণ কর্তৃক মুরতাদ হত্যার প্রমাণ:
নবী মুহাম্মদের সমালোচনা করলেই লোকটি মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মুহাম্মদের সাহাবাগণ কর্তৃক কতিপয় মুরতাদ হত্যার উদাহরণ নিচে উদ্ধৃত করা হল-
১) মুহাম্মদ মারা যাওয়ার পর ইয়ামেন ও নজদে মুরতাদ হওয়ার ফিতনা প্রবল আকার ধারণ করে। অনেক লোক মুসায়লামা কাজ্জাব ও সাজ্জাহের নবুওয়ত মেনে মুরতাদ হয়ে যায়। আবু বকর ইরতিদাদের এ ফিতনারোধে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ালেন। ইকরিমা বিন আবী জাহাল কে সেখানে পাঠানোর সময় নির্দেশ দিলেন যে,
ومن لقيته من المرتدة بين عمان إلى حضرموت واليمن فنكل به، “আম্মান থেকে হাজরামাওত এবং ইয়ামান পর্যন্ত যত মুরতাদ পাবে সবক’টিকে হত্যা করবে”। {আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৫/৩৬৩}
২) عن سعيد بن عبد العزيز : أن أبا بكر قتل أم قرفة الفزارية في ردتها
সাঈদ বিন আব্দুল আজীজ থেকে বর্ণিত। আবু বকর উম্মে কিরফাকে মুরতাদ হওয়ার অপরাধে হত্যা করেন।
{সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১১০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৬৬৪৯}
৩) আমর বিন আস ওমরের কাছে লিখলেন যে, এক লোক ইসলাম গ্রহণ করে আবার কাফের হয়, তারপর আবার ইসলাম গ্রহণ করে, তারপর আবার কাফের হয়, এভাবে সে কয়েকবার করে, তার ইসলাম কি কবুল করা হবে? তখন ওমর লিখলেন যে, যতক্ষণ আল্লাহ তাআলা তার ইসলাম গ্রহণ করেন, তুমিও তার ইসলামকে গ্রহণযোগ্য মান, তাই তুমি তার সামনে ইসলাম পেশ কর, যদি গ্রহণ করে তাহলে ছেড়ে দাও, নতুবা হত্যা কর।
{কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১৪৬৭}
৪) أن عثمان بن عفان كان يقول: “من كفر بعد إيمانه طائعا فإنه يقتل”
উসমান বলেন যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর ইচ্ছেকৃত কুফরী করে, তাকে হত্যা করা হবে। {কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৪৭০}
৫) عن علي قال “يستتاب المرتد ثلاثا فإن عاد قتل”
আলী বলেন, মুরতাদকে তাওবা করতে তিনবার বলা হবে, তওবা না করলে, তাকে হত্যা করা হবে। {কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৪৭৫}
সাহাবাগণ কর্তৃক মুহাম্মদের অবমানকারীদের হত্যার নজীরঃ
১) ইবনে খাতালের দুই বাদি ছিল,
যারা মোহাম্মদ সম্পর্কে সামালোচনামূলক গান গাইতো। মক্কা দখলের দিন তাদেরও হত্যা করার নির্দেশ দেন মুহাম্মদ নিজে ।
{আসাহহুর সিয়ার-২৬৬, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৪/৪৯৮}
২) এমনিভাবে মক্কা দখলের দিন হুয়াইরিস বিন নাকীজ নামের এক লোক যে মুহাম্মদ কে কষ্ট দিত, তাকেও হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়।
{আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৪/২৯৮}
হুয়াইরিসকে আলী নিজে হত্যা করেন। {আসাহহুস সিয়ার-২৬৪}
৩) মদীনায় আবু ইফক নামে এক লোক ছিল। সে মুহাম্মদ সম্পর্কে কবিতা রচনা করে, তখন মুহাম্মদ তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলে সালেম আমের নামে একজন সাহাবী তাকে হত্যা করেন।
{সীরাতে ইবনে হিশাম-৪/২৮৫}
৪) বনী উমাইয়্যার এক কবি মহিলা ছিল। যার নাম আসমা বিনতে মারওয়ান। সে আবু ইফকের হত্যা দেখে ইসলামকে সমালোচনা করে কবিতা রচনা করে। তখন মুহাম্মদ তাকে হত্যার নির্দেশ দিলে উমায়ের বিন আদল আল খাতামী তার ঘরে গিয়ে তাকে হত্যা করে আসেন। এ সংবাদ মুহাম্মদ কে জানালে মুহাম্মদ খুশি হয়ে বলেন-
হে উমায়ের! তুমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে সাহায্য করেছো। {সীরাতে ইবনে হিশাম-৪/২৮৬}
৫) গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী নামের একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি এমন ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। যার সাথে এ চুক্তি ছিল যে, তার জান-মালের হিফাজতের দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের। বিনিময়ে সে ইসলামী রাষ্ট্রে কোষাগারে কর জমা দিত। ইসলামের পরিভাষায় যাকে জিম্মি বলা হয়। গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী জিম্মি লোকটিকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। লোকটি জবাবে মুহাম্মদ কে গালি দিল। গুরফা রেগে লোকটিকে সেখানেই হত্যা করে ফেলেন। এ সংবাদ হযরত আমর বিন আস এর কাছে পৌঁছলে তিনি গুরফাকে বললেন, এ লোকের সাথেতো আমাদের অঙ্গিকার আছে। সে হিসেবে সে তো নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য। তুমি তাকে হত্যা করলে কেন? গুরফা জবাব দিলেন- “তার সাথে আমাদের অঙ্গিকার এ কথার উপর নয় যে, সে আল্লাহ ও রাসূল কে গালাগাল দিবে আর আমরা তার হিফাজত করবো”।
{হায়াতুস সাহাবা-২/৩৫১, উর্দু এডিশন}
ইজমায়ে উম্মতের দৃষ্টিতে মুহাম্মদের সমালোচনার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডঃ
কুরআন হাদীস, সীরাত ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ এবং মুজতাহিদ ইমামদের ইজমা তথা সর্বসম্মত মতানুসারে এ কথা প্রমানিত যে, নবী মুহাম্মদের সমালোচনাকারি মুরতাদ, আর মুরতাদের শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড।
আর উম্মতে মুহাম্মদীর বিগত চৌদ্দশত বৎসর যাবত কোন মুসলমান নবী অবমাননাকারীকে মুসলমানরা হত্যা না করে ছাড়েনি। কেননা রাসূল সাঃ এর সাথে গুস্তাখী করা মুরতাদ হওয়াকে আবশ্যক করে।
কাজী ইয়াজ বলেন,
কুরআন হাদীস ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা রাসূল সাঃ এর শানে কি কি হক রয়েছে তা প্রমানিত। এবং তাকে কতটুকু সম্মান-ইজ্জত দিতে হবে তা’ও সুনির্দিষ্ট। এ হিসেবে আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমে রাসূলকে কষ্ট দেয়াকে হারাম করেছেন। আর উম্মত একথার উপর ইজমা তথা ঐক্যমত্বে পৌঁছেছেন যে, মুসলমানদের মাঝে যে তাঁর কুৎসা বলবে, কিংবা গালি দিবে তাকে হত্যা করা হবে।
{সুবুলু হুদা ওয়ার রাশাদ-১২/২১, আশ শিফা-২/২১১}
চার ইমামের দৃষ্টিতে নবী মুহাম্মদের সমালোচনার শাস্তিঃ
কুরআন ও হাদীসে মুহাম্মদের এবং আসারে সাহাবার আলোকে সমস্ত ফুক্বাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, নবী মুহাম্মদের নিয়ে যে ব্যক্তি সমালোচনা করবে, কটু কথা বলবে, নিন্দা করবে, দোষচর্চা করবে, তাহলে সে মুসলমান থাকলেও মুরতাদ হওয় তাকে হত্যা আবশ্যক হয়ে যায়।
ইবনে আবেদীন শামী হানাফী তাম্বীহুল ওলাত ওয়াল আহকামের মাঝে আল্লামা তাক্বীউদ্দীন সুবকী কিতাব “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল সাঃ কিতাবে বলেন –
ইমামে খাতিমাতুল মুজতাহিদীন তাক্বীউদ্দীন আবুল হাসান আলী বিন আব্দুল কাফী আস সুবকী তার “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল সাঃ গ্রন্থে লিখেন যে,
কাজী ইয়াজ বলেন, উম্মতের ইজমা একথার উপর যে, মুসলমানদের মাঝে যে ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর শানে বেয়াদবী করবে, গালাগাল করবে তাকে হত্যা করা আবশ্যক।
আবু বকর ইবনুল মুনজির বলেন, সমস্ত আহলে ইলম একথার উপর একমত যে, যে ব্যক্তি রাসূল সাঃকে গালাগাল করবে, বা মন্দ বলবে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।
ইমাম মালেক বিন আনাস, ইমাম আবুল লাইস, ইমাম আহমাদ এবং ইমাম ইসহাক এ বক্তব্যের প্রবক্তা। আর এটাই ইমাম শাফেয়ী এর মাজহাব।
কাজী ইয়াজ বলেন, এমনিভাবে একই মত ইমাম আবু হানীফা হানাফী ফুক্বাহাদের, এবং ইমাম সাওরী, আহলে কুফা ও ইমাম আওজায়ী থেকে মুহাম্মদ কে সমালোচনার শাস্তি ব্যাপারে এমনটিই বর্ণিত (তাদের হত্যা করতে হবে)।
ইমাম মুহাম্মদ বিন সুহনুন বলেন,
ওলামায়ে কেরাম রাসূল সাঃ কে গালাগালকারী ও তার কুৎসাকারীদের কাফের হওয়ার উপর ইজমা তথা ঐক্যমত্ব হয়েছেন। আর এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহর শাস্তি ও ধমক রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এমন ব্যক্তির কাফের হওয়া ও শাস্তির অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করবে সেও কাফের।
আর ইমাম আবু সুলাইমান খাত্তাবী বলেন যে,
আমি এমন কোন মুসলমানের ব্যাপারে জানি না যে, এমন ব্যক্তির হত্যার আবশ্যকতার ব্যাপারে মতবিরোধ করে।
{রাসায়েলে ইবনে আবেদীন-১/৩১৬}
মোটকথা, মুহাম্মদের সমালোচনা ও বেআদবীকারীর ব্যাপারে সমস্ত ফুক্বাহায়ে কেরাম একমত যে, এমন কুলাঙ্গার যদি স্বীয় কুফরী থেকে তওবা না করে, স্বীয় ঈমান ও বিবাহ নতুন করে না করে, তাহলে এ ব্যক্তি মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা আবশ্যক।
কিন্তু ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে এ ব্যাপারে এখতেলাফ আছে যে, যদি সে ব্যক্তি তওবা করে, তাহলে তার থেকে হত্যার বিধান রহিত হবে কি না?
ইমাম মালেক এবং ইমাম মুহাম্মদ এর ফাতওয়া হল,
রাসূল সাঃ কে মন্দ বলা এটা এমন অপরাধ যে, তওবা করার পরও তার থেকে হত্যার বিধান রহিত হয় না। অনেক হানাফী ফক্বীহ ও শাফেয়ী ফক্বীহ একথার উপরই ফাতওয়া দিয়েছেন।
কিন্তু ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম শাফেয়ী এর প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হল তওবা করা ও দ্বিতীয়বার ঈমান আনার পর তার থেকে হত্যার শাস্তির বিধান রহিত হয়ে যায়। অবশ্য এসব লোকদের উপর উপযোগী শাস্তি দেয়া আবশ্যক।
ইবনে আবেদীন শামী হানাফী লিখেন যে, ইমাম সুবকী বলেন যে, যদিও একথাকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে যে, রাসূল সাঃ সমালোচনা ও বেআদবীকারী তওবা করলে এবং দ্বিতীয়বার ইসলাম গ্রহণ করলে এবং ইসলামী বিধান মানার দৃঢ়তা প্রকাশ করলে তার তওবাকে গ্রহণ করা হবে এবং তাকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আমার সন্দেহ হয় যে, সে ঈমানের মরতে পারবে কি না? কেননা রাসূল সাঃ এর সাথে বেয়াদবী বহুত মারাত্মক অপরাধ। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আত্মমর্যাবোধ অনেক কঠোর। এজন্য এ ব্যাক্তির মৃত্যুর ব্যাপারে আমার ঘোর সন্দেহ আছে যে তাকে হেদায়াত থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে। তার ঈমানকে বরবাদ করা হতে পারে, এবং হেদায়াত পাওয়ার তৌফিক নাও হতে পারে।
{রাসায়েলে ইবনে আবেদীন-২/২৫১}
বিস্তারিত জানতে দেখুন-
১- হাফেজ ইবনে তাইমিয়া প্রণিত “আস সারেমুল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল সাঃ”।
২- তাক্বীউদ্দীন সুবকী প্রণিত “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল সাঃ”।
৩- কাজী ইয়াজ এর প্রণিত “আশ শিফা”।
৪- ইবনে আবেদীন শামী প্রণিত তাম্বীহুল ওলাত ওয়াল আহকাম আলা শাতিমি খাইরিল আনাম”।
মুরতাদ ও মুহাম্মদের সমালোচনা ও বেআদবীকারীর কে হত্যা করবে কে?
ইমাম আবু হানীফা এবং ইমাম শাফেয়ী এর মতানুসারে তাকে হত্যা করবে রাষ্ট্রপ্রধান বা তার প্রতিনিধিরা। কিন্তু সাথে সাথে একথাও লিখেছেন যে, যদি কোন সাধারণ মানুষ তাকে হত্যা করে ফেলে তাহলে তার উপর কোন শাস্তি আসবে না। কেননা মুরতাদ হওয়ার কারণে গুস্তাখে রাসূল লোকটি প্রথমেই তার রক্তকে অন্যের জন্য হালাল করে দিয়েছে।
বাদায়েউস সানায়েতে বলা হয়েছে-
যদি তাকে কেউ হত্যা করে তওবা করার আগেই তাহলে কাজটি মাকরূহ হলেও হত্যাকারীর উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। কেননা মুরতাদ হওয়ার কারণে গুস্তাখে রাসূল লোকটি প্রথমেই তার রক্তকে অন্যের জন্য হালাল করে দিয়েছে। {বাদায়েউস সানায়ে-৭/১৩৪}
বর্তমানে বাংলাদেশের উগ্র মোল্লারা ও মত পোষণ করেন যে, মুহাম্মদের অবমানকারীকে নিজের হাতে হত্যা করাই উত্তম।
শেষকথা-
নবী মোহাম্মদের আইনে মুরতাদের (ধর্ম ত্যাগের) শাস্তি হল মুরতাদ কে হত্যা করতে হবে! যা তার সহি উম্মতের অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে চাপাতি দিয়ে।
উল্লেখিত রেফারেন্সসহ আলোচনা দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, নবী মোহাম্মদ কে যারা সমালোচনা করে তারা মুরতাদ। মোহাম্মদের ইসলামিক আইনে তাদের একমাত্র শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড।
এই হল ভণ্ড দয়াল নবী মুহাম্মদের দয়ার নমুনা!!!!