আমাদের দেশে একজন মেয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে কখনও না কখনও কোন না কোন পুরুষের লোভী হাত দ্বারা অপমানিত হয়নি। বাসে, ট্রেনে, মার্কেটে, ভীড়ে – সবখানে পুরুষরা ওঁৎ পেতে থাকে – কখন সুযোগ পেলেই কোন মেয়ের শরীর স্পর্শ করা যাবে? এতই লোভনীয় জিনিস মেয়েদের শরীর যে কোনভাবেই লোভ সামলানো যায়না। মেয়ে! শুধু মেয়ে হলেই হলো!! চিকণ-মোটা, কালো-ফর্সা, লম্বা-বেঁটে, সুন্দরী-অসুন্দরী, বিবাহিতা- অবিবাহিতা, যেকোন বয়সী, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, পাগল, এমন কি শিশু হলেও আপত্তি নেই। কুকুরের মত ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। যেকোন ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, যেকোন আর্থ-সামাজিক স্তরের, বিবাহিত বা অবিবাহিত যেকোন বয়সের বেশীরভাগ পুরুষ মেয়ে পেলেই খুবলে খেতে চায়।
কেউ প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কখনও ক্ষমতা বা জোর খাটিয়ে, কখনও শিক্ষিতরা ভদ্রতার মুখোশে মেয়েদের ব্যবহার করে। চোখ টেপা, ঠোঁট ও চোখের নোংরা অভিব্যাক্তি, অশ্লীল কথা, … কত রকমভাবে মেয়েদেরকে অপমান করা যায় !! মেয়েদেরকে অপমান করতে পারলে পুরুষরা খুশী হয়, অপদস্থ বা ব্যবহার করতে পারাকে কৃতিত্ব মনে করে, গর্ব করে বন্ধুদের কাছে বলেও। অসম্ভব বন্য তৃপ্তি পায়, যখন দেখে তাদের অপমানে কোন মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে।
কেন এত অপমান?? কি দোষ তাদের??? এত ফাও খেতে ভাল লাগে কেন?
শুধু যৌন হয়রানি নয়, প্রতি পদে পদে মেয়েরা নানা নির্যাতনের শিকার। কোন দোষ না করেও মেয়েরা শাস্তি পায়। এমন দোষ যার উপরে মেয়েদের কোন হাত নেই। বাবা যৌতুক দিতে না পারলে, সন্তান না হলে, ছেলে সন্তান না হলে, গায়ের রং কালো হলে, দেখতে সুন্দর হলে, বিধবা হলে, স্বামীর চেয়ে বেশী যোগ্য হলে…..ইত্যাদি।
আবার কখনও কখনও অন্যের ইচ্ছা মেনে নিতে না পারলেও তারা নির্যাতিত হয়। যেমন- বখাটেকে প্রেমিক হিসেবে পছন্দ করতে না পারলে, কাউকে বিয়ে করতে রাজী না হলে, স্বামীর অত্যাচারে ডিভোর্স নিলে, স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দিলে, স্বামীকে ২য়, ৩য়.. বিয়ের অনুমতি না দিলে, নিজের কষ্টার্জিত টাকা স্বামীর হাতে তুলে দিতে রাজী না হলে….ইত্যাদি।
ভাত দিতে দেরী হলেও স্বামীর মার খেতে হয়। এখনও অনেক গ্রাম্য ও অশিক্ষিত পুরুষ মনে করে, স্ত্রীকে অনুগত রাখতে হলে তার প্রতি কঠোর হওয়া প্রয়োজন। নাহলে তারা মাথায় উঠবে। আর সে কারণেই মাঝে মাঝে তাকে প্রহার করা জরুরী।
যত সমস্যাই হোক, যত অত্যাচারই করুক, তবু বাবা-মা চায়না মেয়ে স্বামীকে তালাক দিক ডিভোর্সের কারণে সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে।
বাবা বা ভাইরা মেয়ে ও তার সন্তানদের আর্থিক দায় নিতে চায়না, এমনিতেই আমাদের দেশের মেয়েদের ভাল বিয়ে হওয়া সহজ নয়। তার উপর মেয়ে অসুন্দর, বেকার বা ডিভোর্সি হলে তো আরোই সমস্যা।
মাথার উপরে বাবা, স্বামী বা ছেলে, মানে কোন পুরুষের ছায়া না থাকলে মেয়েরা আরো বেশী আক্রমণযোগ্য হয়ে যায়। তাই ছেলে সন্তান আমাদের সব পরিবারে খুব বেশী কাংখিত। তাছাড়া বৃদ্ধ বয়সে আশ্রয়, দেখাশোনা, খাওয়া- পরা – সমাজ ও ধর্মমতে এসব দ্বায়িত্ব মূলতঃ ছেলেদের। তাই সব পরিবারে ছেলে সন্তান এত বেশী প্রয়োজন।
নারীবাদী, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া, এনজিওগুলো এবং মানবতাবাদীরা প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ, চিৎকার, লেখালেখি করছে নারীদের প্রতি অমানবিক আচরণ, বৈষম্য, নির্যাতন এগুলো বন্ধ করার জন্য। এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তেমন কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা। এত লেখাপড়া শিখিয়েও মানুষের মানসিকতার মোটেই পরিবর্তন করা যাচ্ছেনা।
কেন মেয়েদেরকে শুধুই ভোগের সামগ্রী মনে করা হয়? কেন নির্যাতন ও বৈষম্য করা হয়? কেন মেয়েদেরকে ‘মানুষ’ ভাবা হয়না? এক কথায় এর উত্তর – এজন্য দায়ী পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা।
মেয়েদের প্রতি ছেলে ও মেয়েদের হীন মানসিকতা তৈরী হয় কখন থেকে?
এর শুরু হয় কিভাবে? কেন, কখন, কিভাবে একটি ছেলে মেয়েদেরকে ‘মানুষ’ না ভেবে তার অধীনস্ত নীচু শ্রেণীর ফালতু জীব ভাবতে শুরু করে?
আসুন জানি।
প্রতিটা শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম প্রতিষ্ঠান হল তার বাড়ী, তার পরিবার। এটিই তার আচরণ, মূল্যবোধ, ধারণা, বিশ্বাস, নৈতিকতা, শিক্ষা.. ইত্যাদির ভিত্তি তৈরী করে দেয়। এই ভিত্তিই তার সারাজীবনের আচরণের মূল চাবিকাঠি। এখান থেকে সে যা শিখবে, সারাজীবন সে তাই করবে। পরিবারে সে ভাল কিছু শিখলে সে ভাল হবে, নাহলে খারাপ।
বিদেশে প্রতিটা বাবা-মা জানে কোন বয়সের বাচ্চাদের সাথে কি আচরণ করতে হবে, বাচ্চাদের সামনে কি কথা বলা যাবে বা যাবেনা। তার সামনে কি আচরণ করা যাবে বা যাবেনা, তা আমরা জানিনা। আমাদের সমস্যার শুরু এখান থেকেই।
ছেলে ও মেয়ে সন্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয় তখন থেকেই যখন জানা যায় গর্ভস্থ শিশু ছেলে না মেয়ে। ছোটবেলা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা পরিবার, প্রতিবেশী, স্কুল, খেলার সাথী, শিক্ষক, সমাজ – এদের কাছ থেকে দিনে দিনে একটু একটু করে শেখে যে মেয়েরা নীচু শ্রেণীর জীব, পুরুষের আজ্ঞাবহ, চাকর সমতুল্য এবং কোনমতেই সে পূর্ণাংগ মানুষ নয়। শিশুরা ওদের সামনে বা ওদের সাথে করা বড়দের নানা আচরণ থেকে এমন ধারণা পায়। তাই পরবর্তীতে সেও বড়দের মতই আচরণ করে।
উদাহরণ দেই।
– শিশুরা ছোটবেলা থেকে দেখে যে বাবা মাকে মারে, গালি দেয়। দিতে পারে। এটা তার অধিকার। কিন্তু কোন মা সেটা পারেনা। মা গালি বা মার খেয়েও হাসিমুখে আবার সংসার করে, বাবা অন্যায় করলেও শাস্তি হয়না, তাকে কেউ কিছু বলেনা। বাবার কোন আচরণকেই অন্যায় মনে করা হয়না। তাই বাবার মর্যাদা বেশী, মায়ের কম।
– শিশু জানে, টাকা থাকে বাবার হাতে, মা ভিখারী। যেকোন প্রয়োজনে বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হয়। বাবার মর্জি হলে দেয়, না হলে দেয়না। না দিলে মায়ের কিছু করার থাকেনা। ভিখারীর আবার মর্জি কি?
চাকুরীজীবী মায়েরাও টাকা ইচ্ছামত খরচ করতে পারেনা। স্বামী করতে দেয় না।
– মা ও বাড়ীর মেয়েরা অনুৎপাদনশীল কাজ করে। অর্থাৎ তারা যত কাজই করুক, তারা সে কাজের কোন পারিশ্রমিক পায়না। মা টাকা আয় করেনা। তাই শিশুরা মায়ের কাজ বা পরিশ্রমকে ‘ফালতু’ ভাবতে শেখে। মায়ের ভূমিকাকে গুরুত্বহীন মনে করে।
– বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলে, অর্থাৎ কোন না কোন পুরুষ মেয়েদের পরিচালিত করে। মেয়েরা নিজের ইচ্ছামত কিছু করতে পারেনা। সে কি করবে, কি করবেনা, সেটা সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, নিতে দেওয়া হয়না। তার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষ। ফলে শিশুরা মেয়েদেরকে পরনির্ভরশীল বা পুরুষের পরগাছা ভাবে, কখনোই স্বাধীন সত্ত্বা ভাবতে পারেনা।
– মেয়েদেরকে ছেলেদের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় সবসময়। যেমন – একা কোথাও যেতে দেওয়া হয়না, সন্ধ্যার পর বাইরে যেতে বা থাকতে দেয়া হয়না, ভীড়ে একা ছাড়া হয়না, ছেলেদের সাথে মিশতে দেয়া হয়না, সব পরিবেশে যেতে দেওয়া হয়না, সব কাজ করতে দেয়া হয়না,…. ইত্যাদি। অর্থাৎ মেয়েরা আক্রমণযোগ্য প্রাণী। যেকোন সময় যেকোন পুরুষ তাকে আক্রমণ করতে পারে, এই ভয় তার মনে বদ্ধমূল করে দেয়া হয় বলে সে নিজেকে দূর্বল ভাবে, ভয়ে ভয়ে সাবধানে চলে এবং নিজেকে গুটিয়ে রাখে।
– নাটক, সিনেমা, খবরে প্রতিনিয়ত শিশুরা দেখে যে, মেয়েরা আক্রান্ত হয়, যার কোন প্রতিকার হয়না। আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই।অর্থাৎ মেয়েদের প্রতি অন্যায় করে পার পাওয়া যায়। পুরুষ দোষ করলেও সমাজ মেয়েদেরকেই দায়ী করে। যেমন ডিভোর্স হয়েছে শুনেই বলা হয় নিশ্চয় মেয়ের দোষ, রেপ হয়েছে শুনেই বলা হয়, নিশ্চয় খোলামেলা পোষাক পরেছিল, স্বামী মেরেছে শুনেই বলে মারতেই পারে, সে তো স্বামী, দোষ না করলে এমনি মারে? ফলে মেয়েরাও মেনে নেয় যে তার প্রতি নির্যাতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটাই ন্যায্য।
– স্বামীর হুকুম ছাড়া স্ত্রী কিছু করতে পারেনা। ধর্মও তাই বলেছে। স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়া দানও করতে পারবেনা। ধর্ম স্বামীকেও স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ করতে বলেছে। তবে স্বামী সেটা না করলে সমাজ তেমন আপত্তি করেনা। তাই পুরুষ তা করার প্রয়োজন অনুভব করেনা।
– সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাবা নেন। তার মতই সব। মায়ের মত গুরুত্বহীন। তাই শিশুরা ধরেই নেয়, বাবার বুদ্ধি বেশী, মায়ের বুদ্ধি কম। মেয়েমানুষের বুদ্ধি কম, এটা পরিবার-সমাজে সবাই জানে, মানে। তাই মেয়েদের মতের কোন দাম দেয়া হয়না।
– সব ধর্মে বহুবিবাহ জায়েজ। কোন কারণ না দেখিয়েও স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়া যায়, না দিয়েও একাধিক বিয়ে করা যায়। তাই বহু স্বামী বউ ছেড়ে গিয়ে আবার বিয়ে করে, করতে পারে। তাতে স্বামীর কোন শাস্তি হয়না। যেকোন বয়সী পুরুষ খুব সহজে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে। কিন্তু মেয়েরা পারেনা, বিশেষ করে সন্তান থাকলে তো আরোই পারেনা।
– স্ত্রী নিজেকে স্বামীর অধীনস্ত মনে করে, ভয় পায়, স্বামী অসন্তুষ্ট হতে পারে, এমন কোন কাজ নিজে করেনা, সন্তান বা অন্য কাউকে করতে দেয়না। মা বাচ্চাকে বলে, “এটা কর বা ওটা করোনা, বাবা রাগ করবে।” ফলে শিশু বোঝে, পরিবারে পুরুষরাই শ্রেষ্ঠ, তার কথাই শেষ কথা।
– বাবা মালিক, মা চাকর। বাবাকে না খাইয়ে মা খায়না, খেতে পারেনা। সব ভাল খাবার বাবা, ছেলে, বাড়ীর গুরুজনদের দিয়ে তারপর মেয়েদের দেয়। সবার খাওয়া হয়ে গেলে মা নিজে হাসিমুখে যা থাকে তাই খায় বা কখনও কখনও বাসি বা উচ্ছিষ্ট খাবার খায়। মায়েরা কখনোই একসাথে খায়না। সবার জামাকাপড় কিনে তারপর মায়ের জন্য কেনে। ফলে বেশীরভাগ সময় মায়েদের জন্য কেনাকাটা হয়না। সবার প্রয়োজন জরুরী, মায়েরটা ছাড়া।
– ছুটির দিনে বাবা টিভি দেখে, আরাম করে। মা সেদিন তার আরামের জন্য বিশেষ খেয়াল রাখে, ভাল খাবারের ব্যবস্থা করে, তার কাপড় কেচে দেয়,, চুল কলপ করে দেয়। রোজ কাজ থেকে ফিরেও বাবা আরাম করে। অথচ মায়ের কোন ছুটি নেই। তার কোন বিনোদনেরও প্রয়োজন নেই। কারণ সে সারাদিন বাড়ীতে বসে বসে আরাম ছাড়া আর তো কিছু করেইনা! চাকরী বা কাজ করলেও তার রোজকার সংসারের কাজে আর কেউ তাকে সাহায্য করেনা।
– আমাদের সমাজের নিয়ম অনুসারে কিছু কাজ ছেলেদের, কিছু কাজ মেয়েদের। তুলনামূলকভাবে মেয়েদের কাজগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ ও বোরিং। রান্না, কাচা, বাচ্চা সামলানো, পরিবারের সবার দেখাশোনা.. ইত্যাদি সব কাজ করতে গিয়ে সে অবসর পায়না। দিনরাত ব্যস্ত। পুরুষরা কাজ বা চাকরী শেষে বাড়ী ফিরে আরাম করে, বৌ-মেয়ে-বোন-মা তার সেবা করে, কারণ সে সংসার চালানোর জন্য টাকা আনে।
– মেয়েরা সংসার, বাচ্চা সামলিয়ে সময় পায়না। ফলে তার সৃজনশীলতা থাকলেও প্রকাশ পায়না। ধীরে ধীরে সে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেনা, সারাজীবন পরনির্ভরশীল থেকে যায়। পুরুষ ইচ্ছে করে মেয়েদের অর্থ-সম্পদ করায়ত্ব করে যাতে মেয়েরা তাকে ছাড়া একা বাঁচতে না পারে।
– হিন্দু মেয়ে বিধবা হলে গহনা-শাঁখা-সিঁদুর খুলে নেয়া হয়, চুল কেটে দিয়ে কুশ্রী করা হয় যাতে কেউ তাকে পছন্দ না করে, বিয়ে করতে না চায়। যৌন চাহিদা অবদমনের জন্য ধর্মের দোহায় দিয়ে বিধবাদের নিরামিশ খাওয়ানো হয়। রংগীন পোষাক, রূপচর্চা সব নিষিদ্ধ। মুসলিমদের মধ্যেও বিধবাদের গহনা পরা, রঙীন পোষাক পরা, বিয়ে- উৎসবে যাওয়া ভাল চোখে দেখা হয়না। অর্থাত স্বামী ছাড়া সমাজে মেয়েদের অবস্থান দূর্বল ও নীচু হয়, তার সব চাওয়া-পাওয়া, ভাললাগা-মন্দলাগা গুরুত্বহীন হয়ে যায়। ফলে মেয়েরা বাধ্য হয় যেকোন মূল্যে পুরুষের সাথে, তার ছত্রছায়ায় থাকতে।
– ছোটবেলা থেকে মেয়েদেরকে বিয়ে করে সংসার করার জন্য তৈরী করা হয়। তারা পড়াশুনা, চাকরী, রূপচর্চা, শরীর ঠিক রাখা- এসবই পুরুষের জন্য করে যাতে তার ভাল বিয়ে হয়। অর্থাৎ মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হল ভাল বিয়ে হওয়া। অন্য কথায় ভাল আশ্রয় পাওয়া। নিজেকে স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কোন চেষ্টাই সে করেনা। কারণ সে জানে, একা সে টিকতে পারবেনা, তাকে টিকতে দেয়া হবেনা।
– ছোটবেলা থেকেই সব ভাল জিনিসটা বরাদ্দ থাকে ছেলেদের জন্য। সবসময় ছেলের সুবিধার কথা আগে ভাবা হয়, পরে মেয়েদের। যত্ন ও ভালবাসাও ছেলের জন্যই বেশী। ফলে মেয়েরা নিজেদেরকে ছেলেদের তুলনায় কম কাঙ্খিত ও কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে বাধ্য হয়।
– মেয়েরা ধর্ষিত বা শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হলে আমরা গোপন করি। কারণ মেয়েটিকেই সবাই অস্পৃশ্য মনে করবে, তার ভাল বিয়ে হবেনা, তার পরিবারের বদনাম হবে। অথচ যারা অন্যায় করল, তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ হয়না। এটিও নারীকে মানসিকভাবে ছোট ও দূর্বল ভাবতে শেখায়। একটি মেয়ের সম্ভ্রম চলে যাওয়া মানে সমাজে সে অপাংতেয়। পচে যাওয়া খাবারের মত, যা কেউ খেতে চায়না। পুরুষ রেপ করলে, পতিতালয়ে গেলে, পরকীয়া করলে, প্রেমিকার সাথে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করলেও তার কিছু হয়না, তাকে কেউ কিছু বলেনা। দিব্বি আবার বিয়ে করতে পারে, তার মান এতটুকু কমেনা। কিন্তু মেয়েরা সমাজের চোখে একবার ভ্রষ্টা খেতাব পেলে তার বেঁচে থাকা দায় হয়ে যায়।
– সব খারাপ বা নেতিবাচক ঘটনার জন্য মেয়েদেরকে দায়ী করা হয়। যেমন- সন্তান ফেল করলে, বখে গেলে, দোষ করলে, ভুল করলে, প্রেম করলে, চুরি করলে… তার দায় মায়ের। কারণ বাবা আয় করেন, তাই বাকী আর কিছু সে করবেনা। তার কাছে কেউ কিছু আশাও করেনা। সন্তান লালন-পালন, পড়াশোনা, সব দায় একা মায়ের। বাচ্চাদের প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং এর টাকা দিতে বাবাদের আপত্তি থাকেনা। কিন্তু যে মা দিনের পর দিন বাচ্চার পিছনে পরিশ্রম করে, তাকে ঈদে, পূজায় বা বিয়েবার্ষিকীতে শাড়ী দিতে গেলে টাকা ফুরিয়ে যায়। শিশুরা এসব দেখে দেখে মেয়েদের অশ্রদ্ধা করতে শেখে। ছেলে শিশুরা নিজেদেরকে বাবার মত ক্ষমতাধর ভাবতে শেখে আর মেয়েরা নিজেদেরকে দূর্বল, পরনির্ভরশীল ও হেয় ভাবতে শেখে।
আমার মেয়েবেলা
ছোটবেলায় আমি ভাল ক্যারাম খেলতাম। ( ভার্সিটিতে জয়েন করার পরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।) আব্বা আমার কাছে হেরেও খুশী হতেন। রোজ পরিবারের সবাই মিলে, এমনকি প্রতিবেশীদের সাথেও খেলতাম। অমিত কাকু (অমিত রায় চৌধুরী, ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক) আর মল্লিক কাকু ( ড. অশ্বিনী কুমার মল্লিক, অধ্যাপক, গণিত বিভাগ) – দুই হরিহর আত্মা। ছুটির দিন সকালে ও অন্যদিন বিকেলে আসতেন আমাদের বাসায় ক্যারাম খেলতে। দু’জনে খুব ভাল খেলেন, পার্টনার। আমি আর আব্বা পার্টনার হতাম। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। হারজিত ফিফটি ফিফটি। বাসায় দাবা, লুডু খেলা হত। বিকেলবেলা মাঠে ব্যাডমিন্টন ও অন্যান্য খেলা আমরা ছেলেমেয়ে একসাথে খেলতাম।
ছোটবেলায় দেখতাম আব্বা বিএনপির লোক হলেও তাঁর বেশীরভাগ ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিলেন আওয়ামীপন্থী। কিন্তু এটা নিয়ে কখনও তাঁদের মধ্যে কোন কলহ হতে দেখিনি। এখন একদলের লোক আরেকদলের লোককে অস্পৃশ্য মনে করে। তারা মনে করে নিজের দল সেরা, অন্যেরটা বানের জলে ভেসে এসেছে।
আমরা দু’ভাইবোন আরো বাচ্চাদের সাথে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যেতাম, আসতাম। একবার ভার্সিটিতে মারামারি লাগলো। তাড়াহুড়া করে স্কুল ছুটি দিয়ে দিল। ভিসির বাড়ীর সামনে মারামারি। আমরা প্যারিস রোড ধরে হাঁটছি, এদিক সেদিক বোমা ফাটছে, আমরা ভয়ে ভিসির বাড়ীর ভিতরে ঢুকে গেলাম। দেখি একটি আহত ছাত্রকে মেডিকেলে নিয়ে যাবার জন্য ছাত্ররা রাগারাগি করছে।ভিসি অফিসের লোকজন গাড়ী দিচ্ছে না। ছেলেটির মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়ছে। স্কুলে যাওয়া আসার পথে নানা অভিজ্ঞতা হতো। বাগানের ফুল তুলতাম, গাছের লিচু ছিঁড়ে খেতাম। মাঝে মাঝে হলে মামার রুমে যেতাম। কোনদিন আব্বা-আম্মা আমাদের স্কুলে আনা-নেয়া করেননি। এখনকার বাবা-মা কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পিছেও আঠার মত লেগে থাকে।
ছেলেমেয়েদের সব ধরণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে যাতে তারা যেকোন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে পারে।। হারলে বা জিতলে কেমন লাগে, কষ্টকর বা বৈরী পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে ও আপনজনকে সামলাতে হয়, বিপদে পড়লে কিভাবে নিজেকে ও অন্যকে সাহায্য করতে হয়… এগুলো সব শেখার সুযোগ দিতে হবে। আমার ভাই খেলতে গিয়ে মার খেয়ে ফিরলে আম্মা বলত, “পারিস না, লাগিস কেন? মেরেছে, বেশ করেছে। তাহলে আর মারামারি করবিনা। এখনকার মায়েরা ঝগড়া করতে যায়। কেন মারবে?
যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা সহজে সবার সাথে মিশতে পারে,, সবকিছু শেয়ার করার মানসিকতা তৈরী হয়। যৌথ পরিবার না হলেও ছোটবেলা থেকে দেখেছি, আমাদের বাড়ীতে প্রচুর গেস্ট আসে। অনেক দিন এমন হয়েছে, স্কুল থেকে ফিরে খাবার পাইনি। আম্মা গেস্টদের খাইয়ে দিয়ে আবার রান্না বসিয়েছে। সেই রান্না হবার পর খেয়েছি। খাওয়া, শোয়া, পড়া, জামাকাপড় কেনা- সবকিছুতেই অসুবিধা হয়েছে।( আব্বা বাড়ীর বড় ছেলে হওয়ায় তাঁকে সবকিছু সামলাতে হতো)। তবু সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিতাম।
একবার আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার ঘটনা মনে আছে। আমি প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সব বিষয়ে লিখিত পরীক্ষাগুলোতে ইংরেজীতে উত্তর লিখতাম। অনার্সে হিস্ট্রি অফ সাইকোলজি নামে একটা কোর্স ছিল। আমি ঠিক করলাম, এই কোর্স টা বাংলায় লিখব। ঐ পরীক্ষার আগে চারদিন গ্যাপ আছে। আমি ভেবেছি, বাংলা পড়তে তেমন সময় লাগবেনা। তাই ওই পার্টটা সবচেয়ে কম পড়েছি। আব্বা তখন লতিফ হলের প্রভোস্ট। হঠাৎ আমার জ্বর, বমি। সেইসাথে বাড়িভর্তি গেস্ট। কিছুই পড়া হয়নি। পরীক্ষার আগের রাতে রাত তিনটায় আমার ঘরে আলো দেখে আব্বা উঠে এসে বললেন, আমি জেগে আছি। তুই পড়।” সারারাত আব্বা বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুয়ে কাটালেন। উনি চিন্তিত। কারণ, একটা পরীক্ষা খারাপ হওয়া মানে প্রথম শ্রেণী ছুটে যাওয়া। আর তার মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে না পারা। আমার যত মেধাই থাকুক, শুধু ড. আব্দুল হাই তালুকদারের মেয়ে হওয়ার অপরাধে এমনিতেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী হওয়া প্রায় অসম্ভব। (কারণ উনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।পরে তিনি নিয়মিত পেপারে লেখালেখি, টিভিতে টকশো করতেন, শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, সেক্রেটারি, কলা অনুষদের ডীন… এসব হয়েছেন।) পরে হয়েছেও তাই। আমি নিজ বিভাগের শিক্ষক হতে পারিনি, যদিও অনার্স, মাস্টার্স দু’টোতেই ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়েছিলাম। এখন আমরা ছেলেমেয়েদের স্কুলের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে বলে বাড়ীতে গেস্ট এ্যালাও করিনা।
আমার বর পড়াশুনার জন্য দেশের বাইরে বাইরে থাকতো। আমি আমার মেয়েদের নিয়ে থাকতাম আব্বা-আম্মার সাথে। মেয়েদের দেখাশুনার জন্য অনেকটা বাধ্য হয়েই থাকতাম। অনেকেই বলতো ঘরজামাই থাকি। আমি গায়ে মাখতাম না। নানা-নানী,দাদা-দাদী, মামা-খালাদের আদর যে একটা শিশুর জন্য কতবড় আশীর্বাদ, সেটা আমি জানি। আমার বড় মেয়েটা হেলদী, গায়ের রংও তেমন পরিস্কার নয়। আমার আব্বা যখন আমাকে লুকিয়ে মেয়ের হাতে চকলেট দেয় ( ওজন বাড়বে বলে চকলেট আমি খেতে দিতে চাইনা) বা ইংল্যান্ডের পন্ডস ক্রিম কিনে এনে মেয়েকে মাখাতে বলে, আনন্দে আমার চোখে পানি চলে আসে। এই ভালবাসার কি কোন তুলনা হয়?
আমার মেয়েরা শেয়ার করার মানসিকতা পেয়েছে আমাদেরই মত। ওরা অন্যের কষ্ট বোঝে, ওদের মনে দয়ামায়া বেশী। পড়ে গিয়ে আম্মা হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছেন। আমার সাত বছর বয়সী ছোট মেয়ে পরম যত্নে যখন আম্মার হাঁটুতে ব্যথানাশক মলম লাগিয়ে দেয়, আমার ভীষণ ভাল লাগে। ওরা এভাবেই মানবিক হোক, ভালবাসতে শিখুক, অনুভূতিশীল হোক।
আমাি এসএসসি ও এইচএসসিতে বোর্ড স্ট্যান্ড করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবার সময় দর্শনের ফর্ম তুলিনি। কারণ আমি কিছুতেই আব্বার সাবজেক্ট পড়ব না। সবাই বলবে, বাবার ডিপার্টমেন্ট, দেয়া ফার্স্টক্লাস। এই বদনাম আমি নিতে রাজী নই। আমার মেধা থাকলে যেকোন বিষয়েই আমি ফার্স্ট ক্লাস পাব, টিচার হতে পারব। এই ছিল আমার ধারণা, বিশ্বাস। ভর্তি পরীক্ষা খুব ভাল দিয়েছি। কিন্তু নোটিশ বোর্ডে চান্স পাওয়া ছাত্রদের তালিকায় আমার রোল লাল কালিতে কেটে দেওয়া। আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম তুলিনি। শুধু হাজী চাচার (ড. আমানুল্লাহ, মার্কেটিং এর অধ্যাপক, আব্বার বন্ধু) কথায় তাঁর অনুষদে পরীক্ষা দিয়েছি। তবে সে পরীক্ষা তেমন ভাল হয়নি। আমি এইচএসসিতে মনোবিজ্ঞন পড়েছি, আমার ভাল লাগে। তাছাড়া আব্বার ঘনিষ্ঠ বন্ধু লতিফ চাচা ( মোঃ আব্দুল লতিফ, মনোবিজ্ঞনের অধ্যাপক) আমাকে খুব উৎসাহ দিলেন। শিক্ষকদের ছেলেমেয়েদের জন্য কোটা থাকে। আমি কোটাতেও আবেদন করিনি। কারণ আমার ধারণা আমি এমনিতেই চান্স পাব। ভর্তি হতে না পারলে পুরো এক বছর লস। টেনশনে সারারাত ঘুমাইনি। আমি আব্বাকে বললাম, কোথাও কোন গোলমাল হয়েছে। আমি পরীক্ষা ভাল দিয়েছি। তুমি খোঁজ নাও। পরে দেখা গেল গোটা জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদে আমি তৃতীয় হয়েছি। কম্পিউটার ভুল রেজাল্ট দিয়েছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা কি এরকম ঝুঁকি নিতে পারে?
ছোটবেলা থেকেই ছেলে ও মেয়েদের আলাদা রাখা হয়, আলাদা খেলা, আলাদা শোয়া, আলাদা খাবার, আলাদা সুবিধা..। আলাদা স্কুল, কলেজ। এমন কি একই স্কুলের ক্লাসেও ছেলে-মেয়ে আলাদা আলাদা বেঞ্চে বসে।
এ এক আজব প্যারাডক্স। ছেলেদের দ্বারা আক্রান্ত হবার ভয়ে বা প্রেমে পড়ার ভয়ে ছেলেমেয়েকে অভিভাবকরা একসাথে রাখেনা। আবার একসাথে রাখেনা বলেই মেয়েদের প্রতি ছেলেদের আকর্ষণ, লোভ, আগ্রহ কমেনা। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, গোপন ও অসহজলভ্য কোনকিছুর প্রতি মানুষের কৌতুহল, আগ্রহ সবচেয়ে বেশী। উন্নত দেশগুলোতে ছেলেমেয়ে একসাথে চলাফেরা, পড়া, কাজ করে। মেয়েরা খোলামেলা পোষাকে চলে। তাই ওসব দেশের ছেলেরা মেয়েদের দিকে লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে তাকায় না, মেয়েদেরকে অপমান, নির্যাতন করেনা।
উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার সমান। একজন ছেলে যা যা করতে পারবে, একটি মেয়েও তাই। কোন মেয়েকেই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করা হয়না। জোর করে কোন অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিতও করা হয়না। মেয়েরাও মানুষ। পছন্দ না হলে মেয়েরাও ডিভোর্স করতে পারে, আবার বিয়েও করতে পারে, লিভ টুগেদার করতে পারে, কুমারী মেয়ে মা হতে পারে… ইত্যাদি।
আমরা মেয়েদেরকে মানুষ ভাবিনা। প্রতি পদে পদে ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক কারণের দোহায় দিয়ে মনে করিয়ে দেয়া হয় যে আমি মেয়ে। তাই পরিবারে ও সমাজে নারীদের অবস্থান, অধিকার, সুযোগ, যোগ্যতা, ক্ষমতা, ইচ্ছার স্বাধীনতা, … ইত্যাদি সব কম। এগুলো কমই থাকবে। কারো বেশী হলে সেটা পুরুষরা সহ্য করতে পারেনা।
উন্নত দেশের লোকেরা প্রতিটা ছুটিতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যায়। এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়, বিনোদনও হয়। আমাদের মত গরীব দেশের পুরুষরা সেক্সকে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম মনে করে। একারণেই মেয়েদের শরীরটা তাদের এত পছন্দ। এজন্যই এরা বহুগামীও বটে।
বিদেশে যে কোন ছেলে বা মেয়ে যেকোন কাজ করে নিজের জীবন চালাতে পারে, তাই তারা স্বাধীন। মেয়েরাও সহজে কাজ পেতে পারে, তারাও চাইলে একা থাকতে পারে, বাঁচতে পারে। নিজের যোগ্যতা থাকলে পুরুষের সাহায্য ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তাই তাদের অত ভাবতে হয়না।
বিদেশে সব কাজ সবার। রান্না, ঘর-বাগান-গাড়ী-টয়লেট-কিচেন পরিস্কার করা, সন্তান প্রতিপালন- ইত্যাদি সব কাজ উভয়ে মিলে করে। তাই মেয়েরা কাজ বা জব করতে পারে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।
আমাদের দেশের নারীদের প্রতি অমানবিক ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূল কারণ হল মেয়েদের আর্থিক স্বাবলম্বীতা না থাকা। তাই এ অবস্থা থেকে মেয়েদের উত্তোরণ ঘটাতে হলে প্রথমে মেয়েদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে, যেটা পুরুষরা হতে দিতে চায়না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেয়ওনা। যেহেতু মেয়েদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আসবেনা, তাই মেয়েরা কোনদিন স্বাধীন বা মানুষও হবেনা। এও এক আজব প্যারাডক্স !!!