০
১২৭৬ বার পঠিত
ছোট বেলায় আমার খালার বাড়ির পার্শ্বে ধনাঢ্য হিন্দু পরিবার থাকতেন। তাদের পোষা একটি ময়না ছিলো যে হুবহু মানুষের গলা নকল করতে পারতো। একবার শুনলেই হতো। আমার মামনি মানে মা আমাকে সেই বাসায় নিয়ে যেতেন ময়নার ডাক শোনাতে। ময়নার সামনে গিয়ে আমার নাম ধরে ডাকতেন মা।
একদিন ওই বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম আরেক ছেলের সাথে। দেখি মামনি ডাকছেন। খুঁজি, কিন্তু মামনিকে পাই না। পরে বুঝেছি ওই ময়না ডেকেছিলো আমার নাম ধরে। সে মামনির গলা এবং আমার নাম তার কণ্ঠে এবং স্মৃতিতে ধারণ করেছিলো।
সম্প্রতি আমার এক পরিচিত, বন্ধুও বলা যায়, তিনি একটি সফটওয়্যারের কথা জানিয়েছিলেন লিখে। সেই সফটওয়্যারটি হুবুহু ময়নার কাজ করে। প্রথমে গলা শোনে এবং তা ধারণ করে নিজ তরিৎ চক্রে। তারপর তা তার তড়িৎ কণ্ঠে নকল করে। একেবারে হুবুহু।
অবশ্য সফটওয়্যার এবং যন্ত্র যখন আবিষ্কার হয়নি, তখনও এটা সম্ভব ছিলো। কিছু মানুষ আছেন, যাদের একটি বিশেষ গুন দিয়ে সৃষ্টি করেছে প্রকৃতি। সে গুন হলো তারা মানুষের কণ্ঠ নকল করতে পারেন। সেই ময়নার মতন। এদেরকে বলা হয় হরবোলা। এক সময় হরবোলাদের কাজ ছিলো কণ্ঠ নকল করে মানুষকে বিনোদিত করা। যখন টেপরেকর্ডার ও টেলিফোন এলো তখনও মানুষ হরবোলাদের দিয়ে আপনজনকে ভড়কে দিয়ে আনন্দ পেতো। তখন পর্যন্ত মানুষের মনে ঢুকেনি, কণ্ঠ নকল করে ঝামেলাও বাঁধানো যায়। সে সময়ের মানুষ আনস্মার্ট ছিলো, তাই অতটা ক্রিটিক্যাল হয়ে ওঠেনি।
বিষয়টি ক্রিটিক্যাল হওয়া শুরু হলো মোবাইল আবিষ্কারের পর থেকে। আর মোবাইল যখন স্মার্টফোনে রূপান্তরিত হলো তখন ক্রিটিক্যাল রীতিমত বিটকেল হয়ে উঠলো। কোনো স্মার্টফোনে কণ্ঠ পরিবর্তনের অ্যাপসই থাকে বা থাকতো। যা দিয়ে ছেলেকে মেয়েও বানানো যায়। মানে কণ্ঠ আর কী। অবশ্য এটা দিয়ে অনেক পরিবারে ঝামেলা শুরু হবার পর অ্যাপসটি আর ফোনে বিল্টইন থাকে না। গুগল প্লে স্টোর থেকেও উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
আমার এক বন্ধুর সংসারে এমন এক গণ্ডগোল বেঁধেছিলো। বন্ধুরা দুষ্টুমি করে ওরকম একটি ফোন থেকে মেয়ে কণ্ঠে বন্ধুর বউকে ফোন করেছিলো। পরের অবস্থাতো নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারছেন। শেষ পর্যন্ত বন্ধুর বউকে সেই ফোনের ব্যাপারটি শুধু বুঝিয়ে বলা নয়, হাতে-নাতে প্রমাণ দেখানোর পর রেহাই পেয়েছিলেন আমার সেই বন্ধুবর।
যাকগে, মোবাইলের যুগে হরবোলা টাইপ কিছু লোক জিনের বাদশা সাজা শুরু করলেন। তারা জিনের কণ্ঠে মানুষকে ফোন দিতে লাগলেন। কিছু মানুষ যারা এখনো ক্রিটিক্যাল স্মার্ট হয়ে উঠতে পারেননি, তারা জিনের বাদশাদের ফাঁদে পা দিলেন। পরিণতি যা হবার তাই, কিছু নগদ নারায়ন খসে গেলো পকেট থেকে। হালে বিকাশ নম্বর নিয়েও এমনটা শুরু হয়েছে। পরিচিত কণ্ঠে টাকার আব্দারের কথাও শুনেছি। কতটা ঠিক জানি না, কেউ কেউ বলে আপনজনের কণ্ঠ নকল করে অনেককে ফাঁসানোও হয়েছে।
অবশ্য এই টাইপ ফাঁসানোর কাজটা খুব লো-লেভেলের। শুধুমাত্র টাকা-পয়সার ধান্ধাবাজি। তাও মোটাদাগের নয়। এদের ক্ষমতা এই পর্যন্তই। সফটওয়্যার লেভেলের হাই-টেক ও হাই প্রোফাইল কাজ করার ক্ষমতা এদের নেই। এই টাইপ কাজ নাকি সোকল্ড সোশ্যালিস্ট দেশগুলোতে চলে। কিম নাকি এ বিষয়ে এক্সপার্ট। অভিযোগ রয়েছে অন্যদের প্রতিও। তবে সব অভিযোগ সত্য হবে এমন কিছু নেই। কারণ অভিযোগ প্রমাণের জন্য কোনো ‘নামা’ মানে কাগজপত্রতো নেই। কোনো কিছু প্রমাণে ‘নামা’টা থাকা জরুরি। না হলে অনেক সময় আটকে যেতে হয়। সামাজিক পাইক-বরকন্দাজদের হাতে ধরা খেতে হতে পারে। সুতরাং সবকিছুতেই ‘নামা’ থাকাটা অত্যাবশ্যকীয়। তবে মুশকিল হলো যারা এমন ‘নামা’ চান তাদের আমলনামাটা লেখে প্রকৃতি।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন