০
৮১৪ বার পঠিত
বিদেশি শিক্ষক আনা হবে; এই আনন্দে জাপানের মেইজি শাসনের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মৌতাতে চলে যান সহমত স্বপ্ন জোটের লোকেরা। বিদেশি শিক্ষক কনসেপ্টটা নতুন স্বপ্নের বীজতলা হয়ে ওঠে; সেখানে কল্পনার চারা গজায়; পরাগায়নের পরীরা নেচে বেড়ায়।
পরীক্ষামূলকভাবে একজন জাপানি শিক্ষক নিয়ে আসা হয়। নাম তার চাও চপা সমুসান। সমুসানকে তার প্রথম ক্লাসে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভাগীয় প্রধান ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করার অনুরোধ করে চলে যান।
একজন ছাত্র বলে, স্যার সর্ব প্রথমে পরিচয় পর্ব হইয়া যাক।
অধ্যাপক সমুসান বলেন, সময় অমূল্য। এমনিতেই চেনা-জানা হয়ে যাবে। এখন সবাই মিলে চেয়ার বেঞ্চ একপাশে জড়ো করতে হবে। চলো আজ শ্রেণীকক্ষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করি।
ছাত্র-ছাত্রীরা অবাক হয়। একজন বলে, স্যার এটা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজ। আমরা পড়তে এসেছি।
অধ্যাপক সমুসান নিজেই বেঞ্চ সরাতে শুরু করলে ছাত্র-ছাত্রীরাও যোগ দেয়। কেউ কেউ ফেসবুক লাইভে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এক ছাত্র নেতা অধ্যাপক সমুসানের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে দেয়। সেখানে সমুসানের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম শ্লোগান দিয়ে চলে যায় অভিনন্দন ভাইয়েরা।
সমুসান ছাত্র-ছাত্রীদের বলেন, লোক দেখানো রোগটা সারাতে হবে। কারণ এ কাজটা এখন থেকে প্রতিদিন করতে হবে তোমাদের।
মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে অনেকের; অনেকে খুশি হয়।
ক্লাস শেষে সমুসানকে সাইকেলে করে ফিরে যেতে দেখে তার এক ভক্ত হয়ে ওঠা ছাত্র দুঃখ করে ফেসবুকে লেখে, অধ্যাপক সমুসানকে গাড়ি দেয়া হয়নি; বড়ই পরিতাপের বিষয়।
সমুসান ডরমিটরিতে ফিরে ঘুমিয়ে গেছেন। ঘুম থেকে জেগে ওঠেন দরজায় নক করার শব্দ শুনে। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ সমুসানের গাড়ি চাই ট্রেন্ড দেখে; আমরা আপনাকে একটা গাড়ি স্পনসর করতে আগ্রহি হয়েছি।
সমুসান বিনয়ের সঙ্গে গাড়ি স্পনসরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আমি সাইকেলে চড়ি আনন্দে।
এরপর ফুল নিয়ে হাজির হয় দুই ছাত্র নেতা। সহাস্যে নিজেদের পরিচয় দেয়, আমরা অমুক কমিটির তমুক সম্পাদক। আমরা আপনাকে সম্বর্ধনা দিতে চাই।
সমুসান বলেন, আমি পড়তে ও পড়াতে এসেছি; এসব আনুষ্ঠানিকতা আমার মনোযোগ বিভ্রম ঘটায়। আমি দুঃখিত আপনাদের সম্বর্ধনা নিতে পারছিনা বলে।
এর পরপরই ফোন আসে এক টিভি চ্যানেল থেকে। হ্যালো স্যার, আজ রাতের টকশোতে আপনাকে চাই। আমি এক্ষুণি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
–কীসের টকশো!
–ঐ যে আপনি এলেন! অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো।
–আমাকে ক্ষমা করবেন। হায়ামির সঙ্গে ডিনার করতে হবে। আর আমি ক্লাসরুমে কথা বলি; টকশোতে কথা বলতে চাই না।
টকশো সঞ্চালিকা জিজ্ঞেস করেন, কে এই হায়ামি!
–আমার বান্ধবি!
সঞ্চালিকা ফোন রেখেই ‘কে এই হায়ামি’! ইনুর সঙ্গে তিনুর কীসের সম্পর্ক বলে একটি ফেসবুক স্টেটাস ঝেড়ে দেয়। অমনি ফেসবুকের বেডরুম অনুসন্ধান কমিটি কান খাড়া করে। ঢেউহীন জীবনে আনন্দের জোয়ার আসে।
রাতারাতি সমুসান টক অফ দ্য টাউন হয়ে ওঠেন। সমুসান ক্লাসরুমে গেলে ছাত্ররা সন্দেহের চোখে তাকায়। সমুসান লক্ষ্য করেন, বোর্ডে লেখা; কে এই হায়ামি!
কিছু ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করে বিভাগীয় প্রধানের কাছে, সমুসানের নৈতিক চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ। উনি নিজেকে সাধু প্রমাণের আগে পর্যন্ত আমরা উনার ক্লাস করতে চাই না। আমাদের হাজার বছরের সাধুতা সংস্কৃতির সঙ্গে সমুসানের অসাধুতা একেবারেই বেমানান।
সমুসান সাইকেলে করে ডর্মে ফিরছিলেন, এমন সময় পথে দেখা হয় সেই অমুক কমিটির তমুক সম্পাদকদের সঙ্গে। তারা বলে, আমাদের সম্বর্ধনা নিলে আমাদের সংগঠন আপনাকে সমর্থন দিতো।
গভীর রাতে দরজায় টোকা দেয়ার শব্দ শুনতে পান সমুসান। পুলিশ-প্রক্টর এক যোগে রুমে ঢুকে তল্লাশি করতে শুরু করে।
পুলিশ জিজ্ঞেস করে, হায়ামি কোথায়!
সমুসান দেখিয়ে দেন।
পুলিশ অবাক হয়ে বলে, এ কী সোফিয়ার বোন!
–নাহ। এ জাপানের হায়ামি!
ডর্মের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের কাছে ফোন করে তথ্য নিয়ে ডটকম ভাইয়েরা ব্রেকিং নিউজ দিয়ে দেয়, হায়ামির সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়লেন জাপানি অধ্যাপক চাও চপা সমুসান।
ফেসবুকের বিবেকেরা মাথা থাবড়াতে থাকে।
“মূল্যবোধের এ কী অবক্ষয়”!
ফেসবুকের ধর্ম প্রহরীরা এসে বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলেল্লাপনা চলবে না। সমুসানের বিচার চাই।
ফেসবুকের দেশপ্রেম প্রহরীরা বলে, দেশের পেঁপে খাবো জাপানের জলপাই বর্জন করুন।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সমুসানকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়া হয়। সেখানে এক সাংবাদিক এসে সমুসানকে জিজ্ঞেস করে, স্যার হায়ামি রোবট না হয়ে মানবী হলে ব্যাপারটা এতোদূর গড়াতো না!
সমুসান বলেন, যে টিভি মানবীর ফোন থেকে এতো ঘটনার ঘনঘটা; আমি ঠিক ঐরকম আইকিউ আর গসিপের ম্যানিয়াক এড়াতেই; রোবট হায়ামির সঙ্গে বন্ধুত্ব করি। চা চপ সমুসার পরিবর্তে কিছুদিন সামুদ্রিক মাছ খান। আমার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারবেন।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন