১০৪৯ বার পঠিত
রামায়ণের সহজ গল্প (৬) শ্মশানে এসে ব্রাহ্মনরা ঝামেলা দেখেই সেই সদ্যপুত্রহারা মা কে বোঝাতে লাগল শাস্ত্রকথা। জন্ম মানেই মৃত্যু, আর মৃত্যু মানেই আবার তার জন্ম হবে। কাজেই, ওসব না ভেবে টেবে তুমি যাও এখন বারানসীতে শ্মশানে গিয়ে এটারে পোড়ায়ে এসো।
শৈব্যা মৃত সন্তানকে নিয়ে চললেন শ্মশানে। কিন্তু সেখানে আছে সেই মাকাল ফল হরে (হরিশ্চন্দ্র)। সে মালিকের আদেশে প্রতি মরাপিছু পঞ্চাশ কাহন করে কড়ি নেবে। সে বলে কড়ি না দিলে তো পোড়াতে দেব না।শৈব্যা জানায় সে দাসীবৃত্তি করত, সম্বল কিছুই নেই। নিজের বস্ত্রটুকু ছাড়া। তাই নিজবস্ত্র ছিঁড় সে দিতে পারে, কিন্তু তা শুনে রেগে মুগুর দিয়ে মারতে আসে হরে ডোম। তখন রানী ‘হরিশ্চন্দ্র আজ তুমি কোথায়” বলে কাঁদতে থাকে। সেই বিলাপ শুনে হরিশ্চন্দ্র চিনতে পারে বউকে। না কাঁদলে আর বউ কিসের! ছেলের মৃত্যুর কথা বুঝে সেও বউ এর কাছে নিজ পরিচয় দেয়। সন্তানের মৃত্যুর শোকে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে একটি চিতা জ্বলিয়ে তাতেই তিনজনে পুড়ে মরবে, কারণ আর কোনও উপায় নেই।
চিতা সাজিয়ে তিনজনে শুয়ে আগুন জ্বালানোর পরে হঠাৎ ধর্ম রাজ এলেন সেখানে এবং বিষের তেজ সারিয়ে ছেলেকে বাঁচিয়ে তুললেন তাদের। এতদন পরে বিশ্বামিত্রেরও মনে হয়েছে এই রাজ্য চালানোর খুব হ্যাঙ্গাম। রাজ্য চালাবে হরিশ্চন্দ্রের মত লোকেরা আর তাদের শাসন করবে মুণি, কাজেই তিনি এসে হরিশ্চন্দ্রকে বললেন তুমি দান ফিরিয়ে নাও, আমি তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি। কালু ডোমের টাকা মিটিয়ে রাজা ফিরে গেলেন অযোধ্যা। সেখানে ফিরেই তিনি রাজসূয় যজ্ঞ করে আর সব প্রতিবেশী রাজাদের জানিয়েদিলেন যে তিনি ফিরেছেন। তারপরে ছেলেকে অযোধ্যার সিঙ্ঘাসনে বসিয়ে চললেন স্বর্গে। সঙ্গে তিনি নিয়ে চললেন সন পোষা পশু-পাখি, যারা তাকে ভালোবাসত সবাইকে। বিষ্ণু দেখে ওরে বাবা! এক গাদা লোকজন, পশু পাখি, স্বর্গের পরিবেশটা এক্কেরে তো খারাপ করে দেবে এরা, সে তখন নারদকে পাঠাল এই স্বররগ যাত্রা ভণ্ডুল করার জন্য। নারদ এসে প্রণাম করে বলে, নমস্কার রাজা মশাই, খুব ভালো লাগল আপনি স্বর্গে যাচ্ছেন দেখে।কীভাবে এটা সম্ভব হল? খুব ভালো লক না হলে তো কেউ ভিসা পায় না? আমাকে একটু গল্পটা কইর্যা যান তো। ব্যাস, বোকা রাজা অমনি যা যা করেছে সব ফলাও করে বলতে লেগেছে। ব্যাস আর রথ উপরে ওঠে না, নামতে লেগেছে। দেখে হরিশ্চন্দ্র চুপ।কিন্তু হল যা, তাতে সে না পৌঁছাল স্বর্গে, না রইল মর্ত্যে। মাঝপথে ঝুলে থাকল হরিশ্চন্দ্র।না ঘর কা না ঘাট কা হয়ে। হরিশ্চন্দ্রে ছেলে রুইদাসের কথা বিশষ কিছু জানা যায় না। তার ছেলে ছিল সগর রাজা।
সগরের শিবের বরে ষাট হাজার এক ছেলে জন্মেছিল বলে কথিত।একটি লাউ-এর ভেতর থেকে বেরিয়েছিল এই ষাট হাজার ছেলে। কিন্তু তারা কোনও কম্মের না।বড় রাণীর এক ছেলে অসমঞ্জ, তারই একটা ছেলে হল-অংশুমান নামে। কিন্তু ছেলের জন্ম দিয়ে বাবা অসমঞ্জের আর সংসার ভালো লাগত না। এমনিতে তাকে রাজত্বই করতে হত, এমন অন্যায় সে করল ইচ্ছা করে যাতে তার বনবাস হল। অসমঞ্জও এইটাই চেয়েছিল। রাজত্ব ছেড়ে সে মনের সুখে বনে গিয়ে একা একা থাকতে লাগল।
সগর থাকে ষাট হাজার ছেলে নিয়ে।ভাবল অশ্বমেধ যজ্ঞ করবে।এটা এমন একটা ব্যাপার যে ঘোড়া নিয়ে দেশ-বিদেশে যাওয়া হত।যে রাজ্যের ওপর দিয়ে ঘোড়া যাবে সেই রাজ্যের রাজা যদি বাধা না দিয়ে আপ্যায়ন করেন তাহলেরাজ্যটির ওপরে কর্তৃত্ব জন্মাবে।মানে আমার ঘোড়া যতদূর ঘুরে আসবে সব জায়গাই আমার। ঘোড়া যদি না ফেরে তাহলে সেই দিকটাই মাঠে মারা গেল।সগরের ষাট হাজার ছেলে, কাজেই বড় দল যাবে ঘোড়া নিয়ে, শুনেই স্বর্গের রাজা ইন্দ্র ভয় পেল।সে ঘোড়া চুরি করে পাতাল নামে জায়গায় রেখে এল ঘোড়াটা। পাতালে কপিল মুনি বসে ধ্যান করছিলেন। তার কাছ চুপি চুপি রাতের অন্ধকারে ঘোড়া বেঁধে রেখে ইন্দ্র ভালো মানুষের মত ফিরে এলেন। এদিকে সকালে ঘুম থেক উঠে সগর রাজার ছেলেরা তো খুঁজতে লেগেছে-ঘোড়া কই, ঘোড়া কই—পায় না।তখন মনে হলাণদারগ্রাউন্ডেই হবে নিশ্চয়ই। তারা ষাট হাজার জন মিলে রাগে মাটি কোপাতে কোপাতে তোইরি করে ফেলল চারটে বিশাল সাগর।সেই পাতাল পথে গিয়ে দেখে কপিল মুনির পাশে বাঁধা ঘোড়া। তখন রাগে তারা কপিল মুনিকেই সকলে মিলে আক্রমন করল, কপিল মুণি হঠাৎ ধ্যান ভেঙে দেখে ষাট হাজার ছেলে তাকে কোদাল নিয়ে মারতে আসছে অকারণে। কপিল জ্বালিয়ে এক নিমেষে সেই ষাট হাজার সগর পুত্রদের ছাই করে ফেলাইলেন।
এদিকে সগর রাজা এক বছর অপেক্ষা করার পর তো চিন্তায় পড়লেন। ছেলেরা ফিরলনাঘোড়া ফিরলনা। নাতি অংশুমানকেই তখন তিনি খোঁজনিতে পাঠালেন। সে গেল পূব সাগরে, সেখানে আছে এক নীলহাতী। তারে জিগায়, কোনও ঘোড়া দেখস ভাই, হাতী? সে বলে হ্যাঁঅ্যাঅ্যা-দেখসি-যাও এই পথে… ওমা! কই ঘোড়া? কেউ নেই।তারপরে উত্তরে সাদা হাতী, পশ্চিমে লাল হাতী-এদের মাঝখানে এক পথ, সেখান দিয়ে গিয়ে কপিল মুনির দেখা পেল অংশুমান। কপিল মুনিকে প্রনাম-টনাম করে অংশুমান ধীরে ধীরে জানতে চায়, যে আসলে কি হইসে জানেন কত্তা, আমার অনেকগুলান কাকা, এইপথে আইসিল। আপনে যদি কোনও ভাবেও… মানে জানবেনই যে সে কথা নয়… মানে বোঝেনই ত, দাদু বুড়া হইসে, কাঁদে সারাক্ষণ-
কপিল তখন খুশি হয়ে বলে দেখ ভাইডি, আমি তাদের পোড়ায় দিসি। তারা আর নাই। অংশুমানের তো মাথায় হাত।বলেন কি! ষাট হাজার রাজপুত্রকেপুড়িয়ে দিলেন মাইরি! এখন আমাদের বংশের কি উপায় হবে? কপিল মুনি বলেন, যে যদি গঙ্গা নদী বয়ে যায় তোমার রাজ্যে তো আর মানুষ নিয়ে ভাবার দরকার হবে না। তুমি গঙ্গা আনার ব্যবস্থা কর তোমাদের রাজ্যে। অংশুমান তাকে জানান যে এইসব টেকনিক তো ব্রাহ্মন না বলে দিলে তারা পারবে না। তাদের টাকা আছে, লোক আছে, কিন্তু বিজ্ঞান ব্রাহ্মণের হাতে। তখন কপিল গঙ্গার জন্মের কথা প্রকাশ করেন সগর রাজার নাতি অংশুমানের কাছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
আগস্ট ১৬, ২০১২; ৯:০২ পূর্বাহ্ন
দিদি, লেখার ফরম্যাটিং সমস্যা এড়ানোর জন্য টেক্সট বক্সের উপর এডিটিং মেনু থেকে “W” চিহ্ন ওয়ালা আইকনটি ক্লিক করুন। একটা পপ-আপ উইন্ডো চলে আসবে। সে উইন্ডোতে লেখাটা পেস্ট করে “OK” চাপলেই রচনাটা সঠিক ফর্ম্যাটে চলে আসবে।
আগস্ট ১৭, ২০১২; ৭:৩৪ অপরাহ্ন
তাই তো মনে হয় করা হয়েছিল।ফরম্যাটীং এর কি সমস্যা হচ্ছে? পড়া যাচ্ছে না? এখন এডিট করা যাবে?
আগস্ট ১৬, ২০১২; ৮:০৫ অপরাহ্ন
রামায়নের সহজ গল্পগুলো পড়ার চেস্টা করছি । আপনি কি কৃত্তিবাসী রামায়নকেই আরেকটু সহজ ভাষায় বলতে চাইছেন? ভালি হচ্ছে। তবে যদি আরেকটু সংক্ষেপ করা যেত- আপনার প্রয়াস প্রশংসনীয় ।
আগস্ট ১৭, ২০১২; ৭:৩৭ অপরাহ্ন
্রামায়ণের মূল রাম-রাবনের যুদ্ধের গল্পটা অনেকেরই জানা।ভালো বাংলা বইও আছে কিন্তু বাকি অনেক ছোট ছোট অংশ আছে ,সমগ্র রামায়ণের আসল ছবিটা,সেটাই চেষ্টা করছিলাম।মনে থাকবেয়াপনার কথা।চেষ্টা করব আরও ছোট করতে–