১৩৭৫ বার পঠিত
একজন ‘বুদ্ধিজীবী লোক’ এর লেখা পড়লাম। ফেসবুকে আমার মিউচ্যুয়াল কেউ একজন কমেন্ট করেছিলেন, তাই আমার নিউজফিডে সে লেখা ‘র’ মানে নির্জলা এসেছিলো। অবশ্য তার লেখা কাগজের ‘উপসম্পাদকীয়’ কলামে আগেই পড়েছি, ফেসবুকেরটা শুধু সেই লেখার বিপরীতে পাবলিকের কমেন্ট পড়ার জন্য। আমি যখন পড়ি তখন কমেন্টের সংখ্যা ৫২৪। কমেন্ট পড়তে গিয়ে সাহসী পুরুষ নই বলে বারবার লজ্জা লাগছিলো। তাও সাহস জমিয়ে পড়লাম। যদিও এমন কমেন্ট ৩শ’র মতন পড়তে খানিকটা নয় যথেষ্ট লজ্জাহীন হতে হয়। এরবেশি লজ্জা বিসর্জন সম্ভব হয়নি বলে আর পড়া গেলো না।
জানি না, কমেন্টগুলো সেই ‘বুদ্ধিজীবী লোক’ পড়েছেন কিনা। পড়লে ভালো হতো। তিনি তো অবশ্যই বিশেষজন। বুদ্ধিজীবী পুরুষ। সাংবাদিক, লেখক, কবি; কিনা রয়েছে তার পরিচয়ে। সবমিলিয়ে মহাপুরুষও বলা যায়। একরকম ‘নির্বাণ’ লাভ করা মানুষ। তার লজ্জা, ঘৃণা আর ভয় তো থাকার কথা নয়। তার তো পড়া উচিত। শুধু পড়া নয়, উপলব্ধিও করা উচিত, সাথে আত্মস্থও।
এ দেশে লেখার নিচে গালিগালাজ করাতে অনেকেই অভ্যস্ত। সেগুলো সয়ে গেছে। আমার কপালেও জুটেছে। কিন্তু সেই গালাগালি বাদেও এমন কিছু কমেন্ট রয়েছে, সেগুলোকে চেষ্টা করেও উপেক্ষা করা যায় না। যুক্তি-তর্কে করা সম্ভবও নয়। এই কমেন্টগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাধারণ জন’কে বুদ্ধিজীবী ট্যাগ লাগানো মানুষগুলো যতটা নির্বোধ ভাবেন, তারা ততটা নয়। এক হাজার বা তারো বেশি শব্দের একটা ‘কলাম’ কে তিন থেকে পাঁচ লাইনের অসাধারণ কথায় শুইয়ে দেয়ার মতন ‘সাধারণ’ মানুষও রয়েছেন।
সেই বুদ্ধিজীবী যা লিখেছেন তার বিরোধীতা করছি না। তার লেখার বিষয়বস্তু সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি হলেও নানা ‘বিশেষ্য-বিশেষণে’র আড়ালে সে মুক্তির মূল কথাটাই অন্তরীণ হয়ে পড়েছে। যাকগে, সেদিকে আর যাচ্ছি না, যাওয়াটাও পরিবেশ অনুযায়ী সঙ্গত নয়। তবে কথা একটাই, রোজিনার মুক্তিটা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্যই জরুরি। রোজিনা মুক্ত না হলে এ দেশের সাংবাদিকতা ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়বে। এতদিন রাজনীতির কাছে মাথা দেয়া ছিলো, এখন ‘অন্যদের’ কাছেও বডি দেয়ার ব্যবস্থা হবে। ওই যে, ‘রেললাইনে মাথা দেব বডি দেব না’ গানটির মতন দাঁড়াবে সাকুল্যে অবস্থা।
একটা গল্প বলি। আমাজানে’র কিছু লোক ক্ষমতা ও সম্পদের লোভে পিশাচ সাধনা শুরু করলো। ওই যে, ওরা বলে ভুডু, পাশ্চাত্যে বলে ব্ল্যাক-আর্ট। তাদের তোষণে পিশাচ খুশি অর্থাৎ সাধনার সাধন সম্ভব হলো। আর পায় কে তাদের। ওকে ধরেন, তাকে মারেন। জান-ধন-জবান কোনটাতেই ছাড় নেই। মানুষ তাদের শক্তি মানে পিশাচের ভয়ে তটস্থ। আর পিশাচের ক্ষমতার বলে বলিয়ান সেই সব লোকের অবস্থা বেপরোয়া ধরণের পোয়াবারো। ‘জব্বারের বলি’ সেই বলের কাছে নস্যি। তবে মুশকিল হলো পিশাচেরও তো খেতে হয়, রয়েছে রক্ততৃষ্ণা। এক সময় তারও খাদ্যে টান পড়লো। জঙ্গল থেকে পশু মেরে খেতে জঙ্গল সাবার। পিশাচের চোখ পড়লো গৃহপালিত জীবজন্তুর উপর। খেয়ে-দেয়ে তাও শেষ। কিন্তু পিশাচের ক্ষুধা তো মেটে না। ক্ষুধা মেটাতে চোখ দিলো বিরোধীপক্ষের মানুষের বাচ্চাদের উপর। প্রতিরাতে একটা করে বাচ্চা উধাও। অবস্থা বেগতিক দেখে বিপক্ষের লোকজন সব পালিয়ে গেলো। বিরোধী এলাকা খালি। পিশাচের ক্ষুধা তো অসীম। ক্ষুধা মেটাতে পিশাচের নজর গেল তার সাধকদের বাচ্চার উপর। তারপর? তারপর, ইয়ে মানে, নটে গাছটি মুড়ালো।
আমাজনে’র গল্প থাক। গল্প তো গল্পই, ফিকশন। ওটা ধরতে নেই। তারচেয়ে আসল কথায় আসি। না, সাংবাদিকরা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যারা ফাঁকেফুঁকে বলতে চাইছেন, তাদের উদ্দেশ্যই বলছি, মামলা হয়েছে, হতে পারে, এতে আপত্তি নেই। কিন্তু তাকে হেনস্তা, অসম্মান এবং তার জামিনের অধিকারের বিপরীতে দাঁড়ানোরও যুক্তি নেই। স্বয়ং আইন বলে, ‘আইন হলো জামিন, ব্যতিক্রম হলো কারাগার’। আর যে ধারায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা ২০২১ এর ডিজিটাল দেশকে এনালগ তো দূরের কথা ‘লগহীন’ ১৯২৩-এ নিয়ে গেছে। ভুতের পা সবসময় পশ্চাতমুখি। পেছনের যাত্রা ভুতের যাত্রা, মানুষের নয়। আমরা নিশ্চয়ই ভুত কিংবা পিশাচ নই। সুতরাং আমাদের পা হোক অগ্রসরমান। সাথে চিন্তাও। আর যাত্রা হোক প্রার্থিত সম্মানজক ভবিষ্যতের দিকে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন