১৩৬২ বার পঠিত
লাইলাতুল ইলেকশানের পবিত্র ক্ষণে ফেরেশতা এসে জাগিয়ে দেয় তাদের, জীবন যাদের পুণ্যময়। ফেরেশতা কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে, যা তুমি এই গভীর রাতে করতে পারো; তা দিনের জন্য ফেলে রাখবে কেন!
ঘুমে অচেতন একজন বিড় বিড় করে বলে, কী পুণ্য মিলবে গভীর রাতে সেই পবিত্র কাজ করলে?
ফেরেশতা উত্তর দেয়, স্মরণ করো তাদের যারা অতীতে লাইলাতুল ইলেকশনের পবিত্র কাজ করেছিলো। তারা কী ভূ-স্বর্গে দ্বিতীয় নিবাস গড়েনি! চেয়ে দেখো ফেসবুকে, ভূস্বর্গে তাদের ধনাঢ্য জীবনের ছবি উঁকি দিচ্ছে। তুমি কী জানো তারা গভীর রাতে গণতন্ত্রকে নির্বাণ অর্জনে সহযোগিতা করায়; পথের ভিখারি থেকে তারা আজ ভি আইপি ও সি আইপি হয়েছে।
ঘুমে অচেতন ব্যক্তি পাশ ফিরে শোয়, বিড়বিড় করে বলে, একজন মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য এতো কিছু কি প্রয়োজন। ছোট্ট একটা ঘর, একটু খাবার, দুই জোড়া জামা কাপড় আর একটু শান্তি থাকলেই কী দিব্যি চলে যায় না।
ফেরেশতা আর্তনাদ করে, এসব বুদ্ধি তোমাকে নিশ্চয়ই শয়তান দিয়েছে। শয়তান চায় না পৃথিবীর মানুষ উন্নয়নের উপাসক হোক; গলি থেকে রাজপথে উঠুক, টেম্পু থেকে হেলিকপ্টারে উঠুক।
এমন সময় দরজা ধাক্কানোর শব্দে লোকটা ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়। দুটি পুলিশ ঢুকে ফেরেশতাকে তার ভোটার আইডি কার্ড দেখাতে বলে।
ফেরেশতা ধমক দিয়ে বলে, আমি ভোটেশ্বরের প্রেরিত দূত। ভোট উপাসক জোগাড়ে বেরিয়েছি। আমি একটু পরে কতিপয় ভোট উপাসক নিয়ে ভোট উপাসনা কেন্দ্রে যাবো। এলাকাবাসীর কল্যাণ কামনায় তাদের জন্য ভোট উপাসনা করবো।
এমন সময় পুলিশের ফোন বেজে ওঠে। ফোন ধরে পুলিশ বলে, স্যার, এলাকা আমাদের পার্টির নিয়ন্ত্রণে আছে।
ফেরেশতাকে সালাম দিয়ে পুলিশ দুটি আমাদের পার্টি, আমাদের পার্টি বলে বিড় বিড় করতে করতে বেরিয়ে যায়।
ঘুম থেকে জেগে ওঠা লোকটা ফেরেশতাকে বলে, এর আগের লাইলাতুল ইলেকশানে যাদের নিয়ে ভোটের উপাসনা করেছেন, তাদের নিয়েই আবার ভোট উপাসনা কেন্দ্রে যাননা কেন। আমার সকালে উঠে কারখানার কাজে যেতে হবে; একটু ঘুমিয়ে নিই।
ফেরেশতা হেসে বলে, যারা একবার লাইলাতুল ইলেকশনের উপাসনা করে; তারা দ্বিতীয়বার আর কাজে আসে না। তাদের অঙ্গুলিতে চর্বি জমে, তারা ভোট উপাসনার ক্ষিপ্রতা হারায়। তুমিও দেখবে আজ রাতে ভোট উপাসনা করলে; কী করে তোমার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। চলো একসঙ্গে গণতন্ত্রের জন্য নির্বাণ অর্জন করি।
লোকটা জিজ্ঞেস করে, গণতন্ত্রের নির্বাণ কী!
গণতন্ত্র মানেই ভিন্নমত, ভিন্নমত মানেই অস্থিরতা। তার চেয়ে নিবিড়ভাবে সহমত হলে গণতন্ত্র সুস্থির ও শান্তভাবে আত্মীয়-পরিজন আর খাদেমদের নিয়ে ভূস্বর্গ রচনা করতে পারে।
লোকটা অবাক হয়, জনগণের কী হবে তাহলে!
যারা লাইলাতুল ইলেকশানের উপাসনা করে,ভোটেশ্বর তাদের গণতন্ত্রের খাদেম হিসেবে বরণ করেন। এই রাত ভাগ্য নির্ধারণের রাত। তোমার সৌভাগ্য যে আমি তোমার কাছে ভোট উপাসনার দাওয়াত নিয়ে এসেছি।
লোকটা প্রতিবাদ করে, কিন্তু আমার মতো কারখানার শ্রমিক যারা; তাদের কী হবে!
ফেরেশতা বলে, যারা ঘুমিয়ে থাকে তাদের ভাগ্যও ঘুমিয়ে থাকে।
লোকটা বিক্ষুব্ধ হয়, তাদের সারাদিনের যে শ্রম; তার কী কোন মূল্য নেই।
ভোটেশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া কোন শ্রমিক কবে, ভূ-স্বর্গের সন্ধান পেয়েছে! ভোটেশ্বরের ইচ্ছা-অনিচ্ছা তোমার জীবন-মৃত্যু; বোঝনা কেন!
লোকটা আর্তনাদ করে, ভোটেশ্বর বড্ড একচোখা।
ফেরেশতা ধমক দেয়, ভোটেশ্বরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাটা বরদাশত করা হবে না। এক্ষুণি আমাদের পার্টিকে ফোন দেবো। তোমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে নিকৃষ্টতর নরকে নিক্ষেপ করবে। উপাসনার প্রহর কিন্তু দ্রুত চলে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নাও; যে সিদ্ধান্ত তোমার জীবন বদলে দেবে।
লোকটা ফেরেশতার পিছে হাঁটতে হাঁটতে ভোট উপাসনা কেন্দ্রে পৌঁছে যায়। সেখানে গণতন্ত্রের নির্বাণের জন্য ভোটেশ্বরের উপাসনারত আরো অনেকে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন