০
১৬৭৪ বার পঠিত
শিক্ষকদের মর্যাদা নিয়ে লেগেছে গণ্ডগোল!
সমস্যাটা কোথায়?
ইতিহাসের দিকে তাকাই…
শিক্ষক (Teacher) শব্দটি আসলে সাম্প্রতিক শব্দ, ভারতীয় কিংবা আরবীয় (এ দেশের অধিংকাশ মানুষ নিজেদের মুসলিম ও আরবী উত্তরাধিকার কল্পনা করে, তাই…) অঞ্চলে শিক্ষক শব্দটির বহুল প্রচলন ব্রিটিশ উপনিবেশের অবদান। গুরু বা ওস্তাদই এ অঞ্চলের বহুল প্রচলিত শব্দ, ইদানিং ইউরোপ/আমেরকিায় Mentor (গুরু বা ওস্তাদ) শব্দটির চল বাড়ছে।
গুরু/ওস্তাদ বা শিক্ষক একই শ্রেণী বা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করলেও সমাজ গঠন ও ধরনের কারণেই গুরত্বটি আলাদা।
গুরু/ওস্তাদ-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও সামাজিক প্রেক্ষিত আর শিক্ষকের শিক্ষাদান পদ্ধতি ও সামাজিক প্রেক্ষিত এক নয়। কৃষি সমাজে গুরু ছিলেন স্বাধীন সত্তা, তিনি একটি আশ্রমের অধিপতি। কোন রাজ্য বা রাজার অধীন তিনি নন। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সার্বভৌমত্ব সম্পন্ন হইলেও স্বাধীন কী? শিক্ষকেরা কী রাষ্ট্রের কর্মচারী নন? তৃতীয় বিশ্বে অবশ্যই রাষ্ট্রের কর্মচারী।
শিক্ষা ব্যবস্থার সংকটটি কোথায়? আসুন আরো একবার ইতিহাসের পথে হাটি। ইউরোপে শিক্ষা কেন্দ্রগুলির নাম ছিল মঠ বা monastery, ভারতে অাশ্রম, আরবে (মূলত পারস্যে) মাদ্রাসা। মঠগুলি ছিল স্বাধীন কিংবা একাধিক নাইট বা রাজার অনুদানে পরিচালিত। মাদ্রাসাগুলিও তদ্রুপ। যে সেখানে যেত সে যেত জ্ঞান অর্জন করতে কিংবা দক্ষ হতে। ইউরোপের রেঁনেসা পুরো সমাজ কাঠামোকেই পালটে দিতে থাকলো। শিল্প বিপ্লব ও রাষ্ট্র পত্তনের মধ্যদিয়ে পালটে গেল সমাজ কাঠামো। ব্যপারটি একদিনে হয়েছে কী? না পুরো সমাজটিই নড়াচড়ার মধ্যদিয়ে আজকের শিক্ষা বাস্তবতায় এসেছে [প্রাথমিক (কিন্ডারগার্ডেন) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়]। পাঠশালা (মক্তব) ও আশ্রমের (মাদ্রাসা) যে যোগসূত্র। প্রাথমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগসূত্র এক নয়।
শিল্প উৎপাদন ও সু নাগরিক নির্মাণের জন্য যে শিক্ষাকাঠামো (আধুনিক) তার সঙ্গে শিল্পবিপ্লব পূর্ব শিক্ষা কাঠামোর রয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব। মঠের গুরু ও (বিশ্ব) বিদ্যালয়ের শিক্ষক এক নয়। একজন জ্ঞান বিতরণ করেন, অপরজন দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করেন। কিন্তু জ্ঞান ব্যতীত সভ্যতা যে হইতেছে বিলিন…
রাষ্ট্রকাঠামোয় তাই পুরো শিক্ষা কাঠামোটিই এমনভাবে সাজানো যে দক্ষতা ও জ্ঞান একই ‘ফাইবার অপটিক লাইন’ দিয়ে প্রবাহিত। প্রাচীন কৃষি সমাজ কাঠামোর ‘মর্যাদা’ তাই এখানেও প্রতিস্থাপিত।
এতো গেল রাষ্ট্র কাঠামোয় শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু উপনিবেশের শিক্ষাকাঠামোর ব্যবস্থা কী রাষ্ট্রের অনুরূপ হইবে? না, ম্যাকলে সে সমস্যারই সমাধান করলেন। উপর কাঠামো একই থাকলো কিন্তু ভিতর কাঠামোয় ‘জ্ঞান’টিকে ছেঁটে দিলেন। (বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাঠাগার ও গবেষণার অবস্থা দেখিলেই…) দাস ও প্রভুর এটাই পার্থক্য।
আমরা যারা উপনিবেশ বা আজকের তথাকথিত ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্র তাহাদের সমাজে আধুনিক শিক্ষাকাঠামোটি ম্যাকলের হাতে গড়া। আমাদের আমলাতন্ত্রও ইংরেজ বা ইউরোপীয় প্রভুদের অনুকুলেই তৈরি। যার ভেতর কাঠামোয় এতোদিন নিরব থাকা জ্ঞানহীনতার ফাকা টিন। ফাঁকা টিন বাজে, ঠ্যান ঠ্যান করে বাজে বা ‘ফাঁকাটিন বাজে বেশি’ এ যে আমার হাজার বছরের গ্রাম্য অভিজ্ঞতাই।
পরিশিষ্ট: ‘আর্ন্তজাতিকতার’ বা ‘বিশ্বায়নের’ (ইউরোপীয় উপনিবেশের সমকালীন নাম) উন্নয়নের (বা উপনিবেশের) কালে তৃতীয় বিশ্বে (উপনিবেশে) শিক্ষকদের মর্যাদা একটি অলিক স্বপ্নমাত্র। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর/জেনারেলদের নিচে বা অধিনেই সকল ‘দক্ষ’ Native people…
(শিরোনাম প্রসঙ্গ: মুজতবা আলী রচিত একটি ছোট গল্প স্কুল পাঠ্যবইয়ে ছিল, ছোটকালে পড়িয়া ছিলাম, নামটি মনে নাই)
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন