১২৬৯ বার পঠিত
নোবেল শান্তি পুরস্কার একটি হাস্যকর, খেলো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধবাজ, উগ্রপন্থী, এমনকী নিষ্কর্ম মেরুদণ্ডহীন অনেক’কে এই পুরস্কার দিয়ে শান্তির মর্যাদাহানীও ঘটেছে অতীতে।
এ বছরে (২০১৭) সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হবে আগামী মাসের ৬ তারিখে। এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে নমিনেশন পেয়েছেন ৩১৮ জন। গতবারের তুলনায় একটু কম (৩৭৬ জন ছিল ২০১৬ সালে) কিন্তু দ্বিতীয় বৃহত্তর নম্বর। এর মধ্যে ২১৫ জন ব্যক্তি হিসাবে আর ১০৩ টি সংগঠন আছে।
নমিনেশন পাওয়াই শেষ কথা নয়। আমি জানি একথা শুনে অনেকেই বললেন নমিনেশন-ই বা কম কীসে। কেন কথা নয় বলি, এ বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্পও নমিনেশন পেয়েছেন। এখন যদি আমাকে নমিনেশন দেয়া হতো ট্র্যাম্পের সঙ্গে তাহলে লজ্জায় আমি মরেই যেতাম।
সে যাই হোক, সিরিয়াসলি বলি, যতোই নাম নমিনেশন পাক না কেন তুঙ্গের আলোচনায় থাকেন হাতেগোনা কয়েকজন বা কয়েকটি সংগঠন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও নমিনেশনের মধ্যে আছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো বিগত ৫০ বছর ধরে এই নামগুলো কিন্তু গোপন রাখা হয়েছে। তাই অনেকসময় যিনি পান তা চমকে দেয় বিশ্বকে। এবারের আলোচনায় তুঙ্গে যাদের নাম তার মধ্যে সিরিয়ার স্বচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেট, সৌদি ব্লগার যাকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে সেই রাফি বাউয়াদি, আমেরিকার সার্ভেলেইন্স এর গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে যিনি বিশ্বখ্যাত সেই এডওয়ার্ড স্নোডেন, পোপ ফ্রান্সিস। আরও আছে আণবিক যুদ্ধ বিরোধী তিনটি সংগঠন এবং লেখক অরুন্ধতী রায় আর জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল ।
কিন্তু আমাকে যদি বিশ্লেষণ করতে বলা হয়, আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সর্বাগ্রে দেখতে চাই এবং ভোট দিতাম। আমি জানি অনেকেই বলবেন আমি হাসিনার চামচামি করছি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বলবো, শাট দা এফ… অফ। পৃথিবীর এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস কোন টি? কোন প্রশ্ন না করেই বলা যায় রোহিঙ্গা নামের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে নির্মমভাবে উৎখাত, নির্বংশ করার ষড়যন্ত্র। সেখানে ৮ লক্ষ থেকে এক মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া, বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে; শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক দিক থেকে রোহিঙ্গারা কিছুটা পাকিস্তান ঘেঁষা একথা হাসিনার শত্রুও স্বীকার করবেন; সেখানে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন কোন রকমের ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে। এইরকমের বিশাল রাজনৈতিক কাজটি যিনি করার সাহস রাখেন, উদার অন্তর রাখেন তাঁকে শান্তির নোবেল কেন দেয়া হবে না সেই কথা প্রমাণ করুন কেউ।
আমি জানি, আমরা বাঙালিরা বরাবরই বিস্মরণের জাতি, কোন কোন ক্ষেত্রে বেঈমানির জাতি। কিন্তু একটু নিরপেক্ষ, নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখলে পৃথিবীর এই সময়ের সবচেয়ে কঠিন, অমানবিক জাতিগত নির্বংশ করার মায়ানমারের ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা যে ঝুকিপূর্ণ কিন্তু মানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে নোবেল শান্তি পুরস্কার যে কোন চুলায় দেয়া হোক না কেন, আমার কাছে তিনিই শান্তির পদকধারী। এ বছরের নোবেল পুরস্কার তাঁকে দেয়া হলে বাংলাদেশ গর্বিত হবে যথার্থভাবে, শুধু তাই নয়, গর্বিত হবে নোবেল পুরস্কার এবং বিশ্ব-মানবতা।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন