শুধু পড়াশোনায় ভাল হলেই কেবল আমরা কোন শিক্ষার্থী বা মানুষকে বুদ্ধিমান বলি। কিন্তু আইনস্টাইন, ম্যাক্সিম গোর্কি, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, পাবলো পিকাসো, মাও সে তুং, ওয়াল্ট ডিজনি, স্টিভ জবস, বিল গেটস, নেলসন ম্যান্ডেলা, টমাস আলভা এডিসন, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ… এঁরা কেউই পড়ালেখায় ভাল ছিলেন না। তাহলে কী এঁদের বুদ্ধি কম ছিল? এঁরা কী বুদ্ধিমান ছিলেন না?
আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক হাওয়ার্ড গার্ডনার ১৯৮৩ সালে ‘বহূমূখী বুদ্ধি মতবাদ‘ ( Multiple Intelligence Theory) দেন যাতে গার্ডনার বলেন, মানুষের মধ্যে কমপক্ষে আট রকমের বুদ্ধিমত্তা বা সামর্থ আছে (আরও বেশীও থাকতে পারে) যার প্রত্যেকটিই ভিন্ন ভিন্ন কিছু লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই আট রকমের প্রবণতা সম্পন্ন প্রতিটা মানুষই বুূদ্ধিমান। এই বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানুষরা সবাই সবসময় পড়ালেখায় ভাল নাও হতে পারে। তারমানে এই নয় যে তারা বুদ্ধিমান নয়। শুধু তাদের বুদ্ধির প্রকাশ ঘটে পড়ালেখা ছাড়া বা পড়ালেখাসহ আরো নানা ক্ষেত্রে।
সুতরাং প্রতিটা শিশুর মধ্যেই এই আট ধরণের বুদ্ধিমত্তার কোন না কোনটি অবশ্যই আছে। তবে কারো কারো মধ্যে কোন এক বা একাধিক বুদ্ধি প্রবল, কোনটি আবার প্রচ্ছন্ন বা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুকূল পরিবেশ পেলে প্রবল বুদ্ধিমত্তা আরও প্রবলতর হয়ে প্রকাশ পায়। আবার প্রচ্ছন্ন বুদ্ধিমত্তাসমূহকে উপযুক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে শক্তিশালী করা যায়।
শুধু পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জনে নয়, এই বুদ্ধিমত্তা বা সামর্থগুলোর প্রত্যেকটিই আমাদের জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে কাজে লাগে। তাই এসব প্রতিটি সামর্থ্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই বুদ্ধিমত্তা বা সামর্থগুলো কী কী এবং এগুলো কী কাজে লাগে, তা আমরা জানিনা বলেই এগুলোর চর্চা করার ক্ষেত্রে আমরা কোন গুরুত্ব দেইনা। শিখনের বা দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলোর প্রতিটারই অনন্য ভূমিকা রয়েছে।
এসব বুদ্ধিমত্তা বা সামর্থ্যের লক্ষণ শিশুর মধ্যে দেখার পর অভিভাবক ও শিক্ষকরা কিছু কৌশল ও কার্যক্রম প্রয়োগ করলে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিমত্তা প্রখর হয়, শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হয়। কেননা শিশুর পারদর্শিতা আছে এমন বিষয়ে শেখালে সেই বিষয়ে শিশুর প্রতিভার বিকাশ হয়, শিশু তার পছন্দের বিষয় আগ্রহ নিয়ে শেখে, তার প্রতিভার অবদান শিশুর নিজের, দেশের বা পৃথিবীর সবার কাজে লাগে।
গার্ডনারের এই আট রকমের বুদ্ধিমত্তাগুলো হলো:
১) মৌখিক বা ভাষাতাত্ত্বিক বুদ্ধিমত্তা ( Verbal / Linguistic Intelligence):
মৌখিক বা ভাষাতাত্ত্বিক বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, কারো সাথে যোগাযোগ, করা মনের ভাব প্রকাশ করা বা ভাববিনিময়ের জন্য সঠিক ও উপযুক্ত ভাষা ব্যবহার করার সামর্থ্য।
এই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হলো, শিশু বা ব্যক্তি গান, গল্প, ছড়া, ঘটনা, তথ্য ইত্যাদি সঠিকভাবে মনে রাখতে, লিখতে বা বলতে সমর্থ হবে। এই বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মানুষরা লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বিতার্কিক, উকিল ইত্যাদি হতে পারবে।
কোন শিশুর মধ্যে এই বুদ্ধিমত্তা দেখতে পেলে বাবামার করণীয় হবে –
* শিশুকে প্রচুর পড়তে, বলতে ও লিখতে উৎসাহিত করতে হবে।
* পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়ার বিভিন্ন উপকরণ যেমন সবধরণের বই, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
* শিশুর পছন্দের নতুন নতুন বই, রঙ্গিন ছবিযুক্ত বই দিতে হবে।
* শিশুর পড়ার ঘর, বারান্দা, বসার ঘর সবখানে, মানে শিশুর নাগালের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ক, ছড়া ও গল্পের বই, ইত্যাদি রাখতে হবে।
এসবের ফলে শিশুর ভাষার দখল বাড়বে, জ্ঞান বাড়বে, মন উদার হবে। সেইসাথে তার বুদ্ধিরও বিকাশ হবে।
২) যৌক্তিক / গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা (Logical / Arithmetical Intelligence):
এই বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, ব্যক্তির গণনা করা, হিসাব করা, কোন কিছুকে সংখ্যায় ব্যক্ত করার সামর্থ্য।
এই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হলো, শিশু বা ব্যক্তি কোন ঘটনা বা বিষয়কে প্রতীক, সংখ্যা বা গাণিতিক কোন হিসাব বা কাজ দ্বারা প্রকাশ করতে পারবে। গণিতে বিশেষ পারদর্শী হবে। এসব শিশুরা গণিতবিদ, প্রকৌশলী, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, চিকিৎসক ইত্যাদি কাজে এরা সবচেয়ে ভাল করবে।
কোন শিশুর মধ্যে এই বুদ্ধিমত্তা দেখতে পেলে বাবামার করণীয় হবে –
বিভিন্ন আকৃতি ও বর্ণের নানা বস্তু ও খেলনা, বরক ইত্যাদি দেয়া, সংখ্যার ধাঁধাঁ সমাধান করতে দেয়া, পরিমাপ ও হিসাব-নিকাশের কাজে শিশুকে সম্পৃক্ত করা, মানচিত্র, গ্রাফপেপার, কম্পাস, থার্মোমিটার, ক্যালেন্ডার, ঘড়ি, টাইমার, ক্যালকুলেটর ইত্যাদির ব্যবহার শেখানো ও এগুলো শিশুকে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি তৈরী করতে উৎসাহ দেয়া ইত্যাদি।
৩) শারীরিক গতিমূলক বুদ্ধিমত্তা (Body / Kinesthetic Intelligence):
এই বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, শারীরিক নড়াচড়ায় সমন্বয় সাধন ক্ষমতা বা চলাফেরায় নমনীয়তা দেখানোর সামর্থ্য।
এই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হলো, শিশু বা ব্যক্তির মধ্যে নিজের শরীরকে বৈচিত্র্যময় ভঙ্গীমায় উপস্থাপন এবং বিভিন্ন বস্তু ও উপকরণ নিজের সুবিধাজনক করার সামর্থ্য থাকবে।
এই বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষরা নাচিয়ে, অভিনেতা, এথলেট, সাঁতারু, খেলোয়াড় ইত্যাদি হতে পারবে। এছাড়া সার্কাসে কাজ করা, পাহাড়ে চড়া, যেকোন যান দক্ষতার সাথে চালানো ইত্যাদি কাজ খুব সহজে করতে পারবে।
কোন শিশুর মধ্যে এই বুদ্ধিমত্তা দেখতে পেলে বাবামার করণীয় হবে –
শিশুকে অভিনয়, নাচ, শরীরচর্চা, সাঁতার কাটা, জিমন্যাস্টিকস, দৌড়ানো, খেলা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি চলাফেরা বা শারীরিক নড়াচড়ামূলক কাজ করতে দেয়া। কিউব, বরক, পাজল, কাদামাটি ইত্যাদি দিয়ে খেলতে দেয়া। বিভিন্ন নক্সা বানানো, কাঠের বা মাটির হস্তশিল্প এবং হাতের কাজের নানা জিনিস বানাতে শেখানো বা এগুলো বাড়িতে রাখা।
৪) স্থানসংক্রান্ত বুদ্ধিমত্তা (Spatial Intelligence):
এই বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, কোন স্থানের বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষণ করা ও তার পার্থক্য বুঝতে পারার
এই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হলো, শিশু বা ব্যক্তি কোন জিনিস সহজে খুঁজে বের করতে বা দেখতে পায়, জিনিসটির উপাদানসমূহ অনুমানকরতে পারে এবং সৃজনশীলতার সাথে কোন স্থানকে নিজের সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার করতে পারে। চিত্রকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে, বস্তুকে সুন্দরভাবে সাজাতে গোছাতে পারে।
এই বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শিশুরা কারিগর, মিস্ত্রী, চিত্রশিল্পী, স্থপতি, ফটোগ্রাফার, ইনটিরিয়র ও ফ্যাশন ডিজাইনার ইত্যাদি হতে পারবে।
কোন শিশুর মধ্যে এই বুদ্ধিমত্তা দেখতে পেলে বাবামার করণীয় হবে –
শিশুকে তার মনের ভাবের বহিঃপ্রকাশের জন্য গ্রাফ বা লেখচিত্রের সাহায্যে কোনকিছু উপস্থাপন করতে উৎসাহিত করা, তথ্য উপস্থাপন করতে মানচিত্র, ছবি, নক্সা, পোস্টার, বুলেটিন, ইত্যাদি ব্যবহার করতে এবং তথ্য বর্ণনার জন্য বিচিত্র রং, আকৃতি, ছবি ইত্যাদি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা।
৫) সঙ্গীতমূলক বুদ্ধিমত্তা (Musical / Rhythmic Intelligence):
এই বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, বিভিন্ন শব্দ শোনা, চিনতে পারা ও শব্দ অনুকরণ করার ক্ষমতা।
এই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হলো, শিশু বা ব্যক্তি বিভিন্ন শব্দের প্রতি সাড়া প্রদান করবে, শব্দের বিভিন্ন ধরণ সৃষ্টি করতে পারবে। কণ্ঠস্বরে মাধুর্য থাকবে, সাবলীলভাবে যেকোন সুর বা শব্দ সৃষ্টি করতে পারবে।
এই বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শিশুরা সহজেই শিল্পী, সুরকার, শব্দ পরিচালক, বাদক, আবৃত্তিকার, উপস্থাপক, সুবক্তা ইত্যাদি হতে পারবে।
কোন শিশুর মধ্যে এই বুদ্ধিমত্তা দেখতে পেলে বাবামার করণীয় হবে –
সঙ্গীতচর্চার সুযোগ দিতে হবে, নানা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতে হবে, সুর সৃষ্টি, আবৃত্তি, উপস্থাপনা ইত্যাদি কাজে উৎসাহ দিতে হবে।
৬) আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা (Inter-personal Inteilligence):
এই বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, অন্যের সাথে সফলভাবে মিশতে পারা বা মিথস্ক্রিয়া করা ও সামাজিক জীবনে নিয়োজিত হওয়ার সামর্থ্য।
এই বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শিশুরা নেতা, রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক, সংগঠক, উদ্যোক্তা, শিক্ষক, প্রশিক্ষক হলে ভাল করবে।
এই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হলো, শিশু বা ব্যক্তি অল্প বয়স থেকেই নেতৃত্ব দিতে, অন্যদের সংগঠিত করতে সমর্থ্য হবে। তার অনেক বন্ধু তৈরী হবে, মানুষের সাথে মেশার আগ্রহ ও মানুষকে জানার, বোঝার চেষ্টা থাকবে।
এই ধরণের ব্যক্তিরা বহির্মুখী (Extrovert) ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়। এরা জ্ঞানলাভে ও আলোচনায় অংশ নিতে ভালবাসে।
কোন শিশুর মধ্যে এই বুদ্ধিমত্তা দেখতে পেলে বাবামার করণীয় হবে –
তার নেতৃত্বের গুণকে স্বীকৃতি দেয়া, পারিবারিক আলোচনায় তার মত নেয়া, ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব দেয়া, বেড়াতে দেয়া, অনেক মানুষের সাথে মিশতে দেয়া, বিখ্যাত নানা বই ও বিখ্যাত মহিষীদের জীবনী পড়তে দেয়া ইত্যাদি।
৭) অন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা ( Intra-Personal Intelligence):
এই বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, নিজেকে বুঝতে পারার সামর্থ্য।
এই বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শিশুরা মনোবিজ্ঞানী, সমালোচক, লেখক, কলামিস্ট, ছবি পরিচালক, বিজ্ঞানী, কবি ইত্যাদি হতে পারবে।
এই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হলো, শিশু বা ব্যক্তির নিজের শক্তি, দূর্বলতা ও ক্ষমতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা বা উপলব্ধি এবং সে অনুসারে কাজ করার সামর্থ্য। এরা অন্তর্মুখী (Introvert) ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এরা নিজের পছন্দমত কাজ একা একা করতে ভালোবাসে। এরা জটিল দর্শনের অধিকারী। এরা সাধক শ্রেণীর মানুষ। কোনকিছু নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করে, এদের অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গী সবার চেয়ে আলাদা।
কোন শিশুর মধ্যে এই বুদ্ধিমত্তা দেখতে পেলে বাবামার করণীয় হবে –
শিশুর নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশকে উৎসাহিত করা, শিল্প, সাহিত্য পত্রিকায় লিখতে উৎসাহ দেয়া, সামর্থ্য অনুযায়ী কাজের পরিকল্পনা করতে ও সেইমত কাজ করতে দেয়া। সমালোচনা, উপহাস, নিরুৎসাহিত না করা।
৮) প্রকৃতিবিষয়ক বুদ্ধিমত্তা (Naturalistic Intelligence):
এই বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায়, প্রকৃতিকে ইচ্ছামত সংশ্লিষ্ট ও ব্যবহার করার সামর্থ্য।
এই বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শিশুরা চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষিবিদ ইত্যাদি হতে পারবে।
এই বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হলো, শিশু বা ব্যক্তি উদ্ভিদ ও প্রাণিকূল থেকে বিভিন্ন ধরণের প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারবে, প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানকে অভিনব উপায়ে ব্যবহার করতে পারবে। শিশুর চারপাশের নানা জিনিসের প্রতি তার আগ্রহ থাকবে।
কোন শিশুর মধ্যে এই বুদ্ধিমত্তা দেখতে পেলে বাবামার করণীয় হবে –
শিশুকে প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়াতে বা খেলতে দেওয়া, বাগান করতে সাহায্য করা, জীবজন্তু, জীবজন্তুর ছবি দেখানো ও খেলনা জীবজন্তু দেয়া, একুরিয়াম কিনে দেয়া, পশুপাখি পুষতে দেয়া ও এদের যত্ন নিতে দেয়া ইত্যাদি । গাছের গুড়ির আসবাব, ঝিনুকের গহনা ও শোপিচ, বনসাই, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরী নানা জিনিস ঘরে রাখা। এতে শিশু প্রাকৃতিক জিনিসের অভিনব ব্যবহার উদ্ভাবন করতে পারবে।
আমাদের বিদ্যালয়, পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রথম দুই প্রকার (মৌখিক বা ভাষাতাত্ত্বিক বুদ্ধিমত্তা এবং যৌক্তিক / গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা) বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন শিশুদেরকেই সবাই বাহবা দেয়, বুদ্ধিমান বলে। ফলে বাকী ছয় রকম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন শিশুদেরকে ‘শিখন প্রতিবন্ধী‘ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাদের প্রতিভাকে মূল্যায়ন করা হয়না। ফলে তারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। অথচ শিল্পী, স্থপতি, নৃত্যশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, উদ্যোক্তা, থেরাপিস্ট, বিজ্ঞানী, ছবি পরিচালক, লেখক,… এঁরা পৃথিবীকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই এখন সময় এসেছে, শিশুদের সব রকমের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটিয়ে এগুলোকে দেশ ও দশের কাজে লাগানোর।
মূলকথা:
যে শিশুর মধ্যে যে যে বুদ্ধিমত্তা প্রবল, তাকে সেই কাজই করতে দিতে হবে। এটি ঐ শিশুর জন্যও ভাল। কারণ এতে শিশু তার পছন্দমত কাজ করতে পারে। ফলে সে আনন্দের সাথে শিখে ঐ কাজে তার পারদর্শীতার সর্বোত্তম প্রয়োগ করতে পারে।
আমাদের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ছবি আঁকা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁর শিক্ষক তাঁর মাকে বলেছিলেন, জয়নুলকে কলকাতা আর্ট স্কুলে পাঠাতে। তখন জয়নুলের মা তাঁর একমাত্র সম্বল গলার সোনার হার বেচে ছেলেকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন বলে আমরা জয়নুল পেয়েছি। তাই প্রতিটা শিশুর প্রতিটা প্রতিভার বিকাশের জন্য বাবামাকে সতর্ক থেকে চেষ্টা করতে হবে।