০
৬৭১ বার পঠিত
ইফতারের দাওয়াত দিয়ে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেছে ৫০ বছরের ওপরের দু‘জন ‘মানুষ‘। এই দু‘জনকে শিশুটি দাদু বলে ডাকতো, শিশুটির মা নিজেই শিশুটিকে সেই দাদুর বয়সী ধর্ষকের ইফতারের দাওয়াতে পাঠিয়েছে। এটা আমাদের মতো দেশে খুব সাধারণ ও নৈমত্তিক একটি ঘটনা।
এরকম শিশুদের চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে, খেলনার প্রলোভন দেখিয়ে, গল্প বলার নাম করে, নানারকম খেলার কথা বলে- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ও যৌনাঙ্গে স্পর্শ করা, পুরুষাঙ্গ দিয়ে শিশুকে স্পর্শ করা এমনকী যৌন সঙ্গম বা যৌন সঙ্গমের চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়! (যৌন সঙ্গমের চেষ্টা বলা হচ্ছে, কেননা- এই বয়সী শিশুদের যৌনাঙ্গে পেনিট্রেশনের কাজটি খুব সহজ নয়, তারচেয়েও এতে শিশুটি যন্ত্রণায় চিৎকার- কান্নাকাটি করে কিংবা জখম- রক্তারক্তি হয়ে জানাজানি হওয়ার ভয়ও থাকে, ফলে প্রাথমিক চেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফল হয় না!)
এই কাজটি করার ক্ষেত্রে- দাদুর বয়সী কর্মচারি থেকে শুরু করে সব বয়সী পাড়া-প্রতিবেশী-আত্মীয় স্বজন (কাজিন, মামা-চাচা-খালু-ফুপু), বড় ভাই, বোন, বাবা, মায়ের বন্ধু- এমনকী বাসের ভীড়ে দয়াপরবশ হয়ে শিশুটিকে আগ বাড়িয়ে কোলে নেয়া ভদ্রমুখী ব্যক্তি- সকলের অংশগ্রহণ দেখা যায়! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুটির বাধা দেয়া বা প্রতিবাদ করার মতো অবস্থা তো দূরের কথা, তারা বুঝতেই পারে না যে- তাদের সাথে কী ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কিংবা কেন এমন করা হচ্ছে।
শিশুর স্মৃতিতে যা গভীর ক্ষত হিসেবে থেকে যায়, এবং আরো বড় হয়ে ব্যাপারটি কী হয়েছিল সেটি বুঝতে পারে। এই একইরকম ঘটনা এমনকী আরেক ছেলে শিশুর দ্বারাও (বয়সে সামান্য বড় হয়তো) অনেক সময়ে সংঘটিত হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে অনেক সময়ে- মেয়ে শিশুটি এই কাজটিকে খেলার অংশ হিসেবে ধরে নিতে পারে এবং সেই ছেলে শিশুটি কিংবা প্রতিবেশী বা আত্মীয় কিশোরটি থেকে দূরে সরে থাকা বা ভয় পাওয়ার পরিবর্তে পূনঃ পূনঃ একইরকম কাজে লিপ্ত হতে থাকে।
এরকম ক্ষেত্রে বস্তুত বাবামায়ের সাবধানতা অনেক বেশি দরকারি। ছেলে ও মেয়েদের প্রকাশ্যে মেলামেশা- খেলাধুলার অবাধ পরিবেশ যেমন তৈরি করা দরকার, তেমনি শিশু সন্তানকে (মেয়ে কিংবা ছেলে) চোখে চোখে রাখা- কার কার সাথে- কোন পরিবেশে- কীভাবে মিশছে- সেই খেয়াল রাখাও জরুরি (অনেকসময় ছেলে শিশুকে কাজিন, চাচা, মামাদের সাথে একই বিছানায় ঘুমানোর আয়োজনেও এরকম সমস্যা হতে পারে)। তারও আগে দরকার- সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের একটা উন্মুক্ত সম্পর্ক- যেখানে সন্তান যেকোন ধরনের ঘটনা তার বাবা-মায়ের শেয়ার করতে পারে। বাবা-মায়ের উচিত শিশু অবস্থাতেই শরীরে বাজে স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দেয়া এবং এরকম স্পর্শের ঘটনায় করণীয় সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দেয়া।
এদিক দিয়ে, আইনের বিষয়টিও খুব জরুরি। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন কেন্দ্রিক আইনে ‘এইজ অব কনসেন্ট‘ খুব দরকারী একটি ধারা। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের সংজ্ঞায় ক্রিয়াটি ‘অসম্মতিতে‘ তথা ‘জোর পূর্বক‘ হওয়া আবশ্যক। কিন্তু উপরের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে- শিশুদেরক্ষেত্রে এরকম ‘অসম্মতি‘ জ্ঞাপন করার মতো বা বাধা দেয়ার মতো মানসিক পরিপক্কতা হওয়া অনেকক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। সেই জায়গাটি ধরেই আইনে- এই এইজ অব কনসেন্ট, অর্থাৎ একটা বয়সের নীচের শিশুদের ক্ষেত্রে সম্মতি- অসম্মতি এসব গণনাতেই ধরা হবে না, তাদের সাথে যৌন সঙ্গম করলে সেটা ধর্ষণ হবে, যৌন স্পর্শ হলেই সেটি যৌন নির্যাতন হবে।
এইরকম বয়সের লিমিটকেই এইজ অব কনসেন্ট বলা হয়। বিভিন্ন দেশে এটি বিভিন্ন রকম। বাংলাদেশে এটি সাধারণভাবে ১৬ বছর (পেনাল কোড অনুযায়ী যদিও একটু ঝামেলা আছে)। যুক্তরাজ্যের আইনে এটা ১৩ বছর। কানাডার আইনে এটা ১৬ বছর হলেও ১২-১৬ বছর বয়সের শিশুর ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম আছে (প্রেমের সম্পর্ক হলে- প্রেমিকের বয়সের ডিফারেন্সের একটা লিমিট দেয়া আছে)। একভাবে দেখলে দেখা যায়- আমাদের দেশের আইন ইউরোপ-কানাডা’র আইনের চাইতে অধিক কড়া, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আইনের প্রয়োগ আমাদের দেশে একেবারেই কম। ইউরোপে এই সংক্রান্ত মামলা অনেক হয় এবং সবই করে সন্তানের বাবা-মা।
অযাচিত যৌন সম্পর্কের জন্যে মামলা যেমন হয়, তেমনি কম বয়সী সন্তানের সাথে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক সংঘটনের জন্যেও বাবা-মা আদালতে হাজির হয়েছেন- এমন ঘটনাও ঘটে! আমাদের দেশে ঠিক উল্টো পরিস্থিতি। ৮ বছরের ওই শিশুটির মতো ধর্ষণ করে অসুস্থ করা ছাড়া, ক্ষেত্রবিশেষে ধর্ষণের দরুণ মরণাপন্ন অবস্থা করা ছাড়া- এসব নিয়ে আইন আদালত থানা পুলিশ কিছুই হয় না (কমবয়সী শিশুর সাথে- যেমন ১২-১৫ বছরের মেয়ের সাথে- প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মামলা তখনি করা হয়- যখন সম্পর্কটি প্রেমিক ভেঙ্গে দেয় তখন!)…।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন