০
১৩১৪ বার পঠিত
এ বছর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। স্বাধীনতার এই সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে বিভিন্ন দল বা সংগঠন। একই সঙ্গে উপমহাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের শতবর্ষও পালন করছে অনেক বামপন্থী দল জোট ও সংগঠন। এ সময়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনের আলোকোজ্জ্বল দিকের উপস্থাপনই কাজের কথা নয়, বরং দরকার ফিরে দেখা। দরকার অতীতের সারসংকলন। যে কাজটি করে গেছেন কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী।
অসংখ্য বিপ্লবীর সমাজ বদলের স্বপ্ন, সাহস আর আত্মত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল উপমহাদেশে শতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলন। এ সত্ত্বেও বামপন্থী কমিউনিস্টগণ দেশের সংঘটিত পরিবর্তনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হননি। সক্ষম হননি বিপ্লব সাধনে। বুর্জোয়াদের ক্ষমতা দখলের জন্য ক্ষমতাসীন আরেক বুর্জোয়া শাসকদের সরাতে হয়। আর বিপ্লবীদের ক্ষমতা দখলের জন্য ক্ষমতাসীন শাসকদের তাদের শ্রেণিসহ উচ্ছেদ করতে হয়। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে যে পশ্চাতপদতা, কুপম-কতা ও যাবতীয় প্রতিক্রিয়াশীল ভাবপ্রবণতা রয়েছে, তাকেও সমূলে দূর করতে হয়। এ কাজ অতিশয় দু:সাধ্য, তবে অসাধ্য নয়। একর্ম সাধনে কেন বামপন্থী কমিউনিস্টগণ সফল হলেন না, এজন্য তাদের ভ্রান্তি বিচ্যুতি অগ্রগতি চিহ্নিত হওয়া দরকার। এজন্য বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের পূর্ণগঠন জরুরি।
যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধে বুর্জোয়া ধারা ছিল প্রধান। এই ধারাই ছিল প্রভাবশালী ও সংহত। যার কারণে এই ধারার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। অপরদিকে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধে কমিউনিস্ট ধারা ছিল বিভক্ত দুর্বল ও তত্ত্বগত সমস্যায় নিমজ্জিত। এ সত্ত্বেও বাংলাদেশের বামপন্থী কমিউনিস্টগণ বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রত্যাবর্তন করার আগে পর্যন্ত দেশে সীমিত অস্ত্র অর্থ সামর্থ দিয়ে কমিউনিস্ট বিপ্লবীরাই প্রতিরোধযুদ্ধ জারি রেখেছিলেন। কেন্দ্রীয় রাজনীতির অনুপস্থিতি, বুর্জোয়াদের এক নাগারে প্রচারণার নীচে এসব লড়াইয়ের ভাষ্য চাপা পড়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীনতা যুদ্ধে বুর্জোয়া ধারার পাশাপাশি বামপন্থী বিপ্লবী কমিউনিস্ট ধারারও ক্রিয়াশীল ছিল। তদান্তিন পূর্ববাঙলায় সেই রাজনীতি বিকাশে বামপন্থী কমিউনিস্টগণ যথাসাধ্য করেছেন। ১৯৫৭ সালের কাগমারি থেকে এরাই ধাপে ধাপে একটা পর্যায় পযন্ত স্বাধীকারের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে গড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে যে স্বাধীকারের রাজনীতির যাত্রা শুরু করেছিল, সেখানেও বড় প্রভাব ছিল বাম ধারার ছাত্র বুদ্ধিজীবীদের।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধে বুর্জোয়া ধারার মধ্যে ছিল দোদুল্যমানতা আর আপোষের প্রবণতা। এছাড়াও ছিল ভারতের প্রভাবের কাছে সমর্পন। এসব বিচ্যুতি, প্রবণতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধকালে বুর্জোয়া ধারাকে প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিবিপ্লবী বলা যায় না। কারণ পরাধীন দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বুর্জোয়াদেরও সীমাবদ্ধতাসহ ও সমালোচনাসহ প্রগতিশীল ভূমিকা থাকে। বর্তমানের বেলুচিস্তান সহ নিপীড়িত জাতি সমূহের ওপর আভ্যন্তরীন জাতিগত নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন সমালোচনাসহ প্রগতিশীল। পরে নিপীড়িত বুর্জোয়ারা ক্ষমতা হাতে পেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শোষক লুণ্ঠকে পরিণত হয়।
কমিউনিস্ট আন্দোলনের শতবর্ষ আর স্বাধীনতার অর্ধশতবর্ষ পূর্তির এই সময়ে বামপন্থী কমিউনিস্টদের দাঁড়ানো দরকার আয়নার সমানে। ফিরে দেখতে হবে এই অর্ধশতবর্ষ আর শতবর্ষের পথ পরিক্রমা। একবিংশ শতকের এই যুগ হল বিপ্লবী কমিউনিস্ট রাজনীতির তত্ত্বগত পূর্ণগঠনের যুগ। এই যুগ হল কমিউনিস্ট রাজনীতির পুনর্জাগরণ ও পুনরুত্থানের যুগ। এই যুগ হল কমিউনিস্ট সংস্কৃতির রেনেসা সৃষ্টির যুগ। এর অনেক শর্তের পয়লা শর্ত হল সাবেকি ভ্রান্তি বিচ্যুতি চিহ্নিত করে ঝেড়ে ফেলা আর অগ্রগতিসমূহ ধারণ করা, পাশাপাশি নতুন পথের দিশা বের করা। সেই কাজে ইতিহাস আমাদের অধিক সময় দেবে না। এই কাজ অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছেন কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী। ৯ জানুয়ারি ২০২১, তার নবম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসা।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন