০
৬৮৯ বার পঠিত
গ্রন্থ পর্যালোচনা ‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’
–মোঃ শামসুল হক শামস
[বাংলাদেশ বেতারের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘উত্তরণ’ এ একাধিকবার পঠিত]
একুশের বই মেলায় আগামী প্রকাশনী,বাংলা বাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত কবি শফিকুল ইসলাম এর কাব্য গ্রন্থ ‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’। এই গ্রন্থে প্রায় ৫০টির (পঞ্চাশ) মত কবিতা স্থান পেয়েছে। গ্রন্থের প্রচছদ পরিকল্পনায় শিবু কুমার শীল। কবিতাগুলো মনের গভীরে প্রোথিত অনুভূতিকে উদ্বেলিত করার মত গদ্য -রীতিতে রচিত।
নান্দনিকতায় যখন ভাটা, হালকা চটুল গান নিয়ে যখন মানুষ অ-রুচির অন্ধকারে আচছন্ন, ঠিক তখনই উপযুক্ত সময়ে যেন সৃষ্টি হল এই কাব্যগ্রন্থটি। বাংলা সাহিত্যে এমন গ্রন্থের কদর থাকা চাই। প্রেম-বিচেছদের কুয়াশায় আচছন্ন মানুষের চোখ। কিন্তু এমন কোন চোখ আর মন আছে কি, যে একমাত্র একজনের জন্যে অশ্রু -শ্রাবণ বর্ষণ করে? আলোচ্য গ্রন্থের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এই গ্রন্থে কবির মানসী সুলতাকে ছাড়া আর কারো কোন কথা নেই। মানসী আসলে এমনই হওয়া চাই। যে তার আশেকের সব ভালোবাসা নিঙরে নিতে পারে রূপে-গুণে-জ্ঞানে আর ভালবাসায়। তাইতো কবির অন্তরে অনুরনিত হচ্ছে–
“কোথায় হারিয়ে গেলে বলত কিছু না বলে,
কোথায় আমার সেই চেনা কন্ঠ?
সমস্ত শহর আজ আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষিত হলেও
কেন আমি নিজেরে আজ আশ্রয়হীন অসহায় ভাবি।”
সুলতাকে নিয়ে কবির আরো আকুতিঃ-
“সুলতা তুমি আমার হৃদয়ে
এক গোপন গভীর ক্ষত চিহ্ন
তুমি আমার জীবনে এক
অমীমাংসীত প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
অনেক কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে
দুঃসহ একাকীত্বের
দুরতিক্রম্য পথ পেরিয়ে তবে
তোমার দেখা পেয়েছিলাম,
তারপর কোথায় হারিয়ে গেলে
আমার জীবন থেকে বহুদূরে”।
নাগরিক জীবনের মানুষ জানে ,সময়ের ব্যবধানে শহর-বন্দর সব কিছুই পুরাতন হয়ে যায়। কিন্তু প্রিয়ার বিরহে কাতর সেই মজনুর শহর কি পুরাতন হয়েছে মজনুর কাছে? তাইতো সে সারা শহর ঘুরে ঘুরে শহরের দেয়ালে চুম্বন খেয়েছে, শহরের রাস্তার ধূলিকণা গায়ে -মুখে মাথায় মেখেছে দিনরাত। কবি শফিকুল ইসলাম ও যেন তেমনিভাবে তার সুলতার শহরকে দেখছেন। আর তাই বলেছেন,
“এই শহরে আর তুমি নেই
এই বাড়িতে আর তোমার চরণ পড়েনা,
বন্ধ গেট সারাদিন বন্ধই থাকে।
তবু ও কি যেন অজানা মোহের
দুর্নিবার আকর্ষনে
দিবানিশি এ বন্ধ বাড়িতেই
আমি ছুটে আসি।”
কবির শব্দ চয়ন খুবই সুন্দর । নিখুত আধুনিক গদ্য কবিতার যে আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য,আন্ত-বর্ণের মিল ছাড়া স্বরবৃত্তে অনুপ্রাসের প্রতিধ্বনি ,আলোচ্য গ্রন্থের বিশেষ বৈশিষ্ট্য মনে হচেছ ।
পুরা কাব্য জুড়ে নিজের মানস প্রতিমা সুলতাকে নিয়ে বিয়োগান্তক কাব্যিক সুরে অন্তরের চির -বিরহের যন্ত্রণার আর্তি-আকুতি অতি সুন্দর সাবলিল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন কবি । প্রতিটি বিরহ -কাতর অন্তরের নীরব ক্রন্দনই যেন উল্লেখিত কবিতা সমূহ। শত কর্ম ব্যস্ততার মাঝে ললিতকলার চর্চায় নিবিষ্ট তরুন কবি শফিকুল ইসলাম এর জীবন ঘনিষ্ট সাহিত্য কর্ম ‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’ এক দুঃখ-বেদনা বিরহের প্রতীক। যেখানে কোন শব্দ জড়তা নেই, শব্দের বাহুল্য নেই। নিরীক্ষা প্রয়াসী কবি ছন্দের সযত্ন শাসন মেনে শব্দ চয়ন, পঙক্তি বিন্যাস, প্রতীক উপমা উৎপ্রক্ষায় যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ ঘাত-প্রতিঘাতের অব্যক্ত বানী ব্যক্ত করে সমৃদ্ধ করেছেন ‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’।
গ্রন্থের নাম-‘শ্রাবণ দিনের কাব্য’ লেখক- শফিকুল ইসলাম। প্রচ্ছদ- শিবু কুমার শীল। প্রকাশক- আগামী প্রকাশনী ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন