০
৮০০ বার পঠিত
নবযুগ ব্লগে বাংলাদেশের মিডিয়ার দৈত্য হয়ে ওঠার পর দু‘টো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ দু’টো রিপোর্টের বিষয়ে সরকারের উঁচু পর্যায়ের গোয়েন্দারা বেশ নড়ে চড়ে বসে। চ্যানেল ২৪ এর যেসব শিবির নেতার তালিকা প্রকাশ হয়েছে সেগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলেছেন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
চ্যানেল ২৪ এর মালিক হামীম গ্রুপের কর্ণধার একে আজাদ। ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগ করতেন। ছাত্র রাজনীতি করার সময় তিনি জেলও খাটেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাসদের রাজনীতির ভোল পাল্টে একে আজাদ আওয়ামী লীগের আর্শিবাদ পেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, ফরিদপুর থেকে এমপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেন। কিন্তু একে আজাদের ভাগ্য খারাপ। তিনি যে আসনের জন্য দৌড়াচ্ছিলেন সে আসনে শেখ হাসিনার বেয়াই মোশাররফ হোসেন রয়েছেন। এর ফলে একে আজাদ এলাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই এর লোকদের কাছে দাবড়ানি খেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র আনিসুল হক মারা যাবার পর আজাদ ভেবেছিলেন তিনি ঢাকা উত্তরের মেয়র হবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা আরেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আতিকুল হক মাসুদকে নমিশন দিলেও আজাদকে নমিশন দেয় নি। এসব চিন্তা করে আজাদ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ করেন একে আজাদ। নগদ ১০০ কোটি টাকা তারেককে দেন একে আজাদ। বিনিময় বাণিজ্যমন্ত্রী বা শিল্পমন্ত্রী যে কোন একটিতে একে আজাদকে বানানো হবে এটির প্রতিশ্রুতি দেন তারেক রহমান। এর পাশাপাশি তারেক রহমান চ্যানেল ২৪ এ গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, চ্যানেলের ইডি করার প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক এনটিভির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিট কভার করার তালাত মামুনকে। একে আজাদ দেশে ফিরে দ্রুত তালাত মামুনকে ইডি করেন। চ্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনেন দিগন্ত টিভি থেকে আসা বিপ্লব শহীদকে। এছাড়াও শিবির কর্মী সাবেক এবিসি রেডিও রিপোর্টার আমিন আল রশিদকেও ন্যাশনাল ডেস্কের দায়িত্ব দেন।
এসব রদবদলে চ্যানেলটির মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান সাবেক শিবির নেতা এহসানুল হক তানিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এসবই করা হয় একে আজাদের সাথে কথা বলে। সারাদেশের প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত ১৩ জন রিপোর্টারের তালিকা করা হয়, তাদেরকে চিঠি দিয়ে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। আর এই ১৩ জন প্রতিবেদকের স্থলে চিহ্নিত শিবির কর্মীদের নিয়োগের বিষয়টি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
চ্যানেলটির এহেন পরিস্থিতি ও একে আজাদের ১৮০ ডিগ্রি পল্টি দেওয়ায় সরকারের উপর মহল খেপে যায়। তারা প্রথমত একে আজাদের নিয়ন্ত্রণাধীন শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের মালিকানা দাবি করে বসে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সরকারপন্থী এস আলম গ্রুপ শাহাজালাল ব্যাংকটি কিনে নিতে চায়। একে আজাদ রাজি হয়নি। এ পরিস্থিতিতে, প্রথমে একে আজাদের গুলশান বাড়ির কিছু অংশ সরকার ভেঙ্গে দেয়। ঢাকায় গুঞ্জন ওঠে একে আজাদ গ্রেফতার হতে যাচ্ছেন। কারণ বিষয়টি অনেকদূর এগিয়েছে। দুদকে একজন লিখিত অভিযোগ করে এসব তথ্য উপাত্ত হাজির করেছেন।
সর্বশেষ খবর হলো, একে আজাদ দু‘একদিনের মধ্যে দেশের বাইরে পাড়ি জমাচ্ছেন। এ যাত্রার পরে তিনি দেশে নাও ফিরতে পারেন। যদি সরকার পক্ষের সাথে তার আপস না হয়। ইতোমধ্যে চ্যানেলে শিবির নেতাদের একটি তালিকা দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছেন চ্যানেলের ইডি তালাত মামুন, বিপ্লব শহীদ, আমিন আল রশিদ, এহসানুল হক তানিমসহ বেশ কিছু রিপোর্টারও এ তালিকায় রয়েছেন। এদেরকে বাদ না দিলে কড়া ব্যবস্থায় যাবে সরকার।
এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন রাহুল রাহার হাতে চ্যানেলের কর্তৃত্ব যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যদি একে আজাদ সরকারের চাওয়া অনুযায়ী চিহ্নিত শিবির নেতাদের চ্যানেল থেকে বিতাড়িত না করেন তাহলে এ চ্যানেলটি এস আলম গ্রুপ কিনে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে চ্যানেলের সিও হবেন আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক একুশে টিভির প্রধান মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।
বসুন্ধন্ধরা গ্রুপ কোনো পদক্ষেপ নেয় নি
এদিকে বসুন্ধরা গ্রুপের টিভি নিউজ ২৪ ও দৈনিক পত্রিকা কালের কণ্ঠ থেকে চিহ্নিত পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে পরিচিতদের এখনো সরিয়ে দেয়নি মালিকপক্ষ। এ তালিকায় রয়েছেন নিউজ ২৪ এর হাসনাইন খুরশিদ সুচি ও কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল।
এ দুটি মিডিয়ার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানের সাথে তার বাবা আকবার সোবহানের শীতল সম্পর্ক চলায় মিডিয়া দুটিতে এখন পর্যন্ত শিবির ও পাকিস্তানের এজেন্ট নির্মূলে কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাবা ছেলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে এ দুটি মিডিয়া থেকে শিবির ও পাকিস্তানী এজেন্ট নির্মূলে কাজ শুরু হবে।
অন্যদিকে গাজি টিভির প্রধানমন্ত্রী বিট করতেন টিভির স্পেসাল করেসপন্ডেট সাজু। নবযুগ ব্লগে এ সংক্রান্ত লেখা ছাপা হওয়ার পর সাজুকে প্রধানমন্ত্রী বিট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাজু পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাথে মিলে বাংলাদেশ থেকে তরুণ সাংবাদিককের পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। আর কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের পাকিস্তানে নিয়ে মগজ ধোলাইয়ের প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত রয়েছেন। দোস্তি নামের আইএসআইয়ের ওই কর্মসূচির মাধ্যমে পাকিস্তানি হাই কমিশন থেকে কোটি টাকার সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে রয়েছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন