০
১৫৯৪ বার পঠিত
সামাজিক মাধ্যম যে দুনিয়া জুড়ে বিপ্লব ঘটিয়েছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তথ্য মানুষের হাতের মুঠোয়; খবর, মতামত প্রকাশ এবং তাঁর প্রভাবে-পড়া একেবারেই জলের মতো পরিস্কার, সহজ। অন্যদিকে হারিয়ে-যাওয়া বন্ধু, ফস্কে যাওয়া প্রেমিক-প্রেমিকা, কতো না অজানা মানুষের সঙ্গে পুন:যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে। এগুলো ভাল দিক। মতামতকে প্রভাবিত করে, দলবদ্ধভাবে ভাল কাজ করাও সহজ হয়েছে। কিন্তু সবকিছুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। সামাজিক মাধ্যমের সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে হয়তো অনেক বেশি সুফল ভোগ করা যাবে।
নানান গবেষণায় দেখা গেছে কতগুলো বিশেষ দিক থেকে সামাজিক মাধ্যম মানসিক রোগের সৃষ্টি করতে পারে বা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। একটু জেনে নিইঃ (এগুলো সবই নানান গবেষণার ভিত্তিতে লেখা)ঃ
এক। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে সবাই নিজের ছবি বা জীবনকে অনেকটা “ছবির মতো” করে প্রকাশ করে। নিজেকে এগুলোর সঙ্গে তুলনা করতে করতে এক সময় আত্নবিশ্বাস এবং আত্নসম্মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে অল্প বয়সীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে এই প্রভাব দেখা যায়। মনে রাখতে হবে সামাজিক মাধ্যম যে যা দেখাতে চায় তাই দেখা যায়। বাস্তবতা ভিন্ন হতেই পারে।
দুই। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ হয়ে যাওয়া। নিজের ভক্ত, ফলোয়ার এবং মন্তব্য নিয়ে নিমগ্ন হয়ে কেউ কেউ ভুলে যায় মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযোগ কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার নিজের কথা বলি, প্রতিদিন কাজের বাইরে একজন বা দুইজন মানুষের সঙ্গে আড্ডা না মারলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না, নিজেকে জ্যান্ত মানুষ মনে হয় না 🙂
তিন। অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যম-নির্ভর হবার কারণে আমাদের মেমোরি বা স্মরণশক্তি অকেজো হয়ে পড়ছে। কারো জন্মদিন মনে করিয়ে দেয় ফেসবুক বা ফোনের ক্যালেন্ডার। প্রিয়জনের অনেক কিছুই নিজেদের মনে করে করা এবং কিছু না কিছু নিজের স্মরণ থেকে এনে জীবনে কাজে লাগানোর মতো আনন্দের আর কিছু আছে কি?
চার। ঘুমের সর্বনাশ একটি খুব মারাত্নক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। দুশ্চিন্তা, কিম্বা হিংসা, কিম্বা ভয়, কিম্বা অতিরিক্ত আনন্দ, নানান কারনে ঘুমের সর্বনাশ ঘটতে পারে। ঘটতে পারে সময় নিয়ে সচেতন না থাকার কারণে। ভয়াবহ স্বাস্থ্য এবং মানসিক ক্ষতি হতে পারে এর জন্যে।
পাঁচ। স্থির মনোযোগের অভাব আর একটি ভয়ানক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। নানান বিষয় একসঙ্গে দেখতে দেখতে ভুলে যাই আমরা কী গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার জন্যে। তাছাড়া হাতের কাছে এতো সস্তা, সহজ বিনোদন অখন্ড মনোযোগ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
ছয়। বিষন্নতা, পরশ্রীকাতরতা (এমন কি পরস্ত্রীকাতরতাও 🙂 ) মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে কারো কারো মনে, জীবনে।
আসলে সব কিছুরই ভাল মন্দ থাকে। আমরা যাতে মন্দ দিকগুলো জেনে নিজেদের সচেতনভাবে ধনাত্নক দিকে এগিয়ে নিতে পারি সেটাই আসল। সেই পুরনো উদাহরণ দিয়ে বলি, ছুরি যখন সার্জনের হাতে তখন তা জীবন বাঁচায়, আর সেই একই ছুরি খুনীর হাতে জীবন কেড়ে নেয়। সামাজিক মাধ্যম বিপ্লব ঘটিয়েছে মানুষের চিন্তা-চেতনায়, প্রত্যহিকতায়। এর থেকে ভাল-মন্দ বেছে নেবার দায়িত্ব নিজদের। তবে অবশ্যই শিশু-কিশোরদের দেখে শুনে সামাজিক মাধ্যমে যেতে দেয়া বা ব্যবহার করতে দেয়া বড়দেরই দায়িত্ব।
সকলে ভাল থাকুন। সামাজিক যোগাযোগের মধ্যে দিয়েও এই যে ভাল তথ্য দিচ্ছি তা নিশ্চিতভাবে উপকারে লাগান, তাহলেই হবে। আসলে সংযম বা পরিমিতিবোধই আসল, তা শুধু একটি দিন বা মাস নয়, জীবনের প্রতিটি স্তরে, জীবন ভরেই কাজে লাগে। “সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু”, জগতের সকল প্রাণী সুখি হোক!!
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন