০
১৪২৯ বার পঠিত
চর্যাপদ কিংবা মঙ্গলকাব্য কিংবা বেহুলা
বাংলার সাম্প্রদায়িকতা বা শ্রেণী সংগ্রামেরই ইতিহাস বয়ান করে
‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’
সেই সত্য বা বাস্তবতার স্বীকারোক্তি
খ
একটি অভিন্ন আইন কাঠামো ব্যতিরেকে এই সাম্প্রদায়িকতা দূর করা অসম্ভব একটি বিষয়। বাংলার বুদ্ধিজীবিতা সে পথে না হেটে ‘এক বাঙালি একাই একশো’ নীতিতে হাটছে সেই বৈদিক থেকেই, তাই সে মাৎসন্যায়ের দেশ।
তাই সে ‘আমি’ ‘আমি’ চিৎকারে ট্রাফিক আইন অমান্য করে প্রতিদিন প্রতিক্ষণে…
গ
মুঘল বা ব্রিটিশ বণিকেরা এটা বুঝেছিল বলেই বাংলার ঘোষপাড়া, পালপাড়া, শেখপাড়া, ইত্যাদি ইত্যাদি পাড়া মিলে একটি গ্রাম রেখেই পরগনা/থানা রচনা করেছিল। আর সুখে সুখে শাষন চালিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের চাহিদা-পণ্য ও অতি উৎসাহী সামরিক কর্তাদের কল্যাণে সেপাহী বিদ্রোহ অবস্যম্ভাবী হয়ে উঠলো। শিল্পবিপ্লবের চাহিদা-পণ্যের সরবরাহ ও বিপননের প্রয়োজনেই একটি অভিন্ন আইনকাঠামো দরকার হলে ম্যাকলে ভারতীয় কাঠামোকে উপরে উপরে ঠিক রেখে ভিতরে ভিতরে চুরমার করতে ‘ইংরেজী শিক্ষাই শিক্ষা বা উন্নয়ন’ প্রচারে সাম্রাজ্যের প্রাচীন তত্ব ‘divide & rule’ কেই কাজে লাগালেন।
অজস্র সনাতন হলো ‘হিন্দু’ যারা হলোনা তারা ‘বুদ্ধ’ অথবা ‘আদিবাসী’ আর সাম্প্রদায়িকতা বা শ্রেণী সংগ্রামেরই ইতিহাসের পথে অস্থিরমতিরা ‘ইসলামে’ খুজেছিল মুক্তির পথ-তারা মুসলিম। ধর্ম ত্যাগ না করেই ‘শিক্ষা বা উন্নয়ন’ পাওয়ার সুযোগ হিন্দুরা লুফে নিলো, আর এতোদিন ‘শাসকের সাথে চলো তবেই উন্নয়ন’- যারা মুসলিম, তারা পড়লো বিপদে ‘ইংরেজি তাদের কাছে খ্রিস্টানত্বের’ প্রতিভূ। আরব গল্পে তারা খ্রিস্টত্যাগী, ভারত গল্পে ‘হিন্দু’ ত্যাগী। যা ত্যাগ করেছি তাতে কি ফেরা যায়? তাই সিংহাসন হারানোর দুঃখ ভুলি সমাজ পৌরিহীত্যে… ইংরেজী স্কুল তাই পাপ।
ঘ
কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের প্রয়োজনেই জরীপ, পুলিশ, দলীল দস্তাবেজ, ইত্যাদি ইত্যাদি… ইংরেজি জানাই শিক্ষা, উন্নয়ন…
ঙ
রাজারা, রায় বাহাদুরেরা লন্ডনের কথা বলেন, মেমদের কথা বলেন, বাঈদের গান শোনেন। নবাব বা খান বাহাদুর হতে কি করতে হবে স্যার…
চ
চলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বানাই, A for apple…
ছ
নবাবদের জন্য পাকিস্তান
রাজাদের জন্য ভারত
জ
কিছু ইহুদি, কিছু পার্সি ভারতে ছিল হাজারবছর। তারা অর্থকড়িতে বিশ্ব শাসক। আর কিছু নবাব গান্ধী নেহেরুর প্ররোচনায় ভারতেই রয়ে গেল…
ঝ
বাংলার রাজাদের বাসা বহুদিন ধরেই কলকাতায়, নবাবদের এখানে সেখানে একাধিক বাড়ী থাকতেই পারে, কিন্তু সাধারন, তারা ধার্মিক। পুরোহিত (মৌলানা, পাদ্রী, রাবাই, ইত্যাদি ও বুদ্ধিজীবি) তাকে অন্ধ করে তুলতেই পারে…
ঞ
মুহম্মদ বুঝেছিলেন ‘একটি অভিন্ন আইন কাঠামো ব্যতিরেকে এই সাম্প্রদায়িকতা দূর করা অসম্ভব একটি বিষয়’ তাই ‘আল্লাহ এক ও অদ্বীতিয়’। কিন্তু সেটাও এক ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাই হয়ে রইলো। মুহম্মদ তা রদ করতেই বললেন ‘আমিই শেষ নবী’ কিন্তু সাধারণ, তারাতো সাধারণ পুরোহিত (মৌলানা, পাদ্রী, রাবাই, ইত্যাদি ও বুদ্ধিজীবি) তাকে অন্ধ করে তুলতেই পারে…
চ
ইউরোপ বাণিজ্যপথে খুজে নিল রাজ্য, রাজা ও নাইটদের। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রই হতে পারে সাধারণের অসাধারণ হয়ে উঠবার পথ। যেখানে নিয়তি বা ধর্ম রইবে ঘরে কিংবা চার্চ-এ। বিচার রইবে আদালতে। নিত্য লেনদেন রইবে সিংহাসনে। আর আদালত, সিংহাসন এবং চার্চ জনপ্রিয় হবে তাদের ‘তামাশা’ (performance) দিয়েই…
‘জীবন এক রঙ্গমঞ্চ, আমরা সবাই সেখানে অভিনেতা’
ছ
কার্ল মার্কস কোন নবী বা অবতার নন, শিল্প-বাণিজ্য পথ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হতে থাকে; রোদে-বৃষ্টিতে, ভূগোলে… জনে জনে। কৃষকের মত তার এক জমি, বারো মাসের ছয়/চার ঋতুর পুনঃপূনিক হিসেব নয়
জ
এ বাণিজ্যকে বা আধুনিকতাকে কৃষক বোঝে না, তাই কৃষকের ঠাকুর লিখেন–
ভগবান
তুমি যুগে যুগে দূত
পাঠয়েছো বারে বারে
দয়াহীন সংসারে…
ঝ
প্রবাস ও অভিবাসন দুটি আলাদা শব্দ ও অর্থ, যে জাতি বোঝেনা। সে জাতির কাছে ‘ভগবান’ কিংবা ‘ঈশ্বর’ ভারতীয় শব্দ বা বাংলা শব্দ যত, তার চেয়ে অধিক হিন্দু* শব্দ (এ রকম সহস্র উদাহরণ আছে)।
টীকা:
*ফেসবুকে আমি ‘ইশ্বর’ লিখতাম, জনৈক ‘হিন্দু’ আমায় বললেন- ‘আপনিতো মসুলমান আপনি ইশ্বর লিখেন কেন, আল্লাহ লিখতে পারেন না…’। পরে খেয়াল করে দেখি ‘আল্লাহ’ যতোটা না আরবী শব্দ তারচেয়ে ইহা মুসলমানী শব্দ… আর ফারসী শব্দ ‘খুদা’ সৌদি সাত/আটশো বছর বাংলা ভাষার সাথে বসবাস করেও না হলো হিন্দু না হলো মুসলমান…
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন