সাম্যবাদের সমালোচনা ও আমার একান্ত কিছু চিন্তা-ধারা

7 মতামত পাওয়া গেছে

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মনেপ্রাণে মার্ক্সের শ্রেণীহীন সমাজে বিশ্বাস করতাম। কত তত্যই না পড়লাম এই প্রসঙ্গে।
শেষে দেখলাম–যাঁরা সাম্যবাদী দল করেন–সেই সব কমরেডরা কী করে বেড়াচ্ছেন। আর দেখলাম ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চীন ও অন্যান্য স্থানে গনহত্যায় এই সব কমরেডরা নীরব।

তারপর দেখলাম কী নির্লজ্জের সাথে এই কমরেডরাই হাত মিলাচ্ছে ইসলামী সন্ত্রাসীদের সাথে। এর পর আর কী পেটে সাম্যবাদ হজম হয়? বমি করে মুক্ত পেলাম কম্যুনিজমের ভুত থেকে।

আপনার লেখা খুব সুন্দর হয়েছে–যারা এখনও কার্ল মার্ক্সের শ্রেণীহীন সমাজব্যাবস্থার স্বপ্নে বিভোর তারা আপনার লেখা পড়ে হয়ত কিছুটা উপলদ্ধি করবে বাস্তবতা।

    তবে অবশ্যই  পরিবর্তন দরকার । 

      চীনদেশ আজ বিশ্বের সবচাইতে বড় পুঁজীবাদী দেশ। টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর এক এক জনের বিশাল সম্পদ। এদের হাতে এতই পয়সা কড়ি যে অনেকেই চীন নিরাপদ মনে করে না। তারা তাদের টাকা পয়সা সব পাশ্চাত্তে পাচার করছে। সেই সাথে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যতের জন্য পাশ্চাত্তের দেশগুলিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

      এই অস্ট্রেলিয়াতেই দেখা যাচ্ছে–চীনের এক বিশাল নেতা ৩৭ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি কিনে রেখেছে–তার পরিবারের জন্য। এছাড়াও চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির ছোট নেতারা অ্যাপার্টমেন্ট এবং কন্ডমিনিয়াম কিনছে ধুমসে–বেশিরভাগই তাদের সন্তানদের অস্ট্রেলিয়ার স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ণের জন্য। এছাড়া, এরা মনে করে চীনে পয়সা কামিয়ে অস্ট্রেলিয়েতে বিনিয়োগ করা অনেক নিরাপদ।

      তাজ্জবের ব্যাপার–চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির নেতাদের কম্যুনিজমের উপর কোন বিশ্বাস নেই।

      তাই আমার মনে হয় কম্যুনিজম এখন এক শবে পরিণত হয়েছে। কম্যুনিস্টরা আজকাল ‘সবুজ’ বিপ্লবীদের দলে জুটেছে। এই ‘সবুজ’ বিপ্লবীরাও যে ভণ্ড এবং মিথ্যার উপর কিছুদিনের মধ্যেই আম-জনতা জেনে যাবে।

নৈতিকতাঃ নৈতিকতা বলে কিছু নেই — এমন ঢালাও মন্তব্য আমার বোঝাপড়ার পরিপন্থী। মানুষ এবং সমগ্র প্রাণী জগৎ ভাল ও মন্দ প্রবৃত্তি, দু’য়েরই ধারক। সেখানেই নৈতিকতার ইংগিত মিলে। মানুষ প্রাকৃতিক বা প্রবৃতিগতভাবে কেবলই নীচ, খারাপ — এমনি হলে মানব জাতির অগ্রগামীতা তো দূরের কথা, টিকেই থাকতো। মানুষ প্রবৃত্তিতে মন্দের তুলনায় ভালর দিক বেশী সেজন্যেই আমরা অগ্রসর হয়েছি, প্রগতিশীলতার পথে।

নিজ প্রজাতিকে হত্যা করা খারাপ বা উচিত নয়, সেটা মানুষ প্রবৃত্তিগতভাবে সর্বদাই অনুভব করেছে। তবে কিছু মানুষ ব্যতিক্রম করেছে তার, সিংহভাগ করে নি।

তেমনি ভাবে প্রাণী হত্যার বিরোধী নৈতিক তত্ত্ব অনেক প্রাচীন। তার উদ্ভব বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে মানব জীবন সহজ ও সুশ্চিচিত হওয়ার কারণে নয়।

আমার মতেঃ নৈতিকতা মানুষের সহজাত, তবে চূড়ান্ত নাও হতে পারে। বৈজ্ঞানিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে পৃথিবীর কার্য-প্রণালীর সম্পর্কে আমরা অধিক জ্ঞান লাভের সাথে সাথে নৈতিকতায় কাট-ছাট, পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে — বিবর্তনের নিয়মে।

সাম্যবাদঃ আমি একমত যে, সাম্যবাদ অবাস্তব ধারনা বা নৈতিক অবস্থান। মানষ যদি একে-অপরকে শোষণ নাও করে, তথাপি অসাম্য আসবেই সমাজে। কেউ হবেন চাষা-ভুষা মহেষ, কলিমুদ্দি — আবার কেউ হবেন সত্যেন বোস, আইনস্টাইন। অবধারিত।

    // মানুষ প্রবৃত্তিতে মন্দের তুলনায় ভালর দিক বেশী সেজন্যেই আমরা অগ্রসর হয়েছি, প্রগতিশীলতার পথে। //

       প্রথম কথা হচ্ছে যে, প্রকৃতিতে সার্বজনীন ভালো বা চিরন্তন ভালো বলে কিছু নেই । উদাহরণ : আমেরিকার জন্য ইরাকের তেল লুটপাট করা ভালো হতে পারে  কিন্তু তা অবশ্যই ইরাকীদের জন্য ভালো নয় ।

    // নিজ প্রজাতিকে হত্যা করা খারাপ বা উচিত নয়, সেটা মানুষ প্রবৃত্তিগতভাবে সর্বদাই অনুভব করেছে। তবে কিছু মানুষ ব্যতিক্রম করেছে তার, সিংহভাগ করে নি। //

      কথা সত্য কিন্তু এটা কি আপনার মতে আমাদের সেই ভালো গুণ যার ফলে আমরা প্রগতির দিকে অগ্রগতিশীল ? তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই গুণাবলি মানুষের চেয়ে  পিপড়াদের মধ্যে অনেক বেশী তবু তাদের অবস্থা অমন ক্যনো ? আর একমাত্র মানুষই হচ্ছে সেই প্রাণী যারা নিজেদের গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য অন্য গোষ্ঠীর উপর সম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালায় । তাহলে তখন কোথায় থাকে আমাদের নৈতিকতা ?

     //আমার মতেঃ নৈতিকতা মানুষের সহজাত, তবে চূড়ান্ত নাও হতে পারে।//

        লেখাতে আমি যেটা বুঝাতে চেয়েছি, তা হলো নৈতিকতা কোনো চিরন্তন সহজাত প্রবৃত্তি নয় বরং এটা স্থান, কাল, সমাজ ও ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন রকম হয়। ধর্মও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে । উদাহরণ : হিন্দু সমাজে বহুবিবাহকে খারাপ চোখে দেখা হয় যা মুসলিম সমাজে স্বীকৃত ।

          আমরা আজ যে নৈতিকতার গর্ব করি তা আসলে আমাদের কিশোর বয়সে চাপিয়ে দেয়া কিছু বিশ্বাস মাত্র । এরসাথে যুক্ত হয় কিছু সামাজিক মূল্যবোধ । তবে এটা মুক্তমনাদের জন্য সত্য নয় কারণ তাদের নৈতিকতা সিংহভাগই নিজস্ব চিন্তার ফসল কিন্তু এই ক্ষেত্রেও দেখা যায় মতোপার্থক্য অর্থ্যাৎ নৈতিকতা শ্বাসত নয় বরং তা পরিবর্তনশীল….

 নৈতিকতা শ্বাসত নয় বরং তা পরিবর্তনশীল….

আপনার লেখাটাতে বক্তব্য ঠিক সে রকম আসে নি। অন্তত দু’বার বলা হয়েছে নৈতিকতা বলে কিছু নেই।

সব মানুষই জ্ঞাতসারে কিছু কাজ করা অঠিক মনে করে। সেটা নৈতিকতার অনুভূতি থেকেই।

তবে সব নৈতিক অবস্থানই সঠিক বা চিরন্তন নয়। তবে অন্যকে অকারণে হত্যা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান অনেকটা চিরন্তন ও সার্বজনীনই বলতে হবে। কেননা অনেকে চুরি, ডাকাতি করলেও — তা সঠিক বা ন্যায় কাজ, এমন ভেবে করে না। বিশেষত তারাও চায় না যে, তাদের নিজ ঘরে ডাকা পড়ুক।

পিপড়াদের কথা বলেছেন, তাদের কঠোর পরিশ্রমের প্রবৃত্তি মানুষের চেয়ে উৎকৃষ্ট ভাবি আমি। এবং তারা খুবই সম্মানজনক (dignified) জীবন যাপন করে, মুখাপেক্ষি ভিক্ষুক মানুষের তুলনায় বেশী সম্মানজনক — যদি এমন দূরত্বের দু’টি প্রজাতির মাঝে এরূপ তুলনা টানা মনে হয় উচিত নয়।

আমেরিকার জন্য ইরাকের তেল লুটপাট করা ভালো হতে পারে  কিন্তু তা অবশ্যই ইরাকীদের জন্য ভালো নয়

আপনি বলতে চাচ্ছেনঃ আমেরিকানরা ইরাকের তেল লুট-পাট করা পছন্দ করে বা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে করে। এমন ভাবার আগে একটা সমীক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। এমন সমীক্ষা যদি নেওয়া হয়, আমি নিশ্চিত যে, কমপক্ষে ৯০% আমেরিকান সেরূপ কাজ সমর্থন করবে না। তেমনি ভাবে, অন্য যে কোন জনগোষ্ঠির মাঝে সমীক্ষা নেওয়া হোক না কেনঃ তাদের বড় সিংহভাগ অন্য দেশের সম্পদ লুট করা অন্যায় মনে করবে।

    // তেমনি ভাবে, অন্য যে কোন জনগোষ্ঠির মাঝে সমীক্ষা নেওয়া হোক না কেনঃ তাদের বড় সিংহভাগ অন্য দেশের সম্পদ লুট করা অন্যায় মনে করবে। //

    কিন্তু শাসক শ্রেণি তা মনে করে না আর আমি মূলত তাদের নৈতিকতার কথাই বলেছি । সাধারণ মানুষের নৈতিকতা দিয়ে জগতে কোনো নিয়ম পরিচালিত হয় না । তবে হ্যা আমি বিশ্বাস করি পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে । এ ব্যাপারে আমি মার্ক্সের সাথে একমত । 

       ”এ যাবতকালে দার্শনিকরা কেবল জগতকে বিশ্লেষণ করেছেন কিন্তু আমি চাই অবস্থার পরিবর্তন হোক ” – কার্ল মার্ক্স


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।