এই লেখা শুরু করার পূর্বেই সকল মার্কসবাদী চিন্তানায়ক ও দার্শনিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কারন আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা দর্শনের বিশারদ নই। তাই আমার যুক্তিতে ভুল-ভ্রান্তি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তাই সকল কমরেডকে আহবান জানাচ্ছি যুক্তির লড়াইয়ে অংশ নিতে। আর যেহেতু আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, তাই আমি প্রাকৃতিক দর্শনকেই ব্যবহার করবো আমার মতামত প্রকাশ করতে। সাম্যবাদ বা মার্কসবাদের সমালোচনা করার আগে আর একটি বিষয় পরিস্কার করতে চাই। সেটা হলো – এই লেখায় আমি কিছু কিছু দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতি ব্যবহার করবো। কেউ যেন আমাকে পূঁজিবাদী কর্পোরেট মানসিকতার লোক মনে না করে।
প্রাকৃতিক দর্শনের মূল কথা হলো প্রয়োজনীয়তাবাদ। আমাদের মহাবিশ্ব এমন ক্যানো? এই প্রশ্নের সবচেয়ে ভালো এবং বিজ্ঞান সম্মত উত্তর হচ্ছে – এছাড়া অন্য আর কোনো উপায় ছিলো না (বিস্তারিত জানার জন্য স্টিভেন হকিংস এর “মহান নকশা” বই)। রাসায়নিক বিক্রিয়া অতঃপর বির্বতন ও এর ফলে সৃষ্ট প্রানী জগৎ এর প্রকৃতিতে টিকে থাকাই হচ্ছে একমাত্র লক্ষ্য। সুতরাং এখানে নীতি-নৈতিকতা কোনো স্থায়ী আদর্শ না। আর এক্ষেত্রে আমি নিশ্চিত যে, নৈতিকতা বলে আসলে কিছুই নেই। যদিও নীতিবাগীশরা (ছাগুরা) আমার বিরোধীতা করবে, সে যাই হোক তাদের সাথে আমি তর্কে যাবো না। আদিম পৃথিবী (মানুষ) ও বর্তমান প্রাণী জগৎ এ বেঁচে থাকার জন্য সকলকেই কঠোর সংগ্রাম করতে হয়। তারাই টিকে থাকে যারা যোগ্য অথবা যোগ্যরাই এখানে টিকে থাকে। আর এর জন্য প্রকৃতিই দুর্বলের উপর সবলের শোষনকে করেছে বৈধ। ডারউইন তার পর্যবেক্ষনে দেখেছিলেন, প্রকৃতিতে প্রাণীরা কতখানি নিষ্ঠুর হতে পারে শুধুমাত্র তার অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য। সাধারণ (বর্তমান) মানুষরা হয়তো সেগুলো দেখলে আঁতকে উঠতে পারে কিন্তু কিছুই করার নেই, এটাই প্রকৃতির নিয়ম (উৎসাহীদের জন্য ডিসকভারী ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখার অনুরোধ রইলো)।
ডারউইন তার বির্বতনবাদে শক্তির বিজয় দেখিয়েছেন। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই ও উপযুক্ত ব্যক্তির অস্তিত্ব রক্ষার নীতিতে শক্তির জয়গানই ঘোষিত হয়েছে। মানুষ বিবর্তন ফলে সৃষ্ট বুদ্ধিমান জীব, সভ্যতার বিকাশের জন্য অর্থ্যাৎ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে সে আদিম সমাজে অন্য প্রানীকে বা উদ্ভিদকে ব্যবহার করেছে, এমনকি প্রয়োজনে মানুষকে ব্যবহার করতেও পিছপা হয়নি (দাসপ্রথা। মহান মানবতাবাদী দার্শনিক প্লেটো পর্যন্ত দাসপ্রথার বিকল্প ভাবতে পারেন নি। এখানে উল্লেখ্য ষে, প্লেটোই প্রথম সাম্যবাদের কথা বলেছেন। মানব কল্যানে বা সভ্যতার প্রয়োজনে মানুষ সবকিছুকেই হালাল করে নিয়েছে এবং এভাবেই গঠিত হয়েছে মানবিক নৈতিকতা, যা সদা পরিবর্তনশীল (প্রয়োজন অনুযায়ী)। সুতরাং নৈতিকতা বা মানবিকতা বলে কিছুই নেই।
এবার আসি সমাজের পরবর্তী ধাপে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার ফলে উন্নতি হতে থাকলো মানুষের যন্ত্র দক্ষতা, ফলে প্রয়োজনহীন হয়ে উঠল অন্যজীবকে শোষন করার প্রয়াস। যেমন: গরুর গাড়ি/ঘোড়ার গাড়ির জায়গায় চলে এলো মটর গাড়ি। আর আমরাও হয়ে উঠলাম দয়ালু, আমাদের মধ্যে আবার অনেকে তো প্রাণীহত্যাকেই মহাপাপ ঘোষনা করে বসলেন। অনেকে আবার নামল পশু অধিকার সংরক্ষনে। এভাবেই বির্বতনের ধারাতেই গড়ে উঠল সমাজ অতপর রাষ্ট্র। সমাজেও মানুষকে ক্রমাগত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নামতে হলো, কারন প্রকৃতিতে সর্বদাই চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকে। সমাজে মানুষ তার ব্যক্তিগত সুখের জন্য অন্য দুর্বল মানুষকে শোষন করতে শুরু করলো। এরই ধারাবাহিকতায় দাসপ্রথা আসলো, যেখানে দাসকে অভিজাত শ্রেনী শোষণের মাধ্যমে বিলাসিতা করত।
বৈজ্ঞানিক উন্নতির ফলেই মানুষ দাসপ্রথা থেকে মুক্তি পেয়েছে। যন্ত্র কৌশলের উন্নতির দ্বারা মাঠ পর্যায়ের কাজে দাসরা প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে। উদাহরনস্বরূপ বলা যায়: মিশরের পিড়ামিডের নির্মান প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় শ্রম কোনো স্বাধীন মানুষ দিতে আগ্রহী হবেন না। তাই প্রয়োজন হয়েছে দাসদের। অথচ সে কাজ যখন ক্রেন, বুলডোজার ইত্যাদি মেশিনের দ্বারা সহজ করে আনা হলো, তখন লোপ পেলো দাসদের প্রয়োজন। দাস প্রথার পরবর্তী ধাপগুলোকেও একইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। আরো একটি উদাহরন দেয়া যায় – সামন্ততান্ত্রিক সমাজে কৃষকদের ভূমির খাজনা দিতে হত কিন্তু কৃষিবিপ্লবের ফলে সামন্তপ্রথারও বিলোপ ঘটেছে। অনেক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীরা বলবে যে – সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবেই সমাজে পরিবর্তন আসে। তাদের জন্য আরো একটা উদাহরন – উপমহাদেশে নীল চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কৃষকদের আন্দোলনে নয় বরং কৃত্রিম রং আবিষ্কারের ফলে। এই মন্তব্যে যুক্তি হচ্ছে এই যে, সিপাহী বিদ্রোহ যেখানে ইংরেজরা শক্ত হাতে দমন করলো, তাহলে নীল বিদ্রোহ কেন করলো না? কারনটা খুবই সহজ, কৃত্রিম রং এর আবিষ্কারের কারণেই আর নতুন করে শোষন করার প্রয়োজন হয় নি। সর্বহারাদের বিপ্লবের যে বাণী মার্কসবাদে বলা হয়েছে, তা দিয়ে কিছুই হবে না যদি না শিল্প বা কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হয়। জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারনেই সব মানুষ সমান নয় তাই সাম্যবাদের থিউরি অসত্য। আর শোষন করাও প্রাকৃতিক নিয়ম তাই এর বিরুদ্ধে গিয়ে টিকে থাকা যাবে না।
সাম্যবাদীদের মানবিকতা খুব বেশি,আসলে এটা একটা মানবিক দোষ। মানুষ সর্বদা নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করতে ভালোবাসে তাই প্লেটোর মহাবিশ্ব ছিলো পৃথিবী কেন্দ্রিক আর আধুনিক সাম্যবাদীদের পৃথিবী হলো মানকেন্দ্রিক, যা ভুল ও ভ্রান্তিময় আবেগ ছাড়া আর কিছু নয়। নিচে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মার্কসবাদের সমালোচনা করা হলো:
(১) রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে শক্তিপ্রয়োগ মতবাদের ধারা হচ্ছে মার্কসবাদ। মার্কসের মতে, রাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। সমাজের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের ফলেই রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। মার্কস তার ঐতিহাসিক জড়বাদী ব্যাখায় বলেছেন যে, রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি ও শ্রেণীসংগ্রামের দ্বারা। এবার আমরা আসি প্রাকৃতিক দর্শনে। প্রকৃতির অন্য কোনো প্রাণীর মাঝে রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠান দেখা যায় না, যদিও তারা গোষ্ঠি গঠন করে। তথাপি রাষ্ট্র ব্যাপারটি তাদের মধ্যে নেই। বাঘ বা সিংহদের মধ্যে নিজেদের এলাকা ভাগ করে নেয়ার ব্যাপার থাকে, কিন্তু স্থায়ী নিয়ম-কানুন তৈরি করে রাষ্ট্র গঠন হয় না। বির্বতনের ফলে সবচেয়ে অগ্রসর প্রাণী হলো মানুষ। তাই শুধুমাত্র শোষনের মাধ্যমে সম্পত্তি অর্জন করাই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নয়, বরং এটি মানব সভ্যতার উন্নতির একটি বির্বতনীয় ফল। অধ্যাপক বার্জেস এর মতে, “রাষ্ট্র মানব সমাজের ক্রমবিকাশের ফল।” বির্বতনমূলক মতবাদের মূলকথা হলো, রাষ্ট্র কোনো বিশেষ সময়ে কোনো বিশেষ পরিকল্পনার দ্বারা সৃষ্টি হয় নি, বরং বহু সমাজের উত্থানপতন, পরিবর্তন, বির্বতনের অমোঘ নিয়মের চলমান গতিধারায় সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্ররূপ সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক প্রতিষ্ঠান।
(২) মার্কসবাদ ও লেলিনবাদে রাষ্ট্রহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে। লেলিনের মতে, কোনো স্বাধীন সমাজে রাষ্ট্র থাকতে পারে না। লেলিন আরো বলেছেন, “রাষ্ট্র এক শ্রেণীর দ্বারা অন্য শ্রেণীকে শোষন করার যন্ত্র।
আমরা আগেই মতবাদে বলেছি, রাষ্ট্র একটি বির্বতনীয় ফল। সুতরাং আধুনিক সভ্যতায় রাষ্ট্রের অবলুপ্তি অলীক কল্পনা মাত্র। কারণ রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র বা সরকারের প্রয়োজনীয়তা কখনোই অস্বীকার করা যায় না। শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলেও সমাজের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য সংস্থার প্রয়োজন হবে। মার্কস রাষ্ট্রকে শ্রেণীস্বার্থের ধারক ও বাহক হিসাবে দেখিয়ে মানবীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে রাষ্ট্র যে সমাজ-কল্যানকর হতে পারে, মার্কস তা অস্বীকার করেছেন।
(৩) মার্কসীয় ধারনা অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। মার্কসবাদ ইতিহাসের গতিপ্রকৃতিকে অর্থনৈতিক কারণে পক্ষপাতমূলক ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু ইতিহাসের জড়বাদী ব্যাখ্যা সবসময় সত্য হতে পারে না। অতীতের ঘটনা দেখে আপনি সবসময় ভবিষ্যতকে নিশ্চিত করতে পারবেন না। অতীতের সমাজগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের কারণে ভাঙন ও নতুন সমাজ গড়ার যে নীতি মার্কস দেখিয়েছেন, তা দ্বারা আপনি বলতে পারেন না যে — পূঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা নিশ্চিতভাবে সাম্যের দিকে যাবে। যদি তাই বলে থাকেন, তবে ব্যাপারটা এমন হবে যে – গতপরশু বৃষ্টি হয়েছিলো তারপর গতকাল বৃষ্টি হয়েছিলো, আজও বৃষ্টি হলো দেখে আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আগামীকালও বৃষ্টি হবে।
(৪) মার্কসের শ্রেণী-সংগ্রাম তত্ত্বও সম্পূর্ন ঠিক নয়। শ্রেণীসংগ্রাম যেমন ছিল, তেমনি বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার ইতিহাসও রয়েছে। শ্রেণীহীন সমাজ বা সমাজতন্ত্র কখনোই টিকে থাকবে না, কারণ প্রকৃতি সব মানুষকে সমান করে সৃষ্টি করে নি। তাই সাম্যবাদ একটা ভ্রান্ত ধারনা। বিপ্লবের পর শ্রেণীহীন সমাজ পরিবর্তিত হওয়ার পরিবর্তে বিপ্লবের নায়কদের পক্ষে এক নতুন শাসকশ্রেণীতে পরিণত হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা থাকে। যেমন, উত্তর কোরিয়া। প্যারাটো, ওয়েভার প্রমুখ সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, শ্রেণীহীন সমাজ প্রবর্তন অসম্ভব, কারণ শাসক-শাসিতের শ্রেণীবিভাগ চিরকাল থাকবেই। অসিরবথাম বলেছেন, মার্কসের শ্রেণীহীন সমাজ একটি কাল্পনিক ্য ছাড়া আর কিছুই নয় । জাতীয়তা, গোষ্টি আনুগত্য যে কত শক্তিশালী হতে পারে, মার্কস তা অনুধাবন করতে পারেন নি। তাছাড়া ক্ষমতালিপ্সা, লোভ, হিংসা, দ্বেষ মানব চরিত্রের সাধারণ দোষ-ত্রুটি, যা সাম্যবাদী সমাজ গঠনের অন্তরায়। তাই সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করার অর্থ হলো কিছু মানব চরিত্রের বিপক্ষে একটা নৈতিকতার আদর্শ দ্বার করানো, যা ভ্রান্ত ও অবৈজ্ঞানিক।
আগস্ট ১০, ২০১২; ১১:৪৮ অপরাহ্ন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মনেপ্রাণে মার্ক্সের শ্রেণীহীন সমাজে বিশ্বাস করতাম। কত তত্যই না পড়লাম এই প্রসঙ্গে।
শেষে দেখলাম–যাঁরা সাম্যবাদী দল করেন–সেই সব কমরেডরা কী করে বেড়াচ্ছেন। আর দেখলাম ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চীন ও অন্যান্য স্থানে গনহত্যায় এই সব কমরেডরা নীরব।
তারপর দেখলাম কী নির্লজ্জের সাথে এই কমরেডরাই হাত মিলাচ্ছে ইসলামী সন্ত্রাসীদের সাথে। এর পর আর কী পেটে সাম্যবাদ হজম হয়? বমি করে মুক্ত পেলাম কম্যুনিজমের ভুত থেকে।
আপনার লেখা খুব সুন্দর হয়েছে–যারা এখনও কার্ল মার্ক্সের শ্রেণীহীন সমাজব্যাবস্থার স্বপ্নে বিভোর তারা আপনার লেখা পড়ে হয়ত কিছুটা উপলদ্ধি করবে বাস্তবতা।
আগস্ট ১৬, ২০১২; ২:১৪ অপরাহ্ন
তবে অবশ্যই পরিবর্তন দরকার ।
আগস্ট ১১, ২০১২; ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন
চীনদেশ আজ বিশ্বের সবচাইতে বড় পুঁজীবাদী দেশ। টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর এক এক জনের বিশাল সম্পদ। এদের হাতে এতই পয়সা কড়ি যে অনেকেই চীন নিরাপদ মনে করে না। তারা তাদের টাকা পয়সা সব পাশ্চাত্তে পাচার করছে। সেই সাথে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যতের জন্য পাশ্চাত্তের দেশগুলিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
এই অস্ট্রেলিয়াতেই দেখা যাচ্ছে–চীনের এক বিশাল নেতা ৩৭ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি কিনে রেখেছে–তার পরিবারের জন্য। এছাড়াও চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির ছোট নেতারা অ্যাপার্টমেন্ট এবং কন্ডমিনিয়াম কিনছে ধুমসে–বেশিরভাগই তাদের সন্তানদের অস্ট্রেলিয়ার স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ণের জন্য। এছাড়া, এরা মনে করে চীনে পয়সা কামিয়ে অস্ট্রেলিয়েতে বিনিয়োগ করা অনেক নিরাপদ।
তাজ্জবের ব্যাপার–চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির নেতাদের কম্যুনিজমের উপর কোন বিশ্বাস নেই।
তাই আমার মনে হয় কম্যুনিজম এখন এক শবে পরিণত হয়েছে। কম্যুনিস্টরা আজকাল ‘সবুজ’ বিপ্লবীদের দলে জুটেছে। এই ‘সবুজ’ বিপ্লবীরাও যে ভণ্ড এবং মিথ্যার উপর কিছুদিনের মধ্যেই আম-জনতা জেনে যাবে।
আগস্ট ১১, ২০১২; ৩:৩৩ পূর্বাহ্ন
নৈতিকতাঃ নৈতিকতা বলে কিছু নেই — এমন ঢালাও মন্তব্য আমার বোঝাপড়ার পরিপন্থী। মানুষ এবং সমগ্র প্রাণী জগৎ ভাল ও মন্দ প্রবৃত্তি, দু’য়েরই ধারক। সেখানেই নৈতিকতার ইংগিত মিলে। মানুষ প্রাকৃতিক বা প্রবৃতিগতভাবে কেবলই নীচ, খারাপ — এমনি হলে মানব জাতির অগ্রগামীতা তো দূরের কথা, টিকেই থাকতো। মানুষ প্রবৃত্তিতে মন্দের তুলনায় ভালর দিক বেশী সেজন্যেই আমরা অগ্রসর হয়েছি, প্রগতিশীলতার পথে।
নিজ প্রজাতিকে হত্যা করা খারাপ বা উচিত নয়, সেটা মানুষ প্রবৃত্তিগতভাবে সর্বদাই অনুভব করেছে। তবে কিছু মানুষ ব্যতিক্রম করেছে তার, সিংহভাগ করে নি।
তেমনি ভাবে প্রাণী হত্যার বিরোধী নৈতিক তত্ত্ব অনেক প্রাচীন। তার উদ্ভব বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে মানব জীবন সহজ ও সুশ্চিচিত হওয়ার কারণে নয়।
আমার মতেঃ নৈতিকতা মানুষের সহজাত, তবে চূড়ান্ত নাও হতে পারে। বৈজ্ঞানিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে পৃথিবীর কার্য-প্রণালীর সম্পর্কে আমরা অধিক জ্ঞান লাভের সাথে সাথে নৈতিকতায় কাট-ছাট, পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে — বিবর্তনের নিয়মে।
—
সাম্যবাদঃ আমি একমত যে, সাম্যবাদ অবাস্তব ধারনা বা নৈতিক অবস্থান। মানষ যদি একে-অপরকে শোষণ নাও করে, তথাপি অসাম্য আসবেই সমাজে। কেউ হবেন চাষা-ভুষা মহেষ, কলিমুদ্দি — আবার কেউ হবেন সত্যেন বোস, আইনস্টাইন। অবধারিত।
আগস্ট ১১, ২০১২; ৭:২০ পূর্বাহ্ন
// মানুষ প্রবৃত্তিতে মন্দের তুলনায় ভালর দিক বেশী সেজন্যেই আমরা অগ্রসর হয়েছি, প্রগতিশীলতার পথে। //
প্রথম কথা হচ্ছে যে, প্রকৃতিতে সার্বজনীন ভালো বা চিরন্তন ভালো বলে কিছু নেই । উদাহরণ : আমেরিকার জন্য ইরাকের তেল লুটপাট করা ভালো হতে পারে কিন্তু তা অবশ্যই ইরাকীদের জন্য ভালো নয় ।
// নিজ প্রজাতিকে হত্যা করা খারাপ বা উচিত নয়, সেটা মানুষ প্রবৃত্তিগতভাবে সর্বদাই অনুভব করেছে। তবে কিছু মানুষ ব্যতিক্রম করেছে তার, সিংহভাগ করে নি। //
কথা সত্য কিন্তু এটা কি আপনার মতে আমাদের সেই ভালো গুণ যার ফলে আমরা প্রগতির দিকে অগ্রগতিশীল ? তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই গুণাবলি মানুষের চেয়ে পিপড়াদের মধ্যে অনেক বেশী তবু তাদের অবস্থা অমন ক্যনো ? আর একমাত্র মানুষই হচ্ছে সেই প্রাণী যারা নিজেদের গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য অন্য গোষ্ঠীর উপর সম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালায় । তাহলে তখন কোথায় থাকে আমাদের নৈতিকতা ?
//আমার মতেঃ নৈতিকতা মানুষের সহজাত, তবে চূড়ান্ত নাও হতে পারে।//
লেখাতে আমি যেটা বুঝাতে চেয়েছি, তা হলো নৈতিকতা কোনো চিরন্তন সহজাত প্রবৃত্তি নয় বরং এটা স্থান, কাল, সমাজ ও ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন রকম হয়। ধর্মও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে । উদাহরণ : হিন্দু সমাজে বহুবিবাহকে খারাপ চোখে দেখা হয় যা মুসলিম সমাজে স্বীকৃত ।
আমরা আজ যে নৈতিকতার গর্ব করি তা আসলে আমাদের কিশোর বয়সে চাপিয়ে দেয়া কিছু বিশ্বাস মাত্র । এরসাথে যুক্ত হয় কিছু সামাজিক মূল্যবোধ । তবে এটা মুক্তমনাদের জন্য সত্য নয় কারণ তাদের নৈতিকতা সিংহভাগই নিজস্ব চিন্তার ফসল কিন্তু এই ক্ষেত্রেও দেখা যায় মতোপার্থক্য অর্থ্যাৎ নৈতিকতা শ্বাসত নয় বরং তা পরিবর্তনশীল….
আগস্ট ১১, ২০১২; ৮:৩১ পূর্বাহ্ন
আপনার লেখাটাতে বক্তব্য ঠিক সে রকম আসে নি। অন্তত দু’বার বলা হয়েছে নৈতিকতা বলে কিছু নেই।
সব মানুষই জ্ঞাতসারে কিছু কাজ করা অঠিক মনে করে। সেটা নৈতিকতার অনুভূতি থেকেই।
তবে সব নৈতিক অবস্থানই সঠিক বা চিরন্তন নয়। তবে অন্যকে অকারণে হত্যা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান অনেকটা চিরন্তন ও সার্বজনীনই বলতে হবে। কেননা অনেকে চুরি, ডাকাতি করলেও — তা সঠিক বা ন্যায় কাজ, এমন ভেবে করে না। বিশেষত তারাও চায় না যে, তাদের নিজ ঘরে ডাকা পড়ুক।
পিপড়াদের কথা বলেছেন, তাদের কঠোর পরিশ্রমের প্রবৃত্তি মানুষের চেয়ে উৎকৃষ্ট ভাবি আমি। এবং তারা খুবই সম্মানজনক (dignified) জীবন যাপন করে, মুখাপেক্ষি ভিক্ষুক মানুষের তুলনায় বেশী সম্মানজনক — যদি এমন দূরত্বের দু’টি প্রজাতির মাঝে এরূপ তুলনা টানা মনে হয় উচিত নয়।
আপনি বলতে চাচ্ছেনঃ আমেরিকানরা ইরাকের তেল লুট-পাট করা পছন্দ করে বা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে করে। এমন ভাবার আগে একটা সমীক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। এমন সমীক্ষা যদি নেওয়া হয়, আমি নিশ্চিত যে, কমপক্ষে ৯০% আমেরিকান সেরূপ কাজ সমর্থন করবে না। তেমনি ভাবে, অন্য যে কোন জনগোষ্ঠির মাঝে সমীক্ষা নেওয়া হোক না কেনঃ তাদের বড় সিংহভাগ অন্য দেশের সম্পদ লুট করা অন্যায় মনে করবে।
আগস্ট ১১, ২০১২; ১০:১৩ পূর্বাহ্ন
// তেমনি ভাবে, অন্য যে কোন জনগোষ্ঠির মাঝে সমীক্ষা নেওয়া হোক না কেনঃ তাদের বড় সিংহভাগ অন্য দেশের সম্পদ লুট করা অন্যায় মনে করবে। //
কিন্তু শাসক শ্রেণি তা মনে করে না আর আমি মূলত তাদের নৈতিকতার কথাই বলেছি । সাধারণ মানুষের নৈতিকতা দিয়ে জগতে কোনো নিয়ম পরিচালিত হয় না । তবে হ্যা আমি বিশ্বাস করি পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে । এ ব্যাপারে আমি মার্ক্সের সাথে একমত ।
”এ যাবতকালে দার্শনিকরা কেবল জগতকে বিশ্লেষণ করেছেন কিন্তু আমি চাই অবস্থার পরিবর্তন হোক ” – কার্ল মার্ক্স