২২০৩ বার পঠিত
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মোটামুটিভাবে সামাজিকমাধ্যম সরগরম। যখন লিখছি তখন বেশিরভাগ ট্রল হচ্ছে শাসকদলীয় দুই প্রার্থীকে নির্বাচিত ভেবেই। না, প্রতিদ্বন্দ্বিতার দোদুল্যমানতা নয়, জয় যে নিশ্চিত এটা ধরেই ট্রল করা হচ্ছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই দুজন যখন মনোয়ন পেলেন এবং জমা দিলেন তখন থেকেই তাদের অভিনন্দন জানানো শুরু হয়েছে, প্রার্থী হিসাবে নয়, মেয়র হিসাবে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তেও সেই একই কথা। এর অর্থ কি কেউ বোঝেন? না বোঝার কিছু নেই। ট্রলের ধরণ, স্মরণ কিন্তু সেই কথাই বলে। সেই কথা যারা বুঝতে পারেন না কিংবা চান না তারা উভয়েই অবুঝ, নয় ভান করছেন।
ঢাকা সিটি’র নির্বাচনে ‘মকিং’ চলছে। না, মানে গত ত্রিশ তারিখ ‘মক ভোটিং’য়ের ব্যবস্থা করেছিলো নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএমের ব্যবহার শেখানো বা ইভিএমের অভিজ্ঞতা নিতে ছিলো এই মক ভোটের আয়োজন। কিন্তু তা ফেইল মেরেছে। ডেইলি স্টার বলছে, ‘মক ভোটিংয়ে সাড়া মেলেনি’। সম্ভবত ইসি’র লোকজন নিজেরাই ভুলে গিয়েছিলো বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা। যেখানে মসজিদের মাইক ব্যবহার করেও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা যায়নি। আর এটাতো নকল ভোট, মক ভোটিং। অবশ্য হতে পারে মানুষ আসল আর নকলের মধ্যে পার্থক্য ভুলতে বসেছে। তাই তাদের সব কিছুতেই অনীহা।
পার্থক্য ভোলার এই অবিশ্বাসের খেলায় মানুষ আইনের লোকদেরও কথাতেও বিভ্রান্ত হতে শুরু করেছে। তারা যখন বলে ‘আমাদের পার্টি’ তখন পাবলিক বুঝে নেয় অন্যটা। আর সেই বুঝে নেয়ার ভুলটা ভাঙাতে মাঠে নামতে হয় খোদ বড় সাহেবকে। এমন সামান্যজনের ভুল ভাঙাতে যদি এত কাঠখড় পোড়াতে হয় তাহলেই বোঝা যায়, মানুষ সত্য-মিথ্যার ভেদ রেখাটি ক্রমেই বিস্মৃত হতে বসেছে। কদিন আগে কথিত ধর্ষক মজনুর ব্যাপারটাই ধরুণ না কেনো। বেশিরভাগ মানুষই মজনুকে ধর্ষক হিসাবে মেনে নিতে পারছিলেন না। এটা মানুষের বিশ্বাসের সংকট, আস্থার দোলাচল। এ বিষয়টি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ভেবে দেখা উচিত ছিলো, কেনো এমনটা হচ্ছে। কেনো মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না, আস্থা রাখতে পারছে না সংশ্লিষ্টদের প্রতি। এর কারণটা জানা সম্ভব হলে, সমস্যা নির্ধারণ এবং সমাধানের পথ দৃশ্যমান হতো। কিন্তু মানুষের অবিশ্বাসজনিত চিন্তাকে নজর-আন্দাজ করায় আজকে অবিশ্বাসের ছায়া সবক্ষেত্রেই পড়েছে। আর সেই ছায়াকে কেউ কেউ অপকর্ম ঢাকার পর্দা হিসাবে গণ্য করছেন।
পর্দা জিনিসটা নিয়ে কথা বলি। পর্দা মূলত আড়াল করার জন্য ব্যবহৃত হয়। পর্দা বিষয়ক রচনা লিখতে গেলে সম্ভবত শুরুটা এমনি হওয়া উচিত। এই যে উচিতময় অবিশ্বাসের পর্দা তা ক্রমেই এক পক্ষ থেকে আরেক পক্ষকে আড়াল করে ফেলছে। আড়াল করে ফেলছে ক্ষমতাহীনদের কাছ থেকে ক্ষমতাশীনদের। আর অপকর্মের পর্দা আড়াল করছে ক্ষমতাশীনদের ক্ষমতাহীনদের কাছ থেকে। অথচ মজার ব্যাপার হলো সাধারণের ক্ষমতা নিয়েই ক্ষমতাবান হন অসাধারণরা। এ এক অদ্ভুত চক্র। এই চক্রকেই রাজনীতি বলে। যার কোনো শেষ কথা নেই।
রাজনীতির দুটো পথ রয়েছে। এক হলো নিজেদের উন্নয়নের। অপরটি ক্ষমতাহীনদের ক্রম ক্ষমতাবান তথা ক্রমশ উন্নতির পথ। যারা পর্দায় আড়াল করতে চায় সবকিছু তারা প্রথম শ্রেণির রাজনীতিক। আর যারা পর্দা হঠাতে চায় তারা দ্বিতীয় শ্রেণির। বাস্তব জগতে এই দুই নম্বররাই সঙ্গতকারণেই এক নম্বর। আর এক নম্বরগণ স্বভাবগত কারণেই দুই নম্বরী।
ধান ভানতে আবারো শিবের গীত। অভ্যাসটাই খারাপ হয়ে গেছে। না হওয়ারও কারণ নেই। নির্বাচনের পোস্টারের পলিথিন নিয়ে এত কথা হচ্ছে। সেই পলিথিনের পাল্লায় আমিও পড়েছিলাম। কিভবে বলছি। রাতে পাউরুটি কিনে বাসায় ফিরছি। পাউরুটি দিয়েছে পলিথিনে, পাউরুটির প্যাকেটটিতে ব্যবহার কর হয়েছে পলিথিন। এনে খুলে দেখি রুটির ডেটও এক্সপায়ার্ড। সুতরাং এই এক্সপায়ার্ড এর যুগে শিবের গীত না গাওয়ার কোনো কারণ সঙ্গতই নেই। যাক গে, বলা হয়েছে, ‘সিটি নির্বাচনে সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করবে না’। ভালো কথা। সরকারের হস্তক্ষেপ করার কথাও নয়। সরকারের কাজের মধ্যে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই পড়ে না, পড়া উচিতও নয়। কিন্তু যা সরকারের কাজ নয়, যখন তা নিয়ে সরকারের কেউ কথা বলে, তখন বিশ্বাসেরর পাতায় অবিশ্বাসের বাতাস দোল খায় এবং সাধারণের ভাবনায় পাতাটি বোঁটাচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
পুনশ্চ : চারিদিকে করোনা ভাইরাসের সতর্কতা জারি হচ্ছে। সামাজিকমাধ্যমও পিছিয়ে নেই। সবাই চেষ্টা করছে ভাইরাসের আক্রমন থেকে বাঁচতে। চায়নাতে উৎপত্তি এই ভাইরাসের। আমরা আক্রান্ত দুর্নীতি নামক নিজস্ব ভাইরাসে। যা আমাদের এক এক করে নয়, সম্মিলিত ভাবে শেষ করে দিচ্ছে। তারোপর আক্রান্ত নির্বাচন বিষয়ক ভাইরাসে যা শেষ করে দিচ্ছে আমাদের সংগঠিত জাতিরাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠার সংকল্পটাও। করোনা ভাইরাসে হয়তো কিছু মানুষ মারা যাবে। ডেঙ্গু ভাইরাসেও বেশ কিছু মানুষ মারা গিয়েছে আমাদের দেশে। তারপরেও অসংখ্য আমরা বেঁচে আছি, দেশটা বেঁচে আছে। করোনা, ডেঙ্গু, সার্স এসব ভাইরাসের চেয়েও ভয়াবহ ভাইরাসে ক্রমশ আক্রান্ত হচ্ছি আমরা। যা আমাদের সম্মিলিত ভাবে ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। যার এন্টি-ভাইরাস এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন