সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান বাতিল করার সুপারিশ ইউনেস্কোর

1 মতামত পাওয়া গেছে

অর্পিতা রায়চৌধুরী

প্রাসঙ্গিক রিপোর্ট-১

অব্যবহৃত কয়লা রামপালে জোগান দিতে চায় ভারত

 

ভারতে উৎপাদিত সব কয়লাই অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে নিম্নমানের। এসব কয়লা পোড়ালে দূষণের ঝুঁকিও তাই বেশি। এ বিবেচনায় ভারতেরই কয়লাভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে আমদানি করা কয়লায়। এতে অব্যবহৃত থাকছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কয়লা, যা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে জোগান দিতে চায় তারা।

 

বাংলাদেশে কয়লা রফতানির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত বছর একটি প্রতিনিধি দল পাঠায় কোল ইন্ডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, কোল ইন্ডিয়ার অধীনে সবচেয়ে বড় কয়লা খনি মহানদী কোলফিল্ডস লিমিটেড (এমসিএল) থেকে উত্তোলিত কয়লা ওড়িশার পারাদ্বীপ বন্দর থেকে বাংলাদেশে পাঠানো যাবে। পরবর্তীতে তা নৌ বা রেলপথে সরাসরি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

 

যদিও রামপালের জন্য ভারত থেকে কয়লা আমদানির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ভারতের প্রতিনিধি দল আমাদের কাছে এসেছিল। তবে আমরা কয়লা আমদানির উৎস নির্দিষ্ট করে ফেলেছি। যত দূর সম্ভব অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আনা হবে।

 

তবে ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি) মাধ্যমে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার জোগান দিতে পারে ভারত। কারণ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ শতাংশের অংশীদার সে দেশের এনটিপিসি। বাকি ৫০ শতাংশের মালিক পিডিবি।

 

যৌথ মালিকানার বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডে (বিআইএফপিসিএল) অর্থায়ন করছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবেও থাকছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস (বিএইচইএল)। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জ্বালানির উৎস হিসেবেও তাই ভারতই অগ্রাধিকার পাবে বলে আশাবাদী কোল ইন্ডিয়ার এক কর্মকর্তা। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, আশা করছি, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা জোগান দেয়ার প্রাথমিক কাজ এ বছরই শেষ হবে।

 

ভারতের কয়লা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫৫ কোটি টনের বেশি কয়লা উত্তোলন করছে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির উত্তোলিত এ কয়লা ব্যবহারোপযোগী করার ক্ষমতা বছরে ৩ কোটি ৭০ লাখ টন। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের পর এখনো ৬ কোটি ৯০ লাখ টন কয়লা অব্যবহূত রয়েছে কোল ইন্ডিয়ার। নিম্নমানের হওয়ায় এ কয়লা নিয়ে উদ্বেগ  প্রকাশ করেছেন ভারতের কয়লা ও বিদ্যুত্মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। সম্প্রতি সে দেশের গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা কয়লা রফতানির কথা ভাবছি। তবে রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের কয়লার মানের বিষয়টিও ভাবতে হবে। কারণ ভারতের কয়লার দূষণ সবচেয়ে বেশি।

 

কয়লায় অ্যাশের পরিমাণ যত বেশি হবে, তা পোড়ানোর ফলে পরিবেশদূষণ তত বেশি হবে। বাংলাদেশের খনিতে প্রাপ্ত কয়লায় অ্যাশের পরিমাণ ১৫ শতাংশের নিচে। তবে ভারতের কয়লায় তা ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ ধরনের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করলে জ্বালানি হিসেবে এর পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয়। আর বেশি কয়লা পোড়ানোর কারণে ছাই নির্গমনের পরিমাণও হবে বেশি।

 

সুন্দরবনের রামপালে কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর ও দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বিআইএফপিসিএলের। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপালের গৌরম্ভার কৈকরদশকাঠি ও সাতমারী মৌজায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জ্বালানি হিসেবে কয়লা প্রয়োজন হবে প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার টন। এ প্রকল্পে জোগানের মধ্য দিয়ে কয়লা রফতানি শুরু করতে চায় ভারত।

 

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে অত্যাধুনিক আল্ট্রাসুপার থার্মাল প্রযুক্তি ব্যবহূত হবে। তাই কালো ধোঁয়া বা ছাই উদিগরণের আশঙ্কা নেই। সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করেও ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিদিন ৪৫ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও ১৪২ টন সালফার ডাই-অক্সাইড নির্গমন হবে। বছরে ৯ লাখ ৪০ হাজার টন ছাই নির্গমন হবে, যার ৮০ শতাশই শুকনো ফ্লাই অ্যাশ আর ২০ শতাংশ বটম অ্যাশ।

 

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ২৫০ মেগাওয়াটের। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুত্ উৎপাদনক্ষমতার ৫০ শতাংশই কয়লাভিত্তিক করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিদ্যুত্ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, সে নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াবে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে।

 

 

সূত্র: বণিক বার্তায় প্রকাশিত ইয়ামিন সাজিদ-এর রিপোর্ট।


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।