১৯৭৮ বার পঠিত
দুপাশে বেনী ঝোলানো চুপচুপ তেলমাখা ঈষৎ থলথলে অথচ প্রতিবছর লিস্টের প্রথমেই ওর নাম। এমনকি টেস্ট এক্সামেও টপার। নাজানি কোন অজানা কারণে মাধ্যমিকে ফার্স্টলিস্টে ওর নাম ছিলনা অথচ হেড মিস্ট্রেসের অ্যাভারেজ মার্কস পাওয়া মেয়েটি স্টার পেয়েছিল। দাদার স্কুলের ফার্স্ট বয়’কে একদিন আবিস্কার করেছিলাম তার রিক্সায় উঠে, লজ্জায় নেমে গেছিলাম রিক্সা থেকে। অ্যাডমিশন টেস্টে ফার্স্ট লিস্টে থেকেও একটু দেরি হয়ে গেছিল ভর্তি হতে কিন্তু তবু অ্যাডমিশন হয়নি কারণ লাস্ট তিনটে সিট তখনও খালি তবুও ভর্তি হতে পারেনি শহরের নামী কলেজে। শোনা যায় ওই সিটগুলি বরাদ্দ ছিল প্রফেসরদের ছেলেমেয়েদের জন্য। কলেজ সোস্যালে চান্স পায়নি শিবাণী রিহার্সালে ভালো পারফর্ম করা সত্বেও। নাকি আর নেওয়া যাবে না। কারণ সিলেকশন কমপ্লিট।
এরা সবাই আজ সন্তানের মা। ধরা যাক এদেরই কারোর এক সন্তানের নাম তৃণা। খুব এক্সাইটেড স্কুল ফাংশানে পার্টিসিপেট করবে বলে। সিলেকশনে তার নামও আছে। যথারীতি আফটার স্কুল জোর কদমে রিহার্সাল চলছে, বাড়ি ফিরে ওর কথা যেন শেষ হতো না। মা সেসব শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে যেত,তবু মুখে হাসি রাখতো। মনে পড়ে যেত নিজের স্কুলজীবন। ফাংশানের আগের দিন কস্টিউম নিয়ে যেতে হবে। জোর তোড়জোড় চলছে এমন সময় জানা গ্যালো তৃণা বাদ, কারণ তার হাইট বেশি বাকিদের থেকে। তৃণা বাড়ি ফিরেছিল মাথা নিচু করে। ঘরে ঢুকেই স্কুল-ব্যাগটা আছড়ে ফেলেছিল মাটিতে। তারপর ঘরে ঢুকে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। তৃণার মায়ের সাহস হয়নি ওকে কিছু জিজ্ঞেস করার। শুধু তার মনে পড়ে যাচ্ছিল অরবিন্দ শিশুউদ্যানের বাহাদূর’দার কথা। ‘এই তুমি নামো দোলনা থেকে, তুমিতো বড়! তুমি কেন দোলনায় উঠেছো?’ ও সেদিন বোঝাতে পারেনি কাকু আমি ওদেরই বন্ধু, আমরা সবাই এক বয়সি। শোনা যায় তৃণার বদলে যাকে নেওয়া হয়েছিল তার বাবা মোটা ডোনেশন দেন প্রতিবছর। তাই, তার মেয়ের পার্ফমেন্স যতই খারাপ হোক না কেন স্কুল তাকে প্রায়োরিটি দিতে বাধ্য।
শিবাণী, আগমনী, তৃণার মা এরা কেউ কেউ আমার আপনার মতোই। এরা কেউ চাকরিরত বা বিজনেস ওম্যান বা শুধুই গৃহকর্মরতা,বা কেউ কেউ হয়তো বিয়ে করে উঠতে পারেনি, পাত্রপক্ষ পছন্দ করেনি বলে। বা কারোর বিয়ে করা হয়নি তার প্রেমিক চাকরি পায়নি বলে। এদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো কবিতা লেখে। লিখতে লিখতে ভরিয়ে ফ্যালে ফেসবুকের ওয়াল। নানা তাদের কবিতা অনেকে পড়লেও তাদের কবিতা কেউ ছাপেনা ঠিকমতো কানেকশন ধরতে পারেনি বলে অথবা কোন সম্পাদকের মনেই ধরেনি তাদের লেখা। হয়তো বা তারা উন্নাসিক কারোর কাছে মুখ ফুটে বলতে পারেন নি তাদের ইচ্ছের কথা!
এতক্ষণ ধরে যা লিখলাম আর আপনারা কষ্ট করে তা পড়লেন। অবশ্য এড়িয়ে যেতেও পারতেন।এখন প্রশ্ন হলো কেন এড়িয়ে যাবেন! এই কারণেই এড়িয়ে যাবেন, জানি আমি, আপনি সবাই কোন না কোন সময় এসব ঘটতে দেখেছি, নিজের সাথে নাহোক আমাদের আশেপাশের অনেকের সাথেই। আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি এসবে। তাই পড়ি আর না পড়ি একটা বুড়ো আঙুল বা নিদেন পক্ষে লাভসাইন বা স্যাড রিএকশন একটা টাচ’এ হয়ে যায়। কী দরকার বাপু এত বড় টেক্সট পড়ে আবার টাইপ করে কমেন্ট করার? তাই না? তার থেকে বাপু আপলোডানো ছবি অনেক বেটার, বেশ স্ট্রেচ করে দ্যাখা যায়! এত টাইপ করতে আঙুলে ব্যথা হয়না নাকি! যদিও অতি বোদ্ধারা সবেতেই একটি বুড়ো আঙুল মানে গতে বাঁধা লাইক দেন শুধু নিজের লোকজন (পড়ুন প্রিয়জন) হলে সেখানে লাভসাইন দেন এবং গদগদ হয়ে কমেন্ট করেন!
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন