১২৫৬ বার পঠিত
সাধারণত আমি যা লিখি স্পষ্ট মতামত দিই। এই বিষয়টায় আমার কিছু জানার বোঝার আছে, যারা জানেন একটু বলবেন প্লিজ।
সারা দেশ জুড়ে প্রচার চলছে কোনোমতেই ন্যাকড়া নয়, স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করুন। সরকারি বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান ময়দানে। প্রচার মাধ্যমও এটিকে একটা মহান কাজ হিসেবে দেখাচ্ছে। এমনিতে ধনী ও মধ্যবিত্ত মহিলারা বাজারের নামি কোম্পানির প্যাডই ব্যবহার করেন। এই প্রচারের লক্ষ্য গরিব ঘরের মহিলারা যারা ন্যাকড়া ব্যবহার করেন। তা ন্যাকড়ার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ কেন? কারণ ন্যাকড়া অপরিস্কার হলে সংক্রমন ঘটবে। এবং ঘটেও। সেখানে নামি কোম্পানির প্যাড নিরাপদ আর সহজ ব্যবহার যোগ্য।
অথচ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের মহিলারা ন্যাকড়াই ব্যবহার করে এসেছেন। আমাদের মা দিদিমারা। কিন্তু তারা ব্যবহার করতেন বলেই আজকের দিনে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। মধ্যবিত্তরা তাই নিরাপদ ও সুবিধাজনক ব্যবস্থা নিয়ে নিয়েছে। এর জন্যে কিছু টাকা খরচ করতে হচ্ছে এই মাত্র। তাদের কাছে এটা সহজ বহনযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন এই যে যাদের এই খরচ বহন করার ক্ষমতা নেই, তাদেরকে এই খরচ করানোর আকুতি কেন? একটাই উত্তর। ন্যাকড়া নিরাপদ নয়। সংক্রমণ ঘটবে। কিন্তু ন্যাকড়া যদি পরিস্কার হয়, যদি সাবান দিয়ে কাচা হয়, তবেও কি সংক্রমণ ঘটবে?
সুতোর পুরনো কাপড় কিন্তু আমাদের মা ঠাকুমারা কিন্তু নানা কাজে ব্যবহার করেছেন। তার অন্যতম ব্যবহার ছিল নবজাত শিশুর কাঁথা, শিশুর জামা। নতুন বিছানা, নতুন পোশাক খুব খড়খরে কর্কশ। পুরনো সুতির কাপড় নরম আর মোলায়েম। ঠিক যেন মায়ের কোল। আমাদের সবারই প্রাক শৈশব কেটেছে ওই ন্যাকড়ার আশ্রয়ে। মায়ের গর্ভে সন্তান আসার সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুমা পিসীমারা বসে যেতেন বাচ্চার কাঁথা আর জামা বানাতে।
এই সুতির পুরনো কাপড়ের আর একটি ব্যবহার ছিল প্যাড হিসেবে। নরম ও তরল শোষণের ক্ষমতা যার বেশ ভালো। সচেতন মহিলারা ভালো করে কেচে এই ন্যাকড়া ব্যবহার করতেন। আজও করা যায়। সুতির শাড়ি যেটি পড়ে পড়ে ছিঁড়ে গিয়েছে, সেটিকে একটা প্লাস্টিকের মগের বদলি না করে, সাবান দিয়ে কেচে, সারা বছরের প্যাড হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আমার মতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ব্র্যান্ডেড প্যাডের ব্যবহার না শিখিয়ে বরং ন্যাকড়া ব্যবহার করতে বলা হোক। শুধু বোঝাতে হবে ন্যাকড়া অবশ্যই হতে হবে পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত।
কয়েকদিন আগে ইউটিউবে ঘরোয়াভাবে প্যাড বানানোর পদ্ধতি দেখলাম। বিশ্বাস করুন মাত্র পাঁচ মিনিটে একেবারে ব্র্যান্ডেড ডিজাইনের প্যাড বানানো সম্ভব। উপকরণ বলতে ছুঁচ সুতো, একটু কাপড় আর কাঁচি। একটা পুরনো কাপড়ে প্রায় সারা বছরের প্যাড পাওয়া সম্ভব।
আমি মানুষটা খুব খারাপ। সব কিছুতেই সন্দেহ আর কু ডাক। একটা হিসাব দিই। ভারতে জনসংখ্যা ১২০ কোটি। ধরে নিলাম ৫৫ কোটি মহিলা। বয়স্কা আর শিশু বাদ দিয়ে অন্তত ৪০ কোটি নারীর প্যাড ব্যবহার করার কথা। মাসে কম পক্ষে ৩০ টাকা খরচ ধরলে বছরে ৩৬০ টাকা। চল্লিশ কোটি মহিলার বছরে ৩৬০ টাকা করে। মোট প্রায় পনেরো শত কোটি টাকার বাজার। শিল্পের এই মন্দার দিনে বাজারটা কিন্তু বেশ বড়। ভাবুন, প্লিজ ভাবুন। মানুষের ভালোবাসার মহান কাজে বাজারের হাতে খেলছেন না তো?
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন