০
১৩৭৭ বার পঠিত
যদি গণমাধ্যমের খবর মিথ্যা না হয়, আমির হামজা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ছিলেন। অর্থাৎ তিনি অপরাধী, একজন হত্যাকারী। আদালত তা প্রমাণ করেই তাকে শাস্তি দিয়েছে। শুধু হত্যাকারী নয়, শিশু হত্যার দায়ও রয়েছে তার উপর। গণমাধ্যমের দেয়া তথ্যে তার অপরাধের ফিরিস্তিও খুব ছোট নয়। তার বিরুদ্ধে আরো মামলা ছিলো। এমন একজন মানুষ সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে গেলেন, আজব না!
কারা খুঁজে পেলেন এমন একজন বিস্ময়কর ‘সাহিত্যরত্ন’কে, এটাই এখন প্রশ্ন ও খুঁজে দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুঁজেপেতে এমন একজনকে পুরস্কারের যোগ্য বিবেচনা করা হলো। আর একপাল মানুষ তার পদককে জাস্টিফাই করতে মাঠে নেমে পড়লেন। কেন পড়লেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করার কিছু নেই, তা হামজা সাহেবের লেখাতেই পরিষ্কার। কিন্তু তারপরেও চক্ষুলজ্জা বলে একটা কথা রয়েছে। অবশ্য এ প্রশ্নে আমার এক বন্ধু বলেছিলেন যাদের চক্ষুই নাই, অর্থাৎ অন্ধ, মতান্ধ, তাদের আবার লজ্জা কী।
গণমাধ্যম এরইমধ্যে কেঁচো খুড়তে সাপ বের করে এনেছে। এরফলে হয়তো জাস্টিফাই করনেওয়ালারা ক্ষান্ত দিবেন। সাপটা কি জানতে চান তো; সাপটা হলো, আমির হামজা জিয়াউর রহমানকে নিয়েও গান লিখেছেন, এমন তথ্যটি। তার কারামুক্তির পেছনেও বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রীর হাত ছিলো। সুতরাং ঘটি উল্টে যাবে। এখন হয়তো তার বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিচয় পেছনে পড়ে যাবে। এখন তিনি মুক্তিযোদ্ধা থেকে অপরাধী হয়ে উঠবেন। তার পদকও প্রত্যাহার হতে পারে। এটা অবশ্য সম্ভাবনা। বাকিটা জাস্টিফাইড পার্টির হাতে।
এই যে জাস্টিফাইড পার্টি, তাদের পেছনে খুঁজলেও হয়তো আমির হামজার ছায়া দেখতে পাওয়া যাবে। সেই ছায়া লুকাতেই তারা বিবেক-বিবেচনা তোরঙ্গে তুলে নিজেদের অনুগত প্রমাণে অস্থির হয়ে ওঠেন। তারা সবকিছুকেই অন্ধভাবে জাস্টিফাই করতে লেগে যান। ব্যতিক্রম হলে কথা ছিলো, জানা কথা ব্যতিক্রম কোনো উদাহরণ নয়। কিন্তু এরকম উদাহরণের সংখ্যা অসংখ্য। সুতরাং জাস্টিফাই করনেওয়ালাদের এখন আর ব্যতিক্রম বলা যাবে না।
ভয়াবহ খারাপ সময় পার করছি আমরা। এক সময় রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেন লেখকরা। লেখক মাত্রেই বুদ্ধিজীবী, বৃদ্ধিবৃত্তির চর্চা করেন। তারা রাজনীতির সাথে রাজনীতি চালিত রাষ্ট্রব্যবস্থার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করতেন। এখন তাদের অনেকেই করেন এর উল্টোটা। জাস্টিফাই করেন। রাজনীতির খারাপ দিকগুলো জাস্টিফাই করার দায়িত্ব তারা নিজ দায়িত্বে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। যার ফাঁকফোকড় গলেই আমির হামজা’রা ঢুকে পড়েছেন, পড়ছেন। এরচেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু নেই।
কেউ বলতে পারেন, আমির হামজা’র সাহিত্য প্রতিভাকে অস্বীকার করা যাবে না। কথা সত্য, প্রতিভাকে অস্বীকার করা যায় না। বিখ্যাত ইংরেজ কবি টেড হিউজের বিরুদ্ধে স্ত্রী ও প্রেমিকাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা, মতান্তরে হত্যার অভিযোগ ছিলো। নারীবাদীরা তার শাস্তি দাবিও করেছেন সেসময়। কিন্তু তার সাহিত্য অস্বীকৃত হয়নি। আর হয়নি তা সাহিত্য বলেই। আমির হামজাকে পড়েছেন, না পড়েই তার সাহিত্যকে পুরস্কারের শ্রেণিভুক্ত করে ফেললেন। এটাও আজব না। কর্তায় বলছে ‘ইয়ের ভাই’ আর কী। আমির হামজা যদি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্ত হবার যোগ্য হন, তাহলে বাংলাদেশের প্রতি জেলায় এমন পদকের অনেক দাবিদার পাওয়া যাবে। এমনকি ট্রেনে যে অন্ধ বয়াতি নিজের বাঁধা গানে সুর করে মানুষকে শোনান তিনিও পদকের যোগ্য দাবিদার হতে পারেন নিঃসন্দেহে।
ফুটনোট : এই লেখাটি লিখেছি ১৬ মার্চ রাতে। আজ ১৮ মার্চ লেখাটি গণমাধ্যমে পাঠাবো এমন চিন্তা ছিলো। কিন্তু তার আগেই দেখলাম আমির হামজা পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। লেখায় যে সম্ভাবনা ছিলো তা সত্যি হয়ে গেলো। তবে এই বাদ পড়া থেকে আরেকটা বাদ পড়ার বিষয় সামনে এলো, যাতে নির্ধারণকারীদের নামটাও জুড়ে যায়। গ্রহীতার যোগ্যতার প্রশ্নে দাতাদের যোগ্যতাটা জরুরি।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন