হারিস আর হাসান কি সত্যি বাংলাদেশে এসেছিল?
আমার আজকের অনুসন্ধানে আমি নেজেই চমকে গেছি। মনে হল আমি একটা সত্যি থ্রিলার গল্পের মধ্যে আছি। আইন কি সবার জন্য সমান? আইন কি শুধু আমরা প্রজাদের জন্য? রাজা, উজির, সেনাপতির জন্য কি আইন হাটু গেড়ে বসে পড়বে! শুধুমাত্র ইন্টারনেট ঘেটে আমি যে তথ্য আর ছবি পেলাম তা কি আমাদের পুলিশ, সাংবাদিক, গোয়েন্দা, আর্মি কেউ কেন দেখতে পারছে না?
আলজাজিরা দাবি করেছে হাসান এবং হারিস দুই পলাতক ক্রিমিনাল বাংলাদেশে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সত্যি কি তাই?
খুজতে গিয়ে আমি ক্রিমিনাল আনিস আহামেদর চারটি ফেসবুক আইডি খুজে পেয়েছি। তার এই আইডি ধরে তাদের আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতজনের প্রোফাইল ঘেটে আনিস আহামেদ ও হারিস আহামেদের বাংলাদেশে ঘুরে বেড়ানোর ছবি পেয়েছি। পুরাই তাজ্জব বনে গেলাম। খুনের আসামি ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বেড়ায়। মাথাই নষ্ট। এই লেখায় প্রতিটি আইডির লিংক ও ছবি দিলাম। আপনারা হয়তো আরও খুজে পাবেন। আমার এই পোস্ট দেওয়ার পর আইডিগুলি লক হয়ে যাবে। তাই যারা পারবেন স্ক্রিনশট নিয়ে রাখবেন। প্রতিটি ছবি দেখবেন।
প্রথমে আমি খুজলাম হাসান ও হারিস কে। সত্য হলে এদের নামই আমি জানতাম না। আমাদের সংবদাপত্র নিশ্চয় তাদের নিয়ে লিখেছে। তাদের সম্পর্ক যা পেলাম:
১) বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
শিরোনাম ও লিংক : ফাঁসি থেকে রেহাই পেলো ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ জোসেফ
প্রতিবেদক: সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০১৫
ঢাকা: হত্যা মামলায় নব্বইয়ের দশকের আলোচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তোফায়েল আহমেদ জোসেফের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মামলার আরেক আসামি যাবজ্জীবন প্রাপ্ত কাবিল সরকারকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান।
১৯৯৬ সালের ৭ মে ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রাশিদা পারভীন পরদিন ৮ মে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় বিচারিক আদালত ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল আসামি জোসেফ ও মাসুদ জমাদারকে মৃত্যুদণ্ড এবং কাবিল সরকার, হারিস আহমেদ ও আনিস আহমেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
হারিস ও আনিস পলাতক থাকায় তারা হাইকোর্টে আবেদন করেননি। তবে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে জোসেফ, কাবিল ও মাসুদ।
হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মাসুদকে খালাস দিয়ে জোসেফের মৃত্যুদণ্ড এবং কাবিলের যাবজ্জীবন দণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে জোসেফ ও কাবিল আপিলে যাওয়ার পর বুধবার আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯,২০১৫/আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস
২) THE DAILY STAR
শিরোনাম ও লিংক: জোসেফ-বিকাশদের মুক্তি এবং আইনের শাসন
প্রতিবেদক: গোলাম মোর্তোজা
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০১৮
বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দগুলোর অন্যতম ‘সংবিধান’ এবং ‘আইনের শাসন’।
‘সংবিধান মানতে হবে’ ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে’- কথাগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির খুব পরিচিত শব্দ। আইন, আইনের শাসন, আইনের ব্যাখ্যা বা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু কথা।
১. জোসেফের নাম জানেন না, এমন মানুষ বাংলাদেশে আছেন বলে মনে হয় না। জোসেফ নামে না চিনলেও ‘সন্ত্রাসী জোসেফ’ নামে সবাই চিনবেন। জোসেফ কত মানুষকে হত্যা করেছে, সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়নি, হলেও তাতে জোসেফেরে নাম ছিল না। মামলা যে সব হত্যাকাণ্ডে হয়েছিল, তার একটিতে ফাঁসির রায় হয়েছিল জোসেফের। হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন। আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। বিশেষ বিবেচনায় দণ্ড মওকুফের আবেদন করা হয়েছিল। জোসেফের মায়ের আবেদনে জেল দণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। ‘জোসেফ অসুস্থ’- চিকিৎসার জন্যে বিদেশে যেতে চেয়েছিল। রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। গত ২৭ মে অত্যন্ত গোপনে জেল থেকে জোসেফকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার পর সংবাদটি গণমাধ্যম জানতে পেরেছে।
জোসেফের জেল দণ্ড মওকুফ, বিদেশে চলে যাওয়া বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হয়েছে।’
এত বড় সন্ত্রাসীর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তারও কারণ আছে। বড় কোনো অসুখ ছাড়া টানা ২০ মাস কারাগার থেকে হাসপাতালে এনে এসি কেবিনে রাখা হয়েছিল জোসেফকে। গণমাধ্যম বিশেষ করে দৈনিক প্রথম আলো সংবাদ প্রকাশ করে ঝামেলা করেছিল। জোসেফকে কারাগারে ফিরিয়ে নিতে হয়েছিল। জোসেফের মাসের পর মাস হাসপাতালে থাকার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছিল, ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হয়েছে।’
সন্ত্রাসী জোসেফের বড় ভাই হারিস, জোসেফের চেয়েও বড় সন্ত্রাসী। স্বৈরাচার এরশাদের পুরো সময়কালে জাতীয় পার্টির শেল্টারে দোর্দণ্ড প্রতাপে মানুষ হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। ধারণা করা হয় সে এখন ভারতে পালিয়ে আছে। আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপুও সন্ত্রাসী ছিল। ১৯৮৯ সালে সন্ত্রাসীর গুলিতে সে নিহত হয়।
২. আরেকজন সন্ত্রাসী বিকাশের জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ঘটনা, যেন সৃজনশীল গল্পের চেয়েও চমকপ্রদ।
২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে কাশিমপুর কারাগারের গেট দিয়ে বেরিয়ে এলো এক যুবক। চোখে সানগ্লাস। ভোর থেকে তার জন্যে কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছিল চারটি প্রাডো জিপ। ছয়টি মোটরসাইকেল। প্রতিটি মোটরসাইকেলে দুজন বসা। কালো গ্লাসের জিপে কে বা কারা বা কতজন ছিল, জানা যায়নি। সানগ্লাস পরিহিত যুবক একটি জিপে উঠল। চারটি জিপ, ছয়টি মোটরসাইকেল জিপগুলোর আগে-পিছে। রাস্তা থেকে আরও তিনটি গাড়ি বহরে যোগ দিল। ১৫ বছর জেল খেটে জামিনে যে বেরিয়ে গেল, তার নামই বিকাশ। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বিকাশ।
কয়েকটি তথ্য-
ক. দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেওয়ার আগে জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানাতে হয়। এটাই রীতি। বিকাশের মুক্তির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
খ. সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্তের আগে কারাগার থেকে বন্দি মুক্তি দেয়াটাই রীতি। বিকাশকে ছাড়া হয়েছে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে।
গ. জেল গেটের রিসিপশনে সিসি ক্যামেরা আছে। বিকাশ জেল থেকে বেরিয়েছে, কিন্তু সিসি ক্যামেরায় তা ধারণ করা নেই।
ঘ. একটি সূত্রানুযায়ী, তখন ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল। আরেকটি সূত্রানুযায়ী, বের হয়ে যাওয়ার পরপরই ওই অংশটুকু মুছে দেয়া হয়।
৩. বিকাশের মুক্তির সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মহিউদ্দিন খান আলমগীর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, আদালত জামিন দেওয়ায় বিকাশ মুক্তি পেয়েছে।
সেই সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সঙ্গে কারাগারে পরিচয় হয়েছিল বিকাশের। কারাজীবনের কঠিন সময়ে বিকাশ নানাভাবে সহায়তা করেছিলেন মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে।
হত্যাসহ ১২টি মামলার ছয়টিতে অব্যাহতি এবং ছয়টিতে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হয় বিকাশ। চলে যায় বিদেশে। বিকাশের ভাই প্রকাশও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। প্রকাশ প্যারিসে থাকে। ধারণা করা হয় বিকাশও এখন প্যারিসে থাকে।
বিকাশের মুক্তির ব্যাখ্যাতেও বলা হয়েছিল, ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হয়েছে।’
৪. ত্বকীর কথা মনে আছে অনেকেরই। নারায়ণগঞ্জের ত্বকী। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাফিউর রাব্বীর সন্তান ত্বকী। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয়েছিল। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে লাশ পাওয়া গিয়েছিল ৮ মার্চ। পুলিশি তদন্তের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছিলেন ত্বকীর বাবা। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। তদন্ত করেও। র্যাব তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর এবং তয়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকি। সুলতান-শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের পুরো বর্ণনা দেয়। ২০১৪ সালে র্যাবের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডে ১১ জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে আজমেরি ওসমানের নেতৃত্বে। অভিযোগপত্রও চূড়ান্ত হয়েছে। যেকোনো দিন দেওয়া হবে।
র্যাব অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছিল। সেই টর্চার সেল থেকে রক্তমাখা শার্ট, লাঠিসহ অনেককিছু উদ্ধার করেছিল।
আজমেরি ওসমান প্রয়াত জাতীয় পার্টির এমপি নাসিম ওসমানের বড় ছেলে। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম ওসমান।
২০১৪ সালের মার্চের পর অনেকগুলো মার্চ মাস চলে গেছে। আজমেরি ওসমান কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে আবার নারায়ণগঞ্জে ফিরে এসেছে। ত্বকীর বাবা-মায়ের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়েছে। অভিযোগপত্রের দেখা মেলেনি।
সব কিছু ‘আইন অনুযায়ী চলছে’ তদন্তও।
৫. সাগর-রুনী হত্যার কত বছর হলো? একবারে উত্তর তার সহকর্মীরাও সম্ভবত দিতে পারবেন না, হিসেব করে বলতে হবে।
মাদকবিরোধী অভিযানে গত ১৬ দিনে ১২২ জন মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে তারা সবাই ‘মাদক চোরাচালানি’। মারা গেছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’। এর মধ্যে আসলে কতজন ‘মাদক চোরাচালানি’ নিরপেক্ষ কোনো অনুসন্ধান এখনও হয়নি। অন্তত দুজনের তথ্য জানা গেছে, কাউন্সিলর একরামুল ও হাবিবুর রহমান মাদক চোরাচালানি ছিল না। তাদের পরিবার অভিযোগ করেছেন, একারামুল প্রতিপক্ষ এবং মোশারফকে সোর্স ভুল তথ্য দিয়ে হত্যা করিয়েছে। অন্য ১২০ জনের মধ্যে অনেকের পক্ষে কথা বলার হয়তো লোকও নেই।
অপরাধী বা মাদক চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবস্থা নেবে, সেটাই স্বাভাবিক। ‘যেহেতু এদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না, সে কারণে মানুষ “বন্দুকযুদ্ধে” হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে’- কী অদ্ভুত যুক্তি।
এক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হচ্ছে’।
৬. বিএনপি সরকার সুইডেন প্রবাসী ফাঁসির আসামি জিন্টুর দণ্ড মওকুফ করে দিয়েছিল। লক্ষ্মীপুরের তাহেরপুত্র বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড, জেলদণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন আগের রাষ্ট্রপতি। জিন্টুও মানুষ হত্যা করেছিল, বিপ্লবও। আদালতে তা প্রমাণ হয়েছিল।
হত্যার দায়ে দণ্ডিত অপরাধীদের ফাঁসি-জেল দণ্ড মওকুফ করে দেওয়া দেশেই তো ‘সংবিধান’ ‘আইনের শাসন’ বা ‘সব কিছু আইন অনুযায়ী হচ্ছে’- শব্দগুলো বেশি আলোচিত হওয়ার কথা!
৩) প্রথম আলো
শিরোনাম ও লিংক: সন্ত্রাসী জোসেফের সাজা মওকুফ করতে তোড়জোড়!
প্রতিবেদক: রোজিনা ইসলাম
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০১৬, ২২: ৩৯
দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের সাজা মওকুফ করতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বহুল আলোচিত এই সন্ত্রাসীর খুনের দায়ে প্রথমে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। এই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল শুনানি শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারা সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, তাঁর সাজা ভোগ করা বাকি আছে আরও ২১ বছর ৭ মাস। জরিমানা না দিলে আরও এক বছর বেশি সাজা খাটতে হবে।
কারা সূত্র জানায়, জোসেফের মা রেনুজা বেগম ৭ জুন তাঁর সন্তানের সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁকে অন্যায়ভাবে সাজা খাটানো হচ্ছে বলে তিনি আবেদনে জানিয়েছেন। এখন দ্রুত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠাতে বিশেষ তদবির চলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে এই সাজা মওকুফের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়াটি চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোসেফের সাজা মওকুফের আবেদন আমরা পেয়েছি। এখন আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেব। মতামত পেলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাছে যে কেউ ক্ষমা চেয়ে আবেদন করতে পারেন। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে বিধি মোতাবেক সেই আবেদন পৌঁছে দেব। সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমা করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’
নব্বইয়ের দশকের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রায় ১০ মাস ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে রয়েছেন। কেন এত দিন হাসপাতালে আছেন, জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ নেসার আলম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থ বলেই হাসপাতালে আছেন। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পিঠে ব্যথার কারণে তাঁকে বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে নেওয়া হয়। তখন থেকে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
খুন, অস্ত্র মামলাসহ ১১ মামলার আসামি জোসেফের ১০ মাস ধরে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি গতকাল নিশ্চিত করেন বিএসএমএমইউর পরিচালক (হাসপাতাল) আবদুল মজিদ। তাঁর দপ্তরে গেলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, জোসেফের চিকিৎসা করছেন নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক আবু নাসার রিজভী। তাঁর রোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক জানান, ‘ব্যাক পেইন। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছে। ভালো না হলে অপারেশন লাগতে পারে।’
কারা সূত্র জানায়, সাজাপ্রাপ্ত এই কয়েদির বয়স ৪২ বছর। কারা বিবরণ অনুযায়ী, জোসেফ মোট সাজা খেটেছেন ১২ বছর ১২ দিন এবং সাজা মওকুফ (রেয়াত) পেয়েছেন ৯ মাস ১৪ দিন। তাঁর সম্ভাব্য মুক্তির তারিখ জরিমানা দিলে ২০৩৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। আর জরিমানা না দিলে ২০৩৯ সালের ২৪ জানুয়ারি।
জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন হচ্ছে ন্যায়বিচারের জন্য। কিন্তু আমরা বিচারব্যবস্থাকে ক্ষমতার স্বার্থে ব্যবহার করে অপব্যবহার করছি। শীর্ষ সন্ত্রাসী, দলীয় লোকদের সাজা মওকুফ করে এমন বার্তা দিচ্ছি যে মানুষ কার ওপর আস্থা রাখবে বুঝতে পারছে না। এ বিষয়ে বুদ্ধিসম্পন্ন লোক ও জনগণের সোচ্চার হওয়া দরকার।’
১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানকে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি এই জোসেফ। ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলার অন্যতম আসামি জোসেফ ও মাসুদ জমাদারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন এবং অন্য তিন আসামি আনিস আহমেদ, হারিস আহমেদ ও কাবিল সরকারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন জোসেফ, মাসুদ ও কাবিল। আসামি আনিস ও হারিস পলাতক থাকায় তাঁরা আপিল করতে পারেননি। ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের রায়ে জোসেফ ও কাবিলের সাজা বহাল থাকে এবং মাসুদ খালাস পান। এ ছাড়া অস্ত্র মামলায় জোসেফসহ অন্য আসামিদের ১২ বছর ও ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কারা সূত্র জানায়, তৎকালীন সরকার কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করে। ওই তালিকায় সন্ত্রাসী জোসেফকে ধরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এর বছর খানেক পর জোসেফকে নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেই থেকে কারাবন্দী তিনি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতির যে বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, তা প্রয়োগ করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। যারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, আদালত যাদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই এই বিশেষ ক্ষমা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, অপরাধীদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য যখন কারা অধিদপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়, তখন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এ ধরনের আবেদন তাঁরা নথিভুক্ত করবেন কি না, বা আমলে নেবেন কি না। কেননা, যখন আবেদন নথিভুক্ত হয়ে যায়, তখন সরকারসহ সবার দায়বদ্ধতা চলে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকার ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন জোসেফ। জোসেফের বাবা ওয়াদুদ আহমেদ ছিলেন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট জোসেফ বড় ভাই হারিস আহমেদের হাত ধরে রাজনীতির মাঠে পদার্পণ করেন। নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টি ছেড়ে হারিস যোগ দিয়েছিলেন যুবলীগে। তৎকালীন ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও হয়েছিলেন তিনি। জোসেফ তাঁর বড় ভাইয়ের ক্যাডার বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে মোহাম্মদপুর-হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। যোগ দেন সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলোচিত সেভেন স্টার গ্রুপে। পুরো রাজধানী তখন সেভেন স্টার গ্রুপ ও ফাইভ স্টার গ্রুপ নামে দুটি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করত। এভাবেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় নাম উঠে আসে জোসেফের।
৪) Bangladesh Police: List of Most Wanted
শিরোনাম ও লিংক: List of Most Wanted
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ পুলিস হেড কোয়ার্টার্স
প্রকাশিত: তারিখ উল্লেখ নাই
Haris Ahmed @ Hares
S/O- Late Abdul Wadud
Vill-D/9, Nurjahan road
Thana- Mohammadpur
DMP, Dhaka.
বাংলাদেশ পুলিসের ওয়ান্টেড লিস্টে হারিসের ছবিসহ নাম আছে। একই অপরাধে অপরাধী আনিসের নাম এই তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৫) এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি
পলাতক আসামিদের কেউ যদি সহযোগিতা করে তাহলে বাংলাদেশের আইনে তার শাস্তি কী হবে?
বাংলাদেশে পিনাল কোড ১৮৬০ ( ACT NO. XLV OF 1860 ) পড়ুন এখানে:
CHAPTER XI
OF FALSE EVIDENCE AND OFFENCES AGAINST PUBLIC JUSTICE
216. Whenever any person convicted of or charged with an offence, being in lawful custody for that offence, escapes from such custody,
or whenever a public servant, in the exercise of the lawful power of such public servant, orders a certain person to be apprehended for an offence, whoever, knowing of such escape or order for apprehension, harbours or conceals that person with the intention of preventing him from being apprehended, shall be punished in the manner following, that is to say,
if the offence for which the person was in custody or is ordered to be apprehended is punishable with death, he shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to seven years, and shall also be liable to fine;
if the offence is punishable with 2[imprisonment] for life, or imprisonment for ten years, he shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to three years, with or without fine;
and if the offence is punishable with imprisonment which may extend to one year and not to ten years, he shall be punished with imprisonment of the description provided for the offence for a term which may extend to one-fourth part of the longest term of the imprisonment provided for such offence or with fine, or with both.
“Offence” in this section includes also any act or omission of which a person is alleged to have been guilty out of Bangladesh which, if he had been guilty of it in Bangladesh, would have been punishable as an offence, and for which he is, under any law relating to extradition, or under the Fugitive Offenders Act, 1881, or otherwise, liable to be apprehended or detained in custody in Bangladesh, and every such act or omission shall, for the purpose of this section, be deemed to be punishable as if the accused person had been guilty of it in Bangladesh.
Exception.–This provision does not extend to the case in which the harbour or concealment is by the husband or wife of the person to be apprehended.
-
1 Throughout this Act, except otherwise provided, the words “Bangladesh”, “Government”, “the Government” and “Taka” were substituted, for the words “Pakistan”, “Central or any Provincial Government” or “Central Government or any Provincial Government” or “Central Government” or “the Provincial Government” or “Provincial Government” and “rupees” respectively by section 3 and 2nd Schedule of the Bangladesh Laws (Revision And Declaration) Act, 1973 (Act No. VIII of 1973).
-
2 The word “imprisonment” was substituted, for the word “transportation” by section 16 of the Penal Code (Amendment) Ordinance, 1985 (Ordinance No. XLI of 1985)
আইনের লিংক: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-11/section-2985.html
আইনের সারসংক্ষেপ হলো, পলাতক আসামিকে সহযোগিতা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই শাস্তি যে অপরাধীকে লুকিয়ে রাখা হল তার অপরাধের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ জরিমানাসহ ৭ বছরের জেল। তবে স্বামি-স্ত্রী হলে অপরাধ হবে না।
এখানে যেহেতু কিছু সামরিক সংশ্লষ্টতার অভিযোগ আছে তাই সামরিক আইন ১৯৫২র কিছু ধারা সংক্ষেপেও জেনে নিই:
আইনটি বিস্তারিত পড়তে পারবেন এই লিংকে: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-details-248.html
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এ কারণে যে, আমি কোনো আইন বিশেষজ্ঞ নই। কোনটা কোনক্ষেত্রে প্রযোজ্য বা প্রযোজ্য নয় বা কারো বিচার করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি আমার মত করে যা জেনেছি তাই উপস্থাপন করছি। কোনো আইনেই রাজা, উজির, সেনাপতি বা প্রজার কোনো ভেদাভেদর কথা বলা নাই।
আলজাজিরায় প্রকাশিত All the Prime Minister’s Men (ওরা প্রধানমন্ত্রির লোক) ইনভেস্টিগেটিভ ডকুমেন্টেরিতে প্রকাশিত ভিডিওতে আনিস আহমেদের একটা ফেসবুক আইডি দেখানো হয়েছিল। আমি খুজলাম সেটা এবং খুঁজেও পেলাম। প্রত্যেকটি আইডিতে তার ফ্রেন্ডলিস্ট লক না থাকায় সেইটা ধরে চারটা আইডি পেলাম। এই চারটা হল:
১. https://www.facebook.com/anis.ahmed.54584982
২. https://www.facebook.com/profile.php?id=100023621243876
৩. https://www.facebook.com/ahmed.anis.9440/
৪. https://www.facebook.com/anisahmed.anisahmed.980
এই আইডিগুলির ফ্রেন্ডলিস্টগুলির লোকগুলি মোটামুটি একই। যারা আছে তাদের অনেকেই নারায়ণগঞ্জ আর চাঁদপুর থেকে।
হারিস ও পরিবার (পড়ুন ময়নামতি অফিসার্স ক্লাব)
কালাম আনিসের পেছনে। এটা তার প্রোফাইলে দিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে ঘুরে বেড়াচ্ছে।