ইসলামি শরিয়ত মতে বিবাহ চার প্রকার। সেগুলি হলো-
১) চুক্তি বিবাহ
২) হিল্লা বিবাহ
৩) মুতা বিবাহ এবং
৪) দখলি বিবাহ।
চুক্তি বিবাহটিই হলো ইসলামে মূল ধারার বিবাহ। বাকি বিবাহগুলিও তথা ‘হিল্লা বিবাহ’, ‘মুতা বিবাহ’ এবং ‘দখলি বিবাহ’ও শরিয়তে অনুমোদিত। এই বিবাহগুলি খুব কম দেখা গেলেও ইতিহাস হয়ে যায় নি, আজও এগুলির প্রচলন রয়েছে মুসলিম সমাজে। তবে এ কথাও ঠিক যে ‘হিল্লা বিবাহ’র প্রচলন বিদ্যমান থাকলেও ‘মুতা বিবাহ’ ও ‘দখলি বিবাহ’র প্রচলন কয়েক বছর আগেও বিশ্বের সর্বত্রই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তখন মনে হচ্ছিল মুসলিমরা এ দু’টো বিবাহকে চিরতরে বর্জন করেছে। মনে হচ্ছিল যে বিবাহ দু’টি চিরতরেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে, এবং ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ ধারণা যে ভুল তা আইএস (IS – Islamic State) প্রমাণ করেছে*। আইএস জঙ্গীরা সিরিয়া ও ইরাকে এখন ‘মুতা বিবাহ’ ও ‘দখলি বিবাহ’ দু’টিরই পুনঃপ্রবর্তন ঘটিয়েছে। আইএস অধিকৃত অঞ্চলে স্বমহিমায় ফিরে এসেছে ‘মুতা বিবাহ’ ও ‘দখলি বিবাহ’। আইএস জঙ্গীরা নবি মুহাম্মদের সেই বাণীকে অমোঘ বাণী, তথা চিরসত্য বাণী বলে প্রমাণ করতে এখন ভীষণ তৎপর।
মুহাম্মদের সেই বিখ্যাত বাণীটি হলো,
“শরিয়তি আইন চিরন্তন ও চিরনতুন, শরিয়তি আইন পুরণো হয় না, বাতিলও হয় না। পৃথিবী যতোদিন থাকবে, শরিয়তী আইনের প্রচলনও থাকবে; এ আইন কারো শক্তি নেই যে কোনোদিন পাল্টাতে বা বাতিল করতে পারে।”
আইএস – এর কথা থাক। ফিরে আসি ‘হিল্লা বিবাহ’র প্রসঙ্গে। ‘মুতা বিবাহ’ এবং ‘দখলি বিবাহ’ নিয়ে আলোচনা করা হবে আলাদাভাবে। তবে ‘হিল্লা বিবাহ’ নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে এই বিবাহ তিনটির চরিত্র ও প্রকৃতি কীরূপ সে সম্পর্কে আগাম একটু আভাস দেওয়া যাক।
উপরোক্ত তিন প্রকারের বিবাহ-এর যে বিধি ও নীতিমালা তা নারীর পক্ষে যারপরনাই অবমাননাকর। নারী এই তিনটি বিবাহ-এর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপেই পণ্য। মানুষ হিসেবে তার সমগ্র সত্ত্বা ও অস্তিত্ব এখানে অস্বীকৃত। তার নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আপত্তি-সম্মতি, আগ্রহ-অনাগ্রহ ব্যক্ত করার অধিকার এখানে অপহৃত। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মতো তাদের সমস্ত মান-মর্যাদা এবং স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করা হয়েছে। দ্রৌপদীকে শ্লীলতা ও সম্মান রক্ষার ব্যবস্থা তবু রয়েছে মহাভারতে, একটি অদৃশ্য হাত অনবরত কাপড় জোগান দিয়ে তাকে নগ্নতার হাত থেকে রক্ষা করেছে। এই তিনটি বিবাহের ক্ষেত্রে মুসলিম নারীর শ্লীলতা ও সম্মান রক্ষার কোনো রক্ষাকবচ নেই। তাদেরকে পুরুষের পদতলে নগ্ন করে সমর্পণ করা হয়েছে যাতে তারা তাদের ইচ্ছা মতো অবাধে তাদের ভোগ করতে পারে।
এই বিবাহ তিনটিতে নারীকে বিবাহর নামে বলাৎকার করার অনুমতি ও অধিকার দেওয়া হয়েছে পুরুষকে। বিবাহের নামে নারীর ওপর বলাৎকারের কুৎসিত ও বর্বর বিধানকে আধুনিক যুগের মুসলমান ধর্মগুরুরাও মেনে নিতে পারেন নি। তাঁরা ‘মুতা বিবাহ’ ও ‘দখলি বিবাহ’ এই দুটি বিবাহকে বর্জন করেছিলেন। বর্জন করার মানে তাঁরা এটা মেনে নিয়েছিলেন যে ‘মুতা বিবাহ’ ও ‘দখলি বিবাহ’র বিধিমালা নারীর পক্ষে চরম অবমাননাকর এবং অসভ্য, অমানবিক ও কুৎসিত প্রকৃতির যা সভ্য সমাজের অনুপযুক্ত। বর্জন করলেও বিয়ে দুটির বিধিমালার জন্যে তাঁরা আল্লাহ ও মুহাম্মদের কোনো দোষ বা ভুল দেখতে পান নি। কেন বিবাহ দুটি ইসলাম অনুমোদন করেছিলো তার কৈফিয়ত হিসেবে তাঁরা বলেন যে তৎকালীন পরিস্থিতি ও পরিবেশের প্রয়োজনে ওই বিবাহ দু’টির প্রবর্তন করা জরুরী ছিল। তাঁরা আরো বলেন যে, এখন সে পরিস্থিতি ও পরিবেশ নেই, তাই ওই বিবাহ দু’টি এখন অবৈধ হয়ে গিয়েছে।
বিবাহ দু’টিতে কী এমন সব বিধি রয়েছে যে এ যুগে সেগুলিকে রদ করতে হল? তা নিয়েও আলোচনা করার দরকার। এখানে শুধু আলোচনা করা হয়েছে ‘হিল্লা বিবাহ‘ নিয়ে।
হিল্লা বিবাহ:
হিল্লা বিবাহ হলো মুসলিম সমাজের একই পুরুষ এবং একই নারীর মধ্যে দু’বার বিবাহ সম্পন্ন হওয়া। ব্যাপারটা এরকম- ধরা যাক একজন স্বামী একদিন তুচ্ছ কারণে বা অকারণে রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে বসলো। কিছুদিন পর স্বামী দেবতার মাথা থেকে রাগের ভূতটি নেমে গেলে সে বুঝতে পারলো যে বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে। লোকটি সেই ভুলটি সংশোধন করে পূনরায় তার স্ত্রীকে বিবাহ করে ফিরিয়ে নিতে চায়। অপরদিকে স্ত্রীও তার স্বামীকে পূনরায় বিবাহ করতে সম্মত এবং সে পূনরায় তার স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে চায়। স্বামী তার ভুল বুঝতে পেরেছে, সে তার প্রাক্তন স্ত্রীকে পূনরায় বিবাহ করে আবার নতুন করে সংসার পাততে চায়, এদিকে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীও তার প্রাক্তন স্বামীকে বিবাহ করতে ও তার সঙ্গে পুনরায় সংসার বাঁধতে চায়। এটা তো মন্দের ভালো।
এ খবরে স্বামী ও স্ত্রীর পরিবারের তো আনন্দিত হবার কথা, আনন্দিত হবার কথা পাড়া-প্রতিবেশী ও গ্রামের মানুষেরও। সবার পক্ষ থেকে হৈ হৈ করে তাদের সাধু ভাবনা ও সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো উচিত, আনন্দ-উৎসব পরিবেশে তাদের দ্বিতীয় বিবাহ পর্বটা যাতে সুসম্পন্ন হয় তার জন্যে দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু নাহ, ইসলাম বলছে- ওদের দ্বিতীয় বিবাহটা অতো সহজে সম্পন্ন করা যাবে না। কীভাবে ওদের মধ্যে পুনরায় বিয়ে হতে পারে সে বিষয়ে ইসলাম বলছে যে,
“আল্লাহর সীমারেখাগুলি মেনে চলতে পারবে বলে ওরা যদি মনে করে, তবে নিশ্চয়ই ওরা পরষ্পরকে পূনরায় বিবাহ করতে পারবে। কিন্তু তার জন্যে ওদের একটি শর্ত পালন করতে হবে। শর্তটি হলো এরকম- প্রথম স্বামীর তালাক প্রদানের পর স্ত্রীর ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হলে তাকে অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ করতে হবে। সেই অন্য পুরুষ অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দেবার পর ইদ্দতকাল শেষ হলে সে তখন তার প্রথম স্বামীর জন্যে হালাল (বৈধ) হবে। তখন তারা পরষ্পরকে বিবাহ করতে পারবে।”
ওদের (প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী) পুনরায় বিবাহের আগে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে যে বিয়েটা হবে সেটাই হলো শরিয়তের ভাষায় ‘হিল্লা বিবাহ’। এখন প্রশ্ন হলো, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো কারণে যদি বিচ্ছেদ ঘটে যায় এবং তারপর তারা যদি উভয়েই পূনরায় বিবাহ করে আবার নতুন করে দাম্পত্যজীবন শুরু করতে চাই তবে সমাজ বা রাষ্ট্র তাদের বাধা দেবে কেনো? কে কাকে বিবাহ করবে বা করবেনা, সে তো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়, কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে সমাজ বা রাষ্ট্র বাধা দিতে পারে না। যে বিধির দ্বারা মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয় সে বিধি যার নামেই আসুক সেটা অগণতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীল বিধি বৈ নয়।
‘হিল্লা বিবাহ’ -এর বিধি দু’জন মানুষের ইচ্ছা, আকাঙ্খা ও স্বাধীনতাকে শুধু বাধাগ্রস্তই করে না, একজন নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য একজন পুরুষকে বিবাহ করতে বাধ্যও করছে। এ বিধি তাই শুধু অগণতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীলই নয়, এ বিধি নারীর পক্ষে চরম অমর্যাদাকর ও অবমাননাকরও। শুধু অন্য পুরুষকে বিবাহ করলেই হবে না, ইসলাম তার সঙ্গে আর একটা অবশ্য পালনীয় একটি শর্তও জুড়ে দিয়েছে ‘হিল্লা বিবাহ’র বিধিতে যা নারীর পক্ষে আরো অধিক অবমাননাকর, এবং মানব সমাজের ইতিহাসে যা বোধ হয় সবচেয়ে জঘন্য ও কুৎসিত। কী সেই শর্তটি? সেটা বলার আগে ইসলামের সংবিধানে ‘হিল্লা বিবাহ’র আইনে ঠিক কী বলা আছে সেটা দেখে নেয়া যাক। হিল্লা বিবাহের বিধিটি কোরানের সুরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। কোরান বলছে,
‘অনন্তর যদি সে তালাক প্রদান করে তবে এর পরে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহিতা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য বৈধ হবে না, তৎপর সে তাকে তালাক প্রদান করলে যদি উভয়ে মনে করে যে, তারা আল্লাহর সীমাসমূহ স্থির রাখতে পারবে, তখন তারা যদি পরষ্পরে প্রত্যাবর্তিত হয় তবে উভয়ের পক্ষে কোনই দোষ নেই এবং এগুলোই আল্লাহর সীমাসমূহ, তিনি অভিজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্যে এগুলো ব্যক্ত করে থাকেন।”
(অনুবাদ: ইবনে কাসির)
এই তর্জমাটি সঠিক ও যথাযথ কীনা সে বিষয়ে সংশয় নিরসনের জন্যে আর একজন ইসলামি পণ্ডিতের বঙ্গানুবাদ এবং ইংরেজি তর্জমাও দেয়া হলো। বঙ্গানুবাদটি হলো –
“অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয়, তবে সে তার জন্য বৈধ হবে না, যে পর্যন্ত না অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ না হবে। তারপর যদি সে তাকে তালাক দেয়, এবং যদি উভয়ে মনে করে যে তারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করতে সমর্থ হবে, তবে তাদের পূনর্মিলনে কারও কোনো অপরাধ হবে না, এবং এটাই আল্লাহ্র সীমারেখা, আল্লাহ্ তা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।”
(ড.ওসমান গণি)
ইংরেজি অনুবাদটা হলো এরূপ-
‘‘So if a husband divorces his wife (irrevocably), he cannot, after that, re-marry her until she has married another husband and he has divorced her. In that case there is no blame on either of them if they re-unite; provided they feel that they can keep the limits ordained by Allah. Such are the limits ordained by Allah, which He makes plain to those who understand.’’
হিল্লা বিবাহ’র সঙ্গে আর একটি শর্ত রয়েছে বলে একটু আগে উল্লেখ করা হয়েছে। সেটা হলো –
শুধু বিবাহ করলেই হবে না, বিবাহ করার পর তাদের একটি অবশ্যই শর্ত পূরণ করতে হবে। সে শর্তটি আরো জঘন্য, আরো কুৎসিত, আরো ঘৃণ্য ও বর্বরতম। শর্তটি হলো, অন্য পুরুষের সঙ্গে যদি এই শর্তে বিবাহ হয় যে তাদের মধ্যে যৌনমিলন সংঘটিত হবে না, শুধু নাম কা ওয়াস্তে তাদের বিবাহটা হবে এবং বিবাহর পর দ্বিতীয় স্বামীটি তাকে তালাক দিয়ে দেবে। তাহলে সে তার পূর্বতন স্বামীর জন্যে হালাল বা বৈধ হবে না। বিবাহটা এই শর্তেই হতে হবে যে, দ্বিতীয় স্বামীটি তার সঙ্গে সহবাস করবে এবং সহবাসের সমস্ত সুখ দ্বিতীয় স্বামীটি ভোগ করবে।
কোরানের ২৩০ নং ধারায় বা আয়াতে এই শর্তটি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয় নি। সুতরাং ইসলামের অনুরাগী ও অনুসারীদের মনে হতে পারে যে উপরোক্ত ঘৃণ্য শর্ত হিল্লা বিবাহের বিধিতে নেই। ইসলাম-বিদ্বেষীরা ইসলামকে হীন প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে উক্ত শর্তটি জুড়ে দিয়েছে। না, মোটেই তা নয়। মুহাম্মদ স্বয়ং উক্ত আয়াতটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ঐ শর্তটির কথা বলেছেন যা সমস্ত সহিহ হাদিসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। রয়েছে ২/২৩০ নম্বর আয়াতের তাফসিরেও। উক্ত তাফসিরে বলা হয়েছে –
“যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে দু’তালাক দেয়ার পরে তৃতীয় তালাক দিয়ে ফেলবে, তখন সে তার ওপর হারাম হয়ে যাবে। যে পর্যন্ত না অন্য কেউ নিয়মিতভাবে তাকে বিবাহ করতঃ সহবাস করার পর তাকে তালাক দেবে। বিবাহ না করে যদি তাকে দাসী করে নিয়ে সহবাসও করে তথাপি সে তার পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে না। অনুরূপভাবে যদি নিয়মিত বিবাহও হয় কিন্তু দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস না করে থাকে তাহলেও সে পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে না।”
এ বিষয়ে একটি হাদিস বলছে যে,
নবী (সঃ)কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ ‘একটি লোক একটি স্ত্রী লোককে বিবাহ করলো এবং সহবাসের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিল। অতঃপর সে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহিত হলো, সেও তাকে সহবাসের পুর্বে তালাক দিয়ে দিল। এখন কী তাকে বিবাহ করা তার পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে?’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
“না, না। যে পর্যন্ত না তারা একে অপরের মধুর স্বাদ গ্রহণ করে।”
(মুসানাদ-ই-আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ ইত্যাদি)
অন্য একটি হাদিসের বর্ণনায় এও রয়েছে যে,
রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞাসিত হন, ‘একটি লোক তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিল। অতঃপর সে অন্য লোকের সাথে বিবাহিত হলো। এরপর দরজা বন্ধ করে ও পর্দা ঝুলিয়ে দিয়ে যৌন মিলন না করেই দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিল। এখন কী স্ত্রীটি তার পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে?’ রালুল্লাহ (সঃ) বলেন,
“না, যে পর্যন্ত না মধুর স্বাদ গ্রহণ করে”
(সহীহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম, দ্রঃ ইবনে কাসিরের তফসির, ১ম-৩য় খণ্ড, পৃ-৬৪২, ৬৪৩)
পাঠক, লক্ষ করুন, তাফসিরকার উক্ত শর্তটি সম্পর্কে মুহাম্মদের উম্মতদের (মুসলমানদের) মধ্যে যাতে বিন্দুমাত্র সংশয় বা দুর্বলতা সৃষ্টি না হয় তার জন্যে একাধিক হাদিসকেও উদ্ধৃত করেছেন। একে তো হিল্লা বিবাহটাই নারী জাতির পক্ষে চরম লজ্জা, অসম্মান ও অপমানের, তারসঙ্গে একজন অন্যপুরুষের সঙ্গে যৌনমিলনে বাধ্য করার শর্তটি জুড়ে দিয়ে নারীজাতিকে যে অপমান ও অবমাননা করা হয়েছে তা বর্ণনা করা বোধ হয় মানুষের সাধ্যের বাইরে।
উক্ত জঘন্য শর্তগুলি পূরণ করলেই যে প্রাক্তন দম্পত্তি আবার পরষ্পরকে বিবাহ করে পূনরায় নতুন করে দাম্পত্যজীবন শুরু করতে পারবে তারও নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। কারণ, হিল্লা বিবাহ’ আইনে এ কথা বলা হয় নি যে, যে লোকটির সাথে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর বিবাহ হবে সে লোকটি সেই নারীকে ভোগ করার পর তালাক দিতে বাধ্য। যেহেতু আইনে সে কথা বলা নেই, তাই লোকটি তালাক নাও দিতে পারে, এবং না দিলে তালাক দেওয়ার জন্যে তাকে বাধ্য করা যাবে না।
অর্থাৎ একবার রাগের মাথায় উত্তেজনার বশে ভুল করে কেউ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেয় তবে তারা চাইলেও তাদের মধ্যে পুনরায় বিয়ে হওয়ার নিশ্চয়তা হিল্লা বিবাহ আইনে নেই। তাই ‘হিল্লা বিবাহ’ আইন কেবল একটি জঘন্য ও কুৎসিত আইনই নয়, আইন হিসেবেও অত্যন্ত দূর্বল আইন।
(বিঃদ্রঃ সিরিয়া ও ইরাকের কিছু অংশ যখন আইএস – এর দখলে ছিলো তখন এ লেখাটি লেখা হয়)
আরও পড়ুন:
১. What is a “hilla marriage” in the Muslim world? What are its objectives and implementation?