০
১১৩১ বার পঠিত
ইসলামি ইতিহাসবিদরা প্রচার করে থাকেন যে, নবী মুহাম্মদ ও কুরাইশদের মাঝে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত ১০-বছর-মেয়াদী হুদায়বিয়া সন্ধি কুরাইশরা লংঘন করেছিল। যার প্রেক্ষিতে নবী মুহাম্মদ চুক্তির ২ বছরের মাথাতেই চুক্তি ভঙ্গ করে অতর্কিতে মক্কা আক্রমণ করে কুরাইশদের নিধন করে মক্কার দখল নেন।
মক্কা দখলের পর সেখান থেকে পৌত্তলিকতা সমূলে উৎখাত করেন নবি মুহাম্মদ। মুসলমানরা দাবি করেন কুরাইশরাই চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল। কিন্তু আসলেই কী তাই? ইসলামি ইতিহাস, নবি মুহাম্মদের জীবনী এবং হাদিসগ্রন্থ পর্যালোচনা করলেই মুসলমানদের এই দাবির অসারতা প্রমাণ হয়। প্রকৃত সত্য হলো এই চুক্তি হবার পর নবি মুহাম্মদ নিজেই প্রথম থেকে শর্ত লঙ্ঘন করতে থাকেন। নবি মুহাম্মদের জিহাদী বাহিনী সেসময় আরব ভূখণ্ডে অপরাজেয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এক কথায়- জিহাদী বাহিনীর কাছে কুরাইশরা শক্তি সামর্থতে অতি নগণ্যপ্রায় ছিল। তাই নবি মুহাম্মদের সাথে কুরাইশ কর্তৃক চুক্তি লঙ্ঘনের যে অজুহাত দাঁড় করানো হয় তা ধোপে টিকে না।
অথচ মুহাম্মদ তার অনুসারীদের নিকট অপপ্রচার চালিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেন যে, কুরাইশরা সন্ধি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে তাদের ওপর আক্রমণ করা বৈধ হয়ে দাড়িয়েঁছে। গুজব এবং অপপ্রচার করেই নবি মুহাম্মদ ক্ষান্ত হন নি, সরাসরি অতর্কিতে মক্কা আক্রমণ করে মক্কার দখল করে নেন।
কীভাবে মুহাম্মদ এতো শক্তিশালী ও হিংস্র হয়ে উঠলেন?
মিরাজ কেলেংকারীর পর নবি মুহাম্মদ মক্কা ছেড়ে পালিয়ে যান, যাকে মুসলমানরা হিজরত হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। মক্কা ছেড়ে মুহাম্মদ মদিনায় আস্তানা গাড়েন। মদিনায় ঘাটিঁ গাড়ার মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই ইসলামের এই নবি ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করেন। মদিনায় অবস্থানকালে ধারাবাহিকভাবে মদিনার প্রায় সকল মুসলমান বিরোধী ইহুদি গোত্রকে গণহত্যার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করেন।
বানু কাইনুকা, বানু কুরাইজা, বানু নাদের গোত্রের সকল পুরুষদের হত্যা করেন এবং সেসব গোত্রের নারী-শিশুদের দাস বানান। সেসময় বিভিন্ন নারীদের ভোগদখল ও যৌনাচারের মাধ্যমে মদিনায় এক ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি করে নিজ ক্ষমতাকে সুসংহত করেন।
‘শান্তির দূত‘ বলে প্রচার করা ইসলামের এই নবি কতোখানি হিংস্র ও অমানবিক ছিলেন সেটাও ইসলামের ইতিহাসের পাতায় পাতায় রচিত হয়েছে। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের এক সন্ধ্যায় অন্ধকারের মধ্যে সমুদ্র তীরবর্তী বানু মোস্তালিক গোত্রের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে যেখানে যে পুরুষকে পাওয়া গেছে সেখানেই সে পুরুষদের হত্যা করার পর সেখানের সকল নারী-শিশুদের জোর করে উঠিয়ে নিয়ে দাস হিসেবে কব্জা করেন শান্তির ধর্ম ইসলামের নবি মুহাম্মদ।
৬২৮ খ্রিস্টাব্দে পৌত্তলিক প্রথায় কাবায় অনুষ্ঠিত উমরাহ পালনের নামে নবী মুহাম্মদ তার অনুগত আনসার (মদিনায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী মুসলিম) ও মুহাজিরদের (মক্কা থেকে অভিবাসিত ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী মুসলিম) নিয়ে সংগঠিত অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত বিশাল বহর নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওনা হন। মুহাম্মদ কতোখানি মিথ্যাবাদী তা প্রমাণ হয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত আনসার ও মুহাজিরদের নিয়ে কথিত উমরাহ পালনের নামে মক্কা অভিমুখে রওনা হবার ঘটনাতেই। উপরে উপরে দেখানোর চেষ্টা যে নবি মুহাম্মদ ধর্মীয় আচারাদি পালনের জন্য রওনা দিয়েছেন, আসলে বাস্তব সত্য হলো সম্পূর্ণ উল্টো। মহা যুদ্ধবাজ মুহাম্মদ তার স্বার্থ হাসিলের জন্য হেন কাজ নেই যা তিনি করেন নি। মক্কা আক্রমণ করতে গিয়ে মুহাম্মদ যখন টের পেলেন কুরাইশরা মুহাম্মদ বাহিনীর মক্কা প্রবেশ প্রতিরোধ করার জন্য অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, তখন তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে এই যুদ্ধে তার নিশ্চিত পরাজয় ঘটবে এবং মারা পড়বেন।
এদিকে আল্লাহর বন্ধু, ইসলামের নবি হিসেবে যুদ্ধ ময়দান থেকে কুরাইশদের ভয়ে পিছু হটার বিষয়ে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতেও দিতে চান নি। ধূর্ততার সাথে বরাবরের মতোই তিনি নিজেকে মহানুভব ও দয়াশীল প্রমাণেরও চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য তিনি বলেন- “আজ কুরাইশরা আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্য যে শর্তই দেয়, আমি তা মেনে নেব”। মুহাম্মদের অনুসারী সাহাবারা কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ করতে না পারায় বেদনা ও লজ্জা অনুভব করছিলেন, যা বিভিন্ন সাহাবারা মুহাম্মদকে সরাসরি প্রশ্ন করে তাদের আপত্তির কথা প্রকাশ করছিলেন। সাহাবাদের প্রশ্নবাণে মুহাম্মদ এমনও বলেন যে-
“আমি আল্লাহর দাস ও তার রাসুল। আমি তার নির্দেশের বিরুদ্ধে যাব না এবং তিনি আমাকে পরাজয়ের পথে ঠেলে দেবেন না”।
ইসলামের নবি সাহাবাদের শান্ত করার জন্য বরাবরেই মতোই আল্লার নামে সুরা নাজিল করে সেটিকে আল্লার হুকুম বলে চালিয়ে দিলেন। যেমন-
“দেখো! (হে মুহাম্মদ) আমরা আপনাদেরকে এক বিশেষ বিজয় দিয়েছি যে, আল্লাহ আপনাদের অতীত ও আগামী সব পাপ মোচন করে দেবেন…”
সেইসময় কুরাইশদের শক্তিসামর্থের কারণে মুহাম্মদ ‘হুদায়বিয়া সন্ধি’ এর মাধ্যমে আপাতত রণেভঙ্গ দিলেও মনে মনে ঠিকই ষড়যন্ত্র পুষতে থাকেন কীভাবে কুরাইশদের পরাস্ত করে দখল নেয়া যায়।
এক নজরে দেখে নেয়া যাক সেই সন্ধি চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিক:
* সে সময়কালে কুরাইশদের কেউ তার মুরুব্বিদের সম্মতি বিনা মুহাম্মদের পক্ষে যোগ দিলে, তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে; এবং মুহাম্মদের পক্ষের কেউ কুরাইশদের পক্ষে যোগ দিলে তাকেও ফেরত পাঠানো হবে।
* আমরা একে অন্যের প্রতি শত্রুতা, গুপ্ত পরিকল্পনা বা খারাপ মনোবৃতি দেখাব না।
* যে-কেউ মুহাম্মদের সাথে মিত্রতা চায় করতে পারে, এবং কেউ কুরাইশদের সাথে মিত্রতা চাইলে করতে পারে। (এ প্রেক্ষিতে বানু খুজা মুহাম্মদের সাথে এবং বানু বকর কুরাইশদের সাথে মিত্রতা করে)
* এ বছর তোমরা (মুসলিমরা) ফিরে যাবে এবং আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মক্কায় প্রবেশ করবে না। আগামী বছর আমরা তোমাদেরকে সংগী-সাথী নিয়ে কাবায় ঢুকতে দেব এবং তিনদিন সেখানে থাকার সুযোগ পাবে। তোমরা চালকের অস্ত্র ও খাপে-ভরা তলোয়ার আনতে পারবে। এর বাইরে কোন অস্ত্র আনতে পারবে না।
একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ করলেই বোঝা যায় মুহাম্মদ তার সাহাবাদের কাবায় গিয়ে তাওয়াফ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বের হয়েছিলেন মক্কা অভিযানে, এবং তিনি মক্কা দখল করবেন সে স্বপ্নও দেখেছিলেন। তিনি তা সাহাবাদেরকে বলেও ছিলেন এবং সব সাহাবাই বুঝেছিল যে, মক্কা দখলের উদ্দেশ্যেই অভিযানে যাওয়া হচ্ছে। তাহলে মুহাম্মদের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল, সেটা আর বলা অপেক্ষা রাখে না। নবি কীভাবে মিথ্যাচার করতেন এবং নিজ সাহাবাদের সাথেও প্রতারণা করতেন, তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় এতে।
মুসলিমরা বলে থাকেন- কুরাইশরা হুদায়বিয়া সন্ধিটি লংঘন করে, যার ফলশ্রুতিতে মুহাম্মদ ন্যায্যভাবে মক্কা আক্রমণ ও দখল করে নেন। মুসলিমরা, এমনকী বেশীরভাগ অমুসলিম ইসলামী পণ্ডিতও এ ব্যাপারে সে ধারণাই পোষণ করে যে, কুরাইশরাই হুদায়বিয়া সন্ধি ভঙ্গ করে এবং সে কারণে নবির মক্কা আক্রমণ ও দখল, এমনকী ইসলাম ও কোরানে পৌত্তলিকদের উন্মুক্ত হত্যার নির্দেশও (কোরান ৯:৫) জায়েজ। কেননা পৌত্তলিকরা চিরাচরিতভাবে সন্ধি ভঙ্গকারী।
কুরাইশদের বিরুদ্ধে নবির সন্ধি লংঘনের অভিযোগ খুবই দুর্বল একটা খোঁড়া অজুহাতমাত্র, যার কারণে ১০ বছরের সন্ধি চুক্তি থাকার পরও মাত্র ২ বছরের মাথাতেই তিনি সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করেছিলেন।
সহায়ক গ্রন্থ:
ইবনে ইসহাক, সিরাত ইবনে হিশাম, অনুবাদঃ আকরাম ফারুক, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা, ১৯৮৮
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন