০
১৭৯৯ বার পঠিত
‘And it is good to know now
Jah will be waiting there’,
‘Jah live’, ‘Jah love’
তখন আর জা’কে অতো ফেলনা মনে হয় না।
একসময় বলা হতো হিন্দুদের তেত্রিশ কোটি দেবতা এবং সারা দুনিয়ার অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন নামে গডকে ডেকেছে এখনো ডাকে । তাই আমার মনে হয় দুনিয়ায় যত রকমের শব্দ আছে সব নামেই ঈশ্বরকে ডাকা হয়েছে। ভারতে যখন ৩৩ কোটি মানুষ ছিল তখন বলা হত ভারতে ৩৩ কোটি দেবতা আছে। এর মানে হলো মানুষই দেবতা। এখন এক বিলিয়ন মানুষ আছে তাই ভারত এখন এক বিলিয়নের অধিক দেবতার দেশ।
শক্তিতে বিশ্ব চরাচরের উদয়, শক্তিতে বিলয়। শব্দ শক্তির একটা রূপ। বিজ্ঞান আমাদের সাউন্ড এনার্জি, সাউন্ড ওয়েভ ইত্যদির কথা বলে। শব্দ ব্রহ্ম, শব্দের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস। শব্দ দিয়েই সবকিছুর শুরু, সেটা বিজ্ঞানের বিগ ব্যাং বা ধর্মের কুন বা ওঁ যেভাবেই শুরু হোক বলি আমরা বিশ্বাস করি না কেন। অনেকে বলেন ভাষায় ঈশ্বরের বাস। তবে ভাষা না থাকলেও ঈশ্বর থাকতেন কিন্তু আমরা তাকে জানতে পারতাম না। কারো কারো মতে God the greatest invention of humanity।
বাঙালি কবির ভাষায়-
জেনেছি জেনেছি তারা,
তুমি জান ভোজের বাজি।।
যে তোমায় যেভাবে ডাকে
তাতে তুমি হও মা রাজি।।
মগে বলে ফারা তারা,
গড বলে ফিরিঙ্গি যারা।।
খোদা বলে ডাকে তোমায়।।
মোঘল পাঠান সৈয়দ কাজি
শাক্তে বলে তুমি শক্তি,
শিবে তুমি শৈবে আরতি
শরীর বলে সূর্য্য তুমি
বৈরাগী কয় রাধিকাজী
গানপত্য বলে গনেশ
যক্ষ বলে তুমি ধনেশ
শিল্পী বলে বিশ্বকর্মা
বদর বলে নায়ের মাঝি।
শ্রী রামদুলাল বলে,
বাজি নয় এ যেন ফলে।।
এক ব্রহ্ম দ্বিধা ভেবে
মন আমার হয়েছে পাজি
তুমি জান ভোজের বাজি
জেনেছি জেনেছি তারা,
তুমি জান ভোজের বাজি
যে তোমায় যেভাবে ডাকে
তাতে তুমি হও মা রাজি
জেনেছি জেনেছি তারা।
আমাদের যশোরের কবি বিজয় সরকার আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন- গডের পিতা-মাতা নাই শোনা যায় তাহলে তার নামকরণ কে করল? এই যে এত এত নাম শোনা যায় এর মধ্যে গডের আসল নাম কোনটা?
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি?
আমরা বহুনামে ধরাধামে
বহুনামে ধরাধামে কত রকমে ডাকি
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি ?
কেহ তোমায় বলে ভগবান
আবার গড বলে কেউ করে আহবান
কেউ খোদা কেউ জিহুদা কেউ কয় পাকিয়ান
আবার কেউ খোদা কেউ
জিহুদা কেউ কয় পাকিয়ান।
গাইলাম জনম ভরে মুখস্থ গান
জনম ভরে মুখস্থ গান
মুখ বুলা টিয়াপাখি
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি ?
সর্বশাস্ত্রে শুনিতে যে পাই
তোমার নাকি পিতামাতা নাই
তবে তোমার নামকরন কে
করলো সাঁই বসে ভাবি তাই
তুমি নামি কি অনামি হে সাঁই
আমরা তার বুঝি বা কি
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি ?
আবার কেহ পিতা কেহ পুত্র কয়
ওরে বন্ধু বলে কেউ দেয় পরিচয়
তুমি সকলেরই সকল আবার কারো কিছু নয়
তুমি সকলেরই সকল আবার কারো কিছু নয়
তোমার যে আসল পরিচয়
কে জানে তা কি না কি
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি?
পাগল বিজয় বলে মনের কথা কই
আমি খাঁটি ভাবের পাগল নই
আমার গোল বেঁধেছে মনের মাঝে কাজেই পাগল হই
আমার বুকে যা নাই মুখে তা কই
কাটা কান চুলে ঢাকি
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি ?
নেটিভ আমেরিকান গডদের মধ্যে নানা প্রকারের গড আছে- সৃষ্টিকর্তা গড, মৃতদের গড, দৈত্য গড, প্রাকৃতিক স্পিরিট গড, ট্রিকস্টার গড, পরিবর্তনকারী গড। উত্তর আর দক্ষিণ আমেরিকা মিলিয়ে সবগুলো আদিবাসী গোত্রের কয়েক হাজার গডের নাম পাওয়া যাবে। একইভাবে সারা দুনিয়ার সকল আদিবাসী সম্প্রদায়ের সব গড এবং তাদের উদ্ভট সব নাম ও উচ্চারণ বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে দুনিয়ার যে কোন রকম শব্দ দিয়েই মানুষকে গডকে ডাকার চেষ্টা করেছে।
এর মধ্যে কোনটা সঠিক? কোন নামে ডাকলে তার সাড়া পাওয়া যাবে? ফকির লালনের ভাষায় ‘আল্লাহ হরি ভজন পূজন, এ সকল মানুষের সৃজন’।
কোন নামে ডাকিলে তারে
হৃদাকাশে উদয় হবে।।
আরবী’তে বলে আল্লাহ
ফারসীতে কয় খোদাতালা।
গড বলিছেন যীশুর চেলা
ভিন্ন দেশে ভিন্নভাবে।।
মনের ভাব প্রকাশিতে
ভাষার উদয় এ জগতে।
মনাতীত অধরে চিনতে
ভাষাবাক্য নাহি পাবে।।
আল্লাহ হরি ভজন পূজন
এ সকল মানুষের সৃজন।
অনামক চেনায় বচন
বাগেন্দ্রিয় না সম্ভবে।।
আপনাতে আপনি ফানা
হলে তারে যাবে জানা।
সিরাজ সাঁই কয় লালন কানা
স্বরূপে রূপ দেখ সংক্ষেপে।। – লালন ফকির
লালন ফকির থেকে শুরু করে আমেরিকার ট্রান্সডেন্টালিস্ট দার্শনিকেরা (Ralph Waldo Emerson, Henry David Thoreau, Margaret Fuller প্রমুখ ) সবাই এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য ট্রান্সডেন্টালিজম, নিজেকে অতিক্রম করে যাওয়া বা ফানা’র আশ্রয় নিতে বলেন। বলা বাহুল্য আমেরিকাতে ট্রান্সডেন্টাল মেডিটেশান (টি এম ) এখন খুবই জনপ্রিয় স্পিরিচুয়াল প্রাক্টিস। পাশ্চাত্যে টিএম এর প্রসারের পেছনে মহাঋষি মহেশ যোগীর উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি। তার নামে আমেরিকার আইওয়া অঙ্গরাজ্যে Maharishi International University নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে।
ঈশ্বরের থিওরি অনুযায়ী ঈশ্বরের জন্য তার সৃষ্টির কাছে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মানবিক নানা দূর্বলতার কারণে মানুষই তার মুখাপেক্ষী। ঈশ্বরকে ডাকলে ঈশ্বরের কোন উপকার না হলেও নিজের উপকারের জন্য মানুষ ঈশ্বরকে ডাকে। তার কাছে মানবিক নানান আবেদন-নিবেদন জানায়।
তাই ঈশ্বরকে কী নামে ডাকা হবে, কেন ডাকা হবে এ নিয়ে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। মানুষ তার প্রয়োজনে যখন যেভাবে পেরেছে তাকে ডেকেছে। এ কাজে ঈশ্বরের বিশেষ কোন নামের চেয়ে আন্তরিকতা, অসহায়ত্ব, ভক্তি ও বিশ্বাস মানুষের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন