০
১২৮৭ বার পঠিত
১২৮৭ বার পঠিত
পর্ন বা Porn or Porno একটি ইউরোপীয় শব্দ। ঔপনিবেশিক কালে পর্ন’র সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে ‘ইউরোপিয় নারীদের নগ্ন ও যৌন উত্তেজক সব ছবি ও রচনাই পর্ন।’ খেয়াল করুন ইউরোপীয় নারীদের। এখানে লক্ষ্য করবার বিষয় ইউরোপীয় নারীর বাইরের নারীরা পর্ণের বিষয় নয় এবং পর্ণের বিষয় নারী দেহ।
না অবাক হওয়ার বা ক্ষুদ্ধ হওয়ার কিছু নেই। ২০০/২৫০ বছর আগে পর্ণের ভোক্তা সকল ইউরোপীয় পুরুষ ও তাদের নিকটবর্তী স্থানিয় দাস বা তাবেদারেরা। আবার স্থানিয় শ্রমিক/দাসী কিংবা দাসী নয় নারীরা প্রায় সকলেই নগ্নবক্ষা কোথাও কোথাও পুরোই নগ্ন এবং প্রভু ইউরোপিয়দের সহজ ভোগের সামগ্রী। আজকের ভাষায় ধর্ষনের শিকার। ইউরোপীয় নারীরা থাকে ইউরোপে, সেই নারীদের সখা রাজা/রানী’র প্রতিনিধি পুরুষেরা আফ্রিকায়, আমেরিকায়, ভারতে, চিনে, আরবে…। তো ইউরোপিয় নারীরা শুধুই ছবি কিংবা বাক্য, যাহার কিছুটা পর্ণ।
খ
আজ বিশ্বায়নের কালে ইউরোপিয় ও অ-ইউরোপিয় সকলেই পর্ণ ভুক্ত। ভোক্তার চাহিদায় পর্ণ বিষয় নারী, নারী-নারী, নারী-পুরুষ, পুরুষ, পুরুষ-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, অন্যপ্রানী, যন্ত্র, এলিয়েন, পোশাক কিংবা নগ্ন, ইত্যাদি ইত্যাদি…
যৌনতার ফ্যান্টাসী…
গ
যৌনতা, এক অন্তহীন রহস্য। যেন সে ফিনিক্স পাখী, নিজ দেহ পুড়িয়ে নিজের জন্মদেয়। হ্যা, যৌনতা মানে প্রাণ জন্ম গাথা। নারী মিলে পুরুষের সাথে। তাহারা মাতা ও পিতা। তাহাদের যৌন মিলনে নারীর শরীরে অভ্যন্তরে বেড়ে ওঠে অার এক প্রাণ, সময়ের হিসেব মেনে অতঃপর যখন সে পৃথিবীতে স্ব-আকারে প্রকারে আসে, সে তখন মাতা-পিতার সন্তান। একই সঙ্গে এই তিন প্রাণের মধ্যে এক অনুভবের উদ্ভব ঘটে, তার নাম ‘নৈতিকতা’। হ্যা ‘যৌনতাই’ নৈতিকতার উৎস। নারীর যে স্তন সঙ্গী পুরুষের আনন্দ অনুভব, সে স্তনই সন্তানের খাদ্য ভান্ডার। নারীর যে যোনী পুরুষের মুক্তির দ্বার সে যোনীই সন্তানের পৃথীবিকে স্বাগত জানানোর পথ। সন্তান সে আবার কিছু কাল পরে নারী কিংবা পুরুষ। এখন কি হবে, আগে ছিল একটি পুরুষ, একটি নারী। এখন একটি পুরুষ দু’টি নারী অথবা একটি নারী দু’টি পুরুষ। এসো তবে নীতি-আইন রচনা করি। কে কার সাথে মিলিত হবে কিংবা হবেনা, যদি মিলিত হয় তবে কখন কিভাবে? নৈতিকতা বা বিধি নিষেধের জাল বিস্তার হতে হতে আজকের সভ্যতা ও তার আইন। যত এ জাল ছিড়িতে চাই তত এ জাল মগজে জড়ায়। পোশাকের আড়াল কিংবা নীতি-আইনের জাল ছিড়ে পুরুষ ও নারীর মিলিবার সাধ অন্তহীন। পশুকুলে লড়াই হয়, কে কার যৌন সঙ্গী! সেটা চলে আসছে অনন্তকাল। লড়াই কালে কাঙ্খিত চোখ বুজে থাকে, লড়াই শেষে বিজয়ীর সাথে তাহার মিলন। সেটা বছরে এক কিংবা দুই কিংবা তিন, কারো কারো দু’বছরে তিন বছরে এক। কিন্তু মানুষ তার দিনেও নেই কোন সীমা, শরীর বৃত্তের নিয়ম বিবেচনায় নিলে পুরষের ৮ ঘন্টায় দিন তো নারীর ৩০ দিনের চক্র। কোনটা শরীর কোনটা মন সে আর এক রহস্য, বা এখানেই রহস্য। শরীরের শক্তিতে যে বিজয়ী বীর সেও হয় প্রত্যাখাত, রূপের আগুনে যে পুড়িয়েছে ট্রয়, সেও হয় উপেক্ষিত। প্রকৃতি নিজেই মানে না প্রকৃতির রীতি। মানুষকে তাই রচনা করতে হয় নিজস্ব আইন, যার নাম নৈতিকতা। এই নৈতিকতাই ‘মানবতা’ যা আসলে মূলত মানুষের রচনা, মানব প্রকৃতিকে জানবার-বুঝবার ইচ্ছা। প্রকৃতি ও মানবিকতা মিলেও কূল পায়না যৌনতার। যৌনতা এমনই অন্তহীন…
ঘ
জগতের সকল প্রাচীন ইশ্বর (গড, ভগবান, আল্লাহ) প্রতীক তাই নারী যোনী কিংবা পুরুষ লিঙ্গ ও নারী যোনী রূপের মিলিত উদ্ভাস।
ঙ
পৃথিবীর আদিতম যুদ্ধ যৌনতা নিয়ে, আদিতম হত্যাটিও যৌনতা নিয়েই। হাবিল-কাবিলের গল্প ইহুদী, খ্রীস্টান কিংবা মসুলমানের অথাৎ আরবের।
চ
আগেই বলা হয়েছে পর্ন শব্দটি ইউরোপিয় এবং সে সঙ্গে জানানো যাচ্ছে এটা একটি আধুনিক শব্দও বটে। প্রাচীন কিংবা ঐতিহাসিক বিশেষত গন বা পাবলিক স্থাপনায় নারী বা পুরুষের নগ্ন চিত্র কিংবা মূর্তি স্থাপন খুবই সাধারন একটি বিষয়। সেটা ইউরোপ কিংবা আরব কিংবা ভারত সর্বত্রই। কোথাও কোথাও মিথুন কিংবা সঙ্গম দৃশ্যও খুবই সহজ ভাবেই স্থাপিত। সমস্যাটার শুরু হয় ইউরোপে রানী ভিক্টোরিয়ার কালে, সে রকমই জানাচ্ছেন হালের ইউরোপিয় গবেষকেরা, আর ‘উপনিবেশের জন্য শিক্ষার’ হাত ধরে পৃথিবীর অলিতে গলিতে সভ্যতা মানে ‘যৌনতা নিয়ে ফিসফাস’।
ছ
উপনিবেশ ও শিল্পবিপ্লব ইউরোপকে দিয়েছে বিপুল ‘বিরহ কাতরাতও’। ব্যাক্তির একান্ত যাতনার উত্থান এই আধুনিকতার হাত ধরেই। আর গুটেনবার্গের ছাপাখানা ‘পাবলিক প্লেস’কে ব্যাক্তিগত করবার যে সুযোগ করেদিল তাই ‘পর্নগ্রাফি’।
ঙ
ইউরোপের যেটা নিজস্ব বেড়ে ওঠা, ইউরোপের বাইরে তা আরোপ বা চাপিয়ে দেয়া….
ট ১
আদম ও হাওয়া প্রথমে ‘কন্দম’ বা apple খাইলেন, অতঃপর যৌনকর্ম করিবার মধ্যদিয়ে ‘জ্ঞান’ বা knowledge প্রাপ্ত হইলেন…
ট ২
পিতার হন্তারকের কন্যার সাথে মিলিয়া সন্তান জন্ম দিবেন না বলিয়া রাজা শিবলী নারী সাহচর্য ত্যাগ করিলেন কিন্তু নির্বান লাভ হইতে বঞ্চিত রইলেন। অতঃপর দশম জন্মে স্ত্রী যোশধরার সাথে মিলিত হইলেন সীদ্ধার্থ নামে এবং বোধীলাভ করিয়া বুদ্ধ হইলেন…
ট ৩
যৌনতাই জ্ঞান, ইহাই নৈতিকতার উৎসমূল। আর পর্ন সেই যৌনতা নিয়ে ব্যক্তির একা সংগ্রামের গনরূপ বা বানিজ্য রূপ। গত হাজার বছরের যে ‘নৈতিকতার শৃঙ্খল’ যাহাকে শাষন কিংবা শোষন নামে বয়ান করে চলা হচ্ছে গুটেনবার্গ-এর ছাপাখানায় তা থেকে মুক্তির পথ দেখাবে পর্ন। আদমের গল্প কি আমাদের সে ইঙ্গিত দেয় না?
পরিশিষ্ট:
আমার প্রথম গুরু মৌলানা সাহেব* কোরান পড়াইতে শুরু করিবার আগে বলিয়াছিলেন, ‘কোরান কিছুই বুঝিবা না যদি অন্য ধর্ম, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও শিল্প বিষয়ে না জানা থাকে’। আর আমি কাজী আনোয়ার হোসেন রচিত ‘মাসুদ রানা’ পড়িতে গিয়া সভ্যতা সূত্রের সন্ধান পাইলাম- জনৈক ফ্রেঞ্চ মাসুদ রানা কে বলিতেছেন, ‘প্যারিসের স্ট্রিপটিজ না দেখিলে তুমি কিভাবে বুঝবে, সভ্যতা কতদূর এগুলো!’….
এতোদিনে জানিলাম কন্দম ফল মানে জ্ঞান ফল, যা খাইয়া আদম বালেক হইলেন; অতঃপর তাহাকে পৃথিবীর রাজত্ব প্রদান করা হইলো…
*তিনি পেশায় সরকারী চাকুরে ছিলেন এবং বিনা পারিশ্রমিকে মসজিদের মুয়াজ্জিন, মসজিদ পাঠাগারে লাইব্রেরিয়ান এর দায়ীত্ব পালন করিতেন। একই সাথে শিশুদের আরবী পড়াতেন।
[যৌনশিক্ষা, আলোচনাহীন একটি সমাজে পর্ন অবশ্যই বিনোদন (ফ্যান্টাসি) নয়। এটা অনেকের যৌন-বিশ্বাস তৈরীর কারন। আর ইউরোপ আমেরিকায় পর্ন তৈরী হয় তাদের ‘ভোক্তার’ চাহিদা বিবেচনা করে, আমাদের দেশের আলকাতরা খেকো ভোক্তার জন্য নয়। আর ইউরোপ-আমেরিকাই উন্নত (ইংরেজী শিক্ষাই শিক্ষা) এ ধারনাও এইসব পর্নের নেতিবাচক প্রভাব বাড়াচ্ছে মাত্র। নিজস্ব ভূগোল, সংস্কৃতির সন্ধান ও সে আলোকে মুক্ত যৌন আলোচনা, বাংলা বই (ব্লগ) ছাড়া এ সমস্যার কোন সমাধান সম্ভব নয়। (এটা আগে হতো- দাদী-চাচীরা নবীন নারীদের। চাচা, দাদারা নবীন পুরুষদের শিক্ষা দিতেন। এখন কেউ কেউ সন্তানদের ইংরেজী বই ধরিয়ে দেয়..)
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন