সিনহা সাহেবের বইয়ের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিযোগ হচ্ছে, গতবছর সিনহা সাহেব যখন বিদেশে তখন তাঁর আত্মীয় ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে ডিজিএফআই গুম করে রেখেছিল এবং তাঁকে থ্রেট দেয়া হয় সিনহা সাহেব যদি পদত্যাগে সাক্ষর না করে তবে তাঁকে খুন করা হবে। এবং তাঁর পরে সিনহা সাহেব তাঁর পদত্যগপত্রে সাক্ষর করে এবং সেইটার পরে অনিরুদ্ধ রায়কে মুক্তি দেয়া হয়।
বাংলাদেশ নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে মডার্ন স্টেট জন্মের পরে একজন সিটিং চিফ জাস্টিসকে এইভাবে, তাঁর আত্মীয়কে গুম করে পদত্যাগ করানোর এমন ঘটনা তুলনাহীন। এই ঘটনা তাঁর ভয়াবহতা এবং ব্যাপ্তি ও তাঁর কার্যকরণে নির্দেশ করে, এই রাষ্ট্র এখন রাষ্ট্র নেই। এটা মাফিয়াতন্ত্রে পরিণত হয়েছে এবং আওয়ামীলীগ ডিজিএফআই দিয়ে দেশ চালাচ্ছে।
আজকে বামপন্থী নেতারা যে জ্বলন্ত কড়াই থেকে ফুটন্ত উনুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন, তারা আমার আপনার থেকে ভালো জানেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বিএনপি বা পূর্বের আওয়ামী লীগ বা এরশাদ কোন আমলে এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটা দুরের কথা, এর ধারে কাছের পরিস্থতি তৈরি হয়নি। আজকে রিয়েলিটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের পূর্বের আমলের সাথে ২০১৪ সালের পরবর্তী আওয়ামী লীগের কোন তুলনা হয়না।
ড্যারেন আসেমগলো তাঁর হোওয়াই নেশান ফাইল বইয়ে বার বার বলেছেন, কোন রাষ্ট্র কেন আগায় এবং কেন ব্যর্থ হয়, সেটার একমাত্র শর্ত এক্সট্রেকটিভ ইন্সটিটিউশান এবং ডিস্ট্রিবিউটারি ইন্সটিটুশান। প্রাতিষ্ঠানিক ইন্ডিপেন্ডেন্স। এবং এই জায়গায় ২০১৪ সালের আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার সবচেয়ে ভয়াবহ কাজটি করছে। তারা ডিপ স্টেটদের দিয়ে দেশ চালাচ্ছে। এবং তার ফলে তারা নিজেরাই ডিপ স্টেটের হাতে জিম্মি হচ্ছে।
আমরা সবসময় জানতাম বাম প্রগতিশীলরা রাষ্ট্রযন্ত্রে মিলিটারি হস্তক্ষেপে সেন্সেটিভ। কিন্ত ডিজিএফআই দিয়ে যে আওয়ামী লীগ দেশ চালাচ্ছে, এ নিয়ে তাদের আপত্তি নেই, তারা এখনো বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা করেন। বাস্তবতা হচ্ছে, এই মুহূর্তে যে কারো বোঝার কথা আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকে পার্ট পার্ট করে ধ্বংস করেছে, তার সাথে বাংলাদেশের কোন সময়ের তুলনা হয়না। এমনকী, ২০১৪ সাল পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগের ও তুলনা হয়না।
আজকে, তাই কোন মতেই ২০১৪ সাল পরবর্তী ফেসিস্ট লীগের সাথে বাংলাদেশের নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের কোন দল এবং সরকারের তুলনা হয়না। আজকে, তাই যে কারো যদি সামান্য কাণ্ডজ্ঞান থাকে, তাঁকে বুঝতে হবে একটা সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে একটা সরকারবিরোধী জোট না গড়া গেলে, এই রাষ্ট্র আগামী পাঁচ বছরে এমনভাবে ধ্বংস হবে, তাঁকে কোনভাবেই ফেরানো যাবেনা। আজকে, তাই প্রথম কাজ পতন ঠেকানো। আজকে প্রথম কাজ, এই মাফিয়া লীগকে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশে বাধ্য করে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এবং আওয়ামী লীগ যেহেতু সেটা করবেনা, তাই একটা সর্বদলীয় ঐক্য এবং সুন্দরবন মুভমেন্টের মত কালচারাল মুভমেন্ট গড়ে তোলা, যেখানে বাম ডান ইস্লামিস্ট সকল পক্ষের ঐক্য থাকবে।
একটা জিনিস বুঝতে হবে, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা ছাড়বেনা। আজ তাই যে কোন ঐক্য নির্বাচনী ঐক্য নয় ফ্যাসিস্ট বিরোধী ঐক্য। কারণ, আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা নিবেই। আজকে, তাই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, সরকারের বিরুদ্ধে রেজিস্টেন্স গড়ে তোলার জন্যে। এইখানে নির্বাচনটা আন্দোলন প্রক্রিয়ার একটা ধাপ মাত্র। এবং এই ঐক্য বাদে, এই আন্দোলন কোনমতেই সফল হবেনা। এবং আন্দোলন শুধুমাত্র সফল হবে, একটা সর্বদলীয় ঐক্য হলে। সহঅভিমুখ আন্দোলন ফান্দোলন বলে, কেউ যদি বিরুদ্ধে শিবিরের মিটিং এ জাস্ট বক্তৃতা দিয়ে আসে, তাঁকে গালি দিয়ে এক করে দেয়ার মানে, একটা বামপন্থীদের একটা বড় অংশের মূল উদ্দেশ্য বিরোধী শিবিরকে ঐক্যবদ্ধ হতে না দিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরকে, খণ্ডিত রাখা। তাই এখনো সুযোগ আছে। যার যার যা যা ক্ষমতা আছে, যার যার ক্ষমতাঁর লেজিটিমিসি আছে, ছাত্র সংগঠন আছে, আন্দোলনের ক্ষমতা আছে, মিডিয়া শক্তি আছে সবাইকে এখন এক হতে হবে।
ডিজিএফআই দিয়ে একজন ব্যবসায়ীকে গুম করে, তাঁকে খুনের হুমকি দিয়ে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র সাক্ষর করার ঘটনা জানার পরেও যারা এই ঐক্যে এক হবেনা, তারা সময়ের কাছে, ২০১৮ সালের রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত হবে। শেখ হাসিনা যেরকম আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা ছাড়বেনা ঠিক তেমনি এই রাজাকারদের চিহ্নিত করতেও যে এই জাতি ভুল করবেনা, এটা নিয়ে কারো যেন কোন সন্দেহ না থাকে।
একজন অত্যন্ত প্রাজ্ঞ এবং বুদ্ধিমান এবং যাকে আমি খুব রেসপেক্ট করি, তিনি আমাকে বললেন ডক্টর কামাল হোসেন এবং যুক্তফ্রন্ট তৈরি হয়েছে আমেরিকার রাষ্ট্রদুতের অফিসে- উনার চিন্তার প্রতি উত্তরে আমার ভাবনা-
আমি আমার নিজের জায়গা থেকে ডক্টর কামাল এবং যুক্তফ্রন্ট নিয়ে কিছু মেঠো যুক্তির জবাব দিতে চাই। আমি এদের কেউ না। মাহিবি রিলেটেড ঘটনাবলি দেখে এদের ওপরে আমার আস্থা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। এবং আমার ধারণা আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এরা আরো অনেক গুরুত্ব হারাবে নিজেদের ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট ম্যানেজ করতে না পেরে । কিন্ত, স্টিল আমি মনে করি, এই ফ্যাসিস্ট রেজাইমকে প্রতিরোধের জন্যে তারা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। এরা একটা ঐক্য প্রক্রিয়ার শুরু করলোম এবং আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ঐক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পারমুটেশান কম্বিনেশান চেঞ্জ হবে। কিন্তু এই জাতীয় ঐক্য এবং মুক্তিফ্রন্ট যদি বেটনটা ১০০ গজ এগিয়ে নিয়ে মিলিয়েও যায়, তবে পরেরজনের জন্যে পথটা ১০০ গজ আগানো থাকবে। এবং তারা যে শুরু করে দিয়ে গেলো সেইটায় জন্যে আমরা সবসময়েই এদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। ফলে, তাদেরকে স্যাবোটাজ করার ভাবনাগুলো মোকাবেলা করা জরুরী মনে করি কারণ, এই প্রশ্ন আজকে জাতীয় ঐক্য এবং যুক্তফ্রন্টের জন্যে এসেছে আগামীতে যারা যারা আসবে সবাইকে এই প্রশ্ন মোকাবেলা করতে হবে যে, তারা আমেরিকার সৃষ্টি।
আমি ও আমার বন্ধুর আলোচনায় যে প্রশ্নগুলো এসেছে, তাঁরমধ্যে আমার বন্ধুর দাবী হচ্ছে,
১) কূটনৈতিক পাড়ায় যারা ঘোরাঘুরি করেন, এবং এই দেশের সিক্রেট খবর যারা রাখেন, তারা জানেন ঐক্য প্রক্রিয়ার এই জোট পুরোপুরি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নেগোশিয়েট করা।
২) রোহিঙ্গা ইস্যু দিয়ে বাংলাদেশকে দিয়ে আমেরিকা চায়নাকে কন্টেন করতে চায়। (তাই অ্যামেরিকা আওয়ামী লীগকে চায় না।)
৩) আওয়ামী লীগ রয়ে গেলে, বাংলাদেশে আই,এস টাইপের কিছুর উত্থান হতে পারে সেই জন্যে আমেরিকা চায়, বাংলাদেশ থেকে এখন আওয়ামী লীগের বদলে নতুন কেউ আসুক।
তিনটা প্রশ্নের একসাথে উত্তর দেই যেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে মারকিন গেমটা বোঝা যায়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর মারকিন স্টেট সেক্রেটারি মাইক পম্পেও, ইন্ডিয়া ভ্রমণ করেছে। এই ভ্রমণটা ভারতীয় মিডিয়াতে এমনকী আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে খুব বড় করে হাইলাইট হয়েছে। এবং এই ভিজিটে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় সামরিক চুক্তিসাক্ষর হয়েছে, যেই চুক্তির ফলে ভারত এখন প্রশান্ত এবং বঙ্গোপসাগরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্যগুলোর সরাসরি এক্সেস পাবে। এই চুক্তিটি ভারতের জন্যে চায়নাকে কন্টেন করার জন্যে একটা গেম চেঞ্জার। এই চুক্তি বাদেও ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক এখন ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে ক্লোজ। কারণ, বিগত কয়েক বছরে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর একটা নতুন মেরুকরণ হয়েছে। এই মেরুকরণে রাশিয়া চায়না একটা ব্লকে পড়েছে। এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চাইনিজ থ্রেট মোকাবেলার জন্যে একটা ব্লকে পড়েছে। এবং ভারত এখন তাঁর মেধাশক্তি এবং বাণিজ্যশক্তি মিলে বিশ্বের সবচেয়ে নতুন সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভৌগোলিক, বাণিজ্য এবং নৌশক্তিসহ সকল বিষয়ে ভারত এবং চীন এখন ন্যাচারাল এনেমি। সাথে সাথে এটাও বুঝতে হবে, ইন্টিগ্রেটেড মুক্ত বাণিজ্যের এই পৃথিবীতে ন্যাচারাল শত্রুরাও একজন আরেকজনের ওপরে বাণিজ্যের ওপরে নির্ভর করে। কিন্ত তারপরেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে চরম ডানপন্থী ট্রাম্প প্রশাসন এখন ক্ষমতায় তারা চীনকে কন্টেন করার জন্যে এখন ভারতকে ক্ষমতায়িত করছে। এটা একটা বেসিক এজাম্পশান, যেই এজাম্পশানটা যদি আপনি আমার সাথে একমত না হন তবে আপনি আমার বাকি আলাপেও সম্মত হবেন না। সো আর পড়বেন কী পড়বেন না আপনার ইচ্ছা। কিন্তু যদি পড়েন, তবে আরো একটা জিনিস বুঝতে হবে,
এই পৃথিবীতে একটামাত্র দেশের কাছে, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রাজনীতির ইন্টারনাল ডাইনামিক্স গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হচ্ছে, ভারত। (মিয়নামারের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তাদের কাছে ক্ষমতায় কে সেই ইস্যুটা ইম্যাটেরিয়াল) ভারতকে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা যেভাবে খুশী করেছে এবং যেভাবে আকণ্ঠ কোন প্রতিদান ছাড়া দান করেছে এবং বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গী কার্ড এবং আওয়ামী লীগ চলে গেলে সেভেন সিস্টারস আবার পাকিস্তানী আইএসআই দিয়ে, বিএনপির হাতে অস্থিতিশীল হওয়ার ভয় বিগত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ এবং আনন্দবাজার গ্রুপ এবং ইস্টার্ন ব্লক যেভাবে সামনে এনেছে – এইটা বর্তমানে ভারতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহীতাদের কাছে বাংলাদেশে তারা কাকে সাপোর্ট দেবে, সেই প্রশ্নে মূল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং সেই জায়গায়, যতই গাই গাই করুক বা শেখ হাসিনার অটোক্রেটিক টেন্ডেন্সির কারণে অস্বস্তি ফিল করুক এবং অজনপ্রিয় সরকারের কারণে তাদের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য রিস্কের মুখে পড়ুক- ভারত সরাসরি আওয়ামী লীগের পক্ষে। এটা তারা ২০১৪ সালে সরাসরি খেলেছে এবং ২০১৮ সালেও খেলবে, এখনো সেভাবেই খেলছে। এটা যদি আপনি আমার এগ্রি না করেন, তবে আমার আপনার বোঝাপড়া হবে না। যদি না হয়, তবে নিজ দায়িত্ব আগান কারণ, আমি এই দুইটা পয়েন্ট থেকে থার্ড সিদ্ধান্তে যাবো, সেটা আপনার আর পছন্দ হবেনা।
রিয়ালিটি হচ্ছে আজকে বাংলাদেশের পশ্চিম তথা অ্যামেরিকা এবং ইইউকে দেয়ার তেমন কিছু নাই। যা যা দেয়ার সেটা আওয়ামী লীগ দিয়ে দিয়েছে। ফলে এখন বাংলাদেশে আমেরিকা বা ইউইউর তেমন কোন স্টেক নাই। এখন, তাই ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট পশ্চিম তথা অ্যামেরিকা তথা ইইউ এর কাছে পরিষ্কার করেছে, বাংলাদেশ হচ্ছে, তার উঠোন। এইখানে কেউ নাক গলাবে না। বাংলাদেশকে আমরা আমাদের মত নিয়ন্ত্রণ করবো। এবং এখানে নাক গলানোর মত তেমন কিছু নাই। ভারতের আলাপ হলো, আজকে ভারত যেরকম কিউবার রাজনীতিতে নাক গলায় না ঠিক তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে, আমেরিকার কোন বেনেফিট নাই। অ্যামেরিকার বাংলাদেশ নীতি হচ্ছে, এই জন্যে স্টেটেজিক পার্টনার ভারতের যে নীতি থাকবে, সেই নীতিতে চলা । ভারত যা বলে তাই। এইটা একটা প্ল্যান এন্ড সিম্পল ফ্যাক্ট। এবং খেয়াল করে থাকবেন, আজকে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওয়াজ মাহফিল, অ্যাম্বেসির বুস্টেড পোস্ট, সবাইকে নির্বাচনে স্বচ্ছ থাকার অঙ্গীকার করানো, আকাশে বেলুন ওরানো বাদে তেমন কোন রোল প্লে করতে পারে না। কারণ, এমন না আমেরিকা খুব ভালো হয়ে গেছে বা তারা সেইটা চায়না। রাদার ইস্যুটা হচ্ছে ভারতের স্টেক আমেরিকার কাছে এতো হাই এবং এতো ক্রিটিকাল অ্যামেরিকা ভারতকে অখুশি করে এইখানে কিছু করবে না। দে হ্যাভ নাথিং টু গেইন।
এখন ক্রিটিকাল আর একটা ইস্যু হলো, ট্রাম্প আসার পর থেকে আর একটা ইম্পরট্যান্ট ঘটনা ঘটেছে, যেটা কুটনীতিবিদরা বলে থাকেন। সেটা হচ্ছে, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নিয়ে কী পলিসি নেবে। সেটা স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা পররাষ্ট্র ডিপার্টমেন্ট বদলে চলে গেছে, এনএসআই বা ন্যাশনাল সিকিউরটি ডিপার্টমেন্টের হাতে। এই এনএসআই ডিপার্টমেন্টটা মূলত ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্সের এবং এরা ডিফেন্স এবং ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের ইন্টারেস্ট প্রায়োরিটি দিয়ে চিন্তা করে। এদের চিন্তা থেকে, ট্রাম্প এডমিনিস্ট্রেশন চায়নাতে বাণিজ্যে ২৫% ভ্যাট বসিয়েছে এবং ইরানের নিউক্লিয়ার ডিল বাতিল হয়েছে। এরা ইজরায়েলি ইন্টারেস্ট এবং এন্টি মুসলিম ইন্টারেস্ট মাথায় দিয়ে চিন্তা করে। এদের কাছেও আজকে বিএনপি এবং জামাতে ইসলামির এমন একটা ইমেজ তৈরি হয়েছে সেই ইমেজটা একটা সন্ত্রাসী দলের। এটা এস্টাব্লিশ করতে ভারতীয়রা প্লাস আমাদের সরকার অনেক কাঠ খড় পুড়িয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট যেইভাবে একটা রাষ্ট্রের ইন্টারনাল পলিটিক্স বোঝে, যেইটা তারা শিখেছে, দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিভিন্নরকম লিয়াজো মেইন্টেন করে এবং বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার গ্রুপকে নিজের কব্জায় রেখে, এনএসআই সেইভাবে চলেনা- সে চলে ন্যারেটিভ দিয়ে। এবং বিএনপি এবং জামাত প্রশ্নে ন্যারেটিভটা খুব ক্লিয়ার। এখন, এইটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই ভূ-রাজনৈতিক স্ট্রেটেজিক এবং বাণিজ্যিক ইন্টারেস্ট বাদ দিয়ে, বাংলাদেশের মত বাল ছাল দেশে অ্যাম্বাসেডররা বিরোধী দলের কম্বিনেশান ঠিক করে দেয় না। এইগুলো খুব সম্ভবত আমাদের সাংবাদিকেরা তাদের বন্ধুদের বলে যার ফলে তাতে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। তাতে মনে হয়, তাদের কোন সিক্রেট ইনফরমেশন আছে বা গোপন কানেকশন আছে। আবার, আজকে ভূ-রাজনীতির কোর এবং ক্রিটিকাল প্রশ্নগুলো যারা বোঝে তারা এইগুলো উড়িয়ে দেয় না। কারণ, এই ন্যারেটিভগুলো রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিশেষত আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার সাথে মাইক পম্পিও মাত্র এই শুক্রবারে নিউইয়র্কে দেখা করে আসছেন, তিনি চান এই আলাপগুলো বারে বারে আসুক। খেয়াল করবেন, শেখ হাসিনার মাইক পম্পিও এর সাথে দেখা করে নাই, পম্পিও দেখা করতে হোটেলে আসছিল। জ্ঞানী জ্ঞানী মানুষের চিন্তাকে এইভাবে ডাম্বিফিকেশান করে, মেঠো বয়ান দিয়ে চিন্তা করে ততোক্ষণ আওয়ামী লীগ ঠিকই কিন্ত মাইক পম্পিওর সাথে দেখা করে ইমপ্লিকেশানটা হালকা রাখতে পারে, কারণ এই সব সিক্রেট ইনফরমেশানের বয়ানের কারণে মূল প্রশ্ন এবং ইস্যুগুলো পাবলিক ধরতে পারে না।
এই বয়ানগুলো আওয়ামী লীগের জন্যে খুব সুবিধা হয়। তারাও বলতে পারে, দেখো দেখো, অ্যাম্বাসাডার বসে ঠিক করে দিয়েছে। যেখানে মাইক পম্পিওর বিষয়টা কেউ আর রোহিঙ্গা প্রশ্নে বলব, ইয়েস রোহিঙ্গা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং আমেরিকা এবং ভারত উভয়েই চায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গা তাদের মতই খেলুক। কিন্তু তার মানে কী বাংলাদেশকে দিয়ে লঞ্চিং প্যাড বানায় মিয়ানমার আক্রমণ করবে অ্যামেরিকা? নো। নেভার। আমেরিকা তাহলে কী করবে? কারণ অ্যামেরিকা চায় চায়নাকেকে কন্টেন করতে।
ইটস কমপ্লেক্স। এবং এইটা এতো কমপ্লেক্স এবং এইটা নিয়ে কারো সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রিত হয় না, কারণ এই কমপ্লেক্সিটি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কোন শক্তির নাই। আর বাংলাদেশে লিবারেল ডেমোক্রেসি না আসলে, বাংলাদেশে আইএস আসবে, এই জন্যে আমেরিকা আওয়ামী লীগকে চায় না, এইটা আরো একটা খেলো যুক্তি কারণ এই ধরনের শক্তি আসার ভয় যদি থাকে, তবে, ভারত সবচেয়ে বেশী ভয় পেতো কারণ, এই ধরনের শক্তির ধাক্কা সবার আগে তাদের ওপরে যাবে। কিন্তু লাস্ট বাট নট দা লিস্ট। যেইটা আমি আগেও বলেছি, পৃথিবীতে সকল দেশ চায়, অন্য রাষ্ট্রে প্রভাব ফেলতে যেন তার ইন্টারেস্ট রক্ষিত হয় কিন্ত, সেইটুকুই তারা করতে পারে, যতদূর একটা দেশের ইন্টারনাল পলিটিক্স এলাউ করে। এই জায়গায় শেখ হাসিনা একটা জিনিশ ক্লিয়ার করেছেন, এবং এই জন্যে তাঁকে আমি ভয়ংকর রেস্পেক্ট করি। উনি থোরাই কেয়ার করেন, ভারত বা আমেরিকা কী ভাবলো। শেখ হাসিনা হিলারিকে ইউনুস প্রশ্নে যে থাপ্পড় দিয়েছে, সেইটা পরিষ্কার প্রমাণ করে, উনার এজেন্সি উনার হাতে। আজকে, ইন্ডিয়া চাইলেও উনি উনার মত করে দেশ চালাবেন। আগামী নির্বাচন দখল করবেন। এবং ভারত যে আওয়ামী লীগের প্রতি নমনীয় সেইটার আরো একটা কারণ, ভারত বোঝে এইখানে বিরোধী শিবিররের তাঁকে কাছাকাছি সময়ে ক্ষমতা থেকে নামানোর চান্স খুবই কম। সো, ভারত তাঁর নিজের ইন্টেরেস্টেই উনাকে ব্যাক করছে, কারণ সেই দেখছে, অল্টারনেটিভদের আসার চান্স খুবই কম। কিন্তু ভারত পরিষ্কার বোঝে, শেখ হাসিনাকে এতো হেজ করার কারণে, তাদের ফিউচার রিস্ক বাড়ছে। তাই ভারত চায় শেখ হাসিনা একটু ডেমোক্রেটিক ওয়েতে থাকুক, মিনিমাম লিবারেল ডেমোক্রেসির ফাসাদ মেন্টেন করুক। কিন্ত, সেইটা নিয়ে তারা এতো টেনশিত না।
ইন দি এন্ড বলব, আজকে বাম হন ডান হন, শেখ হাসিনা থেকে অন্তত একটা জিনিশ শিখেন। আপনি যদি শিরদাঁড়া মজবুত করে রাখেন, তবে অ্যামেরিকা, ইন্ডিয়া, চায়না কাউকেই পরোয়া করার দরকার নাই। একটা কথা অনেকবার বলেছি, আবার বলছি; আজকে বাংলাদেশে কোন সিক্রেট গেম নাই। যা হচ্ছে, সবার সামনে হচ্ছে, পরিষ্কার বাংলায় হচ্ছে। মিডিয়া ঘটনাটা বলে দিচ্ছে, কিন্ত, তার অবভিয়াস ইন্টারপ্রিটেশিয়ানের দায়িত্ব আপনার হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। তাই আপনি যা দেখবেন, ফেসভ্যালুতে জাজ করেন। তাহলে দেখবেন, ভুল হচ্ছেনা। কারণ, সিক্রেট কোন ইনফরমেশন নাই। আপনি যা দেখছেন, সেটাই সত্য। কিন্ত আপনার আড়ালে কিছু ঘটছে, সেটা ভেবে যদি ২ প্লাস ২ সমান, ৪ এর বদলে ২২ মিলান তাহলে, এটা আপনার বোঝার সমস্যা। এই বেসিক ম্যাথে ভুল করলে, কেউ আপনাকে ম্যাথ শেখাতে পারবে না।