অধ্যায় ৮
দাতব্য কাজ
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপীল আবেদন নিষ্পত্তি করার পর আমি দ্বিতীয়বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য নিউইয়র্কে এসেছিলাম। যার ফলে আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে সিঙ্গাপুরে আমার চিকিৎসা সঠিক ছিল। সিঙ্গাপুর থেকে আমাকে আরো বলা হয়েছিল যে আমার সিঙ্গাপুর ব্যতীত অন্য কোথাও কোন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন নেই। একটা জীবনঘাতী রোগের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়াটা আমার জন্য খুবই স্বস্তিদায়ক ছিল । আমি নতুন প্রাণ শক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে বিচার বিভাগীয় প্রশাসনের কাজ মন দিলাম। আমার মধ্যে একটা মানসিক দৃঢ়তা জন্মাল যে আমি যদি একটা প্রাণসংহারী রোগকে জয় করতে পারি তাহলে বিচার বিভাগের কাজে-কর্মে নতুনত্ব ও পরিবর্তন আনতে পারব।
নিউ ইয়র্ক থেকে আমি আমার ছোট ভাই ডঃ অনন্ত কুমার সিনহার সাথে দেখা করতে বস্টন যাই এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করি। তখন আমি কিছু বই কেনার কথাও ভাবছিলাম। আমার ভাই আমাকে দেখে খুশী হয়, সে চিকিৎসার খরচ মেটাতে আমার যে ঋণ হয়েছিল তা পরিশোধের জন্য কিছু টাকা দিয়েছিল। আমি তাকে সোনালী ব্যাংক, সুপ্রিম কোর্ট শাখায় আমার একাউন্টে টাকা পাঠাতে বলি।
আমি ভাবলাম যেহেতু জীবনে দ্বিতীয়বারের মত চান্স পেলাম তাই টাকাটা একটা দানকার্য্যে ব্যবহার করা যাবে, সবচেয়ে ভাল হবে যদি দাতব্য কাজটা আমার মাতা-পিতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে করা যায়। আমি তাই ‘ললিত মোহন ও ধনবতী ট্রাস্ট’ নামে একটা দাতব্য সংস্থার নিবন্ধন করি এবং তাতে ২৫ লক্ষ টাকা জমা করি। আমার ইচ্ছা ছিল এ টাকা থেকে যে সুদ পাওয়া যাবে তা দিয়ে দানকাজ চালিয়ে যাওয়া হবে, এবং কোনভাবে ফিক্সড ডিপোজিট ২৫ লাখ টাকায় হাত দেয়া যাবে না। আমার শ্যালক ডঃ নন্দ কিশোর সিনহা এবং গ্রামের অন্যান্য মানুষদের সহায়তায় আমার বাবার স্মৃতি রক্ষার্থে ‘ললিত মোহন গণগ্রন্থাগার’ নামে একটি গ্রন্থাগার চালু করি। ট্রাস্ট গ্রন্থাগারের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়ে একজন স্থায়ী গ্রন্থাগারিককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। বড় একটা সময় ধরে গ্রন্থাগারের জন্য আমি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বই কিনি।
আমাদের বাংলো বাড়ির একটা কক্ষে গ্রন্থাগারের কাজ শুরু হয়েছিল এবং আরেকটি কক্ষে ১৫ টি কম্পিউটার দিয়ে স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের জন্য বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভালভাবে প্রশিক্ষণ সমাপনের পরে তাদের জন্য ডিপ্লোমার ব্যবস্থা ছিল। প্রশিক্ষণের জন্য আমি দুজন স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করি এবং প্রতিষ্ঠানটিকে কারিগরী শিক্ষাবোর্ডে নিবন্ধিত করি যাতে প্রশিক্ষণের পরে শিক্ষার্থীরা অফিসিয়ালী তাদের সনদপত্র ব্যবহার করতে পারে। শিক্ষার্থীরা সেখানে তিনমাস এবং ছয়মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল এবং বছরে প্রায় ৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রী প্রশিক্ষিত হতে লাগল। কেন্দ্রে বই-পুস্তকের সাথে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও বাড়তে লাগল। বাংলা বাড়ির আরো দুঘরে আমার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত মানুষদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ায় ট্রেনিং সেন্টার সেখানে চলবার মত জায়গার সংকট দেখা দিল। সেজন্য আমি ৭ শতাংশের একটি জমিতে চারতলা বাড়ি বানানোর প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম যাতে গ্রন্থাগার এবং ছাত্রছাত্রীদের সেখানে স্থান দেয়া যায়। নতুন বাড়ির দোতলা ইতোমধ্যে নির্মাণ হয়ে গিয়েছিল, সেখানে নীচতলায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আর দোতলায় গ্রন্থাগার স্থানান্তর করা হয়েছিল। বাড়ির অন্যান্য রুমগুলোও গ্রন্থাগারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে আইন, দর্শন এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী, ইতিহাস, সাহিত্যের অনেক বই ছিল যার বাজার দর ৫০ লক্ষ টাকার উপরে। আমি ইতোমধ্যে আমার বইগুলো দান করে দিলাম।
আমাদের এলাকায় প্রধানত আমার জাতিগোষ্ঠির মানুষের বাস এবং থানায় প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। কেউ মারা গেলে সাধারণত নদী বা জলাশয়ের পাড়ে শবদাহ করা হয়। সেখানে কোন স্থায়ী, আধুনিক শবদাহের ব্যবস্থা নেই, মৃতদেহকে কাঠের আগুনে পোড়ানো হয়। বর্ষা ঋতুতে শবদাহের জায়গাগুলো বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ডুবে যায়। বৃষ্টি প্রধান এলাকা হওয়ায় মাঝে মাঝে দু’দিন ধরে বৃষ্টি হতে থাকে এবং সে সময় কেউ মারা গেলে শোকার্ত পরিবারকে লাশ নিয়ে বৃষ্টি থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বৃষ্টির সময় শুকনো কাঠও তেমন পাওয়া যায় না। একটা মড়া পোড়াতে অনেক পরিমাণ কাঠের প্রয়োজন হয় এবং কাজটা শেষ হতে কমপক্ষে সাত-আট ঘন্টা সময় লাগে। বিপুল পরিমাণে কাঠ এবং বাঁশের ব্যবহারে পরিবেশ উজাড় হয়ে যাচ্ছিল। এ সমস্যা দূর করতে আমি ধলাই নদীর তীরে প্রায় ২৫ শতাংশ জমি কিনে সেখানে সীমানা প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত করি। তারপর সেখানে একটা মোটামুটি গভীর একটা নলকূপ স্থাপন করে গাছপালা লাগিয়ে একটা আধুনিক শ্মশ্মান স্থাপনের কাজ শুরু করেছিলাম। আমি ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছি, এবং একাজের জন্য আরো পঞ্চাশ লাখ টাকার দরকার। আমি আশা করেছিলাম আমার পেনশনের টাকা দিয়ে কাজটা শেষ করব, কিন্ত কোন এক অজানা কারণে সরকার আমার পেনশনের টাকা দিচ্ছিল না, যদিও বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া আমার পরে অবসর নিয়ে সাথে সাথে পেনশন তুলেছিলেন। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেখানে খুব অল্প সময়ে, বিনা খরচে পুরো মৌলভীবাজার জেলার সব মড়া পোড়ানো যেত। আমাদের এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও তিরিশ থেকে চল্লিশ মিনিটে সেখানে নিয়ে যাওয়া যেত।
ডিগ্রী এবং মাস্টার্স পর্যায়ের গরীব ছাত্রদের লেখাপড়ায় সাহায্য করতে আমি একটা প্রকল্প চালু করেছিলাম। এর মাধ্যমে গত ছয় সাত বছর যাবত আমি প্রায় ৩০-৩৪ জন ছাত্রকে নিয়মিত মাসে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতাম। কিন্তু অক্টোবর ২০১৭ থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমাকে সে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। আমি সেসব গরীব ছাত্রদের ব্যথা অনুভব করছি যারা টাকার অভাবে শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারছে না। এই মূহুর্তে আমার পক্ষে আর তাদেরকে সাহায্য করা সম্ভব নয় যদিও তারা সাহায্যের আশায় নিয়মিত আমাদের দাতব্য অফিসে যোগাযোগ করে যাচ্ছে। গরীব পরিবারে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে বিয়ের খরচ মেটানো বা শ্রাদ্ধের খরচ দিতে পারছে না এমন পরিবারকেও আমি সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। এসব মানুষদের আমি এককালীন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মত দিতাম। এলাকার মুসলমানদের মধ্যে আমি বছরে দু’বার কাপড় বিতরণ করতাম আর হিন্দুদের দূর্গা পূজোয় একবার কাপড় দিতাম। এছাড়া আমরা দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর শীতের সময় কম্বল বিতরণ করতাম।
আমার পিতামাতার নামে এসব দাতব্য কাজ করতাম। আমার নিজের নামে আমি কখনও কিছু করিনি; কিন্তু পার্শ্ববর্তী মাধবপুর গ্রামে গ্রামবাসীরা আমার নামে একটি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং আমাকে সেটি উদ্বোধন করার অনুরোধ জানান। আমার নামে প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমি খুব বিব্রত ছিলাম। কিন্তু যখন একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে তখন আমি সেখানে প্রায় দশ লাখ টাকা অনুদান দিতে বাধিত হলাম। মাধবপুর সম্ভবত আমাদের থানার সবচেয়ে বড় গ্রাম এবং গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ অশিক্ষিত। শেষ পর্যন্ত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা স্কুল এবং কলেজ’ নামের প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন। আমি একটা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার কথা ভাবছিলাম, সেজন্য কিছু সেলাই মেশিনও সংগ্রহ করেছিলাম, কিন্তু জায়গার সংকটের কারণে সেটা করতে পারিনি। এরমধ্যে এই প্রকল্পে পাঁচজন কর্মী কাজ করছেন, এবং বর্তমানে আমার অনুপস্থিতিতে আমার বড় ভাই এর দেখাশোনা করছেন। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে তিনটি পুকুরে আমার মাছ চাষের একটা বড় বিনিয়োগ সহ সবকাজ তিনি ঠিকঠাক মত চালাতে পারবেন।
************************
অধ্যায় ৯
আইসিটি (ICT) গঠনে ভূমিকা
২০০৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এজেন্ডাগুলির মধ্যে ছিল, যদি দলটি ক্ষমতায় আসে তবে সরকার যুদ্ধাপরাধের অপরাধী, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনবে। শেষমেশ, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনে সক্ষম হয়েছিল আর তার নির্বাচনী ওয়াদা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায়, পুরোনো হাইকোর্ট বিল্ডিংয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে চেয়েছিল। শফিক আহমেদ, বিচারপতি আব্দুর রশিদ এবং আমি এই বিষয়ে কাজ করছিলাম, কারণ শফিক আহমেদ প্রসিকিউটর ও বিচারকদের নির্বাচন করবার জন্য আমাদের সাহায্য চেয়েছিলেন। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাস গুপ্তকে ট্রাইব্যুনালে সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ আমি দিয়েছি। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসাবে মোঃ নিজামুল হককে নির্বাচিত করা হয়েছিল কারণ তিনি যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের বিচারমূলক প্রতীকী বিচার পদ্ধতি “গন-আদালত” (জনগণের আদালত) প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন।
সবুজ সংকেত পাওয়ার পর, আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রানা দাস গুপ্তকে ঢাকায় আসতে বললাম। আমি তাকে আব্দুর রশিদের বাসায় নিয়ে গেলাম এবং আমাদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হল। রানা দাস গুপ্ত চট্টগ্রামে তার বিপুল পসার জমা লাভজনক প্র্যাকটিস ছেড়ে দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তার পেশা উৎসর্গ করার জন্য আমরা তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদের প্রস্তাব সম্মত হলেন। এটা আইনমন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল। তারপর, অজ্ঞাত কোন কারণে আমরা জানতে পাই যে ট্রাইব্যুনালের সম্ভাব্য সদস্য তালিকা থেকে রানা দাস গুপ্তের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। তারপর আমরা তার নাম প্রধান প্রসিকিউটর হিসাবে প্রস্তাব করি। কিন্তু এই কাজে টিপু সুলতানকে বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ আইনমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যদিও তিনি বয়সে খুবই প্রবীণ ছিলেন। পরবর্তীতে আমি লক্ষ্য করি যে এমনকি প্রসিকিউটর হিসেবেও রানা দাস গুপ্তের নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
উল্লেখ্য যে রানা দাস গুপ্তকে এই কাজে সম্মত করার জন্য আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল আর সে অনুযায়ী আমি ঢাকায় আসার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। নিজামুল হকের সাথে সাথে আরও দুই সদস্য হিসেবে এটিএম ফজলে কবির এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে ট্রাইব্যুনালের অংশ হিসেবে মনোনীত করা হয়। রানা দাস গুপ্তের বদলে জহির আহমেদ নির্বাচিত হন। এটা যে একটা খারাপ মনোনয়ন সরকার পরে উপলব্ধি করে। কিন্তু ইতিমধ্যে, অনেক শঙ্কার উদ্ভব হয়। ট্রাইব্যুনালের কাজ সঠিকভাবে চলছিল না। মোঃ নিজামুল হক অপ্রত্যাশিত ভাবে দীর্ঘ আদেশ লিখে সময় নষ্ট করেছিলেন – এমনকি সামান্য আবেদন নিষ্পত্তির বেলাতেও। স্বাভাবিকভাবেই, অভিযুক্তরা মামলার বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করছিল। ট্রাইব্যুনাল প্রশাসনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হিসেবেই দেখা হয়, ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা আর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তার যথাযথ জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়।
প্রয়াত আমিনুল হকের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার প্রেক্ষিতে সাধারণভাবেই নিজামুল হকের কাছে প্রত্যাশা করা হয়, মামলাগুলি পরিচালনায় তিনি পছন্দসই ফলাফল বয়ে আনতে সক্ষম হবেন যেহেতু ফৌজদারি আইন বিষয়ে তার ভাল ধারনা ছিল। সকলেই ভেবেছিলেন যে তিনি একজন ভাল নির্বাচন ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই নির্বাচন নেতিবাচক ফল দেয়। এক বছরের মধ্যে তিনি এমনকি একটি মামলাও শেষ করতে পারেননি। তিনি প্রায় সময়েই আমার পেছনে ধর্না দিতেন, আপিল বিভাগে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আর পরবর্তীতে তিনি আমার কাছে তদবির করতেন প্রধান বিচারপতি, বা অন্তত তার কাছাকাছি একটা পদে উন্নীত হবার আকাঙ্ক্ষা থেকে।
যখনই তিনি দেখা করতে আসতেন তখনই তাকে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে আর কমপক্ষে একটি বা দুটি ক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তির পরামর্শ দিয়েছিলাম। আপিল বিভাগে উন্নীত করার জন্য তার নাম বিবেচনা করা যাবে না যতক্ষণ না তিনি অন্তত একটি মামলা নিষ্পত্তি করছেন। অবশেষে আইনমন্ত্রী এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান, যিনি মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ ছিলেন, সেই এয়ার কমোডোর (অবসরপ্রাপ্ত) একে খন্দকার আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে চেয়েছিলেন, কারণ ট্রায়ালটি কাজের গতি খুঁজে পায়নি। যদিও সরকার একটি সংসদীয় সরকারের অধীনে কাজ করছিল, তবে এটি কেবল কাগজে ছিল। এমনকি ১৯৯১ সালের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সরকার গঠন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতিতেই যেন রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছিল যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে শক্তিশালী করার মাধ্যমে সবকিছু পরিচালিত হত। সাংবিধানিক ভাবে সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নেয়া হয়, হোক সে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি সরকার। তাই আইনমন্ত্রীর নীতিগত কোন বিষয়ে বিবেচনা ও কাজের জন্য সামান্য ক্ষমতা ছিল। আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব নিয়ে শফিক আহমেদ ও এ কে খন্দকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত হতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাফল্যের আর ফলাফল লাভের সুযোগ ছিল খুব সামান্য। পরে জানতে পেরেছিলাম যে, প্রধানমন্ত্রী যখন তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, তখন দুই সিনিয়র মন্ত্রী কোন কথা বলেননি আর ভগ্ন হৃদয়ে ফিরে আসেন।
এরপর শফিক আহমেদ আমাকে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি আদায় করার ব্যাপারে অনুরোধ করেন। তার মতে, যদি আমি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলি, তবে আমি তাকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হব। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে অনিচ্ছুক ছিলাম কারণ আমি মনে করতাম, একজন বিচারক হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে নির্বাহী বিষয়ে কথা বলা বিধিসম্মত নয়। আমি আইনমন্ত্রীকে বললাম, দুইজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা প্রত্যাখ্যান হবার পর, আমি বিষয়টিতে যুক্ত হতে চাই না, যাতে তিনি আবার প্রত্যাখ্যান করেন, আর তাহলে আমি একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ব। তিনি আবারও বললেন, এটি তার দৃঢ় বিশ্বাস, আমি যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করি, তবে ধারণাটি বাস্তবায়িত হতে পারে। শফিক আহমেদ একজন সুন্দর, নম্র ভদ্রলোক। আমরা তাকে যথার্থই একজন ভদ্রলোক হিসেবে বিবেচনা করতাম। তার দৃঢ় বিশ্বাস আমাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। আমি তাকে বললাম, বিষয়টি নিয়ে আমি আবার চিন্তা করব।
তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, এটা অধিকাংশ মানুষেরই দাবি ছিল যারা জানত, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ কিরকম কষ্ট পেয়েছিল। আমরা ত্রিশ লক্ষ প্রাণ উৎসর্গ করেছি এবং একলক্ষেরও বেশি লোক পঙ্গু হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছে পরিবর্তীতে যতদিন বেঁচে ছিল আর দু-লক্ষ নারী তাদের সতীত্ব হারিয়েছিল। বিচারকের পাশাপাশি, দেশের নাগরিক হিসাবে, জাতির প্রতি আমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উপলব্ধি করলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে দেশটি যদি মুক্তি না পেত, তাহলে আমি স্কুল শিক্ষক বা বড়জোর উপ-বিভাগীয় আদালতের আইনজীবী হিসেবেই চাকরি জীবন শেষ করতাম। স্বাধীনতা শুধুমাত্র জাতির জন্য একটি পতাকাই দেয়নি, এটি যুদ্ধ শেষে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনায় নতুন জীবন দিয়েছে যাতে অতীতে যারা দেশকে শাসন করেছে তাদের চেয়ে আরও ভালোভাবে লোকে নেতৃত্ব দিতে পারে। দেশের স্বাধীনতার কারণে আমি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক হয়ে উঠি এবং শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে আমি দেশ থেকে আরো ক্ষমতা বা সম্মান পাওয়ার যোগ্য নই। এই যদি আমার বিশ্বাস হয়, তবে প্রধানমন্ত্রীকে আরেকবার প্ররোচিত করার চেষ্টা করা আমার জন্য একটা বাধ্যবাধকতার ব্যাপার ছিল আর আমার প্রচেষ্টায় অনুকূল ফলাফল পাওয়া গেলে, তা আমাদের সাহসী স্বাধীনতাকামী মানুষের আত্মত্যাগের প্রতি একটা বড় সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন হবে। তাই, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেই মোতাবেক একটি গোপন জায়গায় প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ করি। এ বিষয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনুকূল উত্তর পাই। এটা অনুপ্রাণিত করে যে আমি প্রধানমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হব।
যখন সাক্ষাৎ পেলাম, আমি প্রধানমন্ত্রীকে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যটি জানালাম। যে মুহূর্তে আমি প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলাম, তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। তারপর আবেগতাড়িত হয়ে ওঠেন আর পিতামাতা ও ছোট ভাইদের হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য যে দুঃখভোগ করেন, তা ব্যাখ্যা করছিলেন। তিনি বললেন সাক্ষী সংগ্রহ ও তাদের সুরক্ষার জন্য কত টাকা ব্যয় করেন এবং বলছিলেন যে মানসিক চাপ সহ্য করেন তা ধারণার বাইরে ছিল। অপরাধীদের বিচারের জন্য তিনি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু তাকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তিনি মন্ত্রীদের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে স্বীকার করেছিলেন যে ভীষণরকম দুর্নীতি ছিল, অপরাধীদের অর্থ ও পেশীশক্তি ছিল আর তারা যে কোন কর্মকর্তা বা সাক্ষীকে প্রভাবিত করতে পারত এবং প্রশাসনের দ্বারা সর্বদা এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তদুপরি, চল্লিশ বছর সময় চলে গিয়েছিল আর সাক্ষী সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল কারণ তাদের অধিকাংশই এখন আর জীবিত নেই। নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের জন্য প্রধানত তিনি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন আর এর বেশি কিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন না। পনেরো থেকে বিশ মিনিট কথা বলার পরও তিনি অত্যন্ত আবেগতাড়িত ছিলেন আর আমি তার কথা শুনছিলাম নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। বুঝতে পারলাম যদি কোনও মন্তব্য করি তবে তিনি ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তার মত প্রকাশ সম্পন্ন করার পর খেয়াল করলাম তিনি একটু বিচলিত। আমি তখন সবিনয় নিবেদন শুরু করলাম। তাকে বললাম, তার বাবার হত্যা মামলার বিচারক ছিলাম আর মামলার শুনানির শেষে সবকিছুই জানতাম। বিচারের সময় অনেকগুলি ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি, কিন্তু তার কারণ ছিল দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়া।
কিন্তু যুদ্ধাপরাধের মামলা তার বাবা-মা হত্যা মামলার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল, আমি ব্যাখ্যা করছিলাম। বঙ্গবন্ধুর হত্যার মামলাটি সাধারণ আইনের অধীনে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল আর সেটি ছিল একটি অপ্রচলিত আইন, যার জন্য তাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। কিন্তু মানবতা বিরোধী অপরাধের বেলায়, বিচার পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিচারকার্য বা সেই উদ্দেশ্যে সরকারকে অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রমাণাদি সংগ্রহের লক্ষে তার বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচারে প্রমাণ সংগ্রহের মতো এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। সংক্ষিপ্তভাবে আমি আরও ব্যাখ্যা করলাম মামলার বিচার প্রক্রিয়া, সাক্ষ্য জমা রাখার পদ্ধতি এবং পূর্বের ট্রায়াল থেকে পুরোপুরি স্বতন্ত্র প্রমাণাদি সম্পর্কে। নতুন ব্যবস্থার অধীনে, হলফনামা জাতীয় প্রমাণপত্র গ্রহণযোগ্য, সংবাদপত্রের রিপোর্ট, ভিডিও রিপোর্ট ও ফটোগ্রাফগুলিও গ্রহণযোগ্য হয়, তা কোথা থেকে সংগ্রহ করা না করা, তা কোন ব্যাপার না। বেশিরভাগ প্রমাণই জাতীয় আর্কাইভ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে এবং আরও কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের দখল থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। সরকার যদি পর্যাপ্ত অর্থ প্রদান করে এবং সঠিক ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা হলে তা দ্রুত কার্যকর করা যেতে পারে। আমি তাকে বলেছিলাম যে প্রথম ট্রাইব্যুনাল নির্বাচন সঠিক ছিল না এবং তাতে ত্রুটি ছিল।
সাধারণ ও বিশেষ আইনের অধীনে বিচারের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে আমার কথা শোনার পরে, প্রধানমন্ত্রীর আচরণে পরিবর্তন দেখতে পেলাম। তারপর ডায়েরিটি বের করলেন আর জানতে চাইলেন আরেকটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা কী এবং কিভাবে বিচার প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানো যায়। তাকে বললাম, প্রথমত তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউটর এবং বিচারকদের কাছে ল্যাপটপের মত কিছু দিতে হবে। তারপর প্রসিকিউটর নির্বাচন সম্পর্কে কথা বললাম। তাকে বললাম শুধুমাত্র চারজন প্রসিকিউটর নিয়োগ করতে হবে। যদি আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় তবে তিনি ছয় মাসের মধ্যে ফলাফল পাবেন, আমি বললাম। প্রসিকিউটরদের তালিকা পাঠানো হলে আশ্বস্ত করেন, তিনি তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করবেন এবং দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের পদক্ষেপ নেবেন। পরবর্তীতে, পনের দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন।
আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে আইনমন্ত্রীকে জানালাম। তিনি খুব খুশি ছিলেন আর প্রক্রিয়াটি শুরু করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তাকে দেয়া পরামর্শ মোতাবেক আইনজীবীদের ব্যবস্থা তিনি করতে পারেননি। ইতিমধ্যে, নিজামুল হকের স্কাইপে বিতর্ক প্রকাশ হয়ে যায়। কথোপকথনে আমার নাম তিন থেকে চারবার উল্লেখ করেন। আপিল শুনানি শুরুর সময় আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় বিবাদীদের পক্ষ থেকে। আমি ঘোষণা করলাম যে আমি বিব্রত বোধ করছি না কারণ মামলার বিচারের বিষয়ে নিজামুল হকের সাথে কথা বলিনি বা মামলার যথার্থতা বা বিচার প্রক্রিয়ার কোন বিষয় নিয়েই তার সাথে আলাপ করিনি। যখনই তিনি উচ্চতর বেঞ্চে উন্নীত করার বিষয়ে আমার কাছে আসতেন, তখন বলেছিলাম যে নাম বিবেচনার আগে তাকে কমপক্ষে এক বা দুটি ক্ষেত্রে বিচার সমাপ্ত করতে হবে।
অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, আমি নিজামুল হককে নির্দেশ দিয়েছি এক বা দুই অভিযুক্তকে ফাঁসি দিতে। নিজামুল হক বলেন, ‘আমি সিনহা বাবুকে বলেছিলাম আমাকে আপীল বিভাগে নেবার জন্য, কিন্তু তিনি একটি বা দুটি মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য বলেছিলেন।’ বিবাদী তার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, আমি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি, এক বা দুইজন অভিযুক্তের বেলায়। তাছাড়া যেহেতু তিনি বিচার শেষ করতে পারেননি, তাই আপিলের শুনানিও শুরু হয়নি বিচারপতি নিজামুল হকের দেয়া কোন রায়ে। আপিল শুনানির বিষয়ে বেঞ্চে বসার জন্য আমার জন্য কোন আইনি বারও ছিল না। সংবাদপত্রে স্কাইপে কথোপকথন প্রকাশের পর নিজামুল হক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর প্রশ্ন ওঠে দুই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানদের নির্বাচন বিষয়ে। আমি ওবায়দুল হাসান ও এম এনায়েতুর রহিমের সাথে কথা বললাম। ওবায়দুল হাসান জানান, তাকে যদি কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে তিনি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছেন। কিন্তু এনায়েতুর রহিম অনিচ্ছুক ছিলেন এই কারণে যে, তার বাবা এমপি ছিলেন এবং তার ভাইও এমপি। যদি তিনি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্ত হন, তবে আপত্তি উত্থাপন করা হতে পারে। অবশেষে ফজলে কবির ট্রাইব্যুনালের-১ চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং ওবায়দুল হাসানকে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান করা হয়। ফজলে কবির অবসর নেওয়ার পর, এনায়েতুর রহিম ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন। দুটি ট্রাইব্যুনাল বসানোর পর মামলার বিচার কিছুটা গতি অর্জন করে। প্রথম বিচারিক রায় দেয়া হয় আব্দুল কাদের মোল্লার ২ নং মামলায়।
তথ্যসূত্র:
১) বাংলাদেশ সংবিধান (XXII) সংশোধনী আইন, 1991
২) ২০১৩ সালের ২4 এবং ২5 নং ফৌজদারি আপীল
চলবে…
==============================
নবযুগ সম্পাদকের নোট: তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে দীর্ঘ সামরিক শাসনের ইতিহাস মাথায় রেখে যারা বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে তারা আসলে কেউই মনে রাখেননা, দিনশেষে তারা সামরিক শাসক নন, জনগণের নির্বাচিত সরকার। পর্দার আড়ালে ঘটে যাওয়া ঘটনা সামনে আসবার নজির খুব কম বলেই, আমরা সম্পূর্ণটা কখনো জানতে পাই না। তাই রূপকথার মতো মনে হয় আমাদের বাস্তবতাগুলো, সেই জাদুবাস্তবতার বাংলাদেশের জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র আত্মজীবনীমূলক বই ‘একটি স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী: আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র’ একটি মোক্ষম চপেটাঘাত, আমাদের ঘুমন্ত নাগরিকদের জেগে ওঠার আহ্বান।
বইটি দ্রুত বাংলা ভাষান্তরের জন্য ড. নাজিম উদ্দিন-এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী গবেষক ও লেখক আদিত্য রাহুলকে। আশাকরি অনেকেই বইটি পাঠ করে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে একটা ধারণা পাবেন। এই পর্ব, অর্থাৎ ৮ম অধ্যায় -এর ‘দাতব্য কাজ‘ (Charitable Work) ড. নাজিম উদ্দিন এবং ৯ম অধ্যায় ‘আইসিটি (ICT) গঠনে ভূমিকা‘ (Role in the Formation of ICT) অংশটি আদিত্য রাহুল অনুবাদ করেছেন ।
এই বইটি বাংলা ভাষান্তর করতে গিয়ে লেখকের শৈশব ও যুবক বয়সের কিছু গ্রাম ও মানুষের নাম ইংরেজিতে যেভাবে লেখা হয়েছে তার বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ করতে কিছুটা সংশয় হওয়ায় ও সময়াভাবে কিছু বানানে ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে; আগ্রহী পাঠক ও জ্ঞাত ব্যক্তিদের এই বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। সকলকে শুভেচ্ছা।