আজ নবি মুহাম্মদের ইহুদি বউয়ের প্রসঙ্গে কথা বলব। মোহাম্মদের ইহুদি বউয়ের নাম সাফিয়া বিনতে হুয়েই ইবনে আখতাব। যখন মোহাম্মদের বাহিনী খাইবার আক্রমণ করে, সেই সময় যুদ্ধলুটের মালের অংশ হিসেবে (গণিমতের মাল) সাফিয়াকে মহানবীর কাছে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। তখন সাফিয়ার বয়স ছিল ১৭ বছর, দেখতে ছিলেন খুবই সুন্দরী, আকর্ষণীয় দেহ সৌষ্ঠব ছিল তাঁর। যেদিন তাঁকে আনা হয়েছিল মোহম্মদের কাছে, সেদিনই যুদ্ধে মুসলমানরা তাঁর বাবা স্বামী ও ভাইসহ নিকট আত্মীয়কে হত্যা করে। সেই রাতেই মোহাম্মদ তাঁর সঙ্গে বিছানায় শোবার ইচ্ছাপোষণ করেন। এই কাহিনী পাওয়া গেছে তাবাকাত নামের বইয়ে।
এখানে সেই বইয়ের উদ্ধৃতি যথাযথভাবে তুলে ধরা হল।
“সাফিয়ার ছিল বানু আল নাদির নামে এক ইহুদি গোত্রের নারী। তাঁর জন্ম হয়েছিল মদিনায়। যখন ওই গোত্রকে ৪র্থ হিজরী বছরে মদিনা থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়। এরপর সাফিয়ার পরিবার ও তাঁর নিকটজনেরা খাইবারের একটি ঊর্ব্বর জায়গায় এসে আশ্রয় নেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী কিনানা ইবনে আল রাব্বি। মুসলিমদের আক্রমণের মাত্র কিছুদিন আগেই তাঁদের বিয়ে হয়েছিল, সোফিয়ার বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর। অবশ্য সোফিয়ার আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল, তারপর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়, আগের স্বামীর নাম ছিল সালমান বিন মিসকাম। তার নিবাস ছিল খাইবারের মাত্র এক মাইল অদূরে, ঠিক সেখানেই মোহাম্মদ সোফিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। সেখানে মোহাম্মদের জন্য সোফিয়াকে সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি করেছিলেন আনাস বিন মালিকের মাতা সুলাইম। তারা সেখানে এক তাবুতে রাত কাটিয়েছিলেন। সেই তাবু সারারাত পাহারা দিয়েছিলেন আবু আইউব আল আনসারি। যখন ভোর হল, নবী উঠে দেখেন, আবু আইউব তাবুর চারপাশে পায়চারি করছেন। নবী তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমি কেন এখনো পাহারা দিচ্ছো, ঘুমাওনি কেন?”
জবাবে আবু আইউব বলেছিলেন,
“আপনি যে যুবতী নারীর সঙ্গে রাত কাটিয়েছেন, তাকে নিয়ে আমি খুব ভয়ে ছিলাম। কারণ গতকালই আপনি তার স্বামী ভাই ও বাবাসহ নিকট আত্মীয়দের হত্যা করলেন। তার ওপর ওই নারী একজন অবিশ্বাসী (অমুসলিম)। আমি সত্যিই তার ব্যাপারে আপনাকে নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম।”
এরপর নবী মোহাম্মদ আবু আইউব আল আনসারির জন্য প্রার্থনা করলেন। (ইবনে হিসাম, পৃষ্ঠা-৭৬৬)
সাফিয়া খাইবার থেকে দূরে না যাওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদকে অনুরোধ করেছিলেন। এর কারণ জানতে চাইলে সোফিয়া নবীকে জবাব দিয়েছিলেন,
‘এই খাইবারে ইহুদিদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ ঘটালেন। সে কারণে আমি আপনাকে নিয়ে খুব ভীত সন্ত্রস্থ।’
সাফিয়ার প্রত্যাখ্যান করার কারণ হিসেবে মনে হতে পারে হয়ত মোহাম্মদের মতো একজন ৫৭ বছরের পৌঢ়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে একজন উদ্ভিন্ন যৌবনা নারী সহজে সম্মত হবে না। তার চেয়ে বাবা, স্বামী ও ভাইসহ নিকটজনের হত্যাকাণ্ডের জন্য শোকাতুর মন বিলাপ করতেই চাইবে, তাদের ঘাতকের সঙ্গে বিছানায় শুতে চাইবে না কোনো নারী। কিন্তু ওই যুবতী নারীকে বিলাপ করার সুযোগ দিতে আল্লাহর নবী নারাজ ছিলেন। তার যৌনাকাঙ্খা একদিনের জন্যও নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না তিনি। এই হল নবীর চরিত্র।
যা হোক, এখানে যে ঘটনাটি বিবৃত হয়েছে, তা সঠিক কিনা আমরা নিশ্চিত নই। মুসলিম ইতিহাসবিদরা মনগড়া কাহিনী বানিয়ে মোহাম্মদের ধর্ষণের ঘটনাগুলো মুছে ফেলতে চান। আমাদের কাছে যে সব তথ্য প্রমাণ রয়েছে, সেখান থেকে আমরা সত্যকেই উদ্ঘাটন করার চেষ্টা চালাব। এমনকী মুসলিম ইতিহাসবিদদের পক্ষপাতিত্বমূলক দলিলও আমরা বিচেনায় নেব। এই কাহিনীতে বলা হয়েছে যে, মোহাম্মদের নিরাপত্তা নিয়ে আবু আইউব খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। এটা খুবই যৌক্তিক। কারণ মোহাম্মদ সোফিয়ার বাবা ভাই স্বামী ও নিকট আত্মীয়কে হত্যা করেছিল। একজন নারীর ভালবাসার মানুষকে যিনি হত্যা করেন, তার সঙ্গে একই বিছানায় শুতে যাওয়া ছিল যন্ত্রণাদায়ক, আত্মঘাতী ও বোকামীর কাজ। কিন্তু মোহাম্মদকে প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে সাফিয়া যে অজুহাত দেখিয়েছেন তা হয়ত যৌক্তিক মনে নাও হতে পারে।
যখন মোহাম্মদ একজন ইহুদি যুবতী নারীকে নিয়ে তার তাবুর মধ্যে ঢুকে পড়লেন, তার কিছুক্ষণ আগেই যিনি অনেকগুলো ইহুদিদের হত্যা করে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। হয়ত তখনো কিছু ইহুদি বেঁচে থাকতে পারেন। তাদের জীবন নিয়ে আশঙ্কিত ছিলেন। ভেবেছিলেন, নিজের সতিত্বের বিনিময়ে হলেও যদি তারা নিরাপদে থাকে। এছাড়া মোহাম্মদের তাবুতে সাফিয়া একাই ছিলেন। সেখানে মোহাম্মদ তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন কিনা কোনো ইহুদির পক্ষে তা জানার কোনো সুযোগ ছিল না। এছাড়া তার বাবা ভাই স্বামীর ঘাতকের কাছে তার এমনকি অজুহাত থাকতে পারে। ‘পরবর্তী দিন মোহাম্মদের ওয়ালিমা (বিয়ের উৎসব) এর আয়োজন করা হল।’ এখানে উল্ল্যেখ করা যেতে পারে যে, ইতিহাসবিদেরা বলেন, নবীর সঙ্গে সাফিয়ার বিয়ে হয়েছিল দু’জনের একান্তে রাত কাটানোর একদিন পর। ওই রাতেই তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার পর বিয়ে হয়েছিল।
এই নারী যুদ্ধ জয়ের উপহার। তার সঙ্গে সেক্স করা নবীর জন্য কোনো সমস্যা নয়, কারণ তার আল্লাহ এজন্য শুধু একটি আয়াত নাজিল করলেই সব বৈধ হয়ে যাবে। যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে গণিমতের মাল হিসেবে পাওয়া নারীর সঙ্গে বিয়ে ছাড়াই যৌনতা বৈধ হয়ে যাবে। যেমন সূরা আল নিসা’র ২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
“এবং সকল বিবাহিত নারী (যারা তোমার জন্য নিষিদ্ধ ছিল) যাদের যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ধরে আনা হয়। তাদের ওপর তোমাদের দক্ষিণ হাত মালিক হয়ে যায়।..”
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, দাসেরও যে অধিকার রয়েছে মহানবী তা বিশ্বাস করতেন না। একজন বিবাহিত নারী, স্বামী সংসার নিয়ে সুখে দিনযাপন করছেন। কিন্তু মোহাম্মদ এবং তার সাহাবাগণ তার নগরে হামলা চালিয়ে তাকে আটক করল। তার স্বামীকে হত্যা করল কিংবা তাকে দাসী বানিয়ে ফেলল। এরপর কোনো মুসলিম মুজাহিদ তাকে ধরে এনে ধর্ষণ করল। এবং সেখানে আল্লাহর আর্শিবাদ থাকে। কোরআনের এক জায়গায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যেমন সূরা আল মুমিনুন এর ১ থেকে ৭ নাম্বার আয়াতে কী বলা হয়েছে দেখুন।
- বিশ্বাসীরা অবশ্যই জয়যুক্ত হয়ে গেছে
- যারা নামাজে বিনয়ী
- যারা বেহুদা কথা এড়িয়ে যায়
- যারা যাকাত আদায় করে
- যারা নিজেদের যৌনাকাঙ্খাকে সংযত রাখে
- তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সেটা সংযত না রাখলে সেক্ষেত্রে তাদের নিন্দা বা দোষারোপ করা হবে না।
- কিন্তু যারা এদের ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করে, তবে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে।
অর্থাৎ মালিকানাভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনতা ইসলামে হালাল। এবার সাফিয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক,
“সাফিয়া ইহুদি বলে তাকে বিয়ে করার পর মোহাম্মদের অন্যান্য স্ত্রীরা তাকে হিংসা করতে লাগল। কিন্তু মোহাম্মদ সবসময় সাফিয়ার পক্ষ নিত। একবার মোহাম্মদের এক আরব স্ত্রী সাফিয়াকে চরম জ্বালাতন করা শুরু করল। সাফিয়া মহানবীর কাছে অভিযোগ করল। মহানবী তার প্রতি খুব সদয় হলেন, তাকে প্রবোধ দিলেন। তাকে সাহস দিলেন এবং যুক্তি সহকারে বোঝালেন। বললেন, ‘সাফিয়া বুকে সাহস রাখ! আরো শক্ত হও! তোমার ওপরে আসার কোনো পথই তাদের নাই। তুমি তাদের বল, ‘আমি নবী হারুনের এক মেয়ে, মুসা নবীর ভাগিনি এবং নবী মোহাম্মদের স্ত্রী।’
যখন তাকে অন্যান্য বন্দির সঙ্গে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে নিয়ে আনা হচ্ছিল, নবী তাকে বলেছিল, ‘সাফিয়া, তোমার বাবা সব সময় আমার সঙ্গে শত্রুতা বজায় রেখেছিল, যতক্ষণ না আল্লাহ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।’ জবাবে সাফিয়া বলেছিলেন, ‘কিন্তু আল্লাহ একজনের পাপের সাজা আরেকজনের ওপর দেন না’।” দেখুন মোহাম্মদের চরিত্রের স্ববিরোধীতা। কয়েকজন মুসলিমকে হত্যার অজুহাতে যিনি পুরো বানু কোরাইয়া গোত্রের ওপর গণহত্যা চালালেন।
এরপরেও সূরা আন নজম নাযিল হয়। সেখানে ৩৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
‘একজনের পাপের বোঝা আরেকজন বহন করবে না।’
আসলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যপারে আল্লাহ কেউ নন। কারণ সোফিয়ার বাবাকে মোহাম্মদের লোকজন হত্যা করেছে, আল্লাহ নয়। এটা যেন হিটলারের মত, যিনি বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরই সকল ইহুদিদের পাইকারীহারে হত্যা করেছে।’ যদি ঈশ্বরই এসব লোকেদের হত্যা করতে চান, সেক্ষেত্রে মোহাম্মদ এবং তার সঙ্গীরা তাদের নিজের মত করে এসব হত্যাকান্ড সংঘটিত করেন। আল্লাহর কী এসব ভাড়াটে ঘাতক রাখার দরকার রয়েছে?
‘এরপর নবী সাফিয়ার সামনে কয়েকটি পছন্দ রাখেন, বন্দিদশা থেকে মুক্তিদানের পর তার লোকেদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ এবং তার (মহানবী) সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন।’
আমাদের এটা স্মরণে আছে যে, মোহাম্মদ একটি পুরো গোত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এবং বাকিদেরও মেরে ফেলতে চাইছিলেন। সুতরাং সাফিয়া তার লোকেদের ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাবে মত দিলেন না।
“সাফিয়া খুবই বুদ্ধিমতী, ভদ্র ও সজ্জন মহিলা ছিলেন। তিনি বললেন,
হে আল্লাহর বার্তা বাহক, আমি নিশ্চিত করছি যে, দাওয়াত দেওয়ার আগেই ইসলামের ওপর আমার আশা আছে। আর যখন আমি আপনার উপস্থিতিতে সম্মানিত হচ্ছি, আমি ইসলাম এবং কুফরির মধ্যে আমার পছন্দ জানিয়ে দিচ্ছি। আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, নিজের স্বাধীনতা এবং আমার লোকেদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার চেয়ে আল্লাহ এবং তার রাসুল আমার কাছে অধিক প্রিয়।’ (তাবাকাত)”
এটাই কি সত্য, এটা কি আন্তরিক স্বীকারোক্তি? মনের কথা প্রকাশ করার জন্য সে কি নিরাপদ ছিল? সাফিয়া এমন লোকেদের দাসী হলো, যারা তার পরিবারের সকলকেই নৃশংসভাবে হত্যা করল, তাকেও হত্যা করতে পারত। তার মুক্তির বিষয়টি লক্ষ্য করুন, এটা যে প্রকৃত মুক্তি নয় সেটা তো পরিস্কার। আসলে সাফিয়া নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য এত সুন্দর করে মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে খুব বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়েছে।
এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সাফিয়া সদ্য বিবাহিত তরুণী, সে ছিল অনিন্দ্য সুন্দরী, বয়স বড়জোর ১৭ বছর। উচ্চতার দিক থেকে একটু খাট ছিল। একবার আয়েশা তার দৈহিক উচ্চতা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন, তার জবাবে মহানবী বলেছিলেন,
‘আপনি এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বললেন। যদি সেটা সাগরের বাম দিকের কথা হয়, তাহলে তাকে সাগরের পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তাতে পানির দূষণই বাড়বে।’ (আবু দাউদ)।”
“সাফিয়া যে মোহাম্মদকে খুব গভীরভাবে ভালবাসত, শুধু তাই নয় তাকে আল্লাহর নবী হিসেবেও মান্য করত। যখন মহানবী মদিনাতে হিজরত করতে গিয়েছিলেন তখন সোফিয়ার বাবা ও চাচাদের সঙ্গে তাদের কথোপকথন হত। সোফিয়া সেসব কথা শুনতেন। তারা মোহাম্মদকে দেখতে যেতেন, পরখ করে বুঝতে চাইতেন, আসলেই কি সে আল্লাহর রাসুল, আসলেই তার ওপর কোনো গ্রন্থ নাযিল হয়েছে? নাকি সে ভূয়া প্রতারক। যখন তারা ফিরে আসতেন, নিজেদের মধ্যে কথাবর্তা বলতেন, বিছানায় শুয়ে শুয়ে সাফিয়া তা শুনতেন। তাদের একজন বলতেন, মোহাম্মদের সম্পর্কে তুমি কী মনে কর? জবাবে বলতেন, ‘আমাদের গ্রন্থে যে ধরণের নবী সম্পর্কে ভবিষ্যতবানী করা হয়েছিল, তাকে তেমনই তো মনে হয়।’ আরেকজন বলতেন, ‘এখন আমাদের কী করা দরকার?’ জবাবে আরেকজন বলেছিল, ‘তাকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রত্যাখ্যান করবে’।”
এসব লেখা আছে আবু দাউদের হাদিসে। কিন্তু তা কি বিশ্বাসযোগ্য? কী করে দুইজন ইহুদি মোহাম্মদকে তাদের গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী নবী হিসেবে স্বীকৃতি দিল এবং সিদ্ধান্ত নিল তাকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রত্যাখ্যান করবে। এসব বর্ণনা সকল যুক্তিকে খারিজ করে দেয়।
এই বাজে ব্যাপারটি বিশ্বাস করার জন্য দরকার নীচু মানের বুদ্ধি। এটা স্পষ্ট নয় যে সাফিয়া তার শত্রুদের গ্রহণ করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল কিনা। কিংবা এমন গল্প ফাঁদা জেহাদী মতবাদ বিশ্বাসীদের আরেক জালিয়াতি কিনা তাও সুস্পষ্ট নয়। তাছাড়া নিজ ধর্মগ্রন্থে প্রতিশ্রুতি খুঁজে পাওয়ার পরও কেন তারা সর্বশক্তি দিয়ে একজনকে প্রত্যাখ্যা করবে, এটা সুস্পষ্ট নয়। এটাই সব নয়। বাইবেলের কোন জায়গায় মোহাম্মদ সম্পর্কে বলা হয়েছে? তাহলে সাফিয়া এবং তার চাচারা বাইবেলের কোন জায়গা থেকে এমন উদ্ভট তথ্য পাঠোদ্ধার করল? যেখানে মুসলিম স্কলাররা পর্যন্ত ১৪০০ বছর ধরে এসব উদ্ভট তথ্য আবিস্কার করতে সক্ষম হননি।
সে আঁচ করেছিল, খায়বার পতনের পর থেকেই তার ওপর বিশেষ খাতির যত্ন নেওয়া হচ্ছে, সব ধরনের আরাম আয়েশের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা প্রতীয়মান হয় যে, নবীর নজর পরার পর থেকেই তার এমন খাতির যত্ন শুরু হয়। সুতরাং সোফিয়া সত্যিকার নবী বলে মেনে নিয়েছিল।
দেখুন এই পৃষ্ঠায় লেখক কেমন স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। মাত্র কয়েক লাইন আগেই আমরা পড়েছি যে, সাফিয়াকে আটক করা হয়েছিল এবং একজন বন্দি হিসেবে তাকে মোহাম্মদের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে কিন্তু নিজে থেকে যায়নি। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কারণ সে ছিল উদ্ভিন্ন যৌবনা, আটক অন্যান্য বন্দি নারীদের চেয়ে সুন্দরতম।
‘যখন সাফিয়ার সঙ্গে নবী একান্ত গোপনীয়তায় কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাফিয়া সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এতে নবী তার বিরুদ্ধে সামান্য অভিযোগ করেছিলেন। এটা ছিল নবীর সঙ্গে সাফিয়ার প্রথম পর্বের সাক্ষাতের কথা। এর পরবর্তী পর্যায়ে নবী তার সঙ্গে একান্ত গোপনীয়তায় যায় এবং পুরো রাত কাটায়। এসময় উম্মে সুলাইম তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আল্লাহর রাসুলকে তুমি কেমন দেখলে?’ জবাবে সোফিয়া বলেছিলেন, ‘তিনি আমার ব্যাপারে খুবই সন্তষ্ট। আমরা সারারাত মোটেই ঘুমাইনি। আমার সঙ্গে তিনি রাতভর কথা বলেছেন।’ এরপর সোফিয়াকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কেন তুমি প্রথম দফায় আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে।’ জবাবে সাফিয়া বলেছিল, ‘আমি তার ব্যাপারে খুব ভীত ছিলাম। কারণ আমি ছিলাম ইহুদিদের অতি নিকটজন।’ তার চোখ দেখে এই জিনিষ পুনরায় আমার ধারণায় এসেছিল।” (তাবাকাত)
খাইবার অভিযানে কীভাবে সাফিয়ার সঙ্গে মোহাম্মদের সাক্ষাৎ হল, সে ব্যাপারে বুখারী সাহেব কয়েকটি হাদীস সংগ্রহ করেছিলেন।
“আবদুল আজিজ থেকে বর্ণিত, আনাস বলেছেন,
‘যখন আল্লাহর রাসুল খাইবার অভিযানে বের হন, তখন আমরা ফজরের নামাজ আদায় করছিলাম। তখনো আঁধার কাটেনি। নবী তখন ঘোড়ার পিঠে, আবু তালহাও ঘোড়ার ওপর। আমার ঘোড়া আবু তালহার পেছনে পেছনে। নবী খাইবারের গলিপথ ধরে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার হাটুর সঙ্গে নবীর উরুর ছোঁয়া লাগছিল। তার উরুদ্বয় ঢাকা ছিল না। আমি দেখছিলাম নবীর ফর্সা উরু। যখন আমরা নগরীর ভেতর প্রবেশ করলাম। তিনি বলে উঠলেন,আল্লাহু আকবর ‚ এরপর খাইবার ধ্বংস হয়ে গেল। যখন আমরা প্রস্তাব রাখতে যুদ্ধ করতে শত্রুপক্ষীয় গোত্রের কাছে গেলাম। যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের জন্য খুব অশুভ সকাল হল।’ একথা সে তিনবার বললেন।
“নাগরিকরা যে যার কাজে বের হতে লাগছিল। তাদের অনেকে বলতে থাকল, ‘মোহাম্মদ এসে গেছে।’ আমাদের সহযোগীরা বললেন, সৈন্যবাহিনীসহ এসেছেন তিনি। আমরা খাইবার দখল করলাম। অনেকে বন্দি হল। যুদ্ধ লুটের মালামাল সংগ্রহ করতে লাগলাম। দিহা এসে বললেন, ‘ইয়া আল্লাহর রাসুল! যুদ্ধবন্দি থেকে আমাকে একজন দাসী দিন।’ নবী বললেন, ‘যাও, যে কোনো একটি দাসী বেছে নাও। সে দাসী হিসেবে সাফিয়া বিনতে হুয়াইকে বেছে নিলেন। আরেকজন মানুষ আসলেন এবং নবীকে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি সাফিয়া বিনতে হুয়াইকে দিহাকে দিয়ে দিলেন, সে কিন্তু কোরাইয়া এবং আন নাদির গোত্রের প্রধান নেত্রী। সে কিন্তু একমাত্র আপনার সঙ্গেই মানায়, আর কারো সঙ্গে নয়। এরপর নবী বললেন, সাফিয়া এবং দিহাকে পাঠিয়ে দাও। যখন দিহার সঙ্গে সাফিয়া আসলেন। নবী তাকে দেখলেন এবং দিহাকে বললেন, ‘বন্দিদের ভেতর থেকে তার বদলে তুমি অন্য কোনো দাসী বেছে নাও। আনাস আরো বললেন, ‘এরপর নবী সাফিয়াকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিলেন, পরে তাকে বিয়ে করলেন।’
তাবিথ আনাসকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে আবু হামযা! নবী দেনমহর বাবদ তাকে কী দিয়েছেন।’ জবাবে বললেন‘ ‘সে নিজেই ছিল নিজের দেনমহর। আর নবী তাকে মুক্ত করে দিয়ে বিয়ে করলেন।’ আনাস আরো বললেন, ‘এই সময়ের মধ্যেই উম্মে সুলাইম তাকে বিয়ের সাজে সাজাচ্ছিল এবং রাতে তাকে বধুবেশে মোহাম্মদের কাছে পাঠানো হল।’ (সহিহ বুখারী, ১.৩৬৭)
মুসলমানদের মধ্যে বিয়েতে দেনমহর দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। যেখানে নববধুকে নিদ্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ প্রদান করতে হয় বিয়ের সময়। কিন্তু মোহাম্মদ সাফিয়াকে কোনো দেনমহর প্রদান করেননি। কারণ তিনি সাফিয়ার মুক্তি দেওয়াকেই দেনমহর হিসেবে তিনি ধরে নিয়েছিলেন। এটা খুবই কৌতুহল উদ্দীপক যে, তিনি কিন্তু সাফিয়াকে ক্রয় করেননি। তার নগরে হানা দিয়ে ধরে এনে দাসী বানিয়েছিলেন। এটা খুবই উল্লেখ করার মত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যে, এটা নবীর নৈতিক এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমাদের সুক্ষ্ম দৃষ্টি প্রদান করে।
এই ধরনের গল্পে আমাদের আধুনিক সংবেদনশীলতা আমাদের নতজানু করে দেয়। যদিও মোহাম্মদের বিষ্ময়কর শিক্ষা হল, তিনি সাফিয়াকে বিয়ে করে দুইটি পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রথমটা হল একজনকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দান, যাকে নবী নিজেই দাসত্ববরণে বাধ্য করেছিলেন। দ্বিতীয়টি হল একজন সুন্দরী নারীকে বিয়ে করেছিলেন।
আবু মুসা বর্ণিত, একজন যিনি দাসত্ব থেকে কোনো নারীকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং পরে তাকে বিয়ে করেছিলেন। তার সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল বলেছেন, তার জন্য দুইটি পুরস্কার রয়েছে।
(সহিহ মুসলিম, বই ০০৮, নাম্বার ৩৩২৭)
আরেক হাদিসে আছে, “আনাস থেকে বর্ণিত, নবী ফজরের নামাজের সময় খাইবারের অদূরে, তখনো আধার কাটেনি, তখন তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবর। খাইবার ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন আমরা শত্রুপক্ষের কাছে যুদ্ধের জন্য প্রস্তাব রাখলাম। যাদের সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের জন্য অশুভ ভোর হল। তখন খাইবারের বাসিন্দারা বের হয়ে এল এবং রাস্তা দিয়ে দিগ্বিদিগ ছুটাছুটি শুরু করে দিল। নবী এবং তার সহযোগীরা তাদের এবং তাদের সন্তানসন্ততিদের ধরে ধরে হত্যা করা শুরু করল। নারীদের বন্দি করল। সেই বন্দিদের মধ্যে সাফিয়াও ছিলেন। প্রথমে সে ডিয়া আলকালীর ভাগে পড়ে। পরে তাকে নবীর ভাগে ফেলা হয়। নবী তাকে দেনমহর বাবদ মুক্তি দান করেন।” (সহিহ বুখারী ভলিয়্যুম বি.৫৯, এন ৫১২)
(নোট: মোহাম্মদের অনেক স্ত্রীর মধ্যে সাফিয়া নামে এক সুন্দরী ইহুদি স্ত্রী ছিলেন। গণিমতের মাল হিসেবে তাকে নিজের ভাগে নিয়েছিলেন। পরে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের আগে তার সঙ্গে একান্তে রাতও কাটিয়েছিলেন তিনি। এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন বিশিষ্ট ইরানী গবেষক আলী সিনা। ফেইথফ্রিডমে প্রকাশিত তাঁর ‘সাফিয়া, দি জুইস ওয়াইফ অফ মোহাম্মদ’ শিরোনামের লেখাটি হতে তথ্য নিয়ে এই নিবন্ধ তৈরি করা হয়েছে।)
এপ্রিল ২৪, ২০২৩; ১১:০১ অপরাহ্ন
oyk thu to author. devil
. you ruined yourself.
Please receive iman before your death.