২০১০ বার পঠিত
অনেকেই প্রশ্ন করেন, পাকিস্তান যদি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হতে পারে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলে, ভারত কেন হিন্দু রাষ্ট্র হতে পারবে না!
এর উত্তর হচ্ছে অবশ্যই হতে পারবে। দক্ষিণ এশিয়ার সংকীর্ণ আত্মপরিচয়ের জনপদে সেটাই স্বাভাবিক। গোটা বিশ্বে ভারতকে তার বহিরাঙ্গের ধর্ম-নিরপেক্ষ কস্টিউমের কারণে সভ্য ও আলোকিত জনপদ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে শ্রেয়তর সংস্কৃতির রোল মডেল বলে ভাবা হতো ভারতকে।
কিন্তু কোন সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আত্মার মধ্যে না থাকলে; বহিরাঙ্গের নান্দনিক পোশাক দিয়ে খুব বেশিকাল ঢেকে রাখা যায় না অন্তর্গত ক্লেদ।
বেশ কিছু মানবিক রাজনৈতিক নেতা, লেখক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভারত ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের বাইরে গিয়ে মানবিক সূর্যোদয়ের যে আলো দেখিয়েছিলো; তা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের উদার সংস্কৃতির বিচ্ছিন্ন মানুষকে মানবিক ও শৈল্পিক ভাবনার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলো।
পাকিস্তানের সংকীর্ণ মুসলমান আত্মপরিচয়ের রোগের কারণে রাষ্ট্রটি বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হয়েছে। অন্যদিকে ভারত তার উদার অসাম্প্রদায়িক আত্মপরিচয়ের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার আলোকভূমি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বসমাজে।
গত পাঁচবছরে অসাম্প্রদায়িক ভারতের কস্টিউমটি বিবর্ণ হয়ে ধীরে ধীরে ‘হিন্দু ভারত’ উদয় ঘটেছে। এই মেটামরফসিস বা রূপান্তরকে বুঝতে গেলে প্রণব মুখার্জি চরিত্রটিকে বুঝতে হবে। তিনি ভেতরের কট্টর হিন্দুত্বকেন্দ্রিক সংকীর্ণতাকে সেক্যুলার দলের কোট পরে ঢেকে রেখে দশকের পর দশক অসাম্প্রদায়িকতার বাতিঘর হিসেবে বিরাজ করেছেন সর্বত্র।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কট্টর ইসলামপন্থার লোকেরা তাদের সংকীর্ণ আত্মপরিচয় নিয়ে প্রথম থেকে বিরাজ করায়; তাদেরকে নিয়ে নবীন প্রজন্মের ভ্রান্ত-অধ্যাস তৈরির কোন সমস্যা হয়নি। লোকটা পচা মুসলমান; সে অন্য ধর্মের মানুষকে ভালোবাসার মতো মানব হৃদয়ের অধিকারী না হওয়ায়; উপমানব হয়েই রয়ে গেছে; এটা বুঝতে সমস্যা হয়নি। আবার কট্টর ইসলামপন্থাজনিত সন্ত্রাসীদের মানবতার শত্রু হিসেবে বুঝতেও সহজ হয়েছে। কারণ তারা কট্টর ভাইরাসের রোগী হিসেবে এজ ইট ইজ নিজেদের উপস্থাপন করেছেন।
যারা ধর্ম-বর্ণ-গোত্র এইসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতকুয়া ভাবনার বাইরে প্রশস্ত মানবিক ও ধরিত্রী ভাবনায় আগ্রহী; তারা প্রথম থেকে কট্টর ইসলামপন্থার রোগ থেকে দূরে থাকতে পেরেছে। তাদের সামাজিক জীবনটি তৈরি হয়েছে কট্টর ‘শিবির’ ভাবনাকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে।
কিন্তু প্রণব মুখার্জির মতো যারা কট্টর হিন্দুত্ববাদের রোগ শরীরে পুষে রেখে; অসাম্প্রদায়িক সভা-সমিতিগুলো আলো করেছেন এতোকাল; হিন্দু সমাজের তরুণেরা বিভ্রান্ত হয়েছে এইরকম ফেইক আইকনকে দেখে; তাদের কাছ থেকে শিখে। এরপর অনেকেই এতোকাল পরে এসে যখন দেখছে সেক্যুলারিজমের আস্তিনের নীচে লুকিয়ে ছিলো কট্টর হিন্দুত্ববাদ; তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ফলে তাদের সামাজিক জীবনটি কট্টর ‘শিবসেনা’ ভাবনাকে দূরে রাখার অভিনয় দিয়ে প্রতারিত হয়েছে।
এ কারণেই মৌলিকত্ব বা স্বকীয়তা বিষয়টি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। তাতে রোগ নির্ণয় ও প্রতিষেধক ব্যবহার সহজ হয়।
আজকের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের মতো অসাম্প্রদায়িক ভাবনার জলসাঘরটি মানবতাপ্রিয় দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর স্বপ্নের প্রত্নগৃহ; পোড়োবাড়ি। আর আজকের ভারত হচ্ছে ক্রমশ হিন্দুভারত হয়ে ওঠার নব্য বজরংগৃহ।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
জুন ৫, ২০১৯; ৩:০২ অপরাহ্ন
এটা ঠিক বুঝতে পারছিনা যে ভারত যদি হিন্দু রাষ্ট্র হয়েও যায় তা নিয়ে আপনার এত মাথা ব্যথা বা দুশ্চিন্তার কি কারন আছে? নাকি আপনার দুশ্চিন্তার কারন যদি হিন্দু শক্তির উত্থান ঘটে তাহলে সেটা মুসলিমদের জন্য সমস্যা তৈরি করবে নাকি ওদের গাজওআয়ী হিন্দে বাধা হয়ে দড়াবে? ইসলামে একটা কথা আছে সুনেছি, “জান বাচান ফরজ”। আমার মনে হয় ভারত এখন সেই পথেই হাটছে এবং ঠিক পথেই হাটছে। আপনাদের মত সেকুলার মুখোশধারীদের তখনি ফাটে যখন আপনাদের জিহাদের পথে কেউ বাধা হয়ে দাড়ায়। যে মুসলিম কুরআন এবং ইসলামকে বিশ্বাস করে সে কখোনো সেকুলার হতে পারেনা।
জুন ৫, ২০১৯; ৬:০৮ অপরাহ্ন
একটি বস্তুনিষ্ঠ আলেচনা