ইসলাম পুনর্গঠনের অপর একটি উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সুদানী চিন্তাবিদ মাহমুদ মুহম্মদ তাহা কোরানের কথাকে আইন হিসেবে না নেওয়ার উদ্যোগ নেন।তাহা অনুভব করেন ,এখন সময় এসেছে ২১শতকের উপযোগী আইন মেনে চলার। তার এই মতবাদ প্রচারের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “Republic-an Brethren”। খার্তুমের ধর্মীয় মহল তাহা’র এই উদ্যোগ অত্যন্ত কঠোর হাতে দমন করে। ১৯৬৮ সালে তাকে ‘মুরতাদ’ ঘোষনা করা হয়। তার সমস্ত লেখা পুড়িয়ে ফেলা হয়।যদিও মুরতাদের ইসলামিক শাস্তি মৃত্যুদন্ড,১৭ বছর তাহা পালিয়ে সেই শাস্তির হাত থেকে বেচেছিলেন। তারপর তিনি তার সংস্কার কাজের জন্য আরেকবার চেষ্টা চালান এবং ১৯৮৫ সালে প্রকাশ্যভাবে ৭৬ বছর বয়সে তাকে ফাসি দেওয়া হয়।সমসাময়িককালের সবচেয়ে বিখ্যাত ‘মুরতাদ’ হিসেবে পাইপে’র বইয়ে নাম এসেছে লিবীয় নেতা মুয়াম্মর গাদ্দাফী’র কথা। এ পর্যন্ত আলোচিত সমস্ত ইসলামবিরোধী সমালোচনাই তার কাছে খুবই ক্ষুদ্র।ইসলাম.মুহম্মদ ও কোরানের সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি তিনি ব্যক্ত করেছেন, তা এ পর্যন্ত আলোচিত কেউ করতে পারেন নি।গাদ্দাফী ‘শরিয়া’ আইনকে ব্যক্তিগত ব্যপার ঘোষনা করে তার নিজস্ব ধারনাকে জনতার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি ইসলামিক ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করেছেন, মক্কার হজ্জ্বকে ঠাট্টা করেছেন “বোকামি ও সরলতা” বলে, মুহম্মদকে ব্যঙ্গ করেছেন এই বলে যে তার নিজের অর্জন মুহম্মদের চাইতে অনেক বেশী। সাধারনভাবে,তিনি কোরানের সত্যকে গভীরভাবে সন্দেহ করেছেন এবং মুহম্মদের জীবনের খুটিনাটি তথ্যের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও ধর্মীয় নেতারা তাকে “বিপথগামী ও ইসলামবিদ্বেষী”হিসেবে চিহ্নিত করেছেন.কিন্তু তাকে কোনো শাস্তি পেতে হয়নি বা তার লেখনীও বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।যদি সি আই-এ তাকে বিপদে ফেলতে চায়,তো আর কিছু না করে শুধু তার ‘মুরতাদী’ লেখাগুলো পুর্নমুদ্রন করে মৌলবাদীদের মাঝে বিতরন করলেই তারাই গাদ্দাফীকে নিশ্চিহ্ন করবে।আরও দুজন যুক্তিবাদী সন্দেহপ্রকাশ করেন যে ইসলাম আদৌ ইসলাম বর্তমানে সমস্যা সমাধানে কোনও কাজে আসবে কিনা। ১৯৮৬ সালে কায়রোর একজন আইনজীবি, নুর ফারওয়াজ একটি প্রবন্ধ লেখেন শরীয়া আইনকে সমালোচনা করে যাতে শরীয়াকে “কিছু গোষ্ঠিভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীল আইনগুচ্ছ যা বর্তমান সমাজে অচল” বলা হয়।ওই সালেই কায়রোর আরেক আইনজীবি ফারাজ ফাদা, একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন যাতে লেখা ছিল ,”শরীয়াকে না বলুন”। দুটিতেই রাস্ট্র থেকে ইসলামকে আলাদা করার কথা বলা হয়েছিলো কারন ইসলামের অনুসরন করে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ফাদা’রযুক্তিমূলক প্রবন্ধটি তার প্রতিদ্বন্দ্বী অন্ধবিশ্বাসী শেখ কাসক এর তুলনায় অত্যন্ত পাঠকপ্রিয় হয়। এটি টার্কিশ, পারসিয়ান প্রভৃতি ভাষায় অনুদিত হয়।
- ইসলাম কি তার সার্বজনীনতা ধরে রাখতে পেরেছে?
- একটি আধুনিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ইসলাম কি মূল সংবিধান হতে পারে?
- একটি ইসলামী সরকারকে কি আরব জনগনের ক্রমবিকাশের জন্য কৃতিত্ব দেওয়া যায়?
- “ইসলামে ফিরে চলো” নামের যে প্রবণতা গত ১০ বছরে ইসলামী দেশগুলোতে দেখা যাচ্ছে,তা কি সঠিক?
- বর্তমানে ইসলামের প্রধান শত্রু কি?
“একেবারেই না। এটা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মত নয়, এটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।আমরা দেখেছি যে যখন নেমেরি (সুদানের প্রধান ধর্মীয় ইমাম) শরীয়া প্রচলন করতে চাইলেন, তখন তা কাজ করল না। এই পদ্ধতির অপমৃত্যু ঘটে যখন কিছু লোকের হাত পা কেটে নেওয়া হয়। এই ঘটনাগুলো সাধারন জনসাধারনকে ক্ষেপিয়ে তোলে।পাথর মেরে মহিলা হত্যা, আজকাল খুবই দুর্লভ ঘটনা, একমাত্র সৌদি আরব ছাড়া। ইসলাম আধুনিক রাষ্ট্রের সাথে একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ন। না, ইসলাম কখনও রাষ্ট্রের ভিত্তি হতে পারে না।”
“আমি জানিনা সালমান রুশদী ব্রিটিশ আইন ও পুলিশের সাহায্যে এইপ্রবাসজীবন কে কিভাবে নিচ্ছেন। আমি মনে করি খুব সুখে নেই………….. আমি চোখের জল ফেলব না যদি কিছু ব্রিটিশ মুসলিম পথে ওত পেতে থেকে এবং তাকে অন্ধকার গলিতে নিয়ে গিয়ে তার ব্যবহার শোধরাতে চেষ্টা করে। এই ঘটনা যদি তার কলম কে সামলাতে সাহায্য করে,তাহলে সমাজের উপকার হবেও সাহিত্য কলংকিত হবে না।”
“কোরান একটি অন্তহীন অসংলগ্ন গ্রন্ত বা গল্পসমগ্র বা সাধারনের সম্মুখে বলা নীতিসূত্র, যা আবেগভরে বলা কোনও ধারণা যেটি প্রায়ই ধুলিতে মিশেছে বা আকাশে মেঘের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে।”
” মদীনায় নবীর কথাবার্তা প্রকাশ করে নিষ্ঠুর,আক্রমনাত্মক প্রবনতা,যা প্রমাণ করে তার পূববর্তী মক্কার নমনীয় কথাবার্তা ছিল দুর্বলতার ফল।”
“নিষ্ঠুরতা ও অন্যায় এর সাথে শঠতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার মিশ্রনই এই বিশ্বাসের মূলমন্ত্র, এবং মুহম্মদ ইহুদী ও পৌত্তলিকদের মধ্যে যারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে পেরেছে তাদেরকে হত্যার অনুমতি বা আদেশ দিয়েছেন। এই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তির মধ্য দিয়ে মুহম্মদের চরিত্রে কালিমালিপ্ত হয়েছে। মুহম্মদের জীবনের শেষ কয়েক বছর কেটেছে শাসন ক্ষমতা দখলের উদগ্র বাসনায়। একজন রাজনীতিবিদ সন্দেহ করতে পারেন যে তার নিজের যুবকের ন্যায় উৎসাহ এবং তার অনুসারীদের অন্ধবিশ্বাস দেখে তিনি হয়ত আড়ালে পুলক অনুভব করতেন। তার ব্যক্তিগত জীবনে মুহম্মদ মানুষের ন্যায় সকল কামবাসনা চরিতার্থ করেছেন, এবং এভাবেই তার নবীত্বের দাবীকে খেলো করেছেন। তিনি তার নবীত্বের দাবীতে বহু সংখ্যক নারীসংগম করেছেন, যা আবার তার অনুসারীদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন।”
“কোরান একটি বন্য ও অবাস্তব জিনিস। আমরা যদি মুহম্মদের বাণী শুনি,তাহলে দেখব যে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা, অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা, প্রতিশোধপরায়নতা এবং গোঁড়ামি কে প্রশংসা করেছেন,যা কোন সভ্য সমাজের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সেখানে কোন নির্দিষ্ট আইন আগাগোড়া অনুসরন করা হয় নি, এবং “সত্য ধর্মে” বিশ্বাসীদের জন্য সুফলদায়ক কাজকে প্রশংসা করা হয়েছে ও বিরোধীদের জয়কে অভিশাপ প্রদান করা হয়েছে।” হিউম আরও বলেন, “মুহম্মদ একজন ভন্ড নবী।” এটা এখন সবাই বোঝে যে কোরান মুহম্মদ রচিত এবং তার সমস্ত কার্যকলাপই ছিল “সৃষ্টিকর্তার ধারণার বিরোধী।”
আগস্ট ৭, ২০১২; ৩:২৫ অপরাহ্ন
প্রথম পর্বের মতই এই পর্বটাও অনবদ্য হয়েছে। লেখা চমৎকার, গতিশীল এবং জোরালো।
খুব ভাল কাজ করছেন। যেসব বাঙালি ইবনে ওরাকের এই বইটি পড়েন নাই–তাঁরা এই বাঙলা অনুবাদ পড়ে উপকৃত হবেন।
মাত্র ১২ পাতা শেষ হয়েছে–বুঝা যাচ্ছে অনেক পর্ব হ’বে। খুবই শ্রমসাধ্য কাজ। এই দূরুহ কাজ সাবলীল গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন সেজন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আগস্ট ৮, ২০১২; ২:৫১ অপরাহ্ন
লোকগুলোর কঠিন সাহস! যার খায় পড়ে তার বদনাম করে!
আগস্ট ৮, ২০১২; ৮:৫৪ অপরাহ্ন
অনুবাদে লেখকের পারদর্শিতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সহজ-সরল ও গতিশীল। পড়তে গেলে স্রোতের অনুকূলে নৌকা চালানোর মত মনে হয়।