ইহুদি প্রশ্নঃ ‘মানি ইজ দি অনলি গড’

11 মতামত পাওয়া গেছে

যা ছিল কার্ল মার্ক্সের ইহুদি বিদ্বেষ, তা আজ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা আশ্রয়। সময়ের আবহে কুৎসিত কীভাবে সুশ্রী হয়ে উঠে!

 

অবশ্য মার্ক্সবাদী সমাজ ব্যবস্থা সফল হলে ইহুদিদের সম্পর্কে মার্ক্সের এ বাণী বিদ্বেষমূলকই থেকে যেতো, অনুপ্রেরণা ও অনুকরণীয় হয়ে উঠত না।

 

উল্লেখ্য — পোস্ট-ইম্যান্সিপেশন যুগে ইহুদি বিদ্বেষের নব-জাগরণ ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের মূলে মার্ক্স ও ইউলেম মা’র এর মতো কমিউনিস্ট আইডিওলগদের এ-জাতীয় ইহুদি-বিদ্বেষী প্রচারণা প্রাথমিক ভূমিকা রেখেছিল।

    সমালোচনা আর বিদ্বেষের মধ্যে পার্থক্য আছে। মার্ক্স যেটা করেছেন সেটা হলো সমালোচনা, ইহুদি পণ্ডিতদের যুক্তি ধরে ধরে খণ্ডন করেছেন। বলা বাহুল্য, তার সমালোচনা তখনকার সময়ে তো বটেই, আজকের সমাজের জন্য আরো বেশি প্রযোজ্য।

ইহুদিরা বহু আগে থেকেই ব্যবসাবুদ্ধিতে পোক্ত ছিল। এমনকী যিশু তাদেরকে পথে আনতে ধনীরা স্বর্গে ঢুকতে পারবেনা বলে রীতিমতো হুমকিও দিয়েছিলেন।

    ঠিক, খ্রিস্টান ধর্মে সুদ, মুনাফার ব্যবসা নিয়ে কঠোর অবস্থান ছিল। যিশু নিজে বাজারে গিয়ে দাদন ব্যবসায়িদের সাথে ঝামেলা করেছিলেন।

    হলোকস্টের রসদ যোগানো কোন সমালোচনা নয়।

     

    বলা বাহুল্য, ইহুদি ধর্মগ্রন্থ ‘অল্ট টেস্টামেন্ট’ই সম্ভবত প্রথম ধর্মগ্রন্থ যাতে সুদ (ইউজারী) হারাম করা হয়েছেঃ

     

    …he who gives his bread to the hungry and covers the naked with a garment, withholds his hand from iniquity, takes no advance or accrued interest, observes my ordinances, and follows my statutes; he shall not die for his fathers iniquity; he shall surely live.

    (Ezekiel 18,16-17)

     

    নিউ টেস্টামেন্ট ও কোরানে সুদ নিষিদ্ধকরণ তৌরাতের অনুকরণমাত্র।

      ধর্মগ্রন্থে অনেক সুন্দর কথা লেখা থাকতে পারে, কিন্তু চর্চায় না থাকলে সেটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। বর্তমানে ইব্রাহীমী ধর্মের অনুসারী কেউই এসব মানে না, সূদ,দাদন, মহাজনী ব্যবসা এখন স্বাভাবিক।

      কাজেই ধর্মগ্রন্থের (যেমন যিশুর কাহিনী) উল্লেখ করে একটা জাতির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো অনুচিত, যা মার্ক্স করে গেছেন, আজও অনেকে করছেন। সুদের চর্চা কেবলই ইহুদিদের সৃষ্টি, এমন উদ্ভট বিদ্বেষমূলক প্রচারণার কোন ভিত্তি নেই। দুনিয়ার সব জাতির মানুষই যুগে যুগে তা চর্চা করেছে। ইহুদিরা অনেকটা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এ ব্যবসায় ঢুকতে বাধ্য হয় খ্রিস্ট্রিয় ১০০০ শতকের দিকে, যখন ইউরোপে ইহুদিরা ঘরের বাইরে গেলেই আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে পরে। পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বেও ইহুদিরা প্রায় একই পরিস্থিতিতে পরে। এর আগের যুগে ইহুদিদের সব ধরনের পেশাতেই নিযুক্ত দেখা যায়, ঠিক পোস্ট-ইম্যান্সিপেশন যুগের মতো। বলা আবশ্যক কিছু ইহুদি ঋণ ব্যবসায় সফল হলেও ইহুদি সমাজের বড় অংশ যুগে যুগে চরম আর্থিক দূর্দশা ভোগ করেছে।

       

      ‘সূদের চর্চা শুধু ইহুদিদের সৃষ্টি’ এটা বলা হয় নি। ইহুদিরা সূদ, ব্যাংকিং ব্যবসাকে কে ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ রূপ দিয়েছে। তারা সবকিছুকে টাকার মূল্যে বিচার করে টাকাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছে।

       

       

      টাকা জিনিশটাকে সবার ওপরে স্থান দেওয়া অন্তত বৈজ্ঞানিক দিক থেকে ভুল বলা চলে না। মানবসমাজ টিকে রয়েছে বিনিময়ের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ গিভ অ্যান্ড টেক পলিসির উপর। তাই বিনিময়ের মাধ্যমকে যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেই-ই মানবসমাজের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে। এটাই বাস্তবতা।

      সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। মানুষ ছাড়া  সব শুন্যাকার। টাকা মানুষের তৈরি মাধ্যম,কিন্তু  টাকা সবার উপরে স্থান পাওয়ায় আজকে মানুষের মূল্য নাই। মানুষ হয়ে গেছে টাকার গোলাম। যার টাকা আছে, সে যার টাকা নাই তাকে মানুষ বিবেচনা করে না, তাকে কিনে নিতে পারে।  

সুন্দর আলোচনা চলছে, আলোচনা চলুক।


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।