০
১৬৪২ বার পঠিত
ড. বিজন কুমার শীলের সাক্ষাতকার পড়লাম ডেইলি স্টারে। তার আবিষ্কৃত কিটের সমালোচনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘যারা এসব বলছেন, ফলাফল ঠিক মতো আসে না বা সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না, তারা সবাই অনেক অভিজ্ঞ, আমি তাদের মতো পণ্ডিত ব্যক্তি নই। আমি যা বলছি, যা করছি, তা নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে।’ কী বিনয়ী উত্তর। আমাদের দেশের কথিত মহাপন্ডিতদের জন্য উপযুক্ত জবাব।
কদিন আগে দুই ‘মহাপন্ডিতে’র বক্তব্য পড়লাম। তাদের ভাষ্যমতে র্যাপিড টেস্টিং কিটে পরীক্ষা সঠিক হয় না, আরো নানান কথা। তারা আমাদের দেশে পরিচিত মানুষ হলেও ড. বিজন কুমার শীল বিশ্বের খ্যাত কয়েকজন ভাইরোলজিস্টদের মধ্যে একজন। যিনি সার্স ভাইরাস ও ডেঙ্গু শনাক্তের কিট আবিষ্কার করেছেন। প্রাণি দেহে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গৌরব তার ঝুলিতে। যিনি ২০০৩ সালে পিসিআর পদ্ধতিরও ডিজাইন করেছিলেন। তার কাজ আর অভিজ্ঞতার ফিরিস্তি আরো অনেক লম্বা।
এমন একজন মানুষের নেতৃত্বে আবিষ্কারকে ওই দুই ‘মহাপন্ডিত’ এক কথায় খারিজ করে দিলেন। তাদের যদি প্রশ্ন করা যায়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে আপনাদের কোনো গবেষণা আছে? চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো শাখায় বিশেষ কোনো অবদান কি রয়েছে আপনাদের? কী জবাব দিবেন তারা জানি না। আমার জানা মতে তাদের এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়ারই ‘অভিজ্ঞতা’ নেই।
যে দেশে তেল আর ঘিয়ের দাম সমান হয়ে যায়। সে দেশ নাকি ছাড়তে হয় দ্রুত। আমাদের দেশে তো ঘিয়ের দাম তেলের চেয়েও নিচে নেমে গেছে। না হলে ড. বিজন কুমার শীলের পরীক্ষা দিতে হয় এসব লোকের কাছে। মুশকিলটা মূলত এইখানেই। আমাদের দেশে মেধার চেয়ে ‘হাত কচলানো’র মূল্যায়ন অনেকক্ষেত্রেই বেশি। ‘আপনি পুরুষ না মহাপুরুষ’, এমনটা যারা বলতে পারেন তারাই জায়গামত বসে যান। তারাই যাচাই করেন অন্যের মেধা। যাদের নিজেদের মেধা বলতে ‘হাত কচলানো’ আর ‘ইয়েস স্যার’ পর্যন্ত। অবস্থা এমন, তারা নিজেরা যে কিছু জানেন না, সেটাও তারা জানেন না।
আবার সেই গল্পটা বলি, একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। উগান্ডার এক মহাপন্ডিত গেছেন মঙ্গলগ্রহের এক সেমিনারে। সেখানে গিয়ে ভাবলেন মগজটা অনেকদিন ধোলাই হয় না, মঙ্গলগ্রহে এসেছি যখন তখন জিনিসটা ধোলাইয়ের দোকানে দিয়ে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। মগজ ধোলাইয়ের দোকানে দিয়ে আসলেন। এদিকে দিন যায়, মাস গড়ায় অথচ মগজ ডেলিভারি নিতে আসেন না সেই মহাপন্ডিত। ধোলাইয়ের দোকান মালিক তো মহাচিন্তায়। মগজ ছাড়া তিনি পন্ডিতি করছেন কীভাবে! অধৈর্য হয়ে ফোন দিলেন দোকান মালিক। বললেন, মগজ ভেলিভারি নিচ্ছেন না কেনো, মগজ ছাড়া পন্ডিতি চালাচ্ছেন কীভাবে? উত্তরে মহাপন্ডিত অভ্যাসে বলে ফেললেন, জ্বি স্যার। দোকানি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, জ্বি স্যার মানে। মহাপন্ডিত বললেন, আপনি বুঝবেন না, আমাদের দেশে পন্ডিতি করতে মগজ লাগলে না, জ্বি স্যার বললেই চলে। রেখে দেন পরের বছর সরকারি খরচে আবার সেমিনারে আসবো যখন তখন নিয়ে যাবো। সেবার বউ বাচ্চারাও সাথে আসবে। সময় নিয়ে আসবো। আর ধোলাইয়ের বিলটাও সরকারি খরচে ঢুকিয়ে দেয়া যাবে।
যাক গে, বাদ দিন। ফিকশন মানে গপ্পো-টপ্পো দিয়ে জীবন চলে না। জীবন চালাতে জীবিকা লাগে। না হলে এই করোনাকালে গণপরিবহন থেকে সব কিছু খুলে দিতে হয় কেনো? সুতরাং জীবিকাটা অনেক বড় ব্যাপার। আর সেই জীবিকার কারণেই ‘হাত কচলানো’ রপ্ত করা। আমার, আপনাদের সবারই করা উচিত। তাহলেই হয়তো জীবিকা বাড়বাড়ন্ত হবে, জীবনটাও বেঁচে যাবে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন