১২৩১ বার পঠিত
মনে আছে তোমার?
আমি বলেছিলাম
তোমার প্রত্যাশিত ওই বল’টা
তুমি যখন পেয়ে যাবে,
তখন তুমি খোয়াড় হতে মুক্তি পেয়ে
অন্য ভূবনে প্রবেশ করবে।
তখন তোমার ভিন্ন পরিমণ্ডল
ভিন্ন আকাশ, ভিন্ন তারা
তখনও তুমি আমার থাকবে কী না?
উত্তর দিতে তুমি একটুও দেরি করো নি
বলেছিলে-
নারে বুদ্ধু, আমি চিরকাল তোমার,
আমার যখন চরম বিপদ
যখন আমায় প্রেরণা দেয়ার কেউ ছিল না
তুমিই তখন ছিলে,
তুমিই জীবনে এসেছিলে
তোমাকে কী আমি ভুলতে পারি?
মনে করে দেখতো…
তুমি বলেছিলে কী না?
যেদিন সেনাকুঞ্জের অতিথিশালা হতে
তুমি খুশির খবর নিয়ে
হাঁপাতে হাঁপাতে আমার মুঠোফোনে
দুলে উঠা হৃদয়ে জানিয়ে দিলে
দোয়া করো প্রিয়
বল’টা যেন এবার পেয়ে যাই।
আমি কী যে খুশি হয়েছিলাম সেদিন
তার ভাষা পৃথিবীর কোন অভিধানে নেই,
তুমি কাঁপতে কাঁপতে মুঠোফোন ছেড়ে দিলে
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
ফিরতি কলে আমি তোমায়
পাবার চেষ্টা করলাম
তোমার মুঠোফোন ব্যস্ত তখন।
এমন সময় আবারও আমার মুঠোফোনে তুমি
জানালে পরম খুশিতে, গভীর কৃতজ্ঞতায়
বললে-
জান! মাকে ফোন দিয়েছিলাম।
আমি তোমার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে
আহ্লাদে বলেছিলাম
বল’তো এখনো তুমি পাও নি
এখনই মা’কে বলতে গেলে কেন?
তুমি দৃঢ়ভাবে বলেছিলে সেদিন
মা’র দোয়া পেয়ে গেছি
বল আমি পাবোই পাবো।
আমি জানতাম, আমার মন বলতো
মা’র দোয়া বৃথা যায় নি কখনো
মা’রা মন থেকেই চায়
তাঁর সন্তানরা সুখে থাকুক।
মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে
বালুরঘাট হতে ফার্মগেইট
কখন এসে গেছ মনে নেই,
পল্টনের গাড়ি কোথায় পাবে
তুমি জানতে না।
আমি মুঠোফোনে তাও জানিয়ে দিলাম
তুমি বলেছিলে তোমাকে গাইড দিতে,
আমি সেটা চাই নি।
আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজে শিখে নাও
সাহস করে চলতে শিখ,
মনে আছে তোমার?
বল পাবে কী না তা জানতে
কতোটা শংকায় থাকতে?
আমি তোমায় সাহস দিতাম
প্রেরণা দিতাম, আরও দিতাম আশা
বলেছিলাম-
বলের নাগাল তুমি পাবেই।
স্বপ্ন দেখাতে তুমি আমায়
বলতে-
বল নাগালে পেলে কীভাবে খেলবে
কীভাবে সাজাবে মাঠ
তোমার-আমার কল্পনার বাগান।
আমিও স্বপ্নে ভেসেছিলাম
আবেগে জড়িয়ে ধরেছিলাম।
একদিন তুমি অভিমানে
মুঠোফোন কেটে দিয়ে
অনেকক্ষণ চুপ হয়ে ছিলে,
কেউ কাউকে তরঙ্গ পাঠাই নি
ভালবাসায় সিক্ত অভিমানে।
হঠাৎই তোমার অবাক করা বার্তা
ছুটে এল আমার ফেসবুকের
গোপনীয় বার্তাকক্ষে।
তুমি লিখেছিলে-
তুমি বিশ্বাস করতে পারছো না
বল’টি তোমার নাগালে,
বল তুমি পেয়ে গেছ।
আমি সেদিন এতোটাই খুশি হয়েছিলাম
যে, গোপনে চেপে রেখেছিলাম
আমার আনন্দ খুশির বাঁধভাঙ্গা আবেগ।
তোমাকে বুঝতে দিই নি
বরং তোমাকে অভিমানের সুরে বলেছিলাম,
তুমিতো এখন বল পেয়ে গেছ;
আমি নিশ্চিত, তুমি আমাকে ভুলে যাবে।
তুমি মন খারাপ করেছিলে সেদিন
ভেবেছিলে আমি খুশি হই নি।
তাই না?
কিংবা হয়তো ভেবেছিলে
তোমার প্রতি আমার আস্থা কমে যাচ্ছে।
নাগো না,
ওসবই ছিল আনন্দের আতিশয্যে
আমার চাপা অভিমান।
এরপর কেটেছে নির্ঘুম রাত
পরিকল্পনার ব্যস্ত সময়,
হঠাৎ কোথা থেকে যেন
আকাশে জড়ো হলো মেঘ।
মেঘকে বরাবরই আমি ভয় পেতাম
সেদিনও ভয় পেয়েছিলাম।
তুমি মুঠোফোনে জানালে আমায়
আমাকে তুমি আর সহ্য করতে পারছো না
আমার কোনকিছুই নাকী তোমার
কিছুতেই ভাল লাগছে না।
সময় চাইলে আমাকে ভোলার জন্য
আমি সময় দিতে চেয়েছিলাম আবেগে,
পরক্ষণে আমার মন চায় নি
তোমায় সময় দিই।
আমি জানি তুমি কেন বলেছ আমায়
কেন চেয়েছ সময়
সবই আমি জানি।
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম
মেঘের ভিতর জল ছিল
সেই জলে তুমি ভিজে গেছ
আমার তোয়ালে সেই জল
মুছতে পারবে না কিছুতেই,
সেটা তুমি জানতে বলেই
আমাকে অনেক দূরে সরিয়ে দিলে।
তুমি আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে,
তুমি নতুন জলে স্নান করছো
সে জলে অনেক হংস
অনবরত সাঁতার কাটে।
আমি তোমার জল থেকে
একটু জল ধার চেয়েছিলাম
তুমি সেটুকুও দিতে চাইলে না।
আমি অনুরোধ করেছিলাম তোমায়
অতটুকু জল দিলে
তোমার সরোবরের কিছুই কমবে না,
বরং তৃষ্ণার্ত পথিক
প্রাণ ফিরে পাবে।
তুমি ভিখিরির মতো তাড়িয়ে দিলে
দাও নি এক ফোঁটা জল।
কী চেয়েছিলাম আমি?
শুধু এক ফোঁটা জলইতো
আর কিছুইতো আমি চাই নি!
এক ফোঁটা জলে কী এমন যেতো আসতো?
শুধু এক ফোঁটা জল
শুধু এক ফোঁটা জল
শুধু এক ফোঁটা জল…
বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী
১০ সেপ্টেম্বর ২০১২ খ্রিঃ
শুভজিৎ ভৌমিক এর আবৃত্তি শোনা যাবে সাউন্ডক্লাউড থেকে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন