১৮৮১ বার পঠিত
বিএনপির শীর্ষ নেতারা চিন্তা করে খুব সমসাময়িক একটি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। গয়েশ্বর রায় প্রস্তাব দেন, এমেরিকান লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, দেশে আমরা সর্বদলীয় দালাল তৈরী করেছি অসংখ্য। অথচ দেখুন আন্তর্জাতিক মানের দালাল তৈরী হয়নি। এখন এমেরিকান দালাল নিয়োগ দিতে হচ্ছে।
গয়েশ্বর বলেন, আমাদের এরা আসলে বিদেশে গিয়েও যে কোন একটা জেলা সমিতি করে নিজেরা নিজেরাই চেয়ার-টেবিল পেতে বসে সেমিনার করে। আর আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি শাখা কমিটি করে এখানে ওখানে স্মারকলিপি দেয়। বিমান বন্দরে এ ওর শীর্ষ নেতাদের দিকে পাদুকা ছোড়ার কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে। ফলে বিদেশে তাদের কোন নেটওয়ার্ক তৈরী হয় না। এ কারণেই আমাদের আন্তর্জাতিক মানের লবিস্ট নাই।
রিজভী আহমেদ বলেন, এমেরিকায় রেষ্টুরেস্ট খুলে টাকাটুকা হয়েছে এমন বিএনপির লোক খুঁজে দায়িত্ব দেয়া যাক লবিস্ট খোঁজার জন্য।
এমেরিকায় ফোন করে বিশিষ্ট অর্থশালী ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয় লবিস্ট খুঁজতে। কাজটা পাবার পর থেকেই লোকটার মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরতে থাকে।
লোকটা তার ছেলেকে ব্যাপারটা জানায়। ছেলের জন্ম এমেরিকায়। ফলে সে তার আব্বার এতো প্যাঁচের কথা কিছুই বুঝতে পারে না। সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তার হাতে সময় নেই।
লোকটা আশাহত হয়ে ফোন করে এক অনাবাসী বুদ্ধিজীবীকে। বুদ্ধিজীবী বলেন, আমি তো মিশেল ফুঁকো আর মাইকেল ম্যুর ছাড়া আর কোন লবিস্টের কথা ভাবতে পারছি না। কিন্তু এরা কী আপনার কাজে রাজি হবে!
লোকটা শেষে উপায়ান্তর না দেখে বিএনপি এমেরিকা শাখার তরুণদের কাছে সাহায্য চায়। তরুণদের কাছেও বিষয়টা নতুন। তবু তারা খুঁজে পেতে বিএনপির লবিস্ট খোঁজার দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকটিকে এক পার্কে নিয়ে যায়। সেখানে একদল এমেরিকান বসে নিশ্চিন্তে দাবা খেলে। এদের দেখে বিএনপির লবিস্ট হান্টার বেশ হতাশ হয়। তার মাথায় আসে না; কী করে এই সারাদিন বসে দাবা খেলা অলস লোকগুলো লবিস্ট হতে পারে!
একজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সে বিরক্ত হয়। তারপর বলে, পনেরো মিনিট কথা বলার জন্য এক হাজার ডলার দিতে হবে।
লবিস্ট হান্টার অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়। এক হাজার ডলারের চেয়ে কম নেবার জন্য মুলামুলি করতে থাকে দাবাড়ুর সঙ্গে।
দাবাড়ু ধমক দেয়, একহাজার ডলারের জন্য এতো বারগেইন করছেন; তার মানে লবিস্ট নিয়োগের অভিজ্ঞতা আপনার নেই।
লবিস্ট হান্টার বলে, আমাদের দেশে ভূমি অফিসে বা সচিবালয়ে লবিস্টদের ফি এতো হয় না। আর বড় বড় প্রকল্পের লবিস্ট পলিশিয়ানরা নিজেই। ফলে তারাই টেন পার্সেন্ট কেটে নেয়। আর এই টেন পার্সেন্ট কাটার দায়েই আমরা আজ সংসদের কুস্তির রিং-এর বাইরে। আপনার কাজ হচ্ছে আমাদের এই রিং-এ ফেরানো। টাকা যা লাগে দেয়া যাবে। মুলামুলি করি অভ্যাসে; কিন্তু হৃদয়টা বড় আমাদের।
দাবাড়ু বলে, সিরিয়ায় বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারায় আমরা লবিস্টরা বেশ হতাশার মাঝে আছি। এমেরিকার লবিস্ট না খুঁজে বরং লবিস্ট খুঁজুন চীনে। আমরা ব্যস্ত আছি নিজের দেশের “আপদটা”-কে নিয়ে। এইটাকে ফেলতে না পারলে এমেরিকার আর সুপারপাওয়ার থাকার আশা নাই।
প্রবাসী বাংলাদেশী লবিস্ট হান্টার বলেন, ভোট কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয়া লাগলে বইলেন; আমার অনেক স্পেশালিস্ট ফলোয়ার আছে। কিংবা কারো দিকে জুতা ছোড়ার কাজ থাকলেও আমাকে বলবেন। টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চাইলেও আমাকে বলতে পারেন। আবার মারপিট করতে পারে এইরকম গাট্টাগোট্টা পোলিং এজেন্টও সরবরাহ করা যাবে ভোটকেন্দ্রগুলিতে।
দাবাড়ু মুগ্ধ হয়ে তাকায়। চলুন আজ থেকে আমি আপনার লবিস্ট; আর আপনি আমার লবিস্ট।
এমেরিকান লবিস্ট একদিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গিয়ে বিএনপির মহাসচিবের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের এপয়েনমেন্ট জোগাড়ের চেষ্টা করেন।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব বলেন, মহাসচিবের তো বিভিন্ন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা আর ঘটনাগুলোর প্রতিবাদে বিবৃতিতে স্বাক্ষর ছাড়া বিশেষ কিছু কাজকাম নাই। একদিন নিয়ে আসেন বিএনপি মহাসচিবকে; দেখা করিয়ে দেয়া যাবে।
এমেরিকান লবিস্ট প্রবাসী বাংলাদেশী লবিস্ট হান্টারকে ফোন করে জানান, আপনার কাজ হয়ে গেছে। আমার একাউন্টে দশ হাজার ডলার ট্রান্সফার করে দিন।
লবিস্ট হান্টার আবার মুলামুলি করে, কিছু কম কইরা নিলে হয়না ভাইজান!
লবিস্ট আশ্বাস দেয়, আমাদের দেশে নির্বাচনের আগে আপনিও জাল ভোট বিশেষজ্ঞ জোগান দিয়ে; ভোট কেনা-বেচা বাবদ টাকা পাবেন ভুলে যাচ্ছেন কেন।
বাংলাদেশে বিএনপি সদর দপ্তরে ‘জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে দেখা হবে’; এ খবর আসার পরেই মওদুদ আহমদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বিএনপিকে দাওয়াত দিয়েছেন। বলেছে্ন, আমার দপ্তরে এসো বন্ধু বসতে দেবো পিঁড়ে, জল-পান যে করতে দেবো শালি ধানের চিড়ে।
ওদিকে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মহাসচিব মহোদয়কে বিএনপির সঙ্গে একটু দেখা করার অনুরোধ জানালে, মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বেহাল অবস্থার খবর ওসব বিএনপি-টিএনপির চেয়ে আমি বেশি জানি। নতুন করে জানার কিছু নাই। তুমি তবু ওরা এলে নোট করে নিও যা বলতে চায়। আমি বরং কফি আনান ভাইয়ের কুলখানির দাওয়াতটা ঘুরে আসি। এটা আমার কর্তব্য। আমাকেও তো একদিন মরতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যাওয়ার পর জাতিসংঘের
সহকারী মহাসচিব তার বক্তব্য নোট করে নেন।
এই খবর চাউর হবার পর ফেসবুকের বিজন গ্রামে ছ্যা ছ্যা পড়ে যায়।
গয়েশ্বর রায় মওদুদ আহমদকে বলেন, আপনার এই বানাইয়া-ছানাইয়া কথা বলার অভ্যাসটা ছাড়েন স্যার।
নাতি-নাতনিদের ফেইক আইডিগুলো আর্তনাদ করে, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘে নালিশ দেওয়াটা ঘৃণ্য এক কাজ। আর জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করা এতো সহজ না। দেখবেন
জাতিসংঘের আসন্ন অধিবেশনে যোগদানকারী আমাদের দুশো লোকের বরযাত্রীদল ঠিকই মহাসচিবের সঙ্গে সেলফি তুলে নিয়ে আসবে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন