করোনাভাইরাসের রোগি ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে যায়। ফলে, মাত্র কয়েকসপ্তাহে একটা ভাইরাস কীভাবে জনপদের প্রায় ৬০% মানুষকে আক্রান্ত করে সেইটা আমরা জেনেছি।
কিন্তু আমরা কি জানি ভাইরাস কীভাবে থামে? এইটা জানা আরো জরুরি। কারণ, এইটা আপনার এবং আপনার মা-বাবা-দাদা-দাদী, এমনকী শিশুদের প্রাণ রক্ষা করতে পারে।
তাহলে একটু শুনুন একটা ভাইরাস কিভাবে থামে।
একটা ভাইরাস তিন প্রক্রিয়ায় থামতে পারে। এই তিন প্রক্রিয়াকে আবার আবার দুই ধাপে ফেলা যায়।
প্রথম ধাপটি হচ্ছে, কন্টেন্মেন্ট (আটকে ফেলা)
দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে মিটিগেশান (প্রশমন করা)।
এই আলোচনার পূর্বে আমাদের জানতে হবে, করোনাভাইরাস মানবশরীরে ঢুকলে কী হয়?
কোন ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস ঢুকলে তার শরীরের ইমিউন সিস্টেম সেই ভাইরাসটির সাথে যুদ্ধ করে তাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম মূলত একটা সেনাবাহিনীর মত কাজ করে- এই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে।
করোনা ভাইরাস যেহেতু সম্পূর্ণ নতুন ভাইরাস, যাকে মোকাবেলা করার কোন অভিজ্ঞতা আমাদের শরীরের নেই। তাই, এই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধে ইমিউন সিস্টেম সবসময় সফল হয় না।
বয়স্ক ব্যক্তিরা অথবা যাদের ইমিউন সিস্টেম দূর্বল, তারা এই ভাইরাসের কাছে পরাজিত হয়; ফলে তাদের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম এই যুদ্ধে জয়ী হয়।
অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ৮০% ব্যক্তি টেরও পাবেনা সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বাকি ২০%কে হসপিটালে নিতে হয়। এবং এরমধ্যে ৫% এর ক্রিটিকাল কেয়ার লাগে।
কিন্তু যে ব্যক্তিটি বেঁচে থাকে, তার শরীর শিখে যায় কীভাবে ভবিষ্যতে এই ভাইরাসটিকে মোকাবেলা করতে হবে। ফলে, ওই ব্যক্তি আর ভাইরাস বাহক হতে পারে না। ওই ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম একধরনের সেল উৎপাদন করে, যারা মূলত স্মৃতির মতো কাজ করে; যাদের ‘মেমোরি সেল’ বলা হয়। এই মেমোরি সেলগুলো মনে রাখে কীভাবে ওই বিশেষ ভাইরাসকে পরাজিত করতে হয়। ফলে, ওই ব্যক্তি আর উক্ত ভাইরাসের বাহক হতে পারে না।
ওই ব্যক্তির শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। যার কারণে পরবর্তীতে ওই ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করলেও শরীরের ইমিউন সিস্টেম ওই ভাইরাসকে পরাজিত করতে পারে। এর কারণ, পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত এন্টিবডি এবং ট্রেনিং। তবে যে ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম করোনাভাইরাসের সাথে এই যুদ্ধে পরাজিত হয় সে মৃত্যুবরণ করে।
আমরা জানলাম শরীরে করোনাভাইরাস ঢুকলে কী হয়। এখন আমরা দেখবো-
একটা জনপদে করোনাভাইরাস ঢুকলে কী হয়
অধিকাংশ ব্যক্তির জানা থাকার কথা, করোনাভাইরাস রোগির সংখ্যা বিভিন্ন দেশে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে দ্বিগুণ হতে থাকে। এবং ঐকিক নিয়মে অংক করলে দেখবেন, এইভাবে যদি রোগি বাড়তে থাকে তবে মাত্র কয়েকসপ্তাহেই একটা দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। এইটাকে বলে, এক্সপোনেন্সিয়াল গ্রোথ।
কিন্তু ভাইরাসটা থামবে কীভাবে?
দুইটি ধাপ এবং তিনটি প্রক্রিয়া আছে।
প্রথম প্রক্রিয়া ভাইরাসকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা।
এই প্রক্রিয়াতে, একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে কয়ারান্টাইন এবং আইসোলেশান করা হয় যেন ভাইরাসটি কোনমতেই জনপদে বিস্তার লাভ করতে না পারে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির মরদেহকে বিশেষ পদ্ধতিতে কবর দেওয়া হয়। করোনাভাইরাস যুদ্ধে বিজয়ী সুস্থ ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আইসোলেট বা বিচ্ছিন্ন করে একটা সময় পরে সমাজে ফিরে যেতে দেওয়া হয় যখন তার শরীরে আর কোন জীবিত ভাইরাস থাকেনা। এবং তার শরীর এন্টিবডি ডেভেলপ করেছে। এই প্রক্রিয়াটি কন্টেন্মেন্ট ধাপের মধ্যে পরে। কন্টেন্মেন্ট (আটকে রাখা) ধাপের মূল নীতিই হচ্ছে যে কোন মূল্যে জনপদে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো।
বাকি রইলো দুইটি প্রক্রিয়া যা মিটিগেশান বা প্রশমন ধাপের অধীনে।
এই ধাপের অধীনে, দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি হচ্ছে, টীকা প্রদান।
টীকা প্রদানের মাধ্যমে একজনের শরীরে আগে থেকেই এন্টিবডি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, উক্ত ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম প্রস্তুত থাকে করোনা ভাইরাসের জন্যে। ফলে, ভাইরাস আক্রমণ করলেও শরীরের ইমিউন সিস্টেম এন্টিবডির মাধ্যমে যুদ্ধ করে, ভাইরাসের সাথে সহজেই বিজয়ী হয়।
কোন কোন ভাইরাসের টীকা একবার দিলে, ১০ বছর কাজ করে। কোন কোন টীকা একবছর, যেমন কমন ফ্লু এর টীকা একবছরের ওপরে কাজ করেনা। তাই প্রতিবছরেই টীকা দিতে হয়।
ফলে, ভাইরাস ঠেকানোর প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে আইসোলেশান কয়ারান্টাইন এবং দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, টীকা দেওয়া।
এতোদূর বুঝলাম কিন্তু তৃতীয় পদ্ধতিটি সবচেয়ে চমকপ্রদ।
এই পদ্ধতিটিকে বলা হয়, হেরড ইমিউনিটি। হেরড ইমিউনিটিকে তৃতীয় প্রক্রিয়া না বলে লক্ষ্যও বলা যায়।
হেরড ইমিউনিটি কী জিনিস?
আমরা ভাইরাস কীভাবে শরীরে ঢোকে সেই আলোচনায় দেখেছি, একজন মানুষের মধ্যে যদি করোনা ভাইরাস ঢুকে এবং সেই ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম যদি টিকে যায় তবে ওই লোকটি আর ভাইরাস বহন করতে পারে না।
ফলে আইডিয়াটা হচ্ছে, একটা জনপদের বড় একটা অংশ যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে পরে। তবে ওই জনপদে আর ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারবেনা।
কত বড় অংশ? কোন কোন ভাইরাসের ক্ষেত্রে এইটা ৫০%, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশী। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, ৬০% জনগোষ্ঠী যদি ভাইরাস আক্রান্ত হয় তবে সেই জনপদে ভাইরাস আর ছড়াতে পারবেনা। তখন হেরড ইমিউনিটি তৈরী হবে।
ব্রিটেনে বরিস জনসন তার এডভাইজারদের পরামর্শে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা কন্টেন্মেন্টের জন্যে ফুল লকডাউন করবে না, হেরড ইমিউনিটির পথে আগাবে। এবং ভাইরোজলিস্ট এবং এপিডমলজিস্টরা তার ব্যাপক সমালোচনা করেছে এবং তার ফলে বরিস জংশন উল্টো ঘুরে মিটিগেশন প্রক্রিয়ার হেরড ইমিউনিটির তত্ত্ব অনুসরণ না করে কন্টেন্মেন্ট মেথডে ফিরে গেছে যা হচ্ছে, লকডাউন এবং সোস্যাল ডিস্টেন্সিং। এবং এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল রিসার্চার নেইল ফারগুসনের নেতৃত্বে লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের কভিড ১৯ রেসপন্স টিমের একটি পেপার।
কী ছিল রিসার্চার নেইল ফারগুসনের সেই পেপারে?
সেই পেপারে বলা হয়েছিল, করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যদি কন্টেন্মেন্ট না করা হয় বা লক-ডাউন, সোশাল ডিস্টেন্সিং, আইসোলেশান না করা হয়; তবে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেনে প্রায় ৫ লক্ষ এবং আমেরিকাতে প্রায় ২২ লক্ষ লোক মারা যেতে পারে। এরপরে ভাইরাসটির বিস্তার হেরড ইমিউনিটি অর্জন করে ধীরে ধীরে কমে আসবে। তাদের আলোচনার মুল বিষয় ছিল, হেলথ সিস্টেমের সক্ষমতা। কারণ ভাইরাসটি এতো দ্রুততসময়ে এতো পরিমাণ রোগি তৈরি করবে হেলথ সিস্টেম তাদের চিকিৎসা দিতে পারবে না। কিন্তু এইটুকু সময়ে যে পরিমাণ মানুষ অসুস্থ হবে, তাদেরকে এনএইসএস ট্রিটমেন্ট দিতে পারবে না। কারণ, এনএইসএসের এতো অল্পসময়ে এতো পরিমাণ ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য সক্ষমতা নাই।
তাই তারা পরামর্শ দেয় লকডাউন এবং বিভিন্ন সোস্যাল ডিস্টেন্সিং পদ্ধতি অবলম্বন করতে। যেন, মৃত্যুর পরিমাণ কমে আসে। এবং এরমধ্যে সময় পাওয়া যাবে। ফলে, হয়তো টীকা আবিষ্কার হয়ে যাবে।
আরো একটি বিষয় হল, করোনাভাইরাস যেহেতু নতুন ভাইরাস; ফলে, মানুষের শরীরের ইমিউনিটি কতদিন থাকে এইটা জানা নেই।
কোন কোন ভাইরাসের এন্টিবডি সারাজীবন কাজ করে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একবছর পরপর ভাইরাস আসে। ফলে, পলিসি হিসেবে হেরড ইমিউনিটি প্রদ্ধতি খুবই রিস্কি। বলা যায় এইটার মানে হলো, বড় একটা জনগোষ্ঠীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া।
ইম্পেরিয়াল কলেজের এই রিপোর্টের পরে বরিস জনসন প্রাকৃতিকভাবে হেরড ইমিউনিটি অর্জনের ধারনা থেকে বের হয়ে আসে। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঢিলেঢালাভাবে চলার নীতি পরিবর্তনেও এই রিপোর্ট ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
কিন্ত বাংলাদেশের জন্যে এর মানে কী?
এর মানে খুব ক্লিয়ার। যদি কন্টেন্মেন্ট না করা যায় তবে, জনপদে করোনাভাইরাস ছড়াবেই। এবং আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ সামাজিক গুরুত্বের বিষয়টি খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। কিছু একটা করতে হবে বলে করে দেখাচ্ছে।
তাই আগামী দিনগুলোতে ভাইরাস যদি জনপদে ছড়িয়ে যায়, সেইটা যদি সরকার ঠেকাতে না পারে; এবং যদি সোস্যাল ডিস্টেন্সিং অর্জন না করা হয়, তবে হেরড ইমিউনিটি অর্জন করা পর্যন্ত বাংলাদেশে বড় অংকের প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে।
এবং টীকা দিয়ে হোক বা যথেষ্ট পরিমাণ ব্যক্তির শরীর অসুস্থ হওয়ার পরে ক্যারিয়ার হওয়ার সক্ষমতা হারাক না কেন, ভাইরাসের বিস্তার থামে শেষ পর্যন্ত হেরড ইমিউনিটি অর্জন করা পর্যন্ত। এবং ভাইরাস থামার এইটিই হচ্ছে তৃতীয় পদ্ধতি।
তাহলে আপনার জন্যে এর মানে কী?
আপনি যদি বয়োবৃদ্ধ হন বা যদি পূর্বের থেকে আপনার শরীরে কোন মারনব্যধি থাকে বা আপনার ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয় তবে আপনার মাথায় রাখতে হবে, টীকা দিয়ে হোক বা প্রাকৃতিক বিস্তার পদ্ধতিতে হোক, হেরড ইমিউনিটি পর্যায় আসা পর্যন্ত আপনি প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
এবং আমরা ইতোমধ্যেই জানি, বাংলাদেশের ক্রিটিকাল কেয়ার ব্যবস্থা বা করোনা ভাইরাসের ট্রিট্মেন্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা খুবই অল্প। আমি শুনেছি, এই সংখ্যা ৩০০ এর নীচে।
এর ফলে বাংলাদেশে ফ্ল্যাটেনিং দা কার্ভ কতটুকু কাজে আসবে সেইটা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ আমাদের ক্ষেত্রে হেল্থ সিস্টেমের সক্ষমতার যে লাইনটি তা খুবই নীচে অবস্থিত।
তার মানে হল, সরকার যদি কন্টেন করতে ব্যর্থ হয়ে এই ভাইরাস যদি জ্যামিতিক হারে কমিউনিটিতে বিস্তার লাভ করে তখন, জনপদের বড় একটা অংশ আক্রান্ত হবেই। এবং এদের মাঝে যাদের ক্রিটিকাল কেয়ার লাগবে, তারা চিকিৎসা পাবে না। তাই করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে হলে, এদের সবাইকে জনপদে হেরড ইমিউনিটি অর্জন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এই অবস্থায়, যারা বয়োবৃদ্ধ এবং যাদের বয়স কম, কিন্তু ইমিউন সিস্টেম দুর্বল; কিন্তু হৃদরোগ বা ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা আছে বা যাদের যে কোন ধরনের মারণব্যাধি আছে, তাদের জন্যে একমাত্র পদ্ধতি নিজেদেরকে সেলফ আইসোলেট করা।
কারণ, রাষ্ট্র কী ব্যবস্থা নেবে কী নেবেনা সেইটা তো আপনি জানেন না। ফলে, এই ধরনের ব্যক্তির পরিবারের ভেতরে খুব ভালোমত আইসোলেট করতে হবে; যেন তারা কোনভাবেই আক্রান্ত না হয়।
কতদিন?
যদি ভাইরাসকে সরকার কন্টেন করতে না পারে, যতদিন পর্যন্ত তাদের আশেপাশের ব্যক্তিরা নিজেরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ না হয় বা টীকা দিয়ে মুক্তি না পায় বা ভাইরাসটি প্রাকৃতিক কোন কারণে বিস্তার বন্ধ না করে।
সরকার যদি ভাইরাসকে কন্টেন করতে না পারে, এবং জনপদে ভাইরাস ছড়িয়ে যায় তবে টীকা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত যতদিন না হেরড ইমুইনিটি অর্জিত হয়, ইমিউন সিস্টেম দূর্বল যাদের; সেই জনগোষ্ঠীকে শক্তভাবে রুমে আটকে রাখতে হবে। তাদের সাথে এতেকাফের মত দূরত্ব রক্ষা করতে হবে।
নইলে আপনি যতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকেন, গৃহকর্মী বা ড্রাইভার দূরে রাখেন বা হাউজিং সোসাইটি বন্ধ রাখেন- আপনার এলিট পরিষ্কার চামড়া দিয়েই আপনার বৃদ্ধ বাপ মা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে। পরিষ্কার-পরিছন্নতা ভালো, কিন্তু এই ভাইরাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও মানবেনা, যদি সোস্যাল ডিস্টেন্সিং করা না হয়; একটা সময় পরে প্রতিটি সুস্থ মানুষ পটেনশিয়াল ক্যারিয়ার। কারণ, কন্টেন করা না গেলে এই ভাইরাস প্রাকৃতিক নিয়মে ছড়িয়ে জনপদের বড় একটা অংশকে আক্রান্ত করবে।
ব্র্যাকের রিপোর্ট নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছে তা অপ্রয়োজনীয় কারণে রিপোর্টে লিখুক না লিখুক, সোস্যাল ডিস্টেন্সিং না করলে ভাইরাস জ্যামিতিকহারে বাড়বেই।
আমি তাই আবার রিপিট করছি।
সরকার যদি ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্যর্থ হয় এবং ভাইরাস জনপদে ছড়িয়ে পড়ে, তবে অধিকাংশ ব্যক্তি আক্রান্ত হলেও অধিকাংশ ব্যক্তি টেরই পাবেনা, তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কারণ আমরা দেখেছি ৪০ কমবয়সী মানুষের বিভিন্ন দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১% এর চেয়েও অনেক কম।
কিন্তু বৃদ্ধদের জন্যে এবং ইমিউন সিস্টেম যাদের কম্প্রোমাইজড বা যাদের হৃদরোগ এবং ফুসফুসের রোগ আছে, বিভিন্নরকম প্রিকন্ডিশান আছে; তাদের জন্যে এই ভাইরাস মৃত্যুদানব।
ফলে, সহজকথায় বলা যায়; এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে ধরে নিতে হবে সরকার করোনা কন্টেন করতে পারবে না। মিটিগেশান পর্যায়ে চলে যাবে। ফলে হেরড ইমিউনিটি অর্জন করা পর্যন্ত আপনাকে আপনার ফ্যামিলির ইমিউন কম্প্রোমাইজড ব্যক্তিদের রক্ষা করতে হবে। তাদেরকে কোনভাবেই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দিতে দেওয়া যাবে না।
কারণ, আপনি চাইলেও জীবন বন্ধ রাখতে পারবেন না। মানুষকে খেতে হবে, বাজার করতে হবে, কাজ করতে হবে। আপনি চাইলেও ভাইরাসের প্রাকৃতিক বিস্তার বন্ধ করতে পারবেন না, বাঙালির খাসলত পাল্টাতে পারবেন না।
তাই সরকার যদি প্রাথমিক কন্টেন করতে ব্যর্থ হয়, এই জনপদের বড় একটা অংশ আক্রান্ত হবে এবং টীকা যদি না পাওয়া যায়; একসময়ে জনপদের বড় একটা অংশ আক্রান্ত হওয়ার পরে হেরড ইমিউনিটি আসবে। এই সময়ের মধ্যে যদি ইমিউন কম্প্রোমাইজড ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয় তাদের বড় অংশ মারা যেতে পারে।
তাই, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, এই সময়কাল পর্যন্ত আপনার পরিবারের বয়োবৃদ্ধরা এবং দূর্বল ইমিউন সিস্টেমের ব্যক্তি (এমনকী বাচ্চারাও), এমনকী যাদের হৃদরোগ এবং ফুসফুসের রোগ আছে; সেইসকল ব্যক্তি অথবা সকল ধরনের মারণব্যাধি আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে সেলফ আইসোলেট করুন।
এইটা সবচেয়ে জরুরি। এর ফলে কমিউনিটি স্প্রেড হলেও, হেরড ইমিউনিটি অর্জন হওয়া পর্যন্ত আপনি এই দূর্বল মানুষগুলোকে রক্ষা করতে পারবেন।