ঈদ-উল-ফিতরের পর ঈদ-উল-আযহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলমান এই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করে এবং কোরবানির নামে কয়েক কোটি জীব আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে হত্যা করে। মহা-ধুমধামসহ মুসলমানগণ ঠিক কতো প্রাণীকে যে হত্যা করে তার হিসেব কষা দুঃসাধ্য। সংখ্যাটা নিয়ে একটা আনুমানিক হিসেব করা যেতে পারে মাত্র। আর তা করতে গেলে নিশ্চিতভাবেই গা শিউরে ওঠবে, অবশ্য যারা ধর্মান্ধ ও যুক্তি-বুদ্ধিহীন তাদের কথা আলাদা। প্রতি পাঁচ জনে একটি পরিবার ধরলে বত্রিশ কোটি মুসলমান পরিবার বাস করে বর্তমানে বিশ্বে।
গরীব মানুষরাও কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করে। এটা শুধু ধর্মান্ধতার প্রভাবে নয়, পারিবারিক ঐতিহ্য ও সামাজিক মান-মর্যাদাও জড়িয়ে থাকে কোরবানির সঙ্গে। ফলে সামর্থ না থাকলেও কোরবানি দেয় অসংখ্য পরিবার। শতকরা কতো পরিবার কোরবানি দেয় বলা খুব মুশকিল। পঁয়ষট্টি/সত্তর শতাংশ হতে পারে। যদি ধরা হয় ষাট শতাংশ পরিবার কোরবানি দেয়, তবে সেই পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯.২ কোটি। ছাগল কোরবানি দিতে হয় মানুষপিছু একটি। এক এক বছর একটা পরিবারে একজনের নামে কোরবানি দেওয়া হয়। একাধিক সদস্যের নামেও দেয় অনেক পরিবার। একটি গরু বা উট কোরবানি দেওয়া যায় সাত জনের নামে। অনেক বিত্তবান পরিবার আছে যারা পরিবার পিছু এক বা একাধিক গরু কিংবা উট কোরবানি করে।
মুহাম্মদ যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন তাঁর খাওয়া-পরার সংস্থান ছিলো না। তাঁকে অপরের সাহায্যে গ্রাসাচ্ছাদন করতে হতো। সেই তিনি পরের সম্পত্তি, টাকা-পয়সা ও ধন-দৌলত লুট করে এতো বড়ো বিত্তবান হয়েছিলেন যে বিদায় হজের বেলায় তিনি ১০০টি উট কোরবানি করেছিলেন। এসব হিসেব করা মুসকিল। তবে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু ও উট মিলিয়ে প্রত্যেক বছর কোরবানির ঈদে আনুমানিক ১১.৫২ কোটি [প্রায় সাড়ে এগারো কোটি] জীবকে ধর্মের নামে হত্যা করা হয়। হিন্দুরা বিবেকানন্দকে দেবতা জ্ঞান করে। তিনি বলেছেন- জীবে দয়া করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর। তবু হিন্দুরাও ধর্মের নামে হাজার হাজার, হয়তো বা লাখ লাখ জীব হত্যা করে। ওদের কথা এই পরিসরে থাক, আমার নিবন্ধের বিষয় মুসলমানদের ঈদ-উল-আযহা ও কোরবানি। সুতরাং আলোচনা কোরবানিতেই সীমাবদ্ধ থাক।
এই যে কয়েককোটি জীবকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ধর্মের নামে উৎসব পালন করা, এই হত্যাকাণ্ডকে শুধু ভয়ঙ্কর ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড বললেও কম বলা হয়। তাই বোধ হয় এই বর্বর হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্যে এর সঙ্গে আল্লাহর নামে একটা বিধান তথা রূপকথার গল্প যোগ করে দেওয়া হয়েছে। হত্যা তো হত্যাই, এর সঙ্গে আল্লাহর বিধান যোগ করে দেওয়া হলেই সে হত্যাকাণ্ড কী করে মহান হয়ে উঠে বুঝি না। কিন্তু হয়, ধর্মান্ধদের কাছে অন্তত হয়। সে যাই হোক, হত্যাকাণ্ডের সমর্থনে কী সেই গল্পটা চালু আছে তা দু-এক কথায় শোনা যাক। কোরানে বর্ণিত আছে যে আল্লাহ নাকী এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর [আল্লাহর প্রেরিত দূত] প্রেরণ করেছেন পৃথিবীতে। কোরানেই অন্যত্র এ কথাও বলা হয়েছে যে সংখ্যাটা দু’লক্ষ চব্বিশ হাজার। আল্লাহ সংখ্যাটা দু’রকম কেনো বলেছেন তা নিয়ে মুসলমানদের মাথাব্যথা নেই। বরং কোরানে দু’কোটি চব্বিশ হাজার বললেও বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা হতো না। সংখ্যাটা থাক, ঈদের সঙ্গে পয়গম্বর উপাখ্যানের যোগ কোথায় সে কথায় আসা যাক।
মুহাম্মদ বলেছেন যে আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বরের মধ্যে একজনের নাম ছিল ইব্রাহিম। তিনি একবার স্বপ্নাদেশ পেলেন যে তাঁর একমাত্র প্রাণাধিক পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি [হত্যা] করতে হবে। এই ইসমাইলও নাকী একজন পয়গম্বর ছিলেন। ধর্ম প্রচারকরা বলেছেন আল্লাহ পয়গম্বর পাঠিয়েছেন কয়েকশ’ বছর পর পর পথভ্রষ্ট মানুষদের পথ দেখাতে। তা হলে আল্লাহ ইব্রাহিম ও তাঁর পুত্র ইসমাইল দুজনকেই কেনো প্রতিনিধি করে পাঠালেন তার জবাব পাওয়া যায় না। সে যাই হোক, ইব্রাহিম নবী আল্লাহর এই মহান [!] ইচ্ছার কথা ইসমাইলকে জানালেন। ইসমাইল নবীও হাসতে হাসতে সম্মতি জানিয়ে দিতে দ্বিধা ও বিলম্ব করেন নি। ইব্রাহিম নবী তখন তাঁকে আল্লাহর নামে কোরবানি [হত্যা] করেন। ইসমাইলের কোরবানি কিন্তু হয় নি। আল্লাহর অপার মহিমায় ইসমাইলের পরিবর্তে কোরবানি হয় একটা ভেড়ার, অন্য মতে দুম্বার। সেই থেকে মুসলমানদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ জারি হয় যে ঈদ-উল-আযহার উৎসবে তাদের পশু হত্যা করতে হবে। ইসলামি বাখ্যায় ইব্রাহিম ও ইসমাইলের উক্ত ঘটনাটি হলো আল্লাহর প্রতি প্রেম-ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের একটি মহৎদৃষ্টান্ত। প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার সঙ্গে জীব হত্যার সামঞ্জস্য বিধান করা যায়? সে যাই হোক, এই গল্পটাই হল ঈদ-উল-আযহার কোরবানির মূল চালিকা শক্তি।
যদি গল্পটাকেই সত্যি বলে ধরে নেওয়া যায়, তবুও প্রশ্ন জাগে- এখন যেভাবে মুসলমানদের কোরবানি করতে দেখা যায় তা কী যথার্থই কোরবানি? ইসমাইলকে কোরবানি করার উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে, আল্লাহর উদ্দেশে প্রাণপ্রিয় একটা পশু বা জীবকে হত্যা করা, তবে সেই পশু বা জীবটিকে [গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা ইত্যাদি] প্রথমে নিজ বাড়িতে স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-মমতা দিয়ে পালন করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা মোটেই হয় না। বাজার থেকে পশু কিনে এনে সাধারণতঃ সেটা কোরবানি দেওয়া হয়। স্বভাবতই কোরবানিদাতার সে প্রাণীর প্রতি বিন্দুমাত্র প্রেম-ভালোবাসা-দয়ামায়া থাকে না। তা হলে এর সঙ্গে ইসমাইলকে কোরবানি দেওয়ার যোগ কোথায়? তা হলে কেনো আল্লাহর নামে কয়েক কোটি প্রাণীকে হত্যা করা? প্রতিবছরঈদে শুধু একটা হত্যাকাণ্ডের দানবীয় প্রথা পালনের জন্যে কোটি কোটি জীবকে হত্যা করার জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থের শ্রাদ্ধ করা হয়। তার পরিমাণ কত- তার হিসেব কেউ কি কখনো করেছে?
১১.৫২ কোটি প্রাণীর মধ্যে যদি অনুমান করা যায় যে ছাগলের সংখ্যা ৭ [সাত] কোটি, এবং গরু ও উট মিলে ৪.৫২ কোটি, তবে তাদের আনুমানিক কত দাম হতে পারে হিসেব করে দেখা যাক। গড়ে যদি ছাগল প্রতি ১৫০০০ টাকা দাম ধরা হয়, তবে ৭ [সাত] কোটি ছাগলের মোট দাম হয় ১০৫০০০ কোটি [এক লক্ষ পাঁচ হাজার কোটি] টাকা। গরু ও উটের দামে অনেক পার্থক্য। তবু দু’টো পশুর গড় করে যদি ধরা হয় এক একটার দাম ৫০০০০ [পঞ্চাশ হাজার] টাকা, তবে ৪.৫২ কোটি গরু ও উটের দাম হয় ২৭১২০০ হাজার কোটি [দু লক্ষ একাত্তর হাজার দুশ’ কোটি] টাকা। অর্থাৎ শুধু কোরবানির জন্যে মুসলমানরা প্রতি বছর খরচ করে ৩৭৬২০০ [তিন লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার দুশ’] হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ যোগ করলে শুধু কোরবানির জন্যে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৪০০০০০ হাজার কোটি [চার লক্ষ হাজার] কোটি টাকা। ভাবা যায় কী বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয় কোরবানির জন্যে! জানি না এতো বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় আর কোথাও হয় কী না।
এই ঈদে শুধু কী কোরবানির জন্যেই বিপুল অঙ্কের টাকা অযথা নষ্ট হয়? না, এর বাইরেও আরো বিপুল অঙ্কের টাকা জলে যায় হজের পেছনে। মুসলমানরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে মক্কা হজ করতে গেলে বেহেস্ত পাবে, না হলে জাহান্নামের আগুনে অনন্তকাল পুড়ে কষ্ট ভোগ করতে হবে, কারণ আল্লাহ মুসলমানদের হজ করতে আদেশ দিয়েছে। একদম বানানো কথা। ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের বহু আগে থেকেই আরবের মানুষরা মক্কার কাবায় যেতো হজ করতে। কাবা ছিলো পৃথিবীর অন্যতম প্রধান বিখ্যাত একটা মন্দির। তার ভিতর ছিলো ৩৬০টি দেবদেবীর বিগ্রহ। আরবরা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজে যেতো প্রতি বছর তাদের নিজস্ব দেবদেবীদের পূজা দিতে। মুহাম্মদ একদিন অতর্কিতে গায়ের জোরে মক্কা দখল করে সেই মূর্তিগুলি ধ্বংস করে দেন। তারপর সকল বিধর্মীদের কাবায় হজ করতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। বিধর্মীদের হজে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় মক্কার মানুষের প্রচুর আর্থিক লোকসান হয়, তখন তিনি সেটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্যে পৃথিবীর সব মুসলমানদের বছরে একবার হজে যাওয়া বাধ্যতামূলক করে দেন। পৃথিবীর মুসলমানরা মুহাম্মদের সেই চালাকি বুঝতে না পেরে আজো দলে দলে হজ করতে যায়। গরীব দেশের গরীব মুসলমানরাও জমি জায়গা বিক্রি করেও মক্কা হজ করতে যায়। এভাবেই গরীব দেশের গরীব ও বড়োলোক মুসলমানদের হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিবছরনষ্ট হয়। বাংলাদেশের সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, এর জন্যে প্রতি বছর তাঁর দেশের ৫০০ কোটি টাকা নষ্ট হয়। তিনি হজ প্রসঙ্গে কতকগুলি ভীষণ সত্যি ও সুন্দর কথা বলেছেন। শোনা যাক তিনি কী বলেছেন-
“আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তারচেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। …এই হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। …এভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায় প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়। … আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকের কীভাবে চলবে। তারাতো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করলো যে, আমার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে। … তাবলিগ জামাত প্রতি বছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনো কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।”
এক লাখ লোকের জন্যে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হলে কুড়ি লাখ লোকের জন্যে খরচ হয় ১০,০০০ [দশ হাজার কোটি] টাকা। হ্যাঁ, কুড়ি লাখ লোক গেছে এবার হজ করতে। অর্থাৎ এই ঈদের পেছনে মুসলমানদের ন্যূনতম খরচ হয় চার লক্ষ দশ হাজার কোটি টাকা। শুধু কি অর্থের অপব্যয়ই হয়?তার সাথে অযথা নষ্ট হয় তাদের ব্যাপক উদ্যম, পরিশ্রম ও মূল্যবান সময়ও। এই বিপুল অর্থ এবং উদ্যম ও পরিশ্রমের কিয়দংশও যদি মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্যে ব্যয় করা হতো, তা হলে পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজের প্রভূত উপকার করা সম্ভব হতো। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের যে দুরাবস্থা তাতে সে রকম হওয়াটাই অধিক বাঞ্ছনীয়। বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজের যে দুরাবস্থা তাতে নিশ্চিতভাবে এটাই সবার আগে দরকার।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের অবস্থা কতো শোচনীয় তার ছবি ধরা পড়েছে। ছবিটি এ রকম- সম্প্রতি একটি জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গে দেখা যাচ্ছে- শহরাঞ্চলে দারিদ্রের হার যেখানে ১২%, মুসলিমদের মধ্যে দারিদ্রের হার সেখানে ২৭%। গ্রামাঞ্চলে হিন্দুদের মধ্যে দারিদ্রের হার যেখানে ২৫%, মুসলিমদের মধ্যে দারিদ্রের হার সেখানে ৩৩% গ্রামাঞ্চলে একজন মুসলমান মাথা পিছু ব্যয় করতে পারে মাত্র ৫০১ টাকা, হিন্দু পরিবারের সেখানে একজন ব্যয় করতে পারে ৬০১ টাকা। পশ্চিমবঙ্গে ৬ বছর পর্যন্ত শিশুর কম ওজন- হিন্দু শিশু ৪৩%, মুসলমান শিশু ৫০% রক্তাল্পতার শিকার মুসলিমরা ৯৮.৬০% মুসলিম প্রসূতি রক্তাল্পতায় ভোগেন ৯৮% সাক্ষরতা- পশ্চিমবঙ্গের গড় থেকে মুসলিমরা পিছিয়ে আছে ১১% (সূত্রঃ নতুন গতি ৭-১৩ এপ্রিল ২০১৪)। না, এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ছবি নয়। সারাদেশের ছবিটি প্রায় একই- মুসলমানরা সর্বত্রই ধুঁকতে ধুঁকতে ও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। হ্যাঁ, মুসলমানরাই সবথেকে এ দেশে পশ্চাদপদ। সারা পৃথিবীতেও ছবিটা মূলতঃ একই। মুসলিম দেশগুলিই সারা বিশ্বে সব থেকে পেছনের সারিতে, এই দেশগুলি পৃথিবীর ধনী দেশগুলির দান-খয়রাতের ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীত দু’ধরনের দেশ দেখা যায়- দাতা দেশ আর গ্রহীতা দেশ। ধনী দেশগুলো হলো দাতা দেশ এবং গরীব দেশগুলো হলো গ্রহীতা দেশ। এই গরীব দেশগুলির তালিকায় রয়েছে অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলি।
এতো করুণ অবস্থা যাদের, যারা এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াবার শক্তি অর্জন করতে পারে নি, তাদের কী শোভা পায় ধর্মের নামে এত বিপুল অর্থের অপচয় করা? অনুদান ও ধারদেনা থেকে যেটুকু বিদেশি মূদ্রা অর্জিত হয়, তা হজের নামে আরবে তথা পরের দেশে ঢেলে আসা? মুসলিম সমাজ কী ভাববে না- আর কতকাল তারা অহেতুক এভাবে অর্থ ও উদ্যম নষ্ট করবে? যে বিপুল অর্থ নষ্ট হয় তা দিয়ে নির্মাণ করা যায় আধুনিক শিক্ষার জন্যে অসংখ্য স্কুল, কলেজ [সাধারণ কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ, ল কলেজ, আর্ট কলেজ, গবেষণাগার ইত্যাদি], এবং ইউনিভার্সিটি। ঐ টাকায় গরীব ও মেধাবি ছাত্র-ছাত্রিদের বিনামূল্যে লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা করা যায় এবং তৈরি করা যায় অসংখ্য হাসপাতালও। তা করলে মুসলিম সমাজ এবং মুসলিম দেশগুলির পক্ষে চোখ ধাঁধানো উন্নতি করা সম্ভব। তার মধ্যে দিয়ে তারা তাদের পশ্চাদপদতা অনায়াসে কাটিয়ে উঠতে পারে। মুসলিম সমাজের মানুষরা এসব ভাববে না? আর কবে ভাববে? আর কতকাল তারা আরবের গোলামি করবে আর নিজেরা শুধু পিছোতেই থাকবে? ধর্ম নয়, ধর্মের চেয়ে মানুষ অনেক বড়ো- এ সত্যটা উপলব্ধি করতে আর কতকাল সময় নেবে মুসলিমরা?