০
১৭৬৮ বার পঠিত
হিরো আলমের গানকে গণউৎপাত আখ্যা দিয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজবীবী। মূলত হিরো আলম রবীন্দ্রনাথের ‘আমার পরাণ যাহা চায়’ গাইতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধিয়েছেন। তার উপর হামলে পড়েছেন একপাল মানুষ। গান নিয়ে প্যারোডিসহ নানা ক্যারিকেচার প্রচলিত ব্যাপার এবং এটা স্বাভাবিক। সারাবিশ্বেই হয়। স্বয়ং দেবতাগণও প্যারোডি আর ক্যারিকেচারের হাত থেকে রেহাই পাননি। সেখানে রবীন্দ্রনাথ কোন ছাড়।
যাকগে, কথা সেটা না। আইন কী জিনিস? সবকিছুতেই আইনের হস্তক্ষেপ করার নৈতিক অধিকার রয়েছে কিনা, এটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি ঘরে লাইট নিভিয়ে সঙ্গম করবেন, না লাইট জ্বালিয়ে তাও বলতে গেলে এখন আইনের আওতায়। যে কেউ অভিযোগ করতে পারেন আমার স্বামী বা স্ত্রী লাইট জ্বালিয়ে সঙ্গম করেন, এটা আমি পছন্দ করি না, এতে আমার অধিকার হরণ হয়। অবস্থা এমনটাই দাঁড়িয়েছে। কদিন আগে দেখলাম স্বামীর যৌনাকাঙক্ষা বেশি বলে বিদেশের কোর্টে এক স্ত্রী নালিশ দিয়েছেন। তিনি ডিভোর্স চেয়েছেন। কার যৌনাকাঙ্ক্ষা কম বেশি এটাও এখন আদালতের নির্ধারণ করতে হবে। কবে জানি কোন স্বামী অভিযোগ করে বসেন, স্ত্রীর রান্না করা ভাত শক্ত হচ্ছে, অতএব ডিভোর্স চাই। আইনকে ক্রমেই ফানি মেটারে পরিণত করা হচ্ছে। এ সকল কারণে আইনের সিদ্ধান্তগুলো বিতর্কিত হচ্ছে। আর সেই বিতর্কের রেশ এসে আঘাত করছে সিরিয়াস বিচারের রায়ে। সম্ভবত এমনসব পরিস্থিতিতেই ভারতের বেশ কয়েকটি হাইকোর্ট বেশ কিছু বিষয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ বিষয়ে দেয়া রায় তেমনি একটি। বলা হয়েছে, সুস্থ, বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন কেউ যদি প্রলোভনে রাজি হয়ে সম্পর্ক গড়েন সেটা ধর্ষণ নয়। কেরালা হাইকোর্টও একই কথা বলেছে কদিন আগে। কারণ, আদালত প্রলোভনে বিষয়ক মামলায় বিরক্ত হয়ে উঠছিলো। হচ্ছিলো এই আইনের যথেচ্ছ ব্যবহারেও।
ফেসবুকে আপনি ঢুকবেন, আপনার নিউজফিডে না-না বিষয় আসবে, সেটা যদি শুধুমাত্র রাষ্ট্র বা মানব বিধ্বংসী না হয় তাহলে তো আপত্তি থাকার কথা নয়। অন্তত বুদ্ধি-জ্ঞান থাকলে। আপনি দেখবেন বলেই নিউজফিডে গিয়েছেন। আপনার না দেখার ইচ্ছে হলে দেখবেন না। নিউজফিড আপনাকে দেখতে বাধ্য করছে না। ইউটিউবের হোমে গিয়ে আপনার নিজের পছন্দের কন্টেন্ট দেখতে পারেন। অন্যটা দেখতে কেউ আপনাকে বাধ্য করেনি। বিজ্ঞাপন থাকলেও তা স্কিপ করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং আপনি দেখতে না চাইলে কেউ আপনাকে বাধ্য করছে না। আপনাকে ঘাড়ে হাত দিয়ে বলছেন না, দেখ, এটা তোকে দেখতেই হবে। সুতরাং এসব বিষয়ে স্বয়ং আইনেরই ভেবে দেখার সময় এসেছে।
পাবলিক নুইসেন্স বলে যে কথাটি রয়েছে, তারমধ্যে উচ্চস্বরে গান বাজানো থেকে উচ্চ শব্দ যা মানুষকে বিরক্ত করে, তার বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি দোতলার বারান্দায় কানে হেডফোন দিয়ে গানের তালে শরীর দোলায়, এটা কারো দেখতে ভালো না লাগতে পারে। কিন্তু এ অজুহাতে তার বিরুদ্ধে আইনী নোটিশ মূর্খতা। হিরো আলমের গান তেমনি। তার গান দেয়া আছে, আপনার অনিচ্ছা হলে শুনবেন না, দেখবেন না। সবার গানের গলা ভালো হবে, তাল-লয়-সুর জ্ঞান থাকবে, এমন কথা চিন্তা করাটা চরম মূর্খতা। আর যাদের তা নেই তাদের গান গাইবার অধিকার নেই এমন ভাবাটা চিন্তার সীমাবদ্ধতা। আর তা বন্ধ করার চেষ্টা এক্সট্রিমিজম। বরং বেসুরো মানুষও গান গাইতে উৎসাহিত হয় সেজন্য অটোটিউনসহ নানা ইলেট্রনিক গেজেট বের হচ্ছে। মানুষের ডিপ্রেশন রোধে গান শোনা এবং গাওয়ার চেষ্টাকেও সাজেস্ট করা হচ্ছে। যারা মানুষের গান বন্ধ করতে চান, কবিতা বন্ধ করতে চান, কথা বলা বন্ধ করতে চান, তারা মূলত ফ্যাসিস্ট। সময়দৃষ্টে মনে হচ্ছে এই কাল ফ্যাসিজমের। এই কাল চুপ করিয়ে দেবার। প্রথমে সংঘবদ্ধ প্রচারণা। তারপর আইন। তাও ব্যর্থ হলে অ্যসাসিনেশন। তবু চুপ করিয়ে দিতে হবে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন