৫৯৫ বার পঠিত
সড়ক আর একাধিক সেতু থাকলেও নদীর মাত্র কয়েকশো গজের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনের পর দিন বালি তুলছেন খোদ জেলা প্রশাসক, করছেন নিজের বাংলোর পুকুর ভরাট!
২টা সেতু ও সড়ক থেকে মাত্র কয়েকশ গজের মধ্য থেকেই নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিনের পর দিন চলছে বালি উত্তোলন। আর একাজটি করছেন কোন সাধারণ মানুষ নন খোদ জেলা প্রশাসক। বালি উত্তোলন করে তিনি তাঁর বাংলোর পুকুর ভরাট করছেন। নদীপাড়ের বসতিদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তারা নিষেধ করলেও নেই কোন তোয়াক্কা। আর সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। অপরদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেছেন ‘রক্ষক যদি ভক্ষক হয় জনগণই তার বিচার করবে‘।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা শহরের বুকচিরে বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। এ নদীর ওপর ক্যাসাল ব্রিজ ও পবহাটি ব্রিজ বলে পরিচিত ২টা সেতু রয়েছে। নদীর দুই পাড় এলাকাতে কয়েকটি সড়ক, শিল্পকলা একাডেমি, ভূমি অফিসসহ নানা সরকারি বে-সরকারি স্থাপনা রয়েছে। কিন্তু সেই নদীর তলদেশ থেকে গত ২ সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করছেন জেলা প্রশাসক। আর তা দিয়ে ভরাট করছেন বাংলোর পুকুর। যেসব শ্রমিক মেশিনে বালি তুলছেন তাঁরা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের নির্দেশেই বালি তোলা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিনে কাজ করা শ্রমিক মাসুদ রানা বলেছেন, নদীর বালি উত্তোলন করে ডিসি সাহেবের বাংলোর পুকুর ভরাট করা হচ্ছে।
নদীপাড়ের মানুষ, পরিবেশবিদ ও সচেতন মহলে বিষয়টি নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয়রা নিষেধ করলেও তা আমলে নেননি জেলা প্রশাসক। স্থানীয় বাসিন্দা সামসুল আলম খান জানান, দিনেরপরদিন নবগঙ্গা নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে। এতে নিকট ভবিষ্যতে তাদের বাড়ি-ঘর মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০১
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০২
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০৩
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০৪
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০৫
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০৬
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০৭
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০৮
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ০৯
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ১০
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ১১
প্রামাণ্য ভিডিও ফুটেজ – ১২
জেলা প্রশাসক জাকির হোসেনের সাথে কথোপকথন শুনুন এখানে:
https://soundcloud.com/zobaen-sondhi/jhenidah-illegal-sand-lifting-from-river-by-district-commissioner-mobile-phone-record
এমনিতেই এক সময়কার খরস্রোতা ‘নবগঙ্গা নদী‘ এখন মৃতপ্রায়। রয়েছে নানা দখলদারদের দৌরাত্ম। এলাকার মানুষের ‘নদী বাঁচাও‘ দাবির প্রেক্ষিতে আগে কয়েকদফা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নদীর ভেতর থেকে কিছু অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল। তা সত্বেও হরহামেশাই ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বিভিন্নসময়ে প্রভাবশালী মহল বালি উত্তোলন করে আসছে। এতে করে একদিকে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্থসহ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাটির স্তর। আর এবার খোদ জেলা প্রশাসক ড্রেজার বসিয়ে বালি তুলতে শুরু করেছেন।
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মেদ সঞ্জু বলেন,
“জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নবগঙ্গা নদী কিন্তু একাধিক সেতু, স্থাপনা আর বসতির মাঝ থেকে এভাবে বালি তুললে সবকিছু থাকবে হুমকির মুখে। ড্রেজার দিয়ে বিভিন্নসময়ে বালি ওঠানো হচ্ছে, প্রশাসনের নিকট এসবের প্রতিকার চাইলেই অজ্ঞাত কারণে সেসবের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।”
এদিকে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস বলছেন, তিনি যেই হোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কেউ নদী থেকে বালি উত্তোলন করতে পারবে না। এতে নদীর ব্রিজ-কালভার্ট, পরিবেশ ও নদী পাড়ের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি বলেন রক্ষক যদি ভক্ষক হয় সেটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক, হয়তো একসময় জনগণই প্রতিবাদী হয়ে উঠবে।
আর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলনের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি নেয়ার নিয়ম থাকলেও তারও কোনো তোয়াক্কা করেননি জেলা প্রশাসক। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান ফোনে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন জেলা প্রশাসকই এ ব্যাপারে জানেন, এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করণীয় নেই।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন, আব্দুর রহমান মিল্টন, ঝিনাইদহ।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন