বাম রাজনীতি যারা করেন, তারা সব কিছুতেই আমেরিকা আর ভারতের চক্রান্ত দেখেন। কিন্তু মোহাম্মদ বিন, কাশেম, ঘোরী, গজনী, খিলজি, তৈমুর, বাবর, তিতুমীর, ফরায়াজি, এদের সময় আমেরিকা কই ছিলো? মৌদুদি কী তার বই সিআইএ-র অফিসে বসে প্রিন্ট আউট করেছিলো। মুসলিমদের পূর্ব-পুরুষরা তাদের সময় যা করেছে- ঠিক একই কাজ বর্তমান কালের জঙ্গিরাও করছে। খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। ১৯২৪ সালে শেষ খলিফা টার্কি থেকে বিদায় নেয়। সৌদি ওয়াহাবি মতবাদ প্রচার করার জন্য কত বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর ইনভেস্ট করে জানেন কী? যারা ইসলামি জেহাদ লড়ছে তারা আপনার আমার থেকে কম জানে না ধর্মকে। ধর্মতো হার্ড কপি। পড়া যায়। মানুষের স্পিচ শোনা যায়। এই দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে আর বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত যাতে পাকিস্তান কায়েম করতে পারে তার জন্য- আমেরিকা না চীন পাকিস্তান’কে সব ধরণের সহায়তা দেয়। চীন চায়- ভারত জঙ্গিবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকুক, বাংলাদেশে পাকিস্তানের মাধ্যমে চীনের প্রভাব বেশী থাকুক। চীন এই দক্ষিণ এশিয়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পাকিস্তানকে কুকুরের মতো ব্যবহার করছে। না, না এসব আমার কথা না। পাকিস্তানিদের কথা। ওদের মধ্যেও তো কেউ কেউ বোঝে। জানে। তারাই বলে। পাকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নকে উচ্ছেদ করতে আফগানস্তান গেলো, যে কম্যুনিজম ইসলামিক রাষ্ট্রে চলবে না। তাই তালিবান আল-কায়দার সাথে যুদ্ধ করার ছুতোয় আফগান রাজনীতিতে ঢুকলো। কিন্তু আহ একি ভণ্ড চীনের সাথে পাকিস্তান সোয়। তখন চীনের মাও পাকিস্তানিদের মাথায়ও থাকে না। আমাদের সুশীল বামদের মাথায়ও চীনের অবস্থান যে কী সেটা থাকে না। কে কার চেয়ে বড় ভণ্ড সেটা বের করাই মুশকিল। আর ১৯৭১ চীনের ভূমিকার কথা বামদের মনে করিয়ে লাভ নেই। যাইহোক এসব অন্য বিষয়। আমি ভাবছিলাম। মুসলমানরা যতই ধর্ম করে ততই গোঁড়া কেন হয়? দেখলাম এর গোঁড়া ধর্মের গোড়াতেই। ইন্টারনেটের সুবাধে আজকাল ছেলে মেয়েরা ইসলাম ধর্ম নিয়ে নাড়াচাড়া করে। অনেক স্পিকার আছে নেটে। সো ধর্ম কী বলে তার একটা আলু রেসিপি এইসব মুসলিম স্পিকাররা তৈরি করে। মূল বিষয় আলু, কিন্তু মেন্যু ভিন্ন ভিন্ন। বয়েস, পড়াশোনা, পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে এই আলু খাওয়ানো হয়। কেউ খায়, চিপস, কেউ খায় আলু ভর্তা, কেউ খায়- আলু ভাজা, কেউ খায়- মিষ্টি আলু সিদ্ধ, কেউ খায়- আলুর দম ঝালঝাল ঝোলঝোল। সবার কাছে তার আলু সহি। আসলে মূলত আলুর ভিতরে কার্বোহাইড্রেট। ইসলামে জেহাদের কথা কী আছে না নাই, সেটা কোরান হাদিসেই আছে। সেটা তালেবান বলুক, আলকায়দা বলুক, আইএসআইএস বলুক, আর হেফাজতই ইসলাম বলুক। যার যার দলের আলুখোর অন্যকে অসহি বলুক- সত্য কিন্তু কার্বোহাইড্রেট। সেখান থেকেই আলুর এত ফর্ম। পুষ্টি উপাদান একই।
তাই কে কোন আলু খেয়ে জেহাদে চলে যাচ্ছে সেটা নিয়ে তর্ক নাই। যে আলু খেয়ে আজ বাংলাদেশের ছেলেরা ও কিছু মেয়েরা জেহাদে গিয়েছে, সেই একই আলু খেয়ে মোহাম্মদ বিন, কাশেম, ঘোরী, গজনী, খিলজি, তৈমুর, বাবর, তিতুমীর, ফরায়াজি বাঙলা দেশটাকে আলুথালু করে দিয়েছে।
নিখোঁজ হওয়ার পর যারা আর ফিরে আসেনি তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পাওয়া গেল গুলশানের হামলায়। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া আরো প্রায় ২০০ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন তরুণীও রয়েছে। হারিয়ে গেছে কয়েকটি পরিবারও। এদের কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বজনকে ফিরে পেতে অনেকে দ্বারস্থ হয়েছে তাদের কাছে। এ অবস্থায় নিখোঁজ তরুণ-তরুণীদের তালিকা করে সমন্বিত অনুসন্ধান অভিযান ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন বিশিষ্টজনরা। সেই সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন জোরদারের কথাও বলেন তাঁরা।
সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘একটি ঘটনার পর পুলিশ যেভাবে তত্পর হয়, সারা বছর যদি তারা এভাবে থাকত, তবে হয়তো আমাদের সামাজিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নত থাকত। কিন্তু আমরা এমনটি দেখতে পাই না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ১০ জন নিখোঁজের ছবিসংবলিত বায়োডাটা প্রকাশ করে তাদের ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সাড়া মেলেনি। বরং রাজধানীর রামপুরা থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে রামপুরা থানায় জিডি হয়েছে।
জাকির নায়েকের লেকচার সব শুনেছি। তিনি একটু পড়াশোনা জানা শ্রেণীকে আলু খাওয়ান। আমি একটু বাংলাদেশের প্রথম চাঁদে মুখ রাখা সায়েদির বক্তব্য শোনাই।
ইসলাম হচ্ছে একটি বিপ্লবী মতবাদ একটি পূর্নাংগ জীবন ব্যবস্থা, আর জীবন ব্যবস্থাকে যারা এই দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়- সেই রেভ্যুলুশনারি পার্টির নাম হচ্ছে ইসলাম। ইমানকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে পৃথিবীর বুকে, সে জন্য সংগ্রাম করতে হবে। …
মোনাফিক তো সহজে চেনা যায় না, কয় যে হুজুর, এই যে জেহাদ, এই যে মারামারি, ঠেকাঠেকি এইগুলি আছে নাকি ইসলামের মধ্যে? কোথায় আছে? যে মারামারি করা লাগবে, মিছিল করা লাগবে ধর্মঘট করা লাগবে? এই ধরণের জেহাদে অংশ নেয়া লাগবে, এইগুলি কী? এইগুলি বাদ দিয়া সহজ ভাবে শান্ত ভাবে যাতে করা যায়, অল্প অল্প ছোট ছোট দোয়া শিক্ষা দেন- যাতে করে সহজে বেহেস্তে চলে যাওয়া যায়। আমি বলছি ভাই, রসুলুল্লাহ আমাদের এমন শিখান নাই। এমন চোরাগলি বেহেস্তে যাবার জন্য আবিষ্কার কইরা দেবো যে ছোট্ট একটা দোয়া পড়বেন- আর বেহেস্ত আপনার মামু বাড়ির বারান্দায়, যাইয়াই কলা খাওয়া শুরু করবেন। এত সহজে বিষয়টা তা না, বিষয়টা খুবই কঠিন।
- মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাইদি
এটা হচ্ছে গ্রাম বাঙলার তৌহিদ জনতার জন্য সাইদির আলু।
এই মোল্লারা এখন এত ক্ষমতাবান যে যার যার এলাকায় সে সে ফতোয়ার দূর্গ বানিয়ে ফেলেছে। এর প্রভাব সাধারণ মুসলমানের উপরেও পড়েছে। পড়বে জানা কথা। আরতো এই দেশে কেউ নেই। এখন ইসলাম ধর্মের সামনে মুসলমানরা। তাদের কে আরো সহি আলু খাওয়াতে হবে।
একটি খবরের সূত্র দেই। এটা পড়ে মনে হলো- বাঙলা হবে আফগান একটি শ্লোগান শুনেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে এটা আর শ্লোগান নেই। সত্যি বাঙলা এখন আফগান।
ঝালকাঠির রাজাপুরে স্থানীয় মাওলানাদের ‘ফতোয়ার’ ফাঁদে লাইজু বেগম (২১) নামে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূ এখন ঘরছাড়া। উপজেলার গালুয়া গ্রামের আদম আলীর স্ত্রী লাইজু বেগমকে তার শ্বশুর মো. ইসমাইল খলিফা কর্তৃক ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় কতিপয় মাওলানা ফতোয়া দিয়ে বলেন, ‘লাইজুকে তার শ্বশুর ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছে। সুতরাং লাইজু তালাক হয়ে গেছে, লাইজু আর স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবে না।’ এই ফতোয়া বাস্তবায়নের জন্য আ. রহিমের নেতৃত্বে কতিপয় ‘মাওলানারা’ লাইজু সহ সাধারণ মানুষদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানায়, গত ৬ মে সোমবার সন্ধ্যাবেলা মো. ইসমাইল খলিফা পুত্রবধূ লাইজুকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় মাওলানা আ. রহিম, আ. ছত্তার, গ্রাম পুলিশ সোহরাব হোসেন, মো. মৌজেআলী ও দুলালের নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকজন ফতোয়া দিয়ে গৃহবধূ লাইজুকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। ফতোয়া প্রদানকারীদের দাবি, ‘শ্বশুর ইসমাইল পুত্রবধূ লাইজুকে ধর্ষণ চেষ্টা করার কারণে লাইজু তার স্বামী আদম আলী থেকে তালাক প্রাপ্তা হয়ে গেছেন।’ ‘ইসলামে এমনই বিধান রয়েছে, জীবন দিয়ে হলেও এ বিধান রক্ষা করতে হবে।’ এ ব্যাপারে ফতোয়া প্রদানকারী স্থানীয় মাওলানা আ. রহিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইসলামি শরিয়ত মতে যদি কোন ব্যক্তি খারাপ উদ্দেশ্যে তার নিজের মেয়েকেও স্পর্শ করে সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির নিজ স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। আর এখানে লাইজুকে তার শ্বশুর ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছে। সুতরাং লাইজু তালাক হয়ে গেছে, লাইজু আর স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবে না।’ এ ব্যাপারে লাইজুর স্বামী আদম আলীর কাছে জানতে চাইলে আদম আলী জানায়, তার স্ত্রী লাইজু বেগমকে নিয়ে সংসার করতে তার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু হুজুরে বলছে, এখন তুমি আর তোমার স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে পারো না। এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পরে গৃহবধূ লাইজু তার মামাকে নিয়ে স্বামীর গৃহে উঠার চেষ্টা করলে ফতোয়া প্রদানকারীরা লাঠি-সোটা নিয়ে বাধা দেয় এবং তাদের ফিরিয়ে দেয়।
সূত্র- দৈনিক ইত্তেফাক
২০০০ সালে নওগাঁ জেলার এক দম্পতির অনিচ্ছুক তালাককে জোর করে কায়েম করার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালে হাইকোর্টের রায়ে বাংলাদেশে ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর পরে আপীল বিভাগের শুনানিতে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে একটি যুগান্তকারী রায়ে বলা হয় যে, বিচারবহির্ভূত ফতোয়া বৈধ বলে গণ্য হবে না। কিন্তু আপীল বিভাগ ‘কোন অবস্থাতেই ফতোয়া দেয়া যাবে না’, হাইকোর্টের এই রায় থেকে সরে এসেছে। কেন এই সরে আসা? আপীল বিভাগ যুক্তি দেখিয়েছে যে, ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনের প্রতিটি ব্যাপারে প্রচলিত আইনে কোন সুরাহা না থাকায় আপীল বিভাগকে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা থেকে সরে আসতে হয়েছে। অর্থাৎ ফতোয়া বা সালিশে দেয়া বিচারবহির্ভূত শাস্তি প্রদানের সুযোগ কিন্তু প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবেই রয়ে গেল। সূত্র- দৈনিক জনকন্ঠ।
আমি আমার একটি ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করি। আমার মনে হয়- এত জঙ্গিবাদ, ধর্মের নামে সহিংসতা, এটা মানুষের কোনও ব্যক্তিগত আচরণ নয়। এটা শিক্ষাগত আচরণ। ইসলাম ধর্ম এই শিক্ষা দেয় বলেই- হাজার বছর আগেও মুসলমানরা অন্য জাতির সাথে এমন করেছে, এখনো করছে। মুসলিম ইতিহাসে যুদ্ধ হত্যা ছাড়া কোনও বছর নাই। তাই যেসব পাঠক ধৈর্য ধরে এই লেখাটি পড়েছেন, তাদেরকে আরেকটি লেখার রেফারেন্স পড়তে অনুরোধ করছি।
এখন দেখা যাক আরবী ভাষামতে জিহাদের মানেটা কি? আরবী ভাষামতে জিহাদের মানে হল সংগ্রাম (Struggle)। মুসলিম পণ্ডিতগণ জিহাদকে এভাবে শ্রেণীভুক্ত (Classify) করেছেনঃ (১) জিহাদ-আন-নাফস, অর্থাৎ নিজের আত্মার সঙ্গে সংগ্রাম করা; (২) জিহাদ-আশ-শায়তান, অর্থাৎ শয়তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা; (৩) জিহাদ-আল-কুফ্ফর, অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা; (৪) জিহাদ-আল-মুনাফিকুন, অর্থাৎ মুনাফেকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা; (৫) জিহাদ-আল-ফাসিকুউন, অর্থাৎ খারাপ মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
(ক) ঐতিহাসিকভাবে জিহাদের মানে
ইসলামের ইতিহাসে জিহাদকে বরাবর ‘‘ধর্মযুদ্ধ’’(holy war) হিসেবেই পাওয়া যায় এবং আমরা ছোট সময় থেকেই জিহাদকে ধর্মের খতিরে যুদ্ধ করা বুঝেছি এবং জেনেছি। সারা পৃথিবীর ইসলামিক চিন্তাবিদগণ, মাওলানা, ক্কারী, মুন্সী ও মোল্লাগণ সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে যে জিহাদ মানেই হল ধর্মের কারণে বা ধর্মকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর পথে অস্ত্র নিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। জিহাদকে নিয়ে ইসলামিক চিন্তাবিদরা শত শত বই লিখেছেন এবং তাতে সবাই জিহাদকে ধর্মযুদ্ধ-ই বুঝিয়েছেন। ইসলামী ইতিহাসের অন্তত ৮০% ঘটনাই জুড়ে আছে এই জিহাদ। পবিত্র কোরানে এই জিহাদের কথা উল্লেখ আছে বহু বার এবং জিহাদকে আমরা ধর্মযুদ্ধ রূপেই দেখতে পাই। শুধু শান্তির জন্য জিহাদের ব্যবহার একেবারেই বিরল।
ইসলাম প্রচারে জিহাদের প্রয়োগঃ ইসলামের আগমনের পুর্বে আরবদেশে বিভিন্ন ধর্ম ছিল। তাই যখন ইসলামের নবী মহাম্মদ (দঃ) নতুন ধর্ম ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখন আরবের বেদুঈনরা প্রচণ্ড বিদ্রোহ করে ইসলামের বিরুদ্ধে। অমুসলিম বা বিধর্মীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহ’র রসুলকে তার সাহাবীদেরকে নিয়ে মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যেতে হয়। মদিনায় আসার পর মোহাম্মদের (দঃ) দলবল যখন ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠে তখন আল্লাহ’র রসুল কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধে জয়ের কৌশল হিসেবেই জিহাদের উৎপত্তি ঘটে এবং রসুল মোহাম্মদ আল্লাহ র কাছ থেকে অনেক ওহি (Messages) আনতে থাকেন তার সাহাবীদের মধ্যে জিহাদি-জোশ জাগানোর জন্য। আমি কোরানের এসব জিহাদি আয়াত এবং হদিসের কিছু নমুনা পরে উল্লেখ করব।
ইসলামের প্রারম্ভে আরবের মরুভূমিতে অমুসলিমদের সঙ্গে হযরত মোহাম্মদ ও তার সাথীদের সঙ্গে অনেক যুদ্ধবিগ্রহ ঘটে। ইসলামের নবী এবং তার সাহাবীরা পরবর্তীতে ইসলাম প্রচারের জন্য আরবের পেগান-বেদুঈন, খৃষ্টান এবং ঈহুদীদের সঙ্গে অনেক যুদ্ধে লিপ্ত হন। নবী মোহাম্মদ (দঃ)কে প্রায় ৭৮টি যুদ্ধ করতে হয় ইসলাম প্রচার করার জন্য। এই ৭৮টি যুদ্ধের মধ্যে ৭৭টি যুদ্ধই করতে হয় আক্রমণাত্মক যুদ্ধ (offensive war)। মাত্র একটি যু যুদ্ধকেই বলা হয় আত্মরক্ষা (defensive war) মুলক যুদ্ধ। এবং সেটা ছিল খন্দকের যুদ্ধ বা পরিখার যুদ্ধ।
মুলতঃ আরবে এবং তার আশেপাশের দেশগুলোতে জোরপূর্বক যুদ্ধ করেই সবাইকে ইসলামের ঝান্ডাতলে আনা হয়। আরব দেশের বাইরে যেমন: সিরিয়া, ইরান, জর্ডান, মিশর, লিবিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, স্পেন এবং ইন্ডিয়াতে ইসলামী বাহিনীরা কখনো আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধ করে নাই, সেসব যুদ্ধ গুলো আক্রমণাত্মক (Offensive raids) যুদ্ধই করতে হয়েছিল। কারণ আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধের জন্য দেশের বাহিরে হাজার মাইল দুরে গিয়ে কাউকে যুদ্ধ করতে হয়না।
ইতিহাসের সাক্ষ্যেই (হাদিস, কোরান এবং ইসলামী চিন্তাবিদদের লিখার মাধ্যমে) জানা যায় যে এসব যুদ্ধে প্রথমে নবী (দঃ) শত্রুদেশে পরোয়ানা বা চিঠি পাঠাতেন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে। এই দাওয়াতের নমুনা ছিল: ‘‘পবিত্র এবং সত্যধর্ম ইসলামের ছায়াতলে আস, অথবা জিজিয়া কর দাও, নয়তো যুদ্ধে মৃত্যু বরণ কর’’। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এইসব আক্রমণাত্মক যুদ্বগুলো কেবল ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্যই সংঘটিত হয়েছিল এবং এই যুদ্ধের ইসলামিক কনসেপ্ট ছিল: আল্লাহর জন্য ধর্মযুদ্ধ এবং এই ধর্মযুদ্ধকে মুসলমানরা ‘‘জিহাদ’’ রূপেই জানে।
হযরত মোহাম্মদের মোট ২৩ বৎসর নবুয়ত জীবনের ১০ বৎসরই কেটেছে যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে। এইসব যুদ্ধ কোন তথাকথিত আত্মার সংগ্রামই কেবল ছিল না। এসব যুদ্ধ ছিল রক্তাক্ত বা রক্ত-বন্যার যুদ্ধ। যুদ্ধে নবী নিজে আহত হয়েছিলেন, তার কয়েকটি দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল, তার চাচা আমির হামজাকে হত্যা করে তার কলিজা টেনে বের করেছিল শত্রুরা এবং হত হয়েছিল অসংখ্য মানুষ, বলতে গেলে রক্ত-বন্যা বয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়াও ইমাম শাফি’র বর্ণনা মতে নবী নিজেও একজনকে হত্যা করেছিলেন। এখন সম্মানিত পাঠকগণ নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে জিহাদ শব্দটি কিছুতেই একটি শান্তিপ্রিয় শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয় নাই।
(খ) এখন দেখা যাক কোরান কি বলছে জিহাদ সম্বন্ধে:
কোরানে জিহাদ শব্দটিকে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে মুলতঃ ধর্মযুদ্ধকে নিয়েই। এই জিহাদকে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে বহু কোরানের আয়াতে এবং এইসব আয়াত দিয়ে মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে ‘‘আল্লাহর নামে ধর্মযুদ্ধ’’ (ফি সাবিলিল্লাহ) করার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে। এ সম্বন্ধে পরে অনেক আদেশ-নির্দেশ হাদিসে এবং শারিয়ার কানুনে আমরা দেখতে পাব। বলতে গেলে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ নিষ্ঠুর শাস্তি দেয়ার কথা এবং বেহেস্তের লোভ দেখানো আয়াতগুলোই নাজিল হয়েছে এই জিহাদ কে অবলম্বন করে।
পবিত্র কোরানে ইসলামের সাহাবীদেরকে ধর্মযুদ্ধে উৎসাহিত করার জন্য, অন্য ধর্মের লোকদেরকে, অবিশ্বাসী এবং কাফের দের কে হত্যা করার জন্য বহু আয়াত নাজিল করা হয়েছে। আমি এখন তার কিছু নমুনা দিচ্ছি নিচে:
কোরান ৯:৫ – অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাটিতে তাদের সন্ধানে ওৎপেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।
কোরান ৮:৬৫: হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শোর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশত লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে, কারণ ওরা জ্ঞানহীন।
কোরান ২:২১৬ – তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে কোন একটা বিষয় পছন্দের নয় অথচ: তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহ ভাল জানেন, তোমরা জান না।
কোরান ২:১৯১ – এবং তাদের কে হত্যা কর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুত: ফেতনা-ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই কর না মসজিদুল হারামের নিকট যতক্ষণ-না তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে। অবশ্য তারা যদি নিজেরাই লড়াই করে তবে তাদেরকে হত্যা কর। ইহাই তাদের (কাফের) যোগ্য শাস্তি।
কোরান ৯:২৯ – তোমরা যুদ্ধ কর ‘আহলে-কিতাব’ এর ঐ লোকদের (ইহুদী এবং খৃষ্টান) সাথে যাহারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তার রসুল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করেনা সত্য ধর্ম ইসলাম, যতক্ষণ-না করজোড়ে তারা জিজিয়া কর প্রদান করতে বাধ্য থাকে।
কোরান ৪৮:২০ – আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের (war booty) ওয়াদা করেছেন, যা তোমরা লাভ করবে যুদ্ধে পরাজিত মুশরিকদের কাছ থেকে।
কোরান ৪৮:১৬ – তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ-না তারা মুসলমান হয়ে যায়।
কোরান ৮:৩৯ – তোমরা কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহ র সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
কোরান ৯:৩৮-৩৯: হে ঈমানদারগণ তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহ র পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মান্তিক আজাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
কোরান ৮:১২ – …আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব, কাজেই তাদের গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।
কোরান ৮:১৭ – সুতরাং তোমরা তাদেরকে (কাফের) হত্যা কর নি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্টি নিক্ষেপ কর নি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে।
কোরান ৯:১১১ – আল্লাহ ক্রয় করেছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে উৎকৃষ্ট জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর জন্য; অতঃপর হত্যা করে এবং হত হয়, তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরানের এই প্রতিশ্রুতিতে আল্লাহ অবিচল এবং আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক?
কোরান ৯:৭৩ – হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে; তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন। তাদের ঠিকানা হল দোযখ এবং সেটা হল নিকৃষ্ট ঠিকানা।
কোরান ৯:১২৩ – হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকিনদের সাথে রয়েছেন।
কোরান ৪:৯৫ – গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান এবং যে মুসলমানগণ জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা একই সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে, আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদ দের ঘরে উপবিষ্টদের থেকে মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন।
(গ) হাদিছে জিহাদ সম্বন্ধে কি বলছে:
ধর্মযুদ্ধ অর্থাৎ আল্লাহর পথে (ফি সাবিলিল্লাহ) যুদ্ধ করার কথা হাদিসে বার বার বলা হয়েছে। সহি বোখারীর এক তৃতীয়াংশ জুড়ে জিহাদকে শারীরিক যুদ্ধ রূপেই দেখানো হয়েছে। হাজার হাজার সহি হাদিসে মুসলমানদেরকে ধর্মযুদ্ধে প্ররোচিত করা হয়েছে। এখানে কিছু হাদিসের নমুনা দেওয়া গেল:
সহি বুখারী # ৩৫, পৃষ্ঠা ১০২:
হযরত মহাম্মদ (সঃ) বর্ণনা করেছেন, “যে মুসলিম ধর্মযুদ্ধে বের হবে তাকে আল্লাহ নিজে রক্ষা করে। কারণ সে ধর্ম যুদ্ধে যোগ দেয় তখনি যখন সে আল্লাহ এবং রসুলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখে। আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করে গনিমতের মাল (spoil of war) যাহা নিয়ে সে ঘরে ফিরে, নতুবা সে আল্লাহর জন্য মৃত্যুবরণ করে শহীদ হয়ে বেহেস্তে চলে যায়”। রসুলুল্লাহ আরও বলেন, “আমার কাছে জিহাদ অত্যন্ত পছন্দ যে আমি যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হব, তারপর জীবিত হব, তারপর শহীদ হব, তারপর আবার জীবিত হব, তারপর পুনরায় শহীদ হব।”
সহি বুখারী# ৪৬, ভলিউম ৪, বুক- ৫২:
আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন, “আমি শুনেছি আল্লাহর রসুল বলেছেন উৎকৃষ্ট মুজাহিদের মর্যাদা একজন ভাল রোজাদার এবং নামাজী যে দিন রাত আল্লাহর উপাসনায় ব্যস্ত থাকে তার চেয়ে ও বেশী হয়। আল্লাহ গ্যারান্টি রাখে তার জন্য যাতে মৃত্যু হলে সে বেহেস্তে স্থান পায়; অথবা বেঁচে থাকলে গনিমতের মাল নিয়ে ঘরে ফিরতে পারে।”
সহি বুখারী ৫৩/৪/৫২
আবু আন্নাস বিন মালিক বর্ণনা করেছেন, “নবী (সাঃ) বলেছেন-মৃত্যুর পর যে ব্যক্তি বেহেস্ত পাবে সে কখনো দুনিয়াতে আর ফিরে আসতে চাইবেনা বেহেস্তের সুখশান্তি ফেলে। কিন্তু একমাত্র শহীদ (martyr) আবার এ দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে এবং আবার আল্লাহর কারণে জিহাদে মৃত্যু বরন করতে ইচ্ছা পোষণ করবে, কারণ সে দেখেছে শহীদদের বেহেস্ত কত উন্নতমানের হয়”।
সহি বুখারী ৪/৫২/৪৮
আবু আন্নাস বর্ণনা করেন, “নবী (সাঃ) বলেছেন-মাত্র একবার আল্লাহর নামে সকাল বা বিকালে জিহাদে অংশগ্রহণ করার সওয়াব পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার চেয়েও অনেক মূল্যবান হবে। বেহেস্তের একটুকরা অংশ সারা পৃথিবীর চেয়েও শ্রেষ্ঠ হবে। আর যদি বেহেস্ত থেকে একজন হুরী পৃথিবীতে নেমে আসে তাহলে তার শরীরের সুগন্ধিতে সমস্ত পৃথিবী ভরে যাবে এবং হুরীর হিজাবের মূল্য এ নশ্বর পৃথিবীর সবকিছু থেকে বেশী মূল্যবান হবে।”
সহি বুখারী ৪/৫২/৪৪
আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন, “একজন মানুষ এসে রসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলঃ ‘‘জিহাদের সমান মানের একটি জিনিষের নাম বলুন”। আল্লাহর রসুল বললেন, “আমি এমন বস্তুর নাম জানি না”। আবু হুরায়রা আরও বলেন, “মুজাহিদের (আল্লাহ র নামে যারা যুদ্ধ করে) ঘোড়ার ক্ষুরের প্রতিটি পদক্ষেপ আল্লাহ পুরস্কৃত করেন।”
সহি বুখারী ৪/৫২/৪৯
সামুরা বর্ণনা করেন, ‘‘রসুল (সাঃ) বলেছেন – গতরাত দু’জন লোক এসেছিল স্বপ্নে। ওরা আমাকে একটি গাছের উপরে উঠালেন এবং পরে একটি ঘরে স্থাপন করলেন যে ঘরটি পৃথিবীর সকল ঘর থেকে উৎকৃষ্ট। তাদের একজন আমাকে বলল ‘‘এ ঘরটি শহীদের ঘর’’।
সহি বুখারী ১১৪৭, খণ্ড ৫, পৃ ৫৩৫
আবু হোরায়রা বর্ণনা করেন, ‘‘ রসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে স্বত্বার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে শরিক হয়ে কেউ জখমী হয় না; বরং আল্লাহ ভাল করেই জানেন কে জখমী হয়েছে; কিয়ামত-এর সময় সে এমন অবস্থায় স্বীয় কবর থেকে গাত্রোত্থান করবে যে তার রং হবে খুনের রঙ্গে রঞ্জিত এবং তার থেকে প্রবাহিত হবে মিঁশক আম্বরের সুবাস।’’
সহি বুখারী ৪/৫২/৬৪
আন্নাস-বিন-মালিক বর্ণনা করেন, ‘‘ওম-অর-রুবায়বিন্ত-আল-বারা একদিন রসুলুল্লার নিকট এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘ও আল্লাহর রসুল আপনি কি আমার ছেলে হার্থার (হার্থা বদরের যুদ্ধে শহীদ হয়) কথা বলবেন? সে যদি এখন বেহেস্তে থাকে তবে আমি ধৈর্য ধরব, নয়তো আমি অনেক কান্না করব’’। তখন রসুল্লাহ বলেন-হে হার্থার মা, বেহেস্তে অনেক বাগান আছে তার মধ্যে থেকে তোমার ছেলে পেয়েছে ফেরদৌস-আলা – যা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট।’’ (একজন নিরীহ অশিক্ষিত মা’কে বোকা বানানোর কৌশলে আল্লাহর রসুল খুব চমক দেখিয়েছেন বৈকি)।
বুখারী ৯/১১৫১ (পৃ ৫৩৬)
আবদুল্লাহ ইবনে মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ-বিন-আবি আওফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘‘যে তলোয়ারের চমকের নিচেই আছে বেহেস্ত।’’
মিঁশকাত আল-মাসাবিহ (অনুবাদ – জেমস রবশন, লাহোর, আসরাফ, ১৯৭৫), ১:৮০৭
আবু আবস বর্ণনা করেন, ‘‘রসুলুল্লাহ বলেছেন-যে ব্যক্তির পায়ে ধুলা লেগেছে আল্লাহ’র পথে জিহাদ করার সময়, তার শরীর কখনো দোজখের আগুন স্পর্শ করবেনা।’’
মিঁশকাত-আল-মাসাবিহ ১:৮১৪