০
১৪৮৬ বার পঠিত
৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে রাজা ত্রিদিপ রায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ময়মনসিংহ জেলার আরও একটি আসন থেকে পূর্ববাংলার সাবেক মূখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন।আর বাকী ১৬০টি আসনে আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে।প্রাদেশিক পরিষদে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দুটি আসন নির্দিষ্ট ছিল।ঐ দুটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আর অংশুয়ে প্রু চৌধুরী নির্বাচিত হন।
সারা পাকিস্তানে আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করলেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য আহ্বান করেনি।অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে জুলফিকার আলী ভূট্টো ঘোষণা করেন যে পাকিস্তানে তিন টি পার্টি রয়েছে (১)আওয়ামীলীগ (২)পি,পি,পি এবং (৩)সশস্ত্র বাহিনী।এ অবস্থায় জেনারের ইয়াহিয়া ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ তারিখে ঢাকায় জাতীয় সংসদে অধিবেশন ডাকেন।কিন্তু ১ মার্চ তারিখে জুলফিকার আলী ভূট্টোর যোগসাজশে সংসদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য মূলতবী ঘোষণা করেন।এতে সারা পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।আওয়ামীলীগ ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল ডাকে এবং বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় তিনি ঘোষণা করেন যে, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।অসহযোগ আন্দোলনের সাথে সাথে সারা পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদ,বিক্ষোভ,জংগি মিছিল বের হতে থাকে।অফিস আদালত সব বন্ধ হয়ে যায়।ব্যাংক এবং অন্যান্য সরকারী অফিস আদালত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী চলতে থাকে।এমন অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ এবং জেনারেল ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামীলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসেন।তারা আলোচনা করতে থাকেন।কিন্তু ইত্যবসরে সরকার পশ্চিম পাকিস্তান হতে সৈন্য ও গোলাবারুদ আমদানিএ করতে থাকে।
২৫শে মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া, ভূট্টো এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য নেতারা পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।যাওয়ার আগে জেনারেল ইয়াহিয়া কঠোর হস্তে পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন।ফলে ঐদিন রাতেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ হেডকোয়াটার,রাজারবাগ পুলিশ লাইন,পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল হেডকোয়াটার পিলখানা,জগন্নাথ হল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের আবাসিক এলাকা সহ শহরের বহু আবাসিক এলাকা আক্রমনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে।ফলে দেশের সর্বোত্র পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত বাঙালী সেনা,ইপিআর,পুলিশ,আনসার,ছাত্র এবং সাধারণ মানুষেরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এবং তার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে বলতে গেলে আওয়ামীলীগের কোন অস্তিত্ব ছিল না।তাই রাঙ্গামাটিতে জেলা প্রশাসক হোসেন তৌফিক ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলন, মিছিল,ছাত্র ও যুবকদের রাইফেল ট্রেনিং ইত্যাদি শুরু হয়।উল্লেখ্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে রাজা ত্রিদিপ রায়ের বিভিন্ন কারণে দ্ধন্ধ ছিল।তবে তার মূল কারণ ছিল কর্ণফুলী বাঁধ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার উদ্বাস্ত পরিবার যারা রাইংখ্যং সংরক্ষিত বনে আশ্রয় নিয়েছিল।ডেপুটি কমিশনার তাদের পূনর্বাসন ছারা তৎকালীন ইপি আর দ্ধারা রাজার আপত্তি সত্তেও উৎখাত করেছিলেন।
সম্ভবত সেই কারণেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসী ছাত্র ও যুবকেরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সামরিক প্রশিক্ষনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষন দান অথবা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের উৎসাহ দেয়া হয়নি।বরং তাদের সঙ্গে শীতল আচরন করা হয়েছে।পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাছে চট্টগ্রাম শহরের পতন হলে রাঙ্গামাটি শহরেও আতংক সৃষ্টি হয়।জেলা প্রশাসক তার দলবল নিয়ে রাঙ্গামাটির সকল লঞ্চ নিয়ে মহাল ছড়ি যান।সেখান থেকে তিনি খাগড়াছড়ি হয়ে চলে যান রামগড়ে।রামগড়ের কাছে ফেনী নদীর অপরপারে ভারতের ত্রিপুরা রাাজ্য। জেলা প্রশাসক রাঙ্গামাটি শহর ত্যাগ করলে শহরে জনমনে আরও বেশি আতংক দেখা দেয়।এই সময়ে ত্রিদিপ রায় চট্টগ্রাম গিয়ে পাকিস্তানী আর্মির সাথে যোগাযোগ করে তাদের একদলকে সঙ্গে করে রাঙ্গামাটি নিয়ে আসেন।তখন থেকে তিনি পাকিস্তানের ঘোরতর সমর্থক হয়ে ওঠেন।ত্রিদিপ রায় পাকিস্তানের পক্ষে হলেও তার আত্মীয় স্বজন কিন্তু পাকিস্তানী আর্মির নৃসংশতা থেকে রক্ষা পায়নি।পাকিস্তানিরা তার আপন কাকা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা উৎপল রায়কে তার দুই কলেজ পড়ুয়া ছেলে সহ চট্টগ্রামের তার মেয়ের জামাইয়ের দোকান থেকে ধরে নিয়ে যায়।পরবর্তীতে তাদের আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।তাদের হত্যা করে হয়েছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন