ভারতের অন্যতম বৃহত্তম প্রদেশ রাজস্থান। ছোট বড় অসংখ্য পাথুরে শক্ত পাহাড়ের গিরিখাতে ভরা দূর্ভেদ্য প্রাচীর আরাবল্লী পর্বতশ্রেণী প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থান জুড়ে পশ্চিম ভারতের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম পর্যন্ত হরিয়ানা, রাজস্থান ও গুজরাট রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান। ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতি ত্বত্তের পাহারা প্রাচীর হয়ে এই পর্বতশ্রেণী হিন্দু শাসিত ভারত থেকে চ্ছিন্ন করেছে মুসলিম রাজ্য পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশ। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম “গুরু শিখর”, আরাবল্লী শব্দটির অর্থ ‘শৃঙ্গশ্রেণী’ অর্থাৎ অনেক গুলো পর্বত শৃঙ্গের সারি বাধা সন্নিবেশ। রাজস্থানের বিস্তৃর্ন জায়গা আত্মসাৎ করে আছে প্রচন্ড উষ্ণতা ও রাশি রাশি বালুকাণায় পূর্ণ বিরস “থর মরুভূমি”, এই রাজস্থানের ৫ম বৃহত্তম শহর আজমির।
সভ্যজাতি বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান, অমূল্য কোন খনিজ দ্রব্যের সুলভ খনি, শিক্ষা-সভ্যতা উৎকর্ষতার ঊষালগ্নের ভিত্তিভূমি, ক্রমপ্রসারমান বিজ্ঞানের চৌরাস পথ বেয়ে যাত্রা, কোন নতুন শিল্প সূচনার অগ্রনায়ক কিংবা নয় কোন প্রাকৃতিক মনোহরি রূপ লাবণ্যের দূর্বার আকর্ষণের হাতছানি, এই আজমির প্রসিদ্ধ হয়েছে ঊর্বশী ধর্ম যুগে অভাব কুঞ্জ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দখলদার সম্পদলোভী শাসকদের আগ্রাসী লোভ লালসার প্রত্যক্ষ সুফল ভোগ করা সুফী মঈনুউদ্দিন চিস্তির বদৌলতে।
চিস্তির জন্ম ১১৪১ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীণ পারস্যের তথা ইরানের সিজিস্তানের সঞ্জর নামক স্থানে। তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াসুদ্দীন আর মায়ের নাম মাহ্নূর। তাঁর প্রকৃত নাম মঈনুদ্দিন হাসান। কথিত আছে তিনি ছিলেন ইসলামের বিখ্যাত আলোচিত সমালোচিত সৈয়দ বংশের সন্তান(আলী ও স্ত্রী ফাতেমার বংশ সৈয়দ বংশ নামে খ্যাত। সম্পর্কে আলী নবীর চাচাত ভাই আর ফাতেমা নবীর মেয়ে)। জনশ্রুতি আছে চিস্তির পিতৃকুল এসেছে নবীর এক নাতি ইমাম হুসাইন
এবং মাতৃকুল এসেছে আরেক নাতি ইমাম হাসানের বংশের হাত ধরে। ৬ষ্ঠ শতকের গোড়াতে মক্কা মদিনায় ক্ষমতা পালা বদলের মঞ্চে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবল দাপটশালী আলী ফাতেমার বংশ প্রায় ৪০০ বছর পরে ১১দশ শতাব্দীতে ইরানের সীমান্ত প্রদেশে খুজে পাওয়ার দাবি কিছুটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরী করে বৈকি! চিস্তির শৈশব কাটে ইরানে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। কৈশোরে প্রাপ্ত হন পিতার রেখে যাওয়া সম্পদ, একটি ফলের বাগান ও একটি বায়ু চালিত কল। ততদিনে পারস্যে(ইরান) তথা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীণ সংষ্কৃতি, বিশ্বাস ঝেটিয়ে বিদেয় করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে ইসলাম।
ইসলামী আগ্রাসনের পূর্বে পারস্যের জনগণ ছিল স্বর্গ-নরক, এক ঈশ্বরবাদের সূচনাকারী ধর্ম জরাথ্রুষ্ট, মতবাদে বিশ্বাসী। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সহবস্থান ছিল পারস্যে। ওমর ২য় খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর বদলে ফেলেন মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় মানচিত্র। পুরাতন সব ধর্ম বিশ্বাস পাল্টিয়ে উপহার দেন ইসলাম। এর জন্য অবশ্য খরচ হয়েছে প্রচুর রক্ত। রক্তে রঞ্জিত করতে হয়েছে অসংখ্য মরু জনপদ। মাত্র ১০ বছরের শাসনামলে ১২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল গণিমতের মাল সংগ্রহ, জিজিয়া কর আদায় সাথে ইসলাম বিস্তার। ইরান বাদ পড়েনি ওমরের আগ্রাসন থাকে। পুরানো বিশ্বাস গুড়িয়ে দিয়ে ওমর ইরানে প্রতিথ করেন নব্য ধর্ম ইসলাম বিশ্বাসের সংষ্কৃতি।
ইষ্টার্ন ইরান বর্তমান আফগানিস্তান সেসময় গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল ছিল মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ভারতীয় ব্যবসা বাণিজ্যের। মুসলমান শাসকদের করায়ত্ব হয়নি তখনো আফগানিস্তান, ফলে ধর্ম বিশ্বাসে আফগানরা আরো কিছুদিন বৌদ্ধরীতি পালনের সুযোগ পেয়ে যায়। সেই সূত্রে আঞ্চলিক নৈকট্যের স্বভাব সিদ্ধ ধারায় ভারতীয় ধর্মীয় দর্শনের শান্ত সৌম্য বৈরাগ্য ভাবধারার আংশিক ছটা সন্তঃর্পনে অনুপ্রবেশ করে ইসলাম অধ্যুষিত ইরানে। উদ্ভব ঘটায় বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রেণী বা হিন্দু মুনি ঋষির আদলে পশমী পোশাক পরা একদল সংসার-অনাসক্ত আল্লাহভক্ত নতুন শ্রেণীর। এদের নাম হয় সুফি। অনেকের ধারণা আরবি শব্দ ‘সাফা’ অর্থাৎ পবিত্রতা থেকে “সুফি” শব্দটি এসেছে। আবার কেউ কেউ মত দেন ‘সুফ’ বা শ্রেণী হতেও সুফি শব্দ উৎপত্তি হতে পারে। তবে গ্রহণযোগ্য ব্যখ্যাটি দেন অধ্যাপক গিব ইবনে সিরিন। তিনি দেখিয়েছেন ইসলামের এই ধর্মীয় সাধকগণ একধরণের রঙিন পশমী বস্ত্র পরতেন যেমনটি ব্যবহার করতেন খ্রিষ্টানধর্মীয় সাধকরাও। এই কাপড়ের নাম ‘সুফ’ বা সউফ। এর থেকেই সুফি শব্দটির উৎপত্তি।
সুফি শব্দের উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মৃদু মতান্তর থাকলেও তাঁরা এক বাক্যে স্বীকার করেন- ভোগ বিলাসীতা পরিত্যাগ করে পশমী বস্ত্র পরিধান করে সংসারের কোলাহলতা থেকে দূরে গিয়ে নির্জনতায় জিকিরের মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই সুফি দর্শনের মূল লক্ষ্য। নবী ও স্রষ্টার উপর পূর্ণ বিশ্বাস যেখানে ইসলামের শেষ কথা সেখানে বিধর্মী(কাফের) প্রভাবে দুষ্ট সন্ন্যাস আদলে গড়ে উঠা সুফি চর্চা ঠিক কতখানি ইসলাম সম্মত তা যথেষ্ট তর্ক সাপেক্ষ। ইসলামের আতুরঘর মক্কা মদিনার ইতিহাসে একটু ঢু মারলে দেখব সেখানে এসব সুফী, পীর, দরবেশ শ্রেণীর কখনো উৎপত্তি ঘটেনি। সুফি দর্শন তাই প্রকৃত ইসলামের সাথে যতই সাংঘার্ষিক মনে হোক না কেন এ কথা স্বীকার করতেই হবে পরবর্তীতে এই সুফি শ্রেণী ইসলাম প্রচারে এনে দেয় নতুন মাত্রা। উদ্ভব ঘটে পীর, ফকির, দরবেশ নামে বাহ্যিক দৃষ্টিতে আপাত নিরীহ গোচের আরো কিছু ধর্ম প্রচারক শ্রেনীর। যাদের কাঁধে ভর দিয়ে পরমত অসহিষ্ণু, স্বয়ং সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে চেষ্টা করে কিছুটা সৌম্য সুস্থির ভদ্রস্থ চেহারায় আধ্যাত্মিকতার নতুন খোলসে।
এসব শ্রেণীর উত্থানেই ইসলাম অনুসারীরা পেয়ে যায় বর্ম অস্ত্র, দাবি করার সুযোগ পায়- “তরবারির জোরে ইসলাম প্রচার হয়নি”। ধীরে ধীরে এসব সুফি-দরবেশ, সুফি ঘরনার কবি-সাহিত্যিক এবং কিছু ইসলামী পণ্ডিত ধর্মের নানান ব্যখ্যা করে আর বাউলরা কাব্য, গীত গেয়ে এই সুফি দর্শনকে অনুসারীদের মাঝে জনপ্রিয় করে তুলতে সমর্থ হন। একদিন এমন এক পথচারি ক্লান্ত ক্ষুধার্ত সুফি শায়খ ইব্রাহিম কুন্দুযীর সাথে সাক্ষাত ঘটে কিশোর চিস্তির। তিনি তখন ব্যস্ত বাগানের কাজে। সুফিকে দেখতে পেয়ে হাতের কাজ ফেলে চিস্তি আলাপচারিতায় মেতে উঠেন। খেতে দেন কিছু ফল মূল। সুফির আধ্যাত্মিক কথাবার্তায় কিশোর চিস্তি মুগ্ধতার আবেশে বিগলিত হয়ে পড়েন। তাঁর মনে ধর্মভাব জাগ্রত হয়ে উঠে। মনস্থির করেন তিনিও পরম করুণাময় রূপে প্রচারিত আল্লাহর নৈকট্য আসবেন।
মধ্যশতাব্দী গুলোতে ভরা জোয়ারে ধর্ম অবগাহনে প্রত্যেক ধর্মীয় গুরুদের সন্মান ও প্রতিপত্তি ছিল ঈর্ষনীয়। জায়গা সম্পদ বিক্রি করে চিস্তি অচিরেই যোগ দেন ধর্মগুরুদের সেই দলে। ৮ম শতকের শুরুতেই উজবেকিস্তানের প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সমরখন্দ ও বোখারা নগর দুটি মুসলমান দখলে আসার পর ইসলাম প্রসারে সেখনে তৈরী করা হয় বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসা। কয়েক শতকের ব্যবধানে সমরখন্দ ও বোখারা পরিনত হয় ইসলামী শিক্ষা সংষ্কৃতি বিকাশের সেরা বিদ্যাপীঠের আসরে। মঈনুদ্দিনের যাত্রা ছিল তাই বোখারা অভিমুখে। এসেই পেয়ে যান তাঁরই স্বদেশী সুফি বাবা উসমান হারুনিকে। শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন হারুনির। একে একে খোরাসান, সমরকন্দ, গিয়ে সান্নিধ্যে আসেন সেখানে অবস্থানরত বিভিন্ন ইসলামী পণ্ডিতদের সাথে। এরপর ছুটেন বাগদাদের উদ্দেশে, পথিমধ্যে সাঞ্জান নামকস্থানে ইমাম নাজ্মুদ্দীনের সাক্ষাৎ নেন। তারপরে বাগদাদে গিয়ে দেখা করেনন তাঁর স্বদেশী আরেক ইসলামী প্রখ্যাত পণ্ডিত, পীর বলে কথিত আবদুল কাদির জিলানীর সাথে। বাগদাদ থেকে তিনি বিভিন্ন দেশ ও শহর-নগর ভ্রমণ করে ইসলামী জ্ঞানে আবদ্ধ হন উত্তম রূপে। তারপর যান মক্কা। মক্কা থেকে পা রাখেন মদীনায়। তৎকালীন সময়ে শিক্ষা, সভ্যতা, সংষ্কৃতি, শিল্প, ভাষ্কর্যের চারণ ভূমি ভারতবর্ষের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল হু হু করে। রূপ লাবণ্যে ভরপুর ভারতবর্ষ যেন এক মোহময় হাতছানি, সমৃদ্ধতার প্রতীক, রূপকথার দেশ হিসাবে পরিচিত বিশেষত আরব জাহানের কাছে। সেই খ্যাতির স্নিগ্ধ বায়ু সেবনে চিস্তিও হন ব্যাকুল। সংকল্প করেন ভারত যাত্রার। লাহোরে এসে গাড়েন আস্তানা। ততদিনে ভারত মাদকতায় আসক্ত সাম্রাজ্যবাদী ইসলামী শাসকদের শোণ দৃষ্টি বারবার আছড়ে পড়তে শুরু করেছিল ভারত অভিমুখে। মুঈনুদ্দীন চিস্তি ৪০ জনের একটি দল নিয়ে ভিড়েন দিল্লীতে, অতঃপর আনুমানিক ১১৯১ সালের দিকে আজমীরে পা রাখেন। ততদিনে তাঁর বয়স হয়ে যায় ৫০ এর অধিক। ভবঘুরে চরিত্রের অধিকারী চিস্তির ভাগ্যকাশে রংধনু হয়ে আসে গজনীর সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘুরির ভারত দখল।
হিন্দুস্থান দখল করতে ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ভারত আক্রমণ করে বসেন। পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সহযোগিতায় মহম্মদ ঘুরিকে সেই যাত্রায় পরাজিত করেন। ঘুরি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু যুদ্ধ পরাজয়ের দগদগে ক্ষত মহম্মদ ঘুরির ভারত দখলের আকাংখাকে আরো তীব্রতর করে। ঘুরি ভারত দখলের জন্য কত প্রচন্ড মরিয়া ছিলেন তা বুঝা যায় মাত্র এক বছরের মাথায় ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে আরো বিশাল সৈন্যবাহিনী জোগাড় করে পৃথ্বীরাজকে ফের আক্রমণ করার মধ্যদিয়ে। পৃথ্বীরাজ পরাজিত ও নিহত হন এই যুদ্ধে। দিল্লী ও আজমীর দখলে আসে ঘুরির। এই যুদ্ধটি তরাইনের যুদ্ধ নামে পরিচিতি পায় ইতিহাসে। পরে একে একে মিরাট, বুলান্দগড়, আলিগড়, কনৌজ, গুজরাট, গোয়ালিয়র, বারানসী, বুন্দেলখন্ড, প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে নেন ঘুরি। ঘুরির এই ক্রমপ্রসারমান হিন্দুস্থান দখল প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করে ভারতবর্ষে ইসলাম বিস্তারের পথ। হিন্দুস্থানে রাজ আনুকূল্য পায় ইসলাম। ফলে ভাগ্যের চাকা চকিত ঘুরে যায় চিস্তির। প্রশাসন হাত বদল হওয়ায় নতুন শাসকের চাপে পড়ে আবার কেউবা শাসকের কৃপা লাভে বাপ দাদার লালিত ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
তাদের এই ধর্মান্তকরণ কাজটি সাফল্যের সাথে সমাধা করেন চিস্তি। ফলে ইসলামী বিশ্বে চিস্তির নাম যশ ছড়াতে শুরু করে দ্রুত। কিছুদিনের মধ্যে হয়ে উঠেন ইসলামী বিশ্বে জীবন্ত কিংবদন্তি। অল্প দিনেই আজমীরে নিজ প্রভাব প্রতিপত্তি যখন তুঙ্গে উঠে সুযোগ বুঝে অবসান ঘটান কুমার জীবনের। পাণি গ্রহণ করেন বিবি উন্মত উল্লার। সনটি সম্ভবত ১১৯৪ বয়স এরি মধ্যে ৫৩ কি ৫৪ পার হয়ে যায় তাঁর। এই সংসারে ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জন্ম দেন। ইসলাম প্রচারের কাজে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে পেরিয়ে যাচ্ছিল দিন। ধর্মীয় গুরু হওয়ার সুবাদে সন্মানও ধেয়ে আসতে শুরু করে চারদিক থেকে। একদিকে সন্মান অন্যদিকে প্রতিপত্তি এই দুই পরম আরাধ্য শক্তির সংমিশ্রণে চিস্তির তখন পোয়া বারো। তার ইছা অনিচ্ছার বিরুদ্ধে রা করার লোকের সংখ্যা নিতান্তই শূন্য। সেই মোক্ষম সুযোগে ১২২৩ সালে প্রায় ৮২ বয়সে করে ফেলেন ২য় বিয়ে। ভাগ্যবতি! এই স্ত্রীর নাম বিবি আসমত উল্লাহ। এই ঘর আলো করে আসে ১টি পুত্র সন্তান। ৮০ ঊর্ধ্ব বয়সে ২য় বিয়ে যে কোন সংবেদনশীল যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষের মনে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য চিস্তির নৈতিকতাবোধের সুস্থতা নিয়ে, মননশীলতার বিকাশ সম্পর্কে। গায়ে পীর সুফীর উপাধি যতই সেঁটে দেয়া হোক তাঁর কর্ম জীবন, চিন্তা চেতনা, চারিত্রিক দৃঢ়তা একটা নির্দিষ্ট গন্ডিবদ্ধ বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে কাল উত্তির্ণ হওয়ার দাবি রাখতে পারে না কিছুতেই। হতে পারে না সার্বজনীন। অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৯৪ বছর বয়সে চিরতরে যাত্রা করেন পরপারে। নিথর দেহটি সমাহিত করা হয় আজমীরে।
ইসলাম প্রচারকে ভিত্তি ভূমি ধরে চিস্তির কাজকে মহত্বের মানদন্ডে মূল্যায়ন করলে বলতে হয় আধুনিক জাকির নয়েক বা দেলোয়ার হোসেন সাঈদির সাথে বিশেষত তাঁর কোন পার্থক্য নেই। আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে প্রচারের ধরণ বা প্রক্রিয়াগত ভিন্নতা থাকতে পারে বটে, তবে উদ্দেশ্যে আছে একাত্মতা।
আরো একটি উল্লেখযোগ্য কথা না বললেই নয় আজমীর শরীফ প্রসিদ্ধ হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাবক হিসাবে যোগ হয়েছিল সুলতান গিয়াসউদ্দিন ভূমিকা। তিনি ১৪৬৪-১৫০০ সালের মধ্যবর্তি কোন এক সময় চিস্তির কবরটিকে ব্যাপক সংষ্কার কাজ করান। সেই পথ ধরে হাঁটেন “আকবর দা গ্রেট”, আজমীর ভ্রমণ কালে ১৫৬৪ সালে তিনি সেখানে একটি বিশাল তোরণ নির্মান করে দেন। কয়েশ বছর আগে ভারত অধিপতি সম্রাটদের পদ ধুলিতে সিক্ত হওয়া তথা কথিত পূণ্যভূমি আজমীরের কথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শ্রুতি গোচর হয়ে অজ্ঞতা ও অন্ধ বিশ্বাসের বেড়া জালে আবদ্ধ সাধারণ জনগণের মনঃস্তাত্বিক চিন্তা চেতনায় প্রভাবক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে আজো। বাদ পড়ছে না হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কেউ।
আগস্ট ৫, ২০১২; ৮:১৮ অপরাহ্ন
সরাসরি ওয়ার্ড থেকে কপি পেস্ট করতে হলে নিচের লেখার ফরম্যাট এ ক্লিক করে Plain Text Editor সিলেক্ট করে নেন, তারপর আবার Full HTML করে সুবিধামতো সাজিয়ে নিন। ফন্ট মিসম্যাচের জন্য সরাসরি ওয়ার্ড থেকে পেস্ট না করতে উৎসাহিত করা হলো।
আগস্ট ৫, ২০১২; ৯:১৮ অপরাহ্ন
রাজেশ দা আমার একজন প্রিয় লেখক। উনার লেখা বরাবর গবেষণাধর্মী, শিক্ষামূলক ও চিন্তার উদ্রেককারী। এ লেখাটাও।
—
কপি-পেস্ট-এর ব্যাপারে লেখকগণ ওয়ার্ড থেকে কপি করার আগে ফরম্যাটিং ক্লিয়ার (Clear Formatting) করে নিতে পারেন। কিভাবে করতে হবে সংযুক্ত ছবিতে দেখুন।
আগস্ট ৬, ২০১২; ৩:০৭ পূর্বাহ্ন
ইতিহাস আমার এক প্রিয় বিষয়। কারণ হয়তো অতীতকে জানার এক প্রবল তাড়না অনূভব করি। তাই যেখানেই যাই সেখানকার ঐতিহাসিক জায়গাগুলো মোটামুটি দেখি। তা বগুড়ার ‘মহাস্থান গড়” হোক। আর “বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসর ঘর” বা কুমিল্লার “ ময়নামতি” হোক।
টেকনাফ গিয়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের “মাথিনের কূপ” ও দর্শন করে এসেছি। তালিকা আরো দীর্ঘ হয়ে যাবে।
আমি আজমীর গিয়েছিলাম। সময়টা ২০০৩ দিকে হবে। তার আগে দিল্লি দিয়ে যেতে হয় বিধায় দিল্লিতেও ওখানকার অনেক ঐতিহাসিক জায়গাও দর্শন করার সৌভাগ্য হয়।
আজমীর গিয়ে একটা বিষয় আমি ভালো করে লক্ষ্য করলাম ওখানে যতোটা মুসলিমরা আসে তার চাইতেও হিন্দু ধর্মালম্বীরা ও কম আসেনা। জিজ্ঞাসা করায় জানা গেল- “ খাজা বাবার দরবারে সবাই আসতে পারে। সবার জন্য দরজা উন্মুক্ত।“
আমি লক্ষ্য করলাম ওখানকার শৈল্পিক বাড়ি ঘর। সেখানে এক খাদেমের বাড়ি দাওয়াত খেতে গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড! কতো রকমের খাদ্য যে পরিবেশন করা হল তা বলে শেষ করা যায় না।
শিড়িগুলো অত্যান্ত সরু আকারের। কিন্তু ঘর বাড়ি আমাকে মুগ্ধ করল। মনে পড়ছিল- এ কোন কারিগরের সৃষ্টি!
এতো সুন্দর বাড়ি ঘর দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। খাদেম বার এবং তার পরিবার -বার অনুযোগ করছিলেন কেনো আমরা হোটেলে উঠলাম। কেনো মেহমানখানায় সরাসরি উঠলাম না। কেনো আজমীর গিয়েছিলাম সে প্রসঙ্গে গেলাম না।
তবে রাজেশের এই লেখা আমাকে ইতিহাস মনে করিয়ে দিল।
রাজেশের সব লেখা আমি অত্যন্ত খুঁটিয়ে পড়ি। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ লেখা। বাকি মতামত অন্যরা দেবেন। আমি কেবল ইতিহাস ঘেঁটেই আনন্দ পেলাম।
রাজেশ’ কে অভিনন্দন, নবযুগে পেয়ে। আশা করি নিয়মিত লেখা পড়তে পারবো এইবার রাজেশের।
আগস্ট ৭, ২০১২; ৫:৩৬ অপরাহ্ন
কোন কোন সময় মনে হয় ইতিহাসের কোন মা বাপ নাই। বিজিত আর পরাজিতদের ইতিহাসে থাকে বিস্তর ফারাক। তারপরেও যেটুকু ইতিহাস আমরা হাতে পাই তাও জানতে চেষ্টা করি না শোনা কথাই শুধু লাফা লাফি করে তৃপ্তি পেতে চেষ্টা করি।
উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ।
আগস্ট ৬, ২০১২; ১০:৪৯ অপরাহ্ন
@ গোলাপ আপনাকে প্রাণঢালা স্বাগতম। খুব শিঘ্র আপনার লেখা পড়ার আশায় –
আগস্ট ৬, ২০১২; ১০:৫৩ অপরাহ্ন
সবিনয় নিবেদন,
স্মাইলী’তে এমন কিছু দিলে ভালো হয় যেমন গোলাপ (: এককাপ চা ইত্যাদি- এইটা একান্ত আমার অণূভব তাই জানালাম। বা অনুরোধ করলাম।
আগস্ট ৯, ২০১২; ৭:২৪ পূর্বাহ্ন
এই যে আপু, ‘tea’ আর এই যে ‘rose’
আগস্ট ৬, ২০১২; ৪:৫৮ অপরাহ্ন
্রাজেশের লেখা আমি সর্বদা মনোযোগ দিয়ে পড়ি। এটাও ব্যতিক্রম হ’ল না। রাজেশের আর একটি খুব সুন্দর লেখা ছিল চট্টগ্রামের সুবিখ্যাত নিজামুদ্দিন আওলিয়ার মাজারের উপর।
সুফীদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা প্রচারণা আছে। অনেকেই মনে করেন সূফীরা খুব শান্তিপ্রিয়, নিরীহ ইদলাম ধর্ম প্রচারী। কিন্তু আমি যতই সুফীদের লেখা পড়ছি ততই বিস্মিত হচ্ছি তা’দের রক্তমাখা হাত দেখে। সব সুফীদের গুরু হচ্ছেন ইমাম গাযালি। তাঁর দুটি বই–ইহইয়া উলুম আল দিন এবং ‘কিমিয়ায়ে সা’দত’ পড়ে তাজ্জব হতে হয়। এই বইদূটি যদিও সুফীদের করনীয় সম্পর্কে তবুও ইমাম গাযালী পরিষ্কার লিখেছেন–বিধর্মী অর্থাৎ যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না তাদেরকে হত্যা করতে হ’বে। এছাড়াও সংস্কৃতি হত্যার কথাও লেখা আছে। অর্থাৎ আরবি সংস্কৃতি ছাড়া অন্য সংস্কতিকে গলা টিপে হত্যা করতে হ’বে। অবিশাষ্য হলেও সত্যি যে ইমামা গাযালি ছিলেন একজন পারসিয়ান।
এই ব্যাপারে এম এ খানের বই খুবই দরকারী।
ইসলাম দ্বারা পারস্য সংস্কৃতি হত্যার মত নৃশংস কর্ম মনে হয় বিশ্বের অন্য কোথাও হয় নাই। ভারতবর্ষেও সংস্কৃতি হত্যা হয়েছে তবে ইরাণের মত নয়।
আগস্ট ৭, ২০১২; ৫:৪৬ অপরাহ্ন
আপনার মত খ্যাতিমান ব্লগার আমার মত ক্ষুদ্র ব্লগারের লেখায় চোখ রাখেন জেনে ভাল লাগল। আপনাদের উৎসাহে ভবিষ্যতে দেখি আরো কিছু ছাইপাস লেখা যায় কিনা। ইমাম গাজ্জালিকে নিয়ে আমারো আগ্রহ আছে প্রচুর। লিখে ফেলুন গাজ্জালিকে নিয়ে।
আগস্ট ৭, ২০১২; ১:০০ পূর্বাহ্ন
আমরা ‘নবযুগে’ গোলাপ ফুল চাই–অর্থাৎ গোলাপের লেখা চাই।
*give_rose*
আগস্ট ৬, ২০১২; ৮:৫০ অপরাহ্ন
রাজেশ দা আমার প্রি্য লেখকদের একজন। উনার লিখা সর্বদায় গবেষনাধর্মী, তথ্যবহুল ও সুখপাঠ্য। তাঁর লিখায় পাঠকরা অনেক অজানা তথ্য জানতে পারেন।
আজকেই নবযুগের সন্ধান জানলাম। আমার প্রিয় লেখকদের অনেকেই এ ব্লগটির সাথে জড়িত জেনে খুবই ভাল লাগছে। আশা করি অচিরেই এই ব্লগটি মুক্তমনের লেখক/লেখিকা, পাঠক/পাঠিকা ও মন্তব্যকারীর আগমনে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। ‘নবযুগের’ নেপথ্যের সকল কলাকুশলীদের জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন। প্রচ্ছদটি খুবই সুন্দর। সবাইকে শুভেচ্ছা।
আগস্ট ৭, ২০১২; ৫:৫৭ অপরাহ্ন
সৌরভ ছড়াতে শুরুকরেছেন গোলাপ। একটি ব্লগে নিয়মত আপনার লেখা দেখতে পাই। অপেক্ষায় আছি আরো বড় মঞ্চে আপনার পদ ধ্বনি শোনার।
আগস্ট ৬, ২০১২; ১০:২২ অপরাহ্ন
নবযুগের সদস্য হওয়ার জন্য আপনাকেও স্বাগতম। আপনার লেখা নবযুগে পড়ার প্রত্যাশা রইল।
গোলাপ যে সকলেরই প্রিয় ফুল।
আগস্ট ৭, ২০১২; ৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
অন্য বিশ্বাসের লোকজন যখন এমনটি করে সেটি বন্ধ করার জন্য শোকের মাতম উঠে যায়, কিন্তু অত্যন্ত খারাপ লাগে ইসলামকে কখনও এইসবের জন্য অভিযুক্ত করা হয় না। যেকোন ধর্মীয় আগ্রাসনই নিন্দার, কিন্তু কেন জানি না নিরপেক্ষ পন্ডিটরা ইসলামকে সর্বদাই ছাড় দিয়ে দেন। ৮০০ জন ইউরোপীয় সেনা নিয়ে ক্লাইভের পলাশীর যুদ্ধে জয়কে বলা হয় ষড়যন্ত্রের জয়, কিন্তু ১৭ জন অশ্বারোহীর গৌড় বিজয়কে বলা হয়. ইসলামের জয়, বখতিয়ারের জয়। সেখঅনে ষড়যন্ত্র নৈব নৈব চঃ। *nea*
বাংলাদেশ তো এখন পীর আউলিয়ার মাতৃভুমি। বিমানবন্দর হলো শাহজালাল, শাহ পরাণ। আর অনেকে আবার সুফীবাদের মদ্যে আকন্ঠ নিমজ্জিত। যারা এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে কনভার্ট করার কাজ করেন তারা কিবাবে মহান হন ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে আসে না।
আগস্ট ৯, ২০১২; ৯:৩৯ অপরাহ্ন
সুফিগণ বিশ্বব্যাপী শান্তির বাণী প্রচার করে বেড়িয়েছেন, তা একটা ঐতিহাসিক বাস্তবতা। আজও হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল ধর্মীয় গোষ্ঠির মাঝে সূফী ভক্তের ছড়াছড়ি সে সত্যতা জ্ঞাপন করছে।
অথচ সম্প্রতি কিছু লেখক সেসব শান্তিবাদী, মানবতাবাদী সুফিদেরকে সহিংসতা-অমানবতার ধারক হিসেবে প্রতীয়মান করা ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। ধ্বিক!!
আগস্ট ১০, ২০১২; ৪:১১ পূর্বাহ্ন
সুফীগন কি ইসলামের মৌলিক নিয়ম মেনে চলেছেন?? গান বাজনা ইসলামে কি সমর্থন আছে? আর সুফীরা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শ্রদ্ধা পেয়ে আসছেন, আপনার এ কথাটা সত্য। কিন্তু সেই শ্রদ্ধার অনেকটাই শুলত অলৌকিকের উপরে বিশ্বাস এবং সঠিক তত্য না জানায়। যদি এত শান্তিময়ই হত সুফীদের জীবন, তাহলে যুদ্ধ বিগ্রহের সাথে তাদের নাম জড়ালো কেন??