০
১৪৭২ বার পঠিত
যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানাইছে এইবার ঈদে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সড়কে প্রাণ হারাইছেন ১৬৮ জন মানবসন্তান। ঘটনাটা দাঁড়াইলো কী, মিরাক্কেল স্টাইলে হইলেও কইতে হয়, ‘ঝামেলা আছে।’ মাইনে হইলো পরিবহন বন্ধ আছিলো না। তয় লজিক কি দাঁড়াইলো, ঠিকমত পরিবহন বন্ধ থাকলে, মৃত্যুও শূণ্যের কোঠায় থাকতো। ঘটনা তাই। লকডাউন ঠিকমত থাকলে, করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হারও কম থাকতো। পরিবহন বন্ধ থাকে নাই মানে, লকডাউনও ডাউন মারছে।
তয় দেশের অবস্থা যা দাঁড়াইছে, তাতে মনে হয় পরিবহন বন্ধ না কইরা দিলে সড়কে মৃত্যু ঠেকান যাইবো না। বছরে বারো হাজার আদম সন্তান রাস্তায় প্রাণ হারায় পরিসংখ্যান অন্তত তাই কয়। সেই হিসাবে মাসে প্রাণ হারায় এক হাজার। এইবার নিশ্চিতে থাকতে পারেন তিন মাসে করোনা এখনও হাজার পুরা করতে পারে নাই। তাই যারা লকডাউনের নামে খোলাবন্ধের খেলা খেলতাছেন তারা কইতে পারবেন এক্কেবারে উদাহরণ দিয়া, ‘নো চিন্তা ডু ফুর্তি।’ আরেকটু আউগাইয়া কওন যায়, ‘পরিবহন না চইলাও মরছে ১৬৮ জন। লকডাউন আধা চালায়া তিন মাসে মরছে আট’শ। কনতো দেহি এইডা কি খুব বেশি হইলো!’ অঙ্ক জানলে অনুপাত কইরা দেহেন, দেখবেন সীমিত ও সহনীয় আকারেই আছে।
সবই কিন্তু ভাই অঙ্কের খেলা। দেইখেন মাঝেমইধ্যেই শুনি আমাগো অবস্থা ইউরোপ-অ্যামেরিকার চেয়ে ভালো। আমাগো মৃতের সংখ্যা কম। ভাইরে পাবলিক, মনে রাইখেন আপনেরা শুধু একটা সংখ্যা। আপনে মইরা যাবেন, শুনবেন গণতাছে, হাজার এক। গণার একটা জোক আছিল না। ওই যে, আব্দুল শহরে আইছে। বিশাল দালানের সামনে দাঁড়াইয়া তলা গণতাছে। এক, দুই, তিন, চার। এই সময় শহইরা টাউট আইসা সামনে খাড়াইয়া জিগায়, ওই মিয়া কী করতাছো? আব্দুল কয়, তলা গণতাছি। ওই মিয়া তলা গণলে টেকা দিতে হয় জানো না। কয় তলা গণছো। বেশি না চাইর তলা। দেও মিয়া প্রতি তলা এক’শ কইরা হইছে চাইর’শ টেকা। কী আর করা, আব্দুল টেকা দিল। ওই টাউট বিদায় নিবার পরই আব্দুল তার পাশের জনরে কয়, দেখছেন হালায় শহরের পাবলিক কেমুন ভোদাই। গুনছি দশ তলা, দিছি চার তলার টাকা।
বুঝলেন, আমাগো গণার অবস্থাও হইছে এমুন। যারা সংখ্যা গণতাছে তারা পাবলিকরে ভোদাই ভাবতাছে। দশটা গইণা চাইরটা কইতাছে। যেন তারা টেকা বাঁচাইতাছে। আহা, তাও যদি বাঁচতো। অহন তো আবার সেই জোক কইতে হয়। ওই যে একজন রিক্সা না চইড়া পেছনের দৌড়াইয়া আইসা পঞ্চাশ টেকা বাঁচাইলো। তহন বৌয়ে কইলো, তয় উবারের পিছনে দৌড়াইয়া আসতা পাঁচ’শ টেকা বাঁচতো। অবস্থাটাতো এমুনই। না মিছা কইলাম।
যাউক গা, অনেক খ্যাইপা যাইতে পারেন। কইতে পারেন, সিরিয়াস বিষয় নিয়া কী ফাইজলামি শুরু করছি। ভাইরে, মানুষ দুঃখেও তো হাসে, না-কী? চারিদিকে চোখ খুইলা চায়া দেখেন, কান্দন ভুইলা হাসন আইবো। দেইখেন, করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বিক্রি হইতাছে। যেন তারা এই সার্টিফিকেট দেখাইয়া আজরাইলে ফাঁকি দিবো। আইলে কইবো, মিয়া ভুল যায়গায় আইছেন, দেহেন করোনা নেগেটিভ। আরেক উল্টা কাহিনি শোনেন, হাসপাতালে গেলো করোনারা চিকিৎসার লাইগা। করোনায় না মইরা হাসপাতালে আগুন লাইগা মইরা গেলো। তাও তাগো চিকিৎসার বিল দিতে হইবো। অথচ মরাগো পরিবারের পাওনের কথা ছিলো ক্ষতিপূরণের টেকা। ‘উল্টা বুঝলি রামে’র দেশ বইলা কথা।
আরো কই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুরু করছে বালিশ কান্ড দিয়া, তারপর কান্ডের আর শেষ নাই। অহন পাবলিক মরতাছে পিঁপড়ার লাহান। মন্ত্রণালয়ে যেন আরো কান্ডের মচ্ছব লাগছে। এন ৯৫ মাস্ক কান্ড, পিপিই কান্ড থাইকা এই কান্ড সেই কান্ড কইরা সফ্টওয়্যার কান্ডে আইসা ঠেকছে। ওই যে, সেই প্রবাদের মতন, কারো ঘর পোড়ে, কেউ আলু পোড়া খায়। অবশ্য আমাগো দেশে অখন আলু পোড়া খাওয়ারই লোক বেশি। এমনকি মরারাও খায়। যেমন করোনাকালে সাহায্যের চাল নিয়া গেছে চাইর মরা মানুষ। ঘটনা পার্বতীপুরের। গণমাধ্যম জানাইছে চাইর মরা পরপার থাইকা আইসা দশ টাকা কেজির চাইল কিন্না নিয়া গ্যাছে। অর্থাৎ আলু পোড়া খাওনের সুযোগ হ্যারাও ছাড়ে নাই। আর এইপারের লোক ছাড়বো ক্যামনে, কনতো দেহি! গণমাধ্যমে হুদাই লেখে আর দেহায় চাল চুরির খবর। মরারাই যেইখানে লোভ সামলাইতে পারে না, আর জেতা মানুষেরা পারবো ক্যামতে! মরা মানুষ চাল নিয়া গ্যাছে এমুন খবরে তো হেইডাই মনে হয়, কি কন?
শেষে কই, সবাই মিল্লা আমরা এই মহামারিরেও কমেডি শো বানাইবার চেষ্টায় আছি। ওই জন্যেই কইছিলাম, দুঃখেও মানুষ হাসে। আর যখন মরণও উৎসব হইয়া উঠে, তখন আর করার কিছু থাকে না, পলানের পথটাও হারায়। মাথা আউলাইয়া গ্যালে না হাইসা উপায় আছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন