০
১৪৩৩ বার পঠিত
সময়ের সাথে আমাদের স্মৃতি দূর্বল হয়ে আসে,আমরা যত চেষ্টা করি না কেন অনেক স্মৃতি ভুলে যাই, ভুলে যেতে হয়। মেমোরি দু’রকমের। শর্ট টার্ম মেমোরি আর লং টার্ম মেমরি; অস্থায়ী স্মৃতি এবং দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি। লং টার্ম মেমরি, দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি কীভাবে বাড়ানো যায় এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে।
মেমরি বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো রিকল করা, আবার শেখা, পূনরায় মনে করার চেষ্টা করা। আয় গো ললিতা সখী আবার দেখি পুনঃরায়! 😛 তবে দ্বিতীয়বার শেখা সবসময় আগের বারের চেয়ে দ্রুত হয়। প্রত্যেকদিন কিছুটা সময় মনে করার কাজে ব্যয় করলে ভুলে যাবার হার অনেক কমে যায়। একটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে মনে করার সময় মানুষ সবচেয়ে শেষ স্মৃতিটাকে বেশি মনে রাখতে পারে, যাকে বলা হয় ‘Recency effect’।
অনেকে মনে করেন কোন তথ্য জানার ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি সেটা আবার রিভাইজ করা যায় তাহলে সেই তথ্য স্থায়ী মেমরিতে পরিণত হবার সম্ভাবনা বেশি। অর্থাৎ সেই মেমরির খুব কম অংশ ভুলে যাবে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য একটা কার্যকরী উপায় ব্যায়াম করা, ব্যায়াম করলে নিউরনের মধ্যে নতুন কানেকশান তৈরি হয়। এরসাথে ভালো ঘুম, পুষ্টিকর খাবার এবং পানীয় পান করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কাজের শেষে কিছুটা সময় সারাদিনের বিভিন্ন ঘটনাবলীকে মনে করার চেষ্টা করা একটা ভাল মেমরি প্রাক্টিস।
মেমরি কোন রিপ্লে সিস্টেম না, যে মনের ভেতরে ঢুকে বাটনে চাপ দিলাম আর সুড়সুড় করে আসতে থাকল। মেমরি একটা ‘রিকনস্ট্রাকশান প্রসেস’, প্রতিবার স্মরণ করার সময় মেমরি পূনর্গঠিত হয়।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের এত কিছু মনে রাখার দরকার নেই? আঙুলের ডগায় যখন দুনিয়ার সব তথ্য আছে।
ভুল। চিন্তা-ভাবনা করার জন্য, যেকোন বিষয়ে মতামত দিতে, অন্তর্দৃষ্টির জন্য আমাদের মেমরিতে অনেক কিছু থাকার দরকার আছে। ইনফর্মড ডিসিশান নিতে হলে অনেক কিছু জানতে হবে, জানা মানে সেগুলোকে মেমরিতে রাখতে হবে।
মেজর পদ্ধতিঃ
সংখ্যা মনে রাখার জন্য একটা পদ্ধতির নাম The Major System। এই পদ্ধতিতে যেকোন সংখ্যাকে প্রথমে শব্দে পরিণত করে তারপরে সেই শব্দগুলো দিয়ে ইমেজ বা ছবি তৈরি করে নিলে নাম্বার স্মরণ করতে অনেক সুবিধা হয়। ইমেজারি যত ফানি আর ডিটেইলস হবে সেটা মনে করা তত সহজ হবে। মেজর পদ্ধতি আসলে একটা নাম্বার মনে রাখার নেমোনিক পদ্ধতি যাকে phonetic number system, phonetic mnemonic system, or Herigone’s mnemonic system নামেও ডাকা হয়।
ডেল কার্ণেগির ‘নাম মনে রাখার সহজ পদ্ধতি’ বইতে স্মৃতিসহায়ক নেমোনিক পদ্ধতির অনেক ব্যবহার করা হয়। একজন ডেল কার্ণেগীর পদ্ধতি অনুসরণ করে স্বল্পচেনা একজনের নাম স্মরণ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু তার ঠিক মনে আসতেছে না। তখন সে বলল, আপনার নামটা বলুন তো, ঠিক মনে আসছে না, কিন্তু কেমন যেন গুয়ের গন্ধ পাচ্ছি! লোকটার নাম ছিল গুনীন্দ্রনাথ।
মেজর পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি সংখ্যার জন্য ব্যঞ্জন বর্ণ ঠিক করা আছে। সেই ব্যঞ্জন বর্ণগুলোকে নিয়ে সাথে প্রয়োজন মত স্বরবর্ণ যোগ করে শব্দ তৈরি করে সেগুলো দিয়ে একটা ইমেজ বা ছবি কল্পনা করা হয়। এই পদ্ধতি কাজ করার পেছনে মূল কারণ হলো, মানুষের মনের গঠন এমন যে সে অন্যকিছুর চেয়ে ছবি বেশি মনে রাখতে পারে।
A picture is worth a thousand words:
প্রাণির বিবর্তনে টিকে থাকার জন্য স্থানিক চিত্র, লোকেশান, ভৌগলিক পরিবেশ এগুলো মনে রাখা খুবই প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য।
শুধু মানুষ নয় প্রাণিজগতের সবাই সাইজ দিয়ে পরিমাপ করে। সাইজ ডাজ ম্যাটার। ‘দ্য গড মাস্ট বি ক্রেইজি’ মুভির সেই দৃশ্যটার কথা মনে আছে যেখানে একটা হায়েনা বাচ্চা ছেলেকে দৌড়ে প্রায় ধরে ফেলছিল। এমন সময় ছেলেটা বুদ্ধি করে মাথার উপরে একটা কাঠি ধরে ফলে তার উচ্চতা দ্বিগুনের চেয়ে বড় দেখায়, এবং নেকড়ে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
আমেরিকান এক এম্বাসাডর দেখলেন পার্টিতে তার চারপাশে অনেক লোকজন ভীড় করে থাকে। তিনি ভাবলেন তিনি বোধহয় খুবই ফ্রেন্ডলি, জনপ্রিয়। পরে একদিন শুনতে পেলেন আসলে তার উচ্চতার কারণে সবাই তাকে একটা মার্কার হিসেবে ব্যবহার করে যাতে পার্টি শেষে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
বন্যপ্রাণী যখন শিকার করতে যায় তখন তারা ভৌগলিক এলাকা স্ক্যান করে। মানুষও যখন বন্য পরিবেশে ছিল তখন তাকে সদা সতর্ক থাকতে হয়েছিল। এখানে অনুমান বা কল্পনার কোন দাম নেই। পরিবেশে তার নিরাপত্তার ব্যাপারটা তাকে নিশ্চিতভাবে জানতে হবে। ফলে পরিপার্শ্বের একটা পরিষ্কার চিত্র থাকাটা টিকে থাকার জন্য খুব জরূরি ছিল।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ‘metes-and-bounds’ নামে জায়গার অবস্থান বর্ণনা করার একটা আইনী প্রক্রিয়া আছে। যেকোন জায়গা সনাক্ত করার জনয়ে এটা সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি। এই পদ্ধতি কোন একটা প্রমিন্যান্ট জিনিস সেটা কোন মনুমেন্ট, বড় গাছ, পাহাড়, টিলা নদীর পাড় যেকোন কিছু হতে পারে। ‘মিটস এন্ড বাউন্ডস’ পদ্ধতিতে উদ্দীষ্ট জায়গাটি নির্দিষ্ট স্মৃতিচিহ্ন থেকে কোন দিকে কতদূরে আছে সেটার উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া ‘ফটোগ্রাফিক মেমরি’ বলে একটা কথা চালু আছে। আসলে মেমরিতে আমরা যাই রাখি না সেটা একটা ছবি আকারে সংরক্ষিত হয়। সেজন্য কোন কিছু ছবির আকারে মনে রাখার চেষ্টা করা হলে সেটা আমাদের মনের জন্য সহজ।
স্থানিক পদ্ধতিঃ
মেমরি বাড়ানোর জন্য একটা কার্যকরী পন্থা হলো স্মৃতিকে থ্রিডি লোকেশানে স্থাপন করে সেটার ইমেজ মনে রাখা। এরকম একটা পদ্ধতির নাম, ‘Method of Loci’ বা স্থানিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটা ‘মেমরি প্যালেস’ কল্পনা করা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা পরিচিত কোন বাড়ি-ঘর, এলাকা, রাস্তা-ঘাট হতে পারে। এই ঘরে বা বাড়িতে বিভিন্ন জায়গায় আমরা যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে সেগুলো রাখতে পারি। তারপরে সেই ছবিটাকে কয়েকবার রিভ্যু করে মনে রাখার চেষ্টা করা। মনে করার সময় ছবির মত সেগুলো মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। এভাবে খুব সহজে যেকোন তালিকা মনে রাখা সম্ভব।
চাঙ্কিংঃ
কখনো কী আপনার মনে হয়েছে ফোন নাম্বারগুলো কেন ৭ ডিজিটের? এর অন্যতম প্রধান কারণ মানুষ একসাথে সাতটি র্যান্ডম জিনিস মনে রাখতে পারে। তো এই সাতটা জিনিস ৭ টি নাম্বার না হয়ে বিভিন্ন তথ্যের সাতটি চাংক হতে পারে। একটা বিষয়ের সাতটা বিষয় নিয়ে চাংকিং করে নিলে সেগুলো ভুলার সম্ভাবনা কম। সপ্তাহের সাতদিন, সাতটি সুর, সাতটি রঙ এগুলো কী একধরনের কো-ইনসিডেন্স?
স্মৃতিশক্তি বাড়ানো সবার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়, বিশেষ করে এটা প্রমাণিত যে বয়স হবার সাথে সাথে মানুষ স্মৃতি হারাতে থাকে। এছাড়া আলঝিমার এবং আরো অনেক রোগে মানুষের স্মৃতিভ্রংশ হয়। বর্তমানে কোভিড মহামারীর কারণে অনেকের সমস্যা হচ্ছে, বিশেষ করে বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। স্মৃতিশক্তি বাড়লে মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে কাজে-কর্মেও দক্ষতা বাড়ে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর এই পদ্ধতিগুলো প্রথম প্রথম একটু অস্বাভাবিক মনে হতে পারে কিন্তু কিছুদিন চর্চা করলে দেখা যাবে এগুলো তেমন কঠিন নয় বরং একধরণের মেমরি মাসল।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন