১
৭৫৫ বার পঠিত
শেখ হাসিনা শান্তি পুরস্কার পেলে খুশি ও গর্বে উদ্ভাসিত হতো বাংলাদেশ, বাঙালি, বাংলাদেশের মানুষ। প্রত্যেকে নিশ্চয় নয়। গায়ে জ্বলুনী ও ফোস্কা পড়তো। চোখের জলে বুক ভাসাতো। হিংসেয় আঁধার দেখতো। নানা কুকথা বলতেও ছাড়তো না। মিথ্যে রটনায় বাতাস ভারি করতো।
পুরস্কার যাতে না পান, নরওয়ের বিএনপি কর্মীরা কম বিরুদ্ধাচরণ করেনি, এরকম শুনেছি, শান্তি নোবেল কমিটির কাছে হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যে, বানোয়াট রিপোর্ট দিয়েছে, লিখিত। একজন নয়, নরওয়ের শতাধিক কর্মী। আওয়ামী লিগের চেয়ে বিদেশে বিএনপি’র শক্তিশালী গ্রুপ আছে, বিএনপি’র দেশিয় ‘বুদ্ধিজীবি’রা বুদ্ধিদাতা। ষড়যন্ত্রী।
শেখ হাসিনাকে এখনই কেন শান্তি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে, ঠিক বোধগম্য নয়। হাফ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন বাধ্য হয়ে। অবশ্য, মানবিকতায়। এই মানবিকতাও চাপে পড়ে। বিরোধীদলের রাজনৈতিক চাপ ছাড়াও আন্তর্জাতিক চাপ।
চাপ যতই হোক, মানবিকতার কারণেই পুরস্কারের যোগ্য তিনি। কিন্তু ভুললে চলবে না, ভারত-চিন-রাশিয়া-ইউরোপিয় ইউনিয়ন মানবতার নামে অর্থ, খাদ্য, ওষুধ, পোশাকাদি সাহায্য দিলেও শেখ হাসিনার শান্তি নোবেল পুরস্কারের জন্যে ওকালতি করে নি, করবেও না। স্বার্থ আছে। মিয়ানমারকে চটাবেনা, বাণিজ্য ও রাজনৈতিক কারণেই। বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমার জরুরি। ভঙ্গুর ‘সার্কে’র চেয়ে ‘এশিয়ান’ শক্ত। বিশ্বব্যাপী রাজনীতি, ব্যবসাবাণিজ্যে মিয়ানমার কদর বেশি, বাংলাদেশের চেয়ে। মিয়ানমারকে ধমক দেবে, চোখ রাঙাবে, ব্যস, ওইটুকুই। মিয়ানমার রোহিঙ্গা ম্যাসাকার, বিতাড়নে যে বীভৎস্চিত্র ‘বিবেকী আমেরিকা’, ‘বিবেকী ইউরোপ’, ‘বিবেকী বিশ্ব’ কতটা সোচ্চার? এখনতো নিশ্চুপ-প্রায়।
শেখ হাসিনাকে শান্তি নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সময় এখনো আসেনি হয়তো। অনুমান করি, শান্তি নোবেল কমিটি তলিয়ে দেখতে চাইছে রোহিঙ্গা-উদ্বাস্তু সমস্যার চটজলদি না স্থায়ী সমাধান করেছেন শেখ হাসিনা। চলজলদি সমাধানে রাজনৈতিক চটক আছে কি-না। নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ির উদ্দেশ্য কি না।
এসব প্রশ্ন শান্তি নোবেল পুরস্কার কমিটির বিচারকদের মগজে চক্কর দেয় কি-না, বলতে অপারগ।
বারাক ওবামাকে শান্তি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো, বিশ্বে কী শান্তি এনেছেন অজানা, সাংবাদিকরা ওবামাকে প্রশ্ন করেন. ‘কেন শান্তি নোবেল পুরস্কার পেলেন?’ ওবামার উত্তর, “কেন জানি না। পুরস্কারদাতা কমিটি বলতে পারেন।”
আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী অশান্তির দৃর্বৃত্ত আইএস (ইসলামিক স্টেট) তৈরি এবং ইন্ধনদাতা কে, কারা। ওবামা, হিলারি ক্লিনটন (ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মৌন কেন? এড়িয়ে যান প্রশ্ন? আবোল তাবোল বকেন?
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল শান্তি নোবেল পুরস্কারের জন্যে দুইবার ফাইনাল লিস্টে। ‘পাচ্ছেন’, ‘পাবেনই’ জার্মান মিডিয়া নিশ্চিত। প্রচারণা তুঙ্গে। প্রথমবার, কেন পাবেন। গ্রিসের অর্থনৈতিক সমস্যার সুরাহা করেছেন। দ্বিতীয়বার (২০১৫ সালে), দেড় মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন মানবিকতার মহানুভবে।
প্রথমবার দেখা হয়, গ্রিসকে উদ্ধারে (বেলআউট) তিনি একক নন, সর্বাগ্রে যদিও, সঙ্গে গোটা ইউরোপিয় ইউনিয়ন।
দ্বিতীয়বার, ধরেই নেওয়া হয়, শান্তি নোবেল পুরস্কারের শিকে ছিঁড়বে ভাগ্যে, লাখ-লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায়, মানবিকতায়।
এই আশ্রয়, মানবিকতার নামে পুরোটাই রাজনৈতিক। স্পষ্ট হয়। বছর না-ঘুরতেই শরণার্থীর জীবন দূর্বিষহ। ছাঁটাইবাছাই। বিতারণ। জার্মান জনগণের চাপ, রাজনীতির চাপ। শান্তি নোবেল কমিটি দেখেছে আঙ্গেলা মেরকেলের রাজনৈতিক লীলাখেলা। পুরস্কার দেয় নি। এবছরও তাঁর নাম প্রাপকের তালিকায় যুক্ত ছিল। মুসলিম শরণার্থীর আশ্রয় নিয়ে বিরোধী দল, বিশেষত এ এফ ডি (অলটারনেটিভ ফর জার্মানি), কম ঝামেলা পাকায় নি, ঝামেলা পাকিয়ে বুন্তেসটাগে (সংসদ) ৯৩ আসন পেয়ে তৃতীয় দল, বিরোধী শক্তি। দেড় মিলিয়ন শরণার্থীকে ঠাঁই দেওয়ায় প্রচণ্ড সমালোচনা, বিরোধীতা সত্বেও নির্বাচনী বৈতরণী পেরিয়েছেন, চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর, ক্ষমতাসীন। আঙ্গেলা মেরকেলকে শান্তি নোবেল পুরস্কার এবারও দেওয়া হলো না। এখানেও রাজনীতি। এই রাজনীতির গাড্ডায় শেখ হাসিনাও আবর্তিত। তিনি শান্তি নোবেল পুরস্কার পেলে মুখোজ্জ্বলে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ দীপ্ত, গরীয়ান হতো। আমাদের আশা, ভবিষ্যৎ প্রাপক তিনি। এখনই হাল ছেড়ো না বন্ধু।
বার্লিন, ০৭ অক্টোবর, ২০১৭
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
অক্টোবর ৯, ২০১৭; ৫:৪১ অপরাহ্ন
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকদের লম্বা তালিকাটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলেই এই পুরস্কারের অসাড়তা অনুধাবন করা কঠিন নয় আদৌ। তালিকাটির সাথে বিশ্বরাজনীতির বিগত সাত দশকের অভিজ্ঞতাকে সংযুক্ত করতে পারলেই বোঝা যায়, এই পুরস্কার দেওয়ার মূল মালিকানা কাদের হাতে। সেটি যে নোবেল কমিটির হাতে নয়, সেটি বুঝতে খুব বেশি গবেষণার দরকার আছে কি? বিশ্বে যতগুলি বিখ্যাত পুরস্কার চালু আছে, নোবেল শান্তি পারস্কার তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম একটি পুরস্কার। যে পুরস্কার বিশ্ব রাজনীতির পরিসরে বিশ্বপুঁজির স্বার্থেই ব্যবহার করা হয়, সেই পুরস্কারের সাথে শান্তির সম্পর্ক নাস্তিকের সাথে ঈশ্বরভক্তির সম্পর্কের মতোই না কি? বিশ্ব অশান্তির মূল হোতাদের হাতে কালিমালিপ্ত একটি পুরস্কারের জন্যে বাঙালির লম্ফঝম্ফ দেখেই বোঝা যায় আজও আমাদের পরাধীন মানসিকতা আমাদের অস্থিমজ্জায় কতটা সর্বাত্মক!