১১০০ বার পঠিত
স্রষ্টার অস্তিত্বের অনিশ্চিয়তায় অনেক ধার্মিক ব্যাক্তিই বলে থাকেন যে, স্রষ্টায় বিশ্বাস বেশি যুক্তিসঙ্গত কারণ, যদি স্রষ্টা না থাকেন, তাহলে নাস্তিক ও আস্তিক বা ধার্মিক উভয়েই মুক্তি পাবে, আর যদি স্রষ্টা থাকেন, তাহলে আস্তিক পরকালীন মুক্তি পেলেও নাস্তিক কঠিন আজাবের সম্মুখিন হবে। আসলেই কি তাই? আসুন যুক্তির গভিরে যাওয়া যাক।
ধরি, স্রষ্টা আছে। আপনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি। বিশ্বের ৩৫০০ ধর্মের মধ্যে আপনার ধর্মকেই সঠিক হতে হবে। ৩৫০০টি ধর্মের মধ্যে আপনার ধর্মের সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা = ১/৩৫০০
আবার প্রত্যেকটি ধর্মের রয়েছে বহু শাখা। যেমন ইসলাম ধর্মে আছে সুন্নি, শিয়া, কাদিয়ানি, ওহাবি, খিরিজি, ইস্মাইলিয়া ইত্যাদি। হাদিসে আছে যে, হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, আমার উম্মত ৭৩ টি ফিরকায় বিভক্ত হবে। এর মধ্যে একটিই সঠিক। এটা ছাড়া বাকি সবায় দোজখী। আপনি যদি মুসলিম হন,
তাহলে আপনার ফিরকার (শাখা) সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা = ১/৭৩
ধরুন, সুন্নি ফিরকা সঠিক, এবং আপনি সুন্নি মুসলিম। হাদিস অনুসারে, হস্তমৈথুনকারী পরকালীন শাস্তি পাবে। গড়পরতা ৯৯% পুরুষই জীবনের কোন না কোন সময় হস্তমৈথুন করে থাকে।
তাহলে আপনি সেই বিরল ১% এর দলে থাকার সম্ভাবনা= ১/১০০
এমন কিছু পরিস্থিতি আছে যেখানে আল্লাহ্র হুকুম মানা তাত্বিকভাবেই সম্ভব নয়। যেমন, মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টনব্যবস্থাকে বলা হয় ফরায়েজ নীতি। ইহা পবিত্র কোরানের বিধান। এই বিধানের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে, মৃতের ত্যাজ্য সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে নির্ধারিত অংশ মোতাবেক বন্টন করলে কেউ পায় এবং কেউ পায়না। উদাহরণস্বরুপ দেখানো যায় যে, কোন মৃত ব্যক্তির মা,বাবা,দুই মেয়ে ও এক স্ত্রী থাকে, তবে মা ১/৬, বাবা ১/৬, দুই মেয়ে ২/৩ এবং স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে। কিন্তু এটা দিলে স্ত্রী কিছুই পায় না। অথচ স্ত্রীকে দিতে গেলে সে পাবে ১/৮ অংশ। এ ক্ষেত্রে মোট সম্পত্তি “১” এর স্থলে ওয়ারিশদের অংশের সম্পত্তি হয় ৯/৮ । মুসলিম জগতে উক্ত সমস্যাটি বহুদিন যাবত অমীমাংসিতই ছিল। অতঃপর সমাধান করলেন হজরত আলী (রা)। তার প্রবর্তিত আউল (অর্থাৎ বিশৃঙ্খল) বিধানটি এইরুপঃ
মা বাবা মেয়ে(২) স্ত্রী
১/৬ ১/৬ ২/৩ ১/৮
প্রথমত উক্ত রাশি চারটিকে সমান হরবিশিষ্ট করতে হবে এবং তা করলে তা হবে-
৪/২৪ ৪/২৪ ১৬/২৪ ৩/২৪
এর যোগফল হচ্ছে ২৭/২৪। অতএব দেখা যাচ্ছে যে, যেখানে মূল সংখ্যা (হর) ছিল ২৪, সেখানে অংশ বেড়ে (লব) হচ্ছে ২৭। সুতরাং “২৭”-কেই মূল সংখ্যা ধরে অংশ দিতে হবে। অর্থাৎ দিতে হবে- ৪/২৭ + ৪/২৭ + ১৬/২৭ + ৩/২৭ = ১ ।
আল্লাহ্ কোরানে পরিস্কার ভাষায় বলেছেন যে, যারা আল্লাহ্র হুকুম পালন করে তার ফরায়েজ আইন মান্য করবে, তারা বেহেস্তী হবে এবং অমান্যকারীরা হবে দোজখী। যথা-“ এটা অর্থাৎ ফরায়েজ আইন ও নির্ধারিত অংশ আল্লাহ্র সীমারেখা এবং আল্লাহ্র নির্ধারিত অংশসমুহ। যারা আল্লাহ্র আদেশ এবং তার রসুলের আদেশ মান্যা করবে, তাদেরকে আল্লাহ্ বেহেস্তে স্থান দান করবেন……।” “যে কেহ আল্লাহ্র আদেশ, আল্লাহর আইনে নির্ধারিত অংশ ও তার নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তাকে আল্লাহ্ দোজখবাসী করবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে এবং সেখানে তার ভীষণ অপমানজনক শাস্তি ভোগ করতে হবে।”
কোরানে বর্ণিত ফরায়েজ বিধানের মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে কতগুলি (হজরত আলীর প্রবর্তিত) ‘আউল’ নীতির পর্যায়ে পড়ে এবং উহাতে কোরান মেনে বন্টন চলে না, আবার ‘আউল’ মানলে হতে হয় দোজখী। উপায় কি?
ধরুন আপনার জীবনে আপনি এ ধরনের অপালণীয় কোন পরিস্থিতির সম্মুখিন হবেন না। এর সম্ভাবনা= ১/২
সম্ভ্যব্যতার গুনণ সুত্রানূসারে, পুরো ঘটনাটি ইতিবাচকভাবে ঘটার সম্ভাবনা আলাদা আলাদা ভাবে ঘটনাগুলোর ঘটার সম্ভাবনার গুনফলের সমান। অর্থাৎ আপনার পরকালীন মুক্তির সম্ভাবনা হল = ১/৩৫০০ × ১/৭৩ × ১/১০০ ×১/২ = ০∙০০০০০০০১৯
এটা খুবই ক্ষুদ্র সংখ্যা। সুতরাং আপনার পরকালীন মুক্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাও ধরলাম আপনি খুবই সৌভ্যাগ্যবান। আপনার ধর্ম ও এর শাখা সঠিক এবং আপনি কখনো হস্তমৈথূন করেননি এবং আল্লাহ্র হুকুমের অপালনীয় কোন পরিস্থিতিতে পড়েননি। এতেই যে আপনার পরকালীন মুক্তি ঘটবে তা কিন্তু বলা যায় না। আপনাকে ইসলামের বিধানসমুহ পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। একজন সাধারন মুসলিম টিভি দেখে, গান শুনে, ছবি তুলে, সুন্দরী মেয়েদের দেখলে দ্বিতীয়বার তাকায়, সুদি ব্যাংকে টাকা রাখে ইত্যাদি। অর্থাৎ কিছু বিধিনিষেধ মানে ও কিছু বিধিনিষেধ মানে না। এটা ইসলামে গ্রহনযোগ্য নয়। সমাজে খাটি মুসলিম অর্থাৎ তালেবানি টাইপের মুমিন মুসলিম কয়জন আছে? আপনি কি এর মধ্য পড়েন। যদি না পড়েন, তাহলে কিন্তু পরকালীন মুক্তি ঘটবে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ধর্ম বিশ্বাস করেও পরকালীন মুক্তির সম্ভাবনা খুবই কম।
আর স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকলে নাস্তিকের কি অবস্থা হবে, আসুন একটি তুলনামূলক চিত্রের মাধ্যমে তা বোঝার চেষ্টা করি। ধরুন, এক প্রাইভেট কোম্পানিতে ক, খ, গ ও ঘ চাকুরি করেন। তারা কোম্পানির এমডি শাহেবকে পর্যন্ত চেনেন। কোম্পানির মালিক কখনো কোম্পানি পরিদশর্নে আসেননি। তারা কোম্পানির মালিক সম্পর্কে কিছু জানে না, এমনকি কোম্পানিটির আদৌ কোন মালিক আছে কিনা তাও তারা জানে না। এমডি শাহেবও তাদেরকে এসম্পর্কে কিছু বলেন না। এমডি শাহেব তাদের কাজের জন্য তেমন কোন জবাব দিহিতা চাননা। তারা কোন এক সাধক পুরুষের কাছ থেকে জানতে পারল যে, এ কোম্পানির মালিক বিদেশে থাকেন। উনি কোন একসময় এখানে আসবেন এবং সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাজের হিসাব নিবেন। উনি যার কাজে সন্তুষ্ট হবেন, তাকে পুরষ্কৃত করবেন ও যার কাজে অসন্তুষ্ট হবেন, তাকে শাস্তি দিবেন। তার একথা ক ও খ বিশ্বাস করল কিন্তু গ ও ঘ বিশ্বাস করল না। ক মালিকের শাস্তির ভয়ে ও পুরস্কারের লোভে ভালভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে লাগল। খ মালিকের কাছে ভবিষ্যত জবাবদিহিতার কথা বিশ্বাস করেও তার কুকর্ম করা অব্যহত রাখল। গ কোন লোভের বসবর্তী হয়ে নয়, নিজস্ব বিবেক ও মুল্যবোধ দ্বারা তারিত হয়ে তার দায়িত্ব সততার সাথে পালন করা অব্যহত রাখল। ঘ তার কাজের জবাবদিহিতা করতে হবে না জেনে নির্ভয়ে তার কুকর্ম করা অব্যহত রাখল। একদিন সত্যি সত্যিই মালিক এসে উপস্থিত হ্ল কারখানায়। মালিক তাদের কাজের হিসাব নিলেন। মানুষের মন পড়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে মালিকের। এই ক্ষমতার দ্বারা তিনি তাদের মনো বিশ্বাস সম্পর্কেও জানতে পারলেন। বলুনতো কার প্রতি মালিক সবচেয়ে বেশি খুশি ও কার প্রতি সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট হবেন? আপনি যদি কোম্পানিটির মালিক হতেন তাহলে আপনি কি করতেন? ভাল থেকে খারাপ মানুষের যদি ক্রমানুসারে সাজাতে হয় এবং এটা অনুসারে পুরস্কার ও শাস্তি দিতে হয়, আপনি কি নিম্নক্তোভাবে সাজাতেন না?
১। গ যিনি কোন লোভের বসবর্তী হয়ে নয়, নিজস্ব বিবেক ও মুল্যবোধ দ্বারা তারিত হয়ে তার দায়িত্ব সততার সাথে পালন করেছে।
২। ক যিনি মালিকের শাস্তির ভয়ে ও পুরস্কারের লোভে ভালভাবে তার দায়িত্ব পালন করেছে।
৩। ঘ যিনি কাজের জবাবদিহিতা করতে হবে না জেনে নির্ভয়ে অসৎ কাজ করেছে।
৪। খ যিনি মালিকের কাছে ভবিষ্যত জবাবদিহিতা করতে হবে জেনেও, জেনেশুনে অসৎ কাজ করেছে।
তাহলে যিনি মালিকের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করেও সৎ কর্ম করেছে, তিনিই কি সবচেয়ে বেশি লাভবান হল না?
তদুরুপভাবে পরকালে যদি দেখা যায় স্রষ্টা সত্যিই আছেন তাহলে যিনি নাস্তিক হওয়ায় কোন লোভের বসবর্তী না হয়ে বরং নিজস্ব ভালত্বের জন্য ভাল কাজ করেছে, তাকেই কি তিনি সবচেয়ে ভালবাসবেন না? তাহলে স্রষ্টার অস্তিত্বের অনিশ্চয়তায় নাস্তিকের ভয় পাওয়ার কোন কারন আছে কি?
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন