গত এক দশকে ইসলাম এবং জিহাদ সম্ভবত পৃথিবীর সর্বাধিক চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। আর ইসলামি জিহাদের আধুনিকতম কৌশল হল ‘লাভ জিহাদ’। অমুসলিমরা লাভ জিহাদের অস্তিত্ব শুধু মেনেই নেয়নি, বরং তার বিরুদ্ধে আরও বেশি সোচ্চার হয়েছে দিনের পর দিন। অন্যদিকে মুসলিমরা প্রাণপণে এর অস্তিত্ব অস্বীকার করে যাচ্ছে এখনো। তাদের মতে এসবই হিন্দুত্ববাদীদের চক্রান্ত। শুধু হিন্দুত্ববাদীরা নয়, বরং অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও যে একই কথা বলছে, সে কথা মুসলিমরা অতি সচেতনতার সঙ্গে এড়িয়ে চলেছে। আর বুদ্ধিজীবীরা? লাভ জিহাদের প্রসঙ্গ উঠলে – ‘লাভ জিহাদ? অ্যাবসার্ড!’ -অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীর প্রথম প্রতিক্রিয়াটা মনে হয় এমনই হবে। সে কারণেই একটি খোলামেলা এবং বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।
‘Love’ এবং ‘Jihad’ শব্দ দুটি পৃথক পৃথক ভাবে প্রায় সকলে শুনলেও একসাথে শব্দ-বন্ধ হিসাবে শোনে নি অধিকাংশ মানুষ। ‘Love’ (লাভ)’ মানে ভালবাসা আর ‘Jihad’ (জিহাদ) মানে সংগ্রাম বা যুদ্ধ (ইসলামের পরিভাষায়, সারা পৃথিবীতে ইসলামকে জয়যুক্ত করার জন্য বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম বা যুদ্ধ)। তাই এই দুটি শব্দ নিয়ে কোনও শব্দবন্ধ তৈরি করলে তার অর্থ স্ববিরোধী হওয়াই স্বাভাবিক। সেই হিসাবে দেখতে গেলে ‘লাভ জিহাদ’ অবাস্তব একটি বিষয়। তবে এমনটা যারা ভাবেন তাদের একটা কথা মনে করিয়ে দিই, বাস্তবে সোনার পাথরবাটি না থাকলেও, পাথরবাটিতে সোনালী রঙ করে পরিবেশন করা যেতে পারে। ঠিক তেমনি ভালবাসার মোড়কে জিহাদও পরিবেশন করা যেতে পারে। আর সেটাই হল ‘লাভ জিহাদ’।
পাশ্চাত্য বহুদিন থেকেই পুনঃ পুনঃ অভিযোগ করে আসছে যে পাকিস্তানি বা পাক বংশোদ্ভূত যুবকেরা (অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম মানেই মনে হয় ওদের চোখে ‘প্যাকি’) ওখানকার শ্বেত মহিলাদের নিশানা করছে এবং বিবাহ বা প্রেমের নামে ইসলাম ধর্মান্তরিত করছে। সেই মহিলাদের কখনওবা শুধুই ধর্মান্তরিত হয়ে থাকছেন, যৌনদাসীতে পরিণত করা হচ্ছে কখনও, আবার কখনও পরিণত করা হচ্ছে মানববোমায়। এমনকী পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে স্থিত বৌদ্ধ, শিখ, জৈন এবং হিন্দুদের মুখেও শোনা যাচ্ছে একই অভিযোগ।
৯/১১ ঘটনা যেন একদিক থেকে একটি যুগসন্ধি। ৯/১১ এর প্রভাবে মানুষের মন ও মানসিকতায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন। পরিবর্তন আসে মানবজাতি এবং তার ভবিষ্যৎ চিন্তায়। খালি বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিই নয়, রাজনীতি ধর্ম এবং সংস্কৃতির তুলনামূলক চর্চা আর মূল্যায়নও বিশ্ব-চিন্তায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দেয়। খালি নির্দিষ্ট একাডেমিক বিষয়ক্ষেত্রের মানুষ ছাড়া যে বিষয় সকলে অগ্রাহ্য ও অবহেলা করত, সেই বিষয় রাতারাতি সমস্ত মানবজাতির প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠলো। অন্যান্য ক্ষেত্রের পাঠক এবং বুদ্ধিজীবীরাও হাতে তুলে নিলো ধর্মগ্রন্থ। দেখল, পড়ল, বুঝল, যে খালি পরমাণু বোমাই নয়, একটি ধংসাত্মক দর্শনও মানবজাতিকে শেষ করে দিতে পারে। কোরআন হাদিস হাতে পেয়ে তারা প্রথম অনুভব করতে শুরু করলো জিহাদের স্বরূপ। পৃথিবীবাসী জানতে পারলো জিহাদ কী। সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষরা ইসলামের বিপরীতে অবস্থান করতে শুরু করলো। ইসলাম চলে এলো এক্সরে-র নিচে।
৯/১১ এর আগে থেকেই এরকম ধর্মান্তরের ঘটনা নিঃশব্দে ঘটে যাচ্ছিল ইউরোপ এবং আমেরিকায়। কিন্তু একটা সুসভ্য সমাজে আন্তঃধর্ম বিবাহ দোষের বলে গণ্য হয় না বলে এটাকে কেউ ধর্তব্যের মধ্যে রাখেনি। কিন্তু ৯/১১ পৃথিবীকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছিল যে প্রতিটি বিষয় সকলের নজরে পড়তে লাগলো। গবেষকদের নজরে এলো যে পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে খ্রিস্টানদের মধ্যে ইসলামে ধর্মান্তরের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে ছিল ইসলামি প্রচারকদের গর্বভরা ‘খ্রিস্টানদের ইসলাম গ্রহণ’-এর দাবী। এটাও লক্ষ করা গেল যে ধর্মান্তরিতদের মধ্যে নারীর সংখ্যা অস্বাভাবিক রকমের বেশী এবং এদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রেম এবং বিবাহসূত্রে ধর্মান্তরিত।
পাশ্চাত্যে ঘটনার সত্যটা নিয়ে প্রথমদিকে মানুষের মনে সন্দেহ থাকলেও একের পর এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খ্রিস্টান, হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধসহ সকল ধর্মীয় সংগঠন গলা মেলাতে শুরু করে ২০০৫ সাল নাগাদ। ফলে দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল বিষয়টা। বিভিন্ন সংগঠন একের পর এক অনুসন্ধান চালিয়ে সেইসব গ্রুপগুলোর লিস্ট তৈরি করতে শুরু করলো। এদের ‘গ্রুমিং গ্যাং’, ‘লাভার বয় গ্যাং’ বা ‘রোমিও গ্যাং’ বলা হতে শুরু করলো। কিন্তু দুই একটি সদস্য পৃথকভাবে গ্রেফতার হলেও একে কোনভাবেই রুখতে পারা গেল না। কেননা কোনও সেক্যুলার সমাজ তথা রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরাসরি এমন কোনও আইন থাকতে পারে না, যাতে করে একে রুখে দেওয়া যায়।
এই একই ঘটনা নিঃসাড়ে ঘটে চলেছিল ভারতেও। দক্ষিণভারতে ২০০৫-০৬ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবেই বেড়ে চলছিল হিন্দু ও খ্রিস্টান টিনএজ (১৫ থেকে ১৯ বছরের) মেয়েদের ধর্মান্তরের সংখ্যা। আর অস্বাভাবিকভাবে সেগুলোর প্রায় বেশিরভাগই প্রেম-বিবাহের মাধ্যমে। কিন্তু প্রথম অফিশিয়াল স্বীকৃতি এলো অনেক পরে – ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারিতে। কিছুদিন ধরে চলে আসা কিছু অভিযোগের পুলিশি তদন্তের ভিত্তিতে ‘কেরালা কউমুদি’ নামক কেরলের শতবর্ষ ধরে চলে আসা জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকার ৯ ফেব্রুয়ারি একটি খবর বের হয় এই শিরোনামে – ‘Love Jihad’ which aims to convert by marriage in Kerala as well’
খবরটির সারমর্ম ছিল এরকম –
“পুলিশের একটা বিশেষ শাখার তদন্তে জানা গেছে গত ছয় মাসে চার হাজারের ওপর অমুসলিম মেয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে বিবাহের মাধ্যমে। এদের মধ্যে অধিকাংশই হয়েছে মালাপুরম, কালিকট আর কান্নুর এ। ‘লাভ জিহাদ’ নামে একটি সংস্থা এই কাজের জন্য মুসলিম সুদর্শন যুবকদের নিয়োগ করছে। তাদের ফ্যাশনেবল পোশাক, মোটরবাইক, মোবাইল এবং অর্থ দেওয়া হচ্ছে। নিয়োগকৃতদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে অন্য ধর্মের কোনও মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে রোমান্স করতে এবং ছয় মাসের মধ্যে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করতে। এবং বিশেষ নির্দেশ হল তাদের গর্ভে অন্তত চারটি সন্তানের জন্ম দিতে। প্রথম কাজটি যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে না হয়, তাহলে তাকে ছেড়ে অন্য আরেকটি মেয়েকে ধরতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্কুলের মেয়েদেরই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।”
কিন্তু সরকার এবং মিডিয়া এই বিষয়টিকে একটুও গুরুত্ব দেয়নি। এটা নাকী বিরোধীদীদের অপপ্রচার। বিষয়টি আদালতে গেল, কিন্তু ধর্মান্তরের পেছনে যে ইসলামি কোনও র্যাকেট কাজ করছে, তা প্রমাণ করা গেল না। আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো জিহাদিদের সংখ্যা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও দ্রুত বাড়তে থাকলো ঘটনার সংখ্যা। বিষয়টি এবার এত স্পষ্টভাবে মানুষের চোখে ধরা পড়তে লাগল যে ২০১০ সালে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী অচ্যুতানন্দন পর্যন্ত স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলেন লাভ জিহাদের সত্যতাকে।
খালি হিন্দু মেয়েরাই নয়, খ্রিস্টান মেয়েরাও যেহেতু এদের শিকারের লক্ষ্যবস্তু ছিল, তাই খ্রিস্টান সংগঠনগুলোর কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এবং খ্রিস্টান সংগঠনগুলো তো প্রতিপক্ষ। তাই তারা এই বিষয়ে সরাসরি কোনও বক্তব্য রাখছিল না। এদিকে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছিল কেরলে। খালি কেরলেই নয় সমস্যা বিস্তৃত হল কর্ণাটকেও। ইতোমধ্যে হিন্দু সংগঠনগুলি বেশ কয়েকটি ‘অ্যান্টি লাভ জিহাদ ফ্রন্ট’ টিম তৈরি করে। এবং একাধিক মেয়েকে লাভ জিহাদের চক্কর থেকে উদ্ধার করে। বজরং দল এর মতো দলগুলি বেছে বেছে হিন্দু মেয়েদের উদ্ধার করছিল এমন নয়। তারা লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বাঁচিয়ে এনেছিল একাধিক খ্রিস্টান মেয়েকেও।
ফলে অহং এর খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলো ভারতের খ্রিস্টান সংগঠনগুলি। তারা রীতিমত লিখিত বিবৃতি দিয়ে স্বীকার করে নিলো সমস্যার কথা। তারা লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেনিং শুরু করলো। হিন্দু ও খ্রিস্টান দলগুলি, যারা এতদিন একে অপরের সাথে লড়াই করতো, লাভ জিহাদের পরিপ্রেক্ষিতে তারা স্থানীয় স্তরে একে অপরের কাছে চলে এলো। তখন থেকেই লাভ জিহাদ বিষয়ে পরস্পর সহযোগিতা দেখা যাচ্ছে এদের মধ্যে।
এতোক্ষণে নিশ্চয়ই পাঠক অবহিত হয়েছেন যে লাভ জিহাদ আসলে কী? যাদের মনে এখনো ধোঁয়াশা আছে তাদের জন্য বলে রাখি, ইসলাম ধর্মে পৃথিবীকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘দার-উল ইসলাম’ অর্থাৎ যেসব দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ‘দার-উল হারব’ অর্থাৎ যুদ্ধের দেশ (যেসব দেশ বা রাষ্ট্র ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি, সেইসব দেশে অবিরাম সংগ্রাম বা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে, যতদিন না সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়,এটাই ইসলামের নির্দেশ)। লাভ জিহাদ আসলে খ্রিস্টান বা ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলিতে জিহাদ বা যুদ্ধ বা সংগ্রাম, যার হাতিয়ার হল লাভ বা প্রেম। অর্থাৎ কীনা প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে কোনও অমুসলিম মেয়েকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা এবং তাদের দ্বারা মুসলিম সন্তান উৎপাদন করে মুসলিমের সংখ্যা বাড়ানো। এর উদ্দেশ্য কী?
লাভ জিহাদের মূল লক্ষ্য হল কোনও অমুসলিম দেশে ধর্মীয় জনসংখ্যার বিন্যাসে দ্রুতহারে পরিবর্তন আনা। অর্থাৎ ইসলামধর্মীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করে সেখানে মুসলিমদের একাধিপত্য স্থাপন করে, দেশটিকে দার-উল-ইসলাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এই পদ্ধতি প্রয়োগের উদ্দেশ্য বহুমুখী –
প্রথমত: একটি অমুসলিম মেয়েকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করলে মুসলিমদের সংখ্যা একজন বাড়ানো যায় এবং একজন অমুসলিমের সংখ্যা কমে। অর্থাৎ অমুসলিমদের ক্ষতি হয় দুইদিক থেকে।
দ্বিতীয়ত: অমুসলিম মহিলাদেরও মুসলিম উৎপাদনের যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে তার দ্বারা উৎপাদিত একাধিক সন্তান দ্বারা মুসলিমের সংখ্যা বাড়ানো যায়।
তৃতীয়ত: ইসলাম ধর্মে এক একজন পুরুষের চারটি করে স্ত্রী গ্রহণের অধিকার আছে। সেই চাহিদা অনুযায়ী জোগান কিন্তু নেই। কেবল অন্য ধর্ম সম্প্রদায়গুলি থেকে নারী গ্রহণের মাধ্যমে সেই চাহিদা পূরণ করা যায়।
চতুর্থত: এর ফলে অমুসলিম জনসংখ্যায় পুরুষ এবং স্ত্রীর অনুপাতে ব্যাপক অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। এবং যার ফলে ভবিষ্যতে অমুসলিম পুরুষও মুসলিম নারী বিয়ে করতে বাধ্য হবে। এবং তখন বিধর্মী পুরুষদেরও সহজেই ইসলামে ধর্মান্তরিত করার পথ সুগম হবে।
পঞ্চমত: ক্ষেত্র বিশেষে অমুসলিম মহিলাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করে তাকে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসীতে পরিণত করে অমুসলিমদের বিরুদ্ধেই তাকে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সর্বোপরি, একজন মুসলিমের কাছে জিহাদের উদ্দেশ্য হল জান্নাতে যাওয়ার পথকে সুগম করা। এখানে তো দ্বিগুণ সুগম হয় জান্নাতের পথ। কেননা একদিকে একজন ইসলামে অবিশ্বাসী কাফিরকে ‘ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে’ আনার বিশাল পুণ্য, অন্যদিকে আল্লাহর পথে জিহাদের সর্বাধিক পুণ্য। অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়া ‘ডাবল’ নিশ্চিত!
বস্তুতপক্ষে, ইসলামের জিহাদের কনসেপ্ট অনুযায়ী জিহাদ হল জান্নাতে যাওয়ার সহজতম উপায়। সারাজীবন ত্রুটিহীনভাবে নামাজ-রোজা করে যে ফল লাভ হয়, সেই ফল লাভ হতে পারে জিহাদের পথ বাছলে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে ফলটা কী? এর উত্তরে বলা যায় যে, ফল হল জান্নাত বা স্বর্গ (যদিও অন্যান্য ধর্মে স্বর্গের ধারনা আর ইসলামে জান্নাত বা বেহেস্তের ধারণা সম্পূর্ণ আলাদা তবু সকলের বোঝার সুবিধার্থে এভাবে উল্লেখ করলাম)। সেখানে সেই মুসলিম ব্যক্তি পাবেন সর্বনিম্ন ৭২ টা অপূর্ব সুন্দরী রমণী (হুর), আর তাদের সঙ্গে নিরন্তর এবং অনন্তকাল ধরে যৌনসম্ভোগ করার সুখ। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কেন প্রায় সকল মুসলিম পুরুষ আল্লার রাহে (আল্লাহ্র পথে) জেহাদে অংশগ্রহণ করতে চায়। কিন্তু সকলে তো সন্ত্রাসবাদী হতে পারে না, হতে চায়ও না। তাদের বাড়িঘর আছে পরিবার আছে প্রতিষ্ঠা আছে। অপরাধমূলক জিহাদি কাজে অংশগ্রহণ করে খুব কম মুসলমান। কিন্তু বাঁকি ইসলামের যে ব্যাপক সংখ্যার পুরুষ রয়েছে, তাদের তো জেহাদে অংশগ্রহণ করানো যায় না। এই ব্যাপক জনসংখ্যাকে জিহাদের কাজে লাগানো যায়। আর এমন মজাদার পথ অবলম্বন কে করবে না?
‘লাভ জিহাদ’ নামক এই অদ্ভুত পরিকল্পনাটি পাকিস্তানের মাটিতে লালিত ‘লস্কর এ তৈয়বা’ নামক বিশ্বখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের গবেষণাপ্রসূত। কোন সময়ে তা নির্দিষ্ট করে বলা মুস্কিল তবে নব্বই-এর দশকের শেষের তা নিশ্চিত বলা যায়। কেননা যে বছর সেপ্টেম্বর মাসে ‘বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র’ ধ্বংস হয়, ঠিক সেই বছরই ইসলাম গ্রহণকারী আমেরিকানদের সংখ্যা অবিশ্বাস্য রকমের বেশী ছিল, যার অধিকাংশই ছিল নারী। আর ধর্মান্তরের মাধ্যম ছিল মুসলিম পুরুষের সাথে বিবাহ। এখনো আমেরিকা এবং ইউরোপে রমরমিয়ে চলছে লাভ জিহাদ। ভারতবর্ষে ‘Campus Front (Students wing of NDF), Tasreen Milleth, Shahees Force, Muslim Youth Forum ইত্যাদি বিভিন্ন মুসলিম রাজনৈতিক দলগুলি এবং এদের ছাত্র সংগঠনগুলি দ্বারা এগুলি পরিচালিত হচ্ছে। সঙ্গে একাধিক দেশি-বিদেশি মুসলিম ধর্মীয় সংগঠন যেমন Thareekath Movement (Hyderabad), Mitch of Truth, Islam council, Maunathul Islam, এবং IUML, PDP, এবং SIMI এর মতো রাজনৈতিক দলগুলি এদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবার আলোচনা করবো, কেন লাভ জিহাদিরা শিকারের লক্ষ্যবস্তু করে টিনএজ মেয়েদের। আসলে এটার সদুত্তর পাওয়া যাবে যদি এই বয়সের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো জানা যায়, বিশেষত মেয়েদের। মূলত ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের (এবং ক্ষেত্র বিশেষে ২১ বছর) যা মনোবিদ্যার ভাষায় বয়ঃসন্ধি কালের (১২ থেকে ২১ বছর) দ্বিতীয় পর্যায়। এই বয়সটির কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে।
প্রথমত: বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এতটাই আচমকা লক্ষ করা যায় শিশুদের মধ্যে, যার জন্য তারা মোটেও তৈরি থাকে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আসে ছেলেদের তুলনায় বেশী দ্রুত এবং বেশী তীব্রভাবে।
দ্বিতীয়ত: এই সময় শিশুর মধ্যে স্বাধীনতার চাহিদা এবং আত্ম-সক্রিয়তার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আত্ম-সক্রিয়তা বশত, সে নিজে, কারো সাহায্য না নিয়ে অনেক কাজ করে বসে এবং তাতে আনন্দলাভ করে। আর এই স্বাধীনতার-বোধের জন্য সে তার সব কথা অভিভাবকদের জানায় না। এইভাবে গোপন করার অভ্যাস তাকে অভিভাবকের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। বিশেষত, মেয়েদের পুরুষ অভিভাবকদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায়।
তৃতীয়ত: মনে হতে পারে যে, সেই কাজগুলো কী ধরনের? উত্তরে আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলাই যায়। এই বয়সের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। যৌনতা মেশানো প্রেম – ভালবাসার অনুভূতি তাদের অতি সহজেই অভিভূত করে ফেলে। অস্বীকার করা যায় না, আমরাও ওইসময়ে যেসব অনুভূতি গোপন করতাম বাবা মায়ের কাছে, প্রেমের অনুভূতি নিঃসন্দেহে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত: পিতামাতার থেকে মানসিক দুরত্ববশত এবং প্রেমিকের প্রতি আকর্ষণবশত তার সমস্ত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা, ভবিষ্যতের স্বপ্ন সেই একটি মানুষকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকে। তার শিশুসুলভ কল্পনাপ্রবণতা, যা তার মধ্যে থেকে তখনো যায়নি, তার প্রায় পুরোটা জুড়েই থাকে তার সেই বিশেষ প্রিয়জন। আর ভারত-বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল সমাজে মেয়েরা অবসর সময়ের বেশিরভাগটাই বাড়িতে কাটানোর ফলে কল্পনাগুলো তাকে প্রভাবিত করার অনেক বেশি সুযোগ পেয়ে যায়।
পঞ্চমত: এই বয়সের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল সাহস। বয়ঃসন্ধিকালের দ্বিতীয় পর্যায়ে সে সাহসের চরমে থাকে। কবি সুকান্তের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটির কথা স্মরণীয়।
ষষ্ঠত: আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল আবেগের জটিলতা। বয়ঃসন্ধির প্রভাব তাদের আবেগের মধ্যেও ভীষণভাবে পড়ে। তারা আগের এবং পরবর্তী জীবনের যে কোনও স্তরের চেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ হয়। বিভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন রকমের আবেগের সৃষ্টি করে, যাদের বাস্তবসম্মত বহিঃপ্রকাশ বা সুষ্ঠু সমাধান সে করতে পারবে তেমন অভিজ্ঞতা তার না থাকায় সে সেই জটিলতার জালে জড়িয়ে পড়ে। অনেকসময় সমস্যার সমাধান করতে না পেরে মানুষ যেমন তার ঈশ্বরের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিজে দায়িত্বমুক্ত হতে চায়, তেমনি এই বয়সের ব্যক্তিরা প্রিয়জনের ওপর এসব ভাবনা ছেড়ে দেয়। অনেকটা ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণের মতো। আর এই বিষয়টি মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। কেননা, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে পুরুষের ওপর নির্ভরশীল করেই গড়ে তোলে।
এতক্ষণ আমরা জানলাম, লাভ জিহাদ কী, লাভ জিহাদের প্রয়োগের ফলে কোন কোন উদ্দেশ্য সাধিত হয়, লাভ জিহাদ কারা চালায় এবং কেন জিহাদের জন্য ওই বয়সের মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বেছে নেওয়া হয়। এবার আমরা লাভ জিহাদ নামক কৌশলের সুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
অন্যান্য জিহাদি কৌশলের চেয়ে বর্তমান সমাজের প্রেক্ষিতে অনেক কার্যকরী এবং নিরাপদ এই পদ্ধতি প্রয়োগের সুবিধাও বহুমুখী –
প্রথমত: লাভ জিহাদে জিহাদ হয় ভালবাসা বা প্রেমের ছদ্মবেশে। তাই শিকার নিজেও বুঝতে পারে না যে সে শিকার। সেই ছদ্ম-প্রেমিক তার এতটা যত্নশীলতা প্রদর্শন করে যে, আর পাঁচটা প্রেমিক প্রেমিকার মতো সেই শিকারটিও সমাজের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সেই ছদ্ম-প্রেমের জন্য, যা প্রেমিকরূপী জিহাদির পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয়ত: পুলিশ – প্রশাসন বা বিচার ব্যবস্থার পক্ষে এই সমস্যার শনাক্তকরণ অসম্ভব। কেননা প্রেম করা নিশ্চিতভাবেই কোনও অপরাধের মধ্যে পড়ে না।
তৃতীয়ত: ভারত-বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির গঠনতন্ত্র অনুসারে মেয়েদের যে পরিবারে বিবাহ হবে, সেই পরিবারের উপাধি ধারণ করবে সে। আর এক্ষেত্রে উপাধি পরিবর্তন মানেই ধর্মেরও পরিবর্তন। এই সমাজে মেয়েরা ওই সংস্কারে বেড়ে ওঠে বলে তাদের পক্ষে এটাকে মন থেকে মেনে নিতেও বিশেষ অসুবিধা হয় না। আর ঠিক সেই জন্যই ভারতে এটা চালানো বিশেষ সুবিধাজনক।
চতুর্থত: লাভ জিহাদ বা সমজাতীয় কোনও ধরনের ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে কোনও আইন নেই সংবিধানে। সুতরাং, এই বিষয়টি শাস্তিযোগ্য না হওয়ায় এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে কোনও সন্দেহ থাকে না।
পঞ্চমত: যে কোন ধর্মনিরপেক্ষ দেশেই আন্তঃধর্ম বিবাহকে নিরুৎসাহিত করার কোনও ব্যবস্থা থাকে না, থাকা উচিতও নয়, কিন্তু এটা একটা বিশেষ সুবিধার দিক লাভ জিহাদিদের কাছে।
ষষ্ঠত: এই জিহাদে অংশগ্রহণ করতে অস্ত্রধারণ বা প্রথাগত জিহাদি ট্রেনিং এর প্রয়োজন নেই। তাই বেআইনি অস্ত্রশস্ত্রের খরচ সংগঠনগুলিকে বহন করতে হয় না। ফলে ধরা পড়ার ভয়ও থাকে না। একটি অতি সাধারণ ঘরের মধ্যেই কয়েকজন মনোবিদ দ্বারা অতি নিরীহ দেখতে জিহাদি ট্রেনিং হতে পারে।
সপ্তমত: যেকথা আমি আগেও বলেছি, সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাও এই জেহাদে অংশগ্রহণ করতে পারে। তারা নিন্দিত তো হয়-ই না, উল্টো বিষয়টি তাদের উদার মানসিকতার পরিচায়ক হিসাবেই গ্রহণ করা হয়।
অষ্টমত: পুলিশ কিছু ঘটনা শনাক্ত করতে পারলেও তাকে নিছকই আর পাঁচটা ভিন্ন ধর্মের প্রেম-বিবাহ বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে, কেননা প্রতিটি ঘটনা এক একটি স্বতন্ত্র ঘটনা। এখানে জিহাদি সংযোগ প্রমাণ করা অসম্ভব প্রায়। তাই সকল অভিযোগ শুধু অভিযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।
সর্বোপরি, যে কথা আগেও বলেছি, সাধারণ মুসলিম নাগরিকদের এই কাজে অংশগ্রহণ করানো অতি সহজ। একদিকে ইহজগতে একাধিক নারীকে বিয়ের মাধ্যমে ভোগসুখ এবং বিধর্মীকে মুসলিম ধর্মান্তরিত করার পূণ্য, অন্যদিকে পূণ্যের ফলস্বরূপ জান্নাত (বেহেস্ত)-এ স্থান পাওয়া এবং ৭২ বা ততোধিক হুরদের সাথে অনন্তকাল যৌনসম্ভোগ সুখ – আল্লাহ্র পথে জিহাদের পথ যদি এত মজাদার হয়, তাহলে যেসব মুসলিম ধার্মিক ব্যক্তি জিহাদে যারা উৎসাহী নয় তারাও জিহাদি হয়ে যায়।
এরপর আমরা আলোচনা করবো লাভ জিহাদের বাস্তব প্রয়োগ-কৌশল নিয়ে। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে ব্লকভিত্তিক লাভ জিহাদের কমিটি আছে, যারা কোনো না কোনো ইসলামিক সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত থেকে কাজ করে। এদের কাজ এলাকাভিত্তিক অমুসলিম এবং সুবিধাজনক মেয়েদের লিস্ট তৈরি করা সঙ্গে নিয়মিত হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং স্থানীয় যুবকদের বাছাই করা এবং ঘরোয়া পরিবেশে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দেওয়া হয় দামী পোশাক, ভাল মোটরবাইক এবং প্রয়োজনমতো অর্থ সাহায্য। সঙ্গে এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয় এবং স্কুল কলেজের সামনে রেডিমেড আড্ডা মারার জায়গাগুলোতে তাদের পোস্টিং হয় [নিয়োগ]। তবে এদের মূল টার্গেট হল স্কুল ও কলেজের অমুসলিম মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা। অবশ্য এমন মেয়ে খোঁজার চেষ্টা এদের করতে কষ্ট পেতে হয় না। লিস্ট তাদের হাতে আগেই এসে যায়।
এরপর তারা মেয়েটির বন্ধু-বান্ধবীদের কাছ থেকে কিংবা আশেপাশের মোবাইল রিচার্জিং এবং ডাউনলোডিং দোকান ইত্যাদি থেকে মোবাইল নম্বর জোগাড় করে। তারপর শুরু হয় কথাবার্তার ছলে সাইকোলজিক্যাল ট্র্যাপিং। অর্থাৎ ট্রেনিং-এ শিখে আসা কথাবার্তার সেই ধরন, যাতে প্রেম এবং যৌনতার এমন এক অনুপাতের মিশ্রণ থাকবে যে মেয়েটি সাধারণত তার প্রেমে পড়ে যেতে বা আকর্ষিত হতে বাধ্য হয়। একটি টার্গেট এর পিছনে দুই সপ্তাহ মতো সময় দেওয়া হয়, সফল হলে ভাল কথা, নয়তো টার্গেট বদলাতে হবে। মেয়েটিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হলে কিছুদিন দায়িত্বশীল প্রেমিকের অভিনয় করে যাওয়া এবং যৌনতার স্বাদ দেওয়া। তারপর ছয় মাসের মধ্যে মুসলিম ধর্মান্তরিত করে মেয়েটিকে ইসলাম মতে বিয়ে করে কিছুদিন উপভোগ এবং সন্তান উৎপাদন। নয়ত বিয়ের পর ধর্মান্তর এবং তার মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন এবং তারপর আবার একটি মেয়ে। এভাবেই চলতে থাকে ধারাবাহিকভাবে ধর্মান্তরের কাজ। একসাথে চারটি বিয়ের সম্মতি থাকায় মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে যাওয়ার পর অপর মেয়েকে টার্গেট করা যেতেই পারে, কোনও আইনি বাধা তো নেই। তাছাড়া সমস্যা হলে সেই মেয়েটিকে তালাক দিতেও কোনও সমস্যা নেই। তবে প্রতিটি ধর্মান্তরের জন্য মেয়েদের ক্যাটাগরি অনুসারে ২ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘ইনাম’ দেওয়া হয় জেহাদিকে। সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা দেওয়া হয় শিখ মেয়েদের জন্য, এবং ব্রাহ্মণ মেয়েদের জন্য ৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন অর্থ পুরস্কার তফশিলী উপজাতিভুক্ত হিন্দু মেয়েদের এবং জৈন মেয়েদের জন্য।
এবার আমরা জেনে নেবো, বিয়ের পর সেই মেয়েটির ঠিক কী কী অবস্থা হয়। প্রেমের খাতিরে মেয়েটি প্রথমে বাড়ি ছাড়ে, তারপর ধর্মান্তরিতও হয়। প্রথম কিছুদিন নতুন সংসারে খুব ভালভাবে আর পাঁচটা মেয়ের মতোই ঘোরের মধ্যে কাটে। প্রেমিক-পতি পত্নীকে নিজের বাড়ি ফিরে আসতে দেয় না। ফলে, ইচ্ছা থাকলেও মেয়েটির বাড়ি ফেরা দুষ্কর হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই চলতে থাকে উস্কানিমুলক বই পড়ানো এবং তাদের দ্বারা নিয়োজিত মনোবিদদের দ্বারা প্রস্তুত করা ‘well structured discussion’ এর মাধ্যমে নিঃশব্দে মানসিকতা বদলের কাজ। সঙ্গে খাবারের সাথে মিশিয়ে চলতে থাকে বিশেষ কিছু মানসিক রোগের ওষুধ। এই দুই এর সঠিক মিশ্রণে ধীরে ধীরে সেই মেয়েগুলির মানসিকতায় পরিবর্তন আনা হয় যাতে করে কোনোভাবেই সে আর নিজ ধর্মে বা নিজগৃহে ফিরে যেতে না পারে। কিন্তু এই পদ্ধতি একশো শতাংশ এবং স্থায়ীভাবে কার্যকরী নয়, বরং একটা সীমিত ক্ষেত্রেই কার্যকর।
আসলে মেয়েটির পূর্বজীবনে ফিরে যাওয়ার মানসিকতা নষ্ট হওয়ার অন্য কারণও আছে। এভাবে মেয়েটি পালিয়ে আসার পর মেয়েটিকে আর মেয়ের বাড়ির আত্মীয়রাও মেনে নেয় না। অনেকক্ষেত্রে তারা পরিচিত মহলে রীতিমত ঘোষণা দেয় এই বলে যে, তাদের মেয়ে মারা গেছে। কিংবা অনেকসময় দেখা যায় যে, মেয়েটির আত্মীয়রা বলে যে, ওই মেয়েকে দেখলে তারা মেরে ফেলবে। সেক্ষেত্রে ফিরে আসতে চাইলেও মেয়েটির ফিরে আসার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তারা দুষ্কৃতিকে শাস্তি দেওয়ার বদলে আক্রান্ত দূর্বল মেয়েটিকেই বরং হত্যার হুমকি দেয়। কিন্তু তা তারা করে না। কারণ? মুসলিমদের আক্রমণাত্মক মানসিকতার প্রতি ভয়। তাই হাস্যকরভাবে নিজেদের আত্মীয় আক্রান্ত দূর্বল মেয়েটিকে হত্যার হুমকি দিয়ে আপন পৌরুষ জাহির করতে চায়। কিন্তু এভাবে পারিবারিক সম্মানের জন্য হত্যা বা হত্যার চেষ্টা কাপুরুষোচিত অপরাধ তো বটেই, তার ওপর, এই কাজের কোনও প্রভাব জিহাদিদের ওপর পড়ে না।
মুর্শিদাবাদের এরকম এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের বাবা গর্ব করে বলছিল, “আমরা ভেবে নিয়েছি ও মরে গেছে। গঙ্গাতীরে ওর শ্রাদ্ধ করে এসেছি নিজে হাতে।” ঘটনাটা এরকম- ২০/২২ বছরের সেই মেয়েটি দুই সন্তান নিয়ে মেয়েটির বাবার বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে একটি ঝুপড়িতে থাকে। পরের বাড়িতে ঝি গিরি করে ছেলে মেয়েদের খুদকুঁড়ো খাওয়ায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে সে জানায়,
“সব আমার কপাল গো দিদি! কি কুক্ষণে সেদিন বাড়ি ছেড়েছিলাম–আজ বাবাকে বাবা বলতে পারি না, মাকে মা বলতে পারি না, ভাইকে ভাই বলতে পারি না। আমি তো এখন মুসলমান। ফিরতে তো চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ ফিরিয়ে নিলে না। সব কপাল! সব কপাল!”
অনেকসময় আবার অন্য ঘটনাও ঘটে। হয়ত মেয়েটির বাড়ি থেকে হয়তো ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু মেয়েটিকে ততদিনে সম্পূর্ণ বশীভূত করে ফেলা হয়েছে। মায়ের আঙুল কেটে গেলে যে মেয়ে সারা রাত কাঁদত, মা তার পায়ে ধরে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তার ভাবান্তর হয় না। তার মধ্যে এতটাই পরিবর্তন আসে।
সে যাই হোক, লাভ জিহাদে আক্রান্ত মেয়েদের পরিণতি ঠিক কী হয়, এবার সেদিকে আলোকপাত করা প্রয়োজন। ৪টি সম্ভাব্য পরিণতির কথা আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
১)
আর পাঁচটা সাধারণ মুসলিম মেয়ের মতো নিরাপত্তাহীন হয়ে,পতির ক্রীতদাস হয়ে, কষ্ট বুকে চেপে রেখে, হাসিমুখে জীবন কাটানো। মুসলিম গৃহবধূদের কতখানি ক্রীতদাসের মতো থাকতে হয় তা আমরা সকলেই জানি।
২)
স্বামীর অন্য স্ত্রীর বা স্ত্রীদের সাথে একসাথে চুলোচুলি করে থাকা। পরবর্তী স্ত্রী মুসলিম হলে বাড়ির অন্যদের কাছে সে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে লড়াইটা অসম হয়ে ওঠে। ফল হয় সব সহ্য করে ঘরের এক কোনে পড়ে থাকা বা পতি-পরিত্যক্তা হয়ে বাপের বাড়িতে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া বা আর পতির অপেক্ষা করা। একদিন এক পতি-পরিত্যক্তা মুসলিম মহিলাকে পতি কখনো খোঁজ নিতে আসে কীনা জিজ্ঞেস করায় তার ব্যঙ্গ ভরা উত্তর ছিল –
“আসেই না এমনটা অবশ্য নয়! বউয়ের সাথে এক একদিন একঘেয়ে লাগলে কিংবা তার সাথে ঝগড়া হলে চুপি চুপি এসে রাতের খিদেটা মিটিয়ে সকালে ছেলেটাকে বাবা বাছা করে একটা দশটাকার নোট হাতে ধরিয়ে চলে যায়।”
৩)
তালাক। তালাক হলে তাদের পতিগৃহে স্থান হয় না, আর, নিজগৃহে ফিরে আসাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে ঠিকে ঝিয়ের কাজ কিম্বা দেহব্যবসা। সারা ভারতবর্ষে এমন অনেক দেহ-ব্যবসায়ী দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে কাজের লোভ দেখিয়ে তাদের এক রাজ্য হতে অন্য রাজ্যে পাচার করা হয়, তাদের লাগানো হয় দেহব্যবসায়। আবার কখনো কখনো বিদেশে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলিতে পাচার করা হয় তাদের। আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের পাল্লায় পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায় এরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের আরব দেশগুলোতে, কোন অভিজাত ধনী মুসলিমের বাড়িতে রাঁধুনির পরিচয়ে (আসলে যৌনদাসী করে) রাখা হয় ।
৪)
আরেকটি হল সন্ত্রাসবাদের কাজে লাগানো। বিশেষত সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়াকলাপে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, সাধারণত এদের পরিণতি সুখকর নয়। অতি নগণ্য কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া মেয়েটির জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত।
একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এমনভাবে পরিকল্পিত ধর্মান্তর চলতে দেওয়া উচিত না। কেননা, স্বেচ্ছায় ধর্মান্তর ব্যতীত ধর্মান্তরকে ‘রাজনৈতিক হিংসা’ হিসাবেই দেখা হয়। লাভ জিহাদ আসলে মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে করা রাজনৈতিক হিংসা, যাকে সহজেই দাঙ্গার সমকক্ষ বলা যেতে পারে। আর এই ধরনের রাজনৈতিক হিংসা কোন দেশের ধর্মভিত্তিক জনবিন্যাসকে এমনভাবে পাল্টে ফেলবে, যা অদূর ভবিষ্যতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়ে উঠবে। তাই আমাদের মতো প্রতিটি সুস্থ ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের প্রয়োজন এই ধরনের সমস্যার বাস্তব সমাধানের কথা চিন্তা করা।
তথ্যসূত্র :
১) অভয় ভারত, হিন্দি মাসিক পত্রিকা , সেপ্টেম্বর ২০১১
২) Love Jihad: Myth or Reality, Voice For Justice
৩) Times Of India , 1.9.2009
৪) Times Of India , 13.10.2009
৫) LOVE Jihad Info ( website on love jihad)
৬) HINUSTAN TIMES, THE HINDU, থেকে এ সংক্রান্ত কিছু রিপোর্ট
৭) Special report on Love Jihad – CNN –IBN, IBN7, SUDARSHAN NEWS
৮) কয়েকটি লাভ জিহাদ – ভিকটিমের সাক্ষাৎকার ( via Youtube )
৯) লাভ জিহাদ মামলায় কেরালা হাইকোর্টের রায়।
১০) মনোবিদ্যা এবং শিশু মনোবিদ্যা এবং শিক্ষা মনোবিদ্যার কিছু বই।
১১) কোরান, হাদিস ও ইসলামি গ্রন্থসহ ইন্টারনেট।
মে ৬, ২০১৪; ৯:৪৪ অপরাহ্ন
অসাধারণ একটি লেখার জন্য আপনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা!